![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan
খুন হয়েছে মল্লিক বাড়ির দারোয়ান। বয়স আনুমানিক চল্লিশের কাছাকাছি হবে। বিশ্বনাথ মল্লিক এই বাড়ির মালিক। তিনিই প্রতিদিন সকাল বেলা সবার আগে বাড়ি থেকে বের হন। সকাল বেলা হাটাহাটি করে বাজার নিয়ে বাসায় ফেরেন। প্রতিদিনের মতোই তিনি আজকেও সকাল বেলা বের হচ্ছিলেন। দারোয়ানের রুম নীচতলাতেই। গেটের সামনে গিয়ে দারোয়ানকে দেখতে না পেয়ে, "অলোক অলোক" বলে কয়েকবার ডেকেছিলেন তিনি। কিন্তু কোন সারা শব্দ পাননি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অলোকের রুমের সামনে এসে দেখেন দরজা খোলা। গেটের সব চাবি অলোকের কাছেই থাকে। প্রায় দশ বছর হলো সে এই বাড়িতে আছে। আবারো, "অলোক অলোক" বলে ডাকলেন মল্লিক সাহেব। কিন্তু কোন সারা না পেয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই চমকে উঠেন তিনি। এরপর পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
অলোকের গ্রামের বাড়িতে খবর দেয়া হয়েছে। এখনো কেউ এসে পৌঁছায়নি। এর মাঝে পুলিশ বাড়ির সবাইকে হালকা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। লাশ প্রথমে কে দেখেছে? অলোক কয়বছর এখানে থাকে? কারো সাথে কোন শত্রুতা আছে কিনা? এইসব!
বিশ্বনাথের ছেলে প্রফুল মল্লিকের থানার বড় সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। এসব নিয়ে যাতে বাড়ির কারো কোন সমস্যা না হয় সেদিকটা দেখবেন বলে জানিয়েছে। তাই পুলিশের কাজে বেশ খানিকটা বিব্রত তিনি। তাছাড়া আজকে রবিবার। এই ছুটির দিনে সাতসকালে ঘুম ভেঙ্গে এসব খুন টুন নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগছেনা তাঁর। নেহায়েত পারছেনা তাই চুপচাপ বসে আছে। পুলিশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো আর কিসব লিখে নিয়ে বিশ্বনাথ বাবুর একটা স্বাক্ষর নিয়ে লাশ পোস্টমোর্টেম এর জন্য পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরাও বিদায় নিলো। কাজের মেয়েটার হয়েছে শুধু বিপদ সকাল বেলাই এদের চা নাস্তা দেয়া ঘরে বসবার দেয়া এক গাদা বাড়তি কাজ।
খুনের ব্যাপারে বেশ কৌতুহল হয়ে পরলেন বিশ্বনাথ বাবু। রাত্রে অলোকের বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী আর দুই ছেলে এলো। তাদের সাথে কথা বললেন মল্লিক বাবু। তাদেরকে বিদায় দিয়ে বেশ ভাবতে লাগলেন তিনি। বারবার অলোকের রুমে পরে থাকা মৃত দেহে ভেসে উঠছিল তাঁর চোখের সামনে। ধারালো কোন কিছু দিয়ে মাথার পিছন দিকে আঘাত করা হয়েছিল তাকে। রক্তে সমস্ত রুম ভেসে গেছে। ফরেন্সিক রিপোর্টে অবশ্য আরো শিওর হওয়া যাবে। কিন্তু বিশ্বনাথ বাবুর তো কিছুতেই ঘুম চোখে আসছেনা।
এ বাড়িতে সব মিলিয়ে সাতজন মানুষের বাস। বিশ্বনাথ মল্লিক, তাঁর স্ত্রী, ছেলে প্রফুল মল্লিক, ছেলে বউ, বছর পাঁচেক এর এক নাতি আর কাজের মেয়েটা, আরেকজন ছিল অলোক। এদের সবার সাথে পুলিশ আলাদাভাবে কথা বলেছে সকালে। বাইরের গেট বন্ধ থাকায় পুলিশের ধারনা বাড়ির ভিতর থেকেই কেউ খুন করেছে। কিন্তু কাউকেই আসলে প্রমান ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছেনা। আর এদিকে খুনের সময় খুনী যে হাতিয়ার ব্যাবহার করেছে তা কোথাও পাওয়া যায়নি। খুনী অনেক হুশিয়ারীর সাথে কাজটি করেছে। কিন্তু কেনই বা এই চল্লিশ বছর বয়সের এক দারোয়ানকে কেউ খুন করবে।
পুলিশ আসলে তদন্ত তেমন করছেনা দেখে বিশ্বানাথ মল্লিক থানার বড় বাবুকে একবার টেলিফোন করলেন।
-"দেখুন অফিসার এরকম একটা খুন হয়ে গেলো আর আপনারা কিছুই করছেননা"
-"না না কিছু করছিনা এটা সত্যি নয় আমরা তো কাজ করছি।"
-"হ্যাঁ সে কাজ আপনারা কি করছেন তাতো দেখতেই পাচ্ছি। খুনের আজ তের দিন হয়ে গেলো কিন্তু আপনারা তো কিছুই করতে পারলেননা।"
-"মল্লিক সাহেব আমাদেরতো আর একটা কাজ নিয়ে পরে থাকলে চলেনা তারপরও আমরা আপনার বাড়ির সবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে দ্রুত তদন্ত করার ব্যাবস্থা নিচ্ছি।"
-"আপনারা কিছু না করলে তো আমাদের এখন বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ডিটেক্টিবের সাহায্য নিতে হবে। তাছাড়া বাড়িতে আমরা এতোগুলো মানুষ থাকি আমাদের নিরাপত্তার কথাও তো ভাবতে হবে তাই না।"
-" না সে আপনিই ডাকতেই পারেন।কিন্তু একটা কথা আপনাকে বলে রাখি মল্লিক বাবু, খুনী কিন্তু বাইরের কেউ নয় বলে আমরা সন্দেহ করছি।"
-"আপনি কি বলতে চান?"
-"দেখুন সহজ কথা, বাইরের গেট বন্ধই ছিল আর ভিক্টিম তাঁর নিজের ঘরে খুন হয়েছে। এমনতো হতেই পারে যে আপনাদের মধ্য থেকেই কেউ রাতের অন্ধকারে এসে খুনটা করে সব প্রমান সরিয়ে ফেলে আবার ঘুমের ভান করে ছিলেন।"
-"সে প্রমান ছাড়া তো আপনি এসব বলতে পারেন না। আর আমি আপনাদের তদন্ত বুঝে ফেলেছি।"
বেশ কয়েক বছর আগে একটা পার্টিতে এক প্রাইভেট ডিটেক্টিবের সাথে পরিচয় হয়েছিল বিশ্বনাথ বাবুর। তাঁর কথা হঠাতই মনে পরলো তাঁর। সেন সাহেবের ভাগ্নে হয় সম্ভত ছেলেটা। সেন সাহেবের পার্টিতেই পরিচয় হয়ছিল তাঁর সাথে। তিনি সেন সাহেবকে ফোন দিয়ে ছেলেটার খোজ নিলেন আর তার ফোন নাম্বারও নিলেন।
-"নমষ্কার, অতনু সেন বলছি।"
-"নমষ্কার, বিশ্বনাথ মল্লিক বলছি ফ্রী স্কুল স্ট্রীট থেকে।"
-"আপনিতো মশাই ভারী লোক খুন হয়ে গেলো তেরোদিন আর আজকে ফোন করছেন।"
-"আপনি তাহলে জানেন সব?"
-"ওই পত্রিকায় যা ছাপিয়েছে আরকি।"
-"আসলে আমি আপনার সাথে সরাসরি একবার কথা বলতে চাই।"
-"আচ্ছা আপনার বাড়ির নাম্বারটা একবার বলেন বিকেল চারটা নাগাদ আমি চলে আসবো।"
-"হ্যাঁ ঠিক আছে তাহলে।"
ফোন রেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বন্ধু আর একমাত্র সহযোগী অনির্বাণ এর দিকে তাকালো, অতনু।
-"চল তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নে।"
-"ভদ্রলোক নিজেই কল দিয়েছিলেন?"
-"হ্যাঁ আমিতো ভেবেছিলাম ছেলেকে দিয়ে টেলিফন করাবে। বৃদ্ধ মানুষ হয়তো বেশীই ভয় পাচ্ছে চল তাড়াতাড়ি যেতে হবে।"
বিকেল চারটার একটু পরে মল্লিক সাহেবের বাড়ি পৌঁছালেন অতনু সেন আর অনির্বাণ। বাড়ির আশেপাশটা বেশ ভালো করে ঘুরে দেখলেন অতনু সেন। এরপর বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন।
-"নমষ্কার মল্লিক সাহেব, আমি অতনু সেন। আর এ আমার বন্ধু অনির্বাণ রয়।"
-"নমষ্কার সেন সাহেব। আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো।"
-"আসলে আমি আপনার থেকে বয়সে অনেক ছোট আপনি বলে লজ্জা দিবেননা।"
-"আচ্ছা সে নাহয় বলা যাবে, কিন্তু এই খুনের ব্যাপারে তো বেশ ভয়ানক অবস্থা তৈরী হচ্ছে দিন দিন। তুমি এর একটা সুরহা করো জলদি। তাঁর আগে বলো এখানে আসতে কোন সমস্যা হয়নিতো।"
-"না না একবারেই না। যদিও শহর থেকে একটু দূরে কিন্তু আসার পথটা কিন্তু দারুন।"
-"ওই যৌবন কালে একবার এদিকে বেড়াতে এসেছিলাম মাধবীর সাথে তখনই জায়গাটা পছন্দ হয়ে যায় ওর। এরপরই এখানে বাড়িটা করা।"
-"মাধবী?!"
-"ওহ, তোমার কাকীমা মানে আমার মিসেস।"
-"ওহ আচ্ছা। তা বাড়িটাও কি উনার পছন্দমতোই সাজিয়েছেন?"
-"হ্যাঁ ওইরকমই বলতে পারো। তা না হলে কি কেউ আজকাল এতো বড় বাড়িতে নীচতলায় কোন রুম না রেখে শুধু দোতলায় নিজেদের জন্য রুম করে।"
-"তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন। আচ্ছা, একবার নীচে দারোয়ানের ঘরটা দেখা যাবে কি?
-"হ্যাঁ অবশ্যই।"
মল্লিক সাহেব বেশ চালাক চতুর মানুষ। বয়স হয়েছে। হাটার জন্য একটা লাঠিও ব্যাবহার করেন কিন্তু একেবারে ভেঙ্গে তিনি পরেননি। নীজেই চাবি নিয়ে অতনু আর অনির্বাণ কে নিয়ে নীচে এলেন ঘর দেখাতে। লাশ নিয়ে যাওয়ার পরে ঘর একেবারে পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। এখানে আর কিছু পাওয়া যাবেনা। তাই সময় ব্যায় না করে দ্রুতই ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন অতনু।
-"আচ্ছা মিস্টার মল্লিক, আপনি প্রতিদিন কটা নাগাদ বাইরে যান?"
-"এই ধরুন সকাল সারে ছয়টা বা সাতটা নাগাদ হবে।"
-"আচ্ছা, আর ঘুমোন কয়টার দিকে?"
-"আমার ছোটবেলা থেকেই ঘুমের একটু অনিয়ম আছে বুঝলেন। কিন্তু এখন বয়স হয়েছে রাত্রে সারে এগারো বা বারোটার মধ্যেই ঘুমাতে যাই।"
-"আর রাতের বেলা আপনাদের বাইরের গেট বন্ধ হয় কখন?"
-"সচারাচর দশটার মধ্যেই বন্ধ করতো অলোক। কিন্তু প্রফুল মাঝে মাঝেই দেরী করে বাড়ি ফিরতো তখন অলোকই গেট খুলে দিতো বলে বোধ করি কারন সব চাবিতো ওর কাছেই থাকতো।"
-"প্রফুল নিশ্চয়ই আপনার ছেলে?"
-"হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। ও একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করে। ফিরতে বেশ রাত হয় মাঝে মাঝে।"
-"আচ্ছা আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন, আপনাদের বাড়িতে ঢুকার আর কোন রাস্তা কি আছে?"
প্রশ্নটা শুনে বেশ ঘাবরে গেলেন বিশ্বনাথ মল্লিক। পুলিশও তাকে এমন কথা বলেছিল। আসলে এমনটা ঘটা স্বাভাবিক। এরকম ওপেন এন্ড শর্ট কেচ পুলিশ তো বাড়ির মানুষকেই সন্দেহ করবে।
-"হ্যাঁ বাইরের গেট বন্ধ থাকলে ভিতর আসার আর কোন রাস্তা যে একেবারেই নেই তা বলা ঠিকনা। বাড়ির পেছন দিকের যে জংগল মতো ঝোপ আছে সেদিক দিয়ে দেয়াল টপকে আসা যায়। "
-" এই কথাটা আপনি আমাকে আগে বলবেননা"
খুনীকে খুজে পাওয়া বেশ দুষ্কর হবে বলে মনে হচ্ছে। একেতো কোন প্রমান ছেড়ে যায়নি তাঁর উপর ঘটনার বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে। এখন বাড়ির পিছনের ওইদিকের দেয়ালের আশে পাশেও তেমন কিছু পাওয়া যাবে কিনা কে জানে। বাড়ির পিছনের দিকে থেকে আসার পথে আগাতে লাগলো অতনু আর অনির্বাণ। কিন্তু ঘটনার দুইদিন পরে এতো বৃষ্টিপাত হয়েছিল যে সেখান দিয়ে কেউ এসে থাকলেও তাঁর কোন পায়ের ছাপ বা এমন কিছু এখন আর নেই যে যা দেখে বুঝা যায় কেউ সেই পথে এসেছিল।
পেছন দিক থেকে সামন আসতেই প্রফুল মল্লিকের সাথে দেখা হয়ে গেলো অতনু সেনের। আজকে বেশ আগেই বাসায় ফিরছে প্রফুল।
-"আজকে বেশ আগেই বাড়ি ফিরলেন যে প্রফুল সাহেব?" প্রফুল মল্লিককে উদ্দেশ্য করে বললেন অতনু।
-"আপনারা?"
-"ইনারা হচ্ছেন প্রাইভেট ডিটেক্টিব।" জবাব দিলেন বিশ্বনাথ সাহেব।
-"ডিটেক্টিব!" বেশ তাচ্ছিল্যের সাথে উত্তর দিলে প্রফুল।
-"নমষ্কার, আমি অতনু সেন আর আমার বন্ধু অনির্বাণ।" অনির্বাণের দিকে তাকিয়ে বললেন অতনু।
-"আচ্ছা বাবা এইসব ডিটেক্টিব ফিটেক্টিব দের ডাকার কোন দরকার ছিল কি? পুলিশতো তদন্ত করছে।"
-" দেখুন প্রফুল সাহেব, আপনার বাবা চান বলেই আমরা এখানে এসেছিলাম কিন্তু এখন আপনারা না চাইলেও আমরা এই কেচটার শেষ দেখে ছাড়বো। দয়াকরে আমাদের কাজে সহযোগীতা করবেন আশা করি। " কিছুটা রাগ নিয়ে কথা গুলো বললেন অতনু।
বেশ সন্দেহজনক আচরণ এই প্রফুল মল্লিকের। ঘটনার দিনেও এমন ব্যাবহার করেছিলেন পুলিশের সাথে আর আজকেও। অফিসে কাজে চাপে এমনটা করতে পারেন বা বাবার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক নেই তাঁর। কিন্তু সবার সাথে কথা না বললে তো কিছু বুঝা যাচ্ছেনা।
অতনু বেশ রেগে গিয়েও নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বললো,
-"মাফ করবেন মল্লিক সাহেব। আমি এক্ষুণি যদি বাড়ির সমস্ত সদস্যদের সাথে একবার কথা বলতে পারতাম তাহলে খুব ভালো হতো।"
-"হ্যাঁ অবশ্যই। আর প্রফুলের কথায় কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আর আপনারা খুনীকে খুজে বের করুন আপনাদের সম্মানি দিতে আমি প্রস্তুত আছি।"
-"আপনি কি মনে করেন আমরা শুধু টাকার জন্য ইনভেস্টিগেট করি। সেরকম হলে আজকে আমাদের কাছে অনেক কিছু থাকতো।" অনির্বাণ বলা শুরু করতেই তাঁর দিকে তাকালো অতনু আর সাথসাথে সে চুপ করে গেলো।
-"আচ্ছা একবার সবাইকে বসার ঘরে ডাকবেন দয়া করে আমি একে একে সবার সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাই।"
বিশ্বনাথ মল্লিক অতনুর কথা মতো সবাইকে ডাকলেন। প্রথমেই কথা বললেন বাড়ির কাজের মেয়েতার সাথে। অনির্বাণ পাশে দাঁড়িয়ে রইলো আর অতনু একটা চেয়ারে বসা। ঘরে ঢুকেই কাজের মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-"স্যার বিশ্বাস করেন আমি এসবের কিছুই জানিনা আমিতো শুধু তারে ভালোবাসতাম।"
বেশ অবাক হয়ে গেলো অতনু। পচিশ-ছাব্বিশ বছরের একটা মেয়ে একটা বিবাহিত ছেলে যার বয়স কিনা চল্লিশের কাছাকাছি তাঁর সাথে ভালোবাসা। কেমন যেনো খটকা লাগছে।
-"আর সে তোমাকে ভালোবাসতো?"
-"জ্বী স্যার তয় সামনের বাসার দারোয়ান এর সাথে কথা বলা সহ্য করতে পারতোনা।"
-"সামনের বাসার যে দারোয়ান সে কি তোমাকে কিছু বলতো মানে সেও কি তোমাকে পছন্দ করতো?"
-"কি বলবো স্যার গরীবের আবার পছন্দ অপছন্দ। করতো মনে হয় কিন্তু অলোক গত হওয়ার পর থেকে তো তারে আর এদিকে আসতে দেখিনা।"
-"আচ্ছা তুমি এবার যাও। আর তোমার দাদাবাবু কে পাঠিয়ে দিও।"
প্রফুল মল্লিক কিছুক্ষণ আগেই এসেছেন বাসায় তাই আসতে একটু দেরী হচ্ছিল।
-"ফ্রেশ হতেও দিলেননা আপনারা আর বাবাও যে কি পেয়েছে না। প্রাইভেট ডিটেক্টিব! কি জিজ্ঞেস করেবন করুন।"
-"ঘটনার দিনে মানে যেদিন অলোক খুন হয় সেদিন আপনি কখন বাড়ি ফেরেন?"
-"ধরুন দুইটা নাগাদ। ক্লাবে ছিলাম আমি আপনি ক্লাবে খোজ নিতে পারেন। আর পরদিন রবিবার থাকায় ফিরতে একটু দেরী করি ইচ্ছে করেই।"
-"আপনি আসার পরে গেট কে খুলে দেয়?"
-"আমার কাছে একটা ডুবলিকেট চাবি আছে যেটা বাবা জানেনা আমার প্রায়ই ফিরতে রাত হয় তাই এটা বানিয়েছিলাম। সেয়াত দিয়েই আমি ভিতরে আসি।"
-"আপনি তখন অলোককে দেখেননি বা ওর ঘরে কোন কিছুর আওয়াজ পাননি?"
-"না আমি তেমন কিছু দেখিনি আসলে বলতে গেলে আমার কাছে তেমন কিছু মনে হয়নি।"
-"ঠিকাছে আপনি এবার আসতে পারেন।"
বিশ্বনাথ বাবুকে ডেকে আজকে আর কারো সাথে কথা বলবেনা বলে জানালেন অতনু। আবার লাগলে পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। এরই মাঝে মিসেস মল্লিক একবার অতনুর সাথে কথা বলতে চান বলে জানালো কাজের মেয়েটা। কিন্তু তখনই ডাক্তার সাহেব আসেন বাড়িতে। মিসেস মল্লিক প্রায় ছয় মাস হলো বিছানায়। এই ডাক্তার তাকে সপ্তাহে একবার চেকাপ করে যান। ডাক্তারের চেকাপের পরে দেখা করতে হবে তাঁর সাথে। কিন্তু এতোটা সময় তাঁর হাতে নেই। তাকে এক্ষুণি চলে যেতে হবে।
-"মিস্টার মল্লিক কিছু মনে করবেন না আজকে আর সম্ভব হচ্ছেনা আগামীকাল নাহয় একবার দেখা করে নিবো।"
-"ঠিকাছে আপনি যা ভালো মনে করেন।"
-"ঠিকাছে তাহলে আজকে আমরা আসছি।"
বাড়িতে সব মিলিয়ে সাতজন মানুষ এর মাঝে একজন খুন হয়ে গেলো। আর খুনের দিনে গেট ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। খুনী বাইরের কেউ হতে পারে কারন কাজের মেয়েটার সাথে দারোয়ানের অবৈধ সম্পর্ক ছিল আবার সামনের বাসার দারোয়ানও তাকে পছন্দ করতো। কিন্তু গেট বন্ধ থাকলে খুনী ভিতরে আসবে কিভাবে। যদিও পিছন দিক দিয়ে একাট আসার উপায় আছে সেটা অনেক ঘুরে জংগল পারি দিয়ে দেয়াল টপকে আসতে হবে। আর এদিকে প্রফুল সাহেবের অবস্থাও ভালো মনে হচ্ছেনা। কেমন জানি সন্দেহজনক ব্যাবহার তাঁর। অনির্বাণ আর অতনু এতোগুলো প্রশ্ন মাথার মধ্যে নিয়ে সামনের বাসার দারোয়ানের খোজে গেলো। কিন্তু দারোয়ানের দেখা তারা পেলোনা। দারোয়ানকে খুজতে খুজতে অনির্বাণ বললো,
-"একটা জিনিস খেয়াল করেছো? পিছনের দিক থেকে আসার যে রাস্তা সেটার সামনেও একটা ছোটরকম দরজা আছে যেটায় তালা দেয়ার দাগ ছিল। আর খুব বেশীদিন হলো এটা খোলা হয়েছে বলে কিন্তু মনে হলো।"
-"সাব্বাস