নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! \nফেসবুকঃ \nhttps://www.facebook.com/rajshahjahan

শুন্য বাইট

মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan

শুন্য বাইট › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহসী লাশ

২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৫৭

চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার। চোখের একেবারে সামনের কোন কিছুও দেখার উপায় নেই। গ্রামের এইদিকটাতে সন্ধ্যার পরেই কেউ আসেনা। তারউপর আজকে আমবস্যার রাত্রি। গোরস্থান পার হয়ে লম্বা হালট গিয়ে উঠেছে গঞ্জে। হালটের দুই পাশেই লম্বা গাছের শারি। ছোট ছোট গাছের ঝোপ। সন্ধ্যা হলেই শিয়ালের উৎপাত শুরু হয়ে যায়। বাঁশের ঝাড় আছে একটু পরপর। গঞ্জের কিছুটা আগে একটা বড় তেতুল গাছ পরে। আর গোরস্থানের পাশে আছে একটা বড় বটগাছ। কত রাত্রে যে গঞ্জ থেকে ফেরার সময় কত মানুষ, এই দুই গাছে দুই পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভূত দেখেছে তার কোন ইয়ত্তা নাই। নেহায়েত কোন কাজ না থাকলে দিনের বেলাতেও এইদিকটায় কেউ আসতে চায়না।

শহর থেকে অনেক দিন পরে গ্রামে আসছে রুদ্র। শহরে গিয়ে দামী চাকরি সে করে। গ্রামের এই ভূতের ভয় কবেই চলে গেছে তার মনে থেকে। শহরের পরিবেশে কি আর এসব মাথায় থাকে। ট্রেনে এসে নদীর ওপাশে নেমে নৌকা করে গঞ্জে এসেছে সে। রাত প্রায় এগারোটা হবে। গঞ্জে এসেই সেই ভয়টা আবার মাথায় চেপে বসেছে তার। গঞ্জে কেউ নেই। একেবারে শুন্য স্তব্ধ চারিদিক। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনা যাচ্ছে থেমে থেমে। শিয়ালের ডাকের শব্দ ভেসে আসছে দূর থেকে। হঠাৎ হঠাৎ দুই একটা শিয়াল আলোর গতিতে ছুটে চলে যাচ্ছে সামনে দিয়ে। নৌকার মাঝি কোন রকমে রুদ্রকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। এখন এই তিন মাইল পথ একা হেটে বাড়ি যেতে হবে রুদ্রকে। ভাবতেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে রুদ্রর।

ব্যাগ থেকে বিদেশী লাইট টা বের করছে রুদ্র। ওর ম্যাসের এক বড় ভাই বিদেশ গিয়ে ওর জন্য পাঠিয়েছে এই লাইট। সুতীক্ষ্ণ আলো এই লাইটের। অন্ধকার ভেদ করে অনেক দূরের জিনিসও পরিষ্কার দেখা যায়। ঢাকায় কোন কাজে লাগেনা তাই বাড়িতে বাবাকে দিয়ে যাবে বলে লাইটটা সাথে এনেছে সে। পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট বের করে, সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে ম্যাসের সেই বড় ভাইকে কয়েক হাজারবার ধন্যবাদ সে দিয়ে ফেললো।সিগারেট টানতে টানতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে রুদ্র।

পাটের মৌসুম চলে এখন। গঞ্জে নেমেই পাট পঁচানোর গন্ধ সে পেয়েছে। নদীর পানিতে পাট জাগ দেয়া আছে। পাট পচে গেলে ধুয়ে আঁশ আর সোলা আলাদা করা হয়। হালটের দুই পাশ দিয়ে লম্বা করে বাঁশের ঢাপ বেঁধে পাট শুকাতে দেয়া আছে। লাইটের আলোতে চিকচিক করছে পাটের আঁশ। পাশে সোলাও আছে। পাটের ফলন এবার ভালো হয়েছে। কিন্তু আকাশের যে অবস্থা থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। পাট শুকাতে না পারলে আর লাভ হবেনা। আর কটা দিন রোদ থাকলে আর চিন্তা করতে হবেনা। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে যাচ্ছে রুদ্র।

এ গ্রামের অর্ধেকই এখন নদীর পেটে। পানি বেরেই চলেছে নদীতে। নদী এখানকার মানুষকে অনেক দেয় আবার নিয়েও যায়। জেলেদের মাছ, কৃষকের সেচের পানি দেয় নদী আবার ফসল ধুয়েও নিয়ে যায় মাঝে মাঝে। তবুও জীবন এখানে নদীকে ঘিরে। একবেলা চিড়া-মুড়ি, পান্তা, আরেকবেলা গরম ভাত খেয়ে জীবন কাটে এখানকার মানুষের। জীবন এখানে হিসেব কষে হয়না। অতিরিক্ত সহজ আর সাদা সিঁধে জীবন এখানে।

তেতুল গাছটা পারি দিয়ে এসেছে রুদ্র। হঠাতই একটা শিয়াল দৌড়ে হালটের এপার থেকে ওপারে চলে গেলো। লাইটের আলোতে চোখ জ্বলজ্বল করছিলো শিয়ালের। কিছু কিছু শিয়ালতো হালটের মাঝখানটায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছে। লাইটের আলো দেখে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। শিয়ালের ভয় রুদ্রর নেই। প্রায় ছয় বছর পর বাড়িতে আসছে রুদ্র। মনের জোড়ে হেটে চলেছে সে।

সামনে দুইটা বাঁশ ঝাড় পরবে। এরপর ডানে ঘুরে মাইল দেড়েক পথ। বাঁশ ঝাড়ের কাছে আসতেই ভিতরে মানুষের নড়াচড়া করার শব্দ বুঝতে পারছে রুদ্র। লাইট মারতেই দেখে বাঁশ ঝাড় থেকে বেশ দূরে ঝোপের মাঝে ডেম্বল গাছের নীচে আরু দাঁড়িয়ে আছে দরি হাতে। এতো রাত্রে আরু এখানে কি করে। সে লাফ দিয়ে দরি গাছের উপরের ডালের সাথে বাধার চেষ্টা করছে। ফাঁসি নিবে আরু!

প্রাইমারী স্কুলে একসাথে পড়েছে ওরা। প্রাইমারী পাস করার পরেই গোরস্থান পাড়ার জয়নাল ব্যাপারীর সাথে আরুর বিয়ে হয়ে যায়। আরুকে চিৎকার করেও ডেকেও কোন লাভ হচ্ছেনা। দৌড়ে এই ঝোপঝাড় পারি দিয়ে ওর কাছে যেতে যেতেই ফাঁসি দিয়ে দিয়েছে আরু। চোখের সামনে জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষ ফাঁসি নিয়ে নিলো রুদ্র কিছুই করতে পারলোনা।

অনেক চিতকার চেঁচামেচি আর ডাকাডাকি করেও কারো কানে পৌঁছাতে পারছেনা রুদ্র। পারবে কি করে আশেপাশে কোথাও মানুষের পদচারণা যে একেবারেই নেই। কি করবে রুদ্র কিছুই বুঝতে পারছেনা। একা লাশ নিয়ে গ্রামে যাওয়ার মত শক্তি তার নেই। লাশ ফেলে যে যাবে তারও উপায় নেই শিয়ালে যদি লাশ নিয়ে যায়। এমনিতেই রাস্তায় শিয়ালের যে উপদ্রব সে দেখেছে তাতে লাশ এখানে রেখে চলে যাওয়া ঠিক হবেনা।

পকেট থেকে সিগারেট বের করে জ্বলাতে গিয়ে, লাশের পাশে সিগারেট খাওয়া ঠিক হবেনা বলে সিগারেট আবার পকেটে রেখে দিলো সে। এমন আমাবস্যা রাত্রিতে চারিদিকে ঘুটঘুটে জংগলের মাঝে এক একটা লাশের সাথে বসে আছে রুদ্র। সকাল না হওয়া অব্দি কিছুই করার নেই। সকালে গঞ্জের দোকানে যাবে জয়নাল ব্যাপারী তখন তাকে ডাকা যাবে।

আরুর উপরে ক্রমশই রাগ হতে লাগলো ওর। মেয়েটা ফাঁসি নেয়ার আর জায়গা পেলোনা। এই জংগলে এসে ফাঁসি নিতে হবে। আর আজকেই নিতে হবে। আবার মেয়েটার অনেক সাহস আছে বলেও ভাবছে সে। নইলে কেউ গোরস্থানের ওই বটগাছ পারি দিয়ে এখানে মরতে আসে। সাহসী না হলেতো বটগাছের ওখানেই ভয়ে মারা যেতো। মনে মনে আরুর সাহসের একটা বিশাল প্রশংসা সে করে ফেললো। সাথে সাহসী একটা লাশ আছে ভাবতেই রুদ্রর সাহস কিছুটা বেরে যাচ্ছে।

সারাদিন অফিস করে বিকেলের ট্রেন ধরে এসেছে রুদ্র। অনেক ক্লান্ত শরীর তার। চোখে ঘুম মানছেনা। কিন্তু ঘুমালে যদি শিয়াল বা অন্য কিছু এসে লাশ নিয়ে যায়। লাশের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বসে লাশ পাহারা দিচ্ছে রুদ্র। রাত প্রায় সারে তিনটা বাজে। হঠাৎই চোখ লেগে এসেছে রুদ্রর। দূরে আযানের শব্দ হচ্ছে। আযানের শব্দ কানে লাগতেই তড়িঘড়ি করে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে সে। দাঁড়িয়েই গাছের দিকে তাকিয়ে দেখে লাশ নেই!

এদিক ওদিক অনেক খোঁজাখুঁজি করছে লাইট জালিয়ে কিন্তু কোথাও নেই। এমনকি লাশ টেনে নিলে যে নীচে ঘাসের উপর দাগ থাকবে তাও নেই। চোখের সামনে থেকে লাশ উধাও হয়ে গেলো! কিছুতেই মিলাতে পারছেনা রুদ্র। ঘাম ঝড়ছে ওর শরীর থেকে সব ক্লান্ততা কখন দূর হয়ে গেছে রুদ্র বলতে পারেনা। এক দৌড়ে হালটে গিয়ে দাঁড়ালো রুদ্র।

জয়নাল ব্যাপারী গঞ্জে যাচ্ছে। রুদ্রকে এই সাতসকালে এভাবে দেখে কিছুটা চিন্তিত হয়ে গেলো সে। রুদ্র জয়নাল ব্যাপারীকে কিছুই বলতে পারছেনা। বেশ কিছু সময় পরে রুদ্র কিছুটা স্থির হয়ে জয়নাল ব্যাপারীকে শুধু আরুর নামটা বলতে পারছে আর হাত দিয়ে ডেম্বল গাছের দিকে এশারা করছে। জয়নাল ব্যাপারী এবার বুঝতে পারলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.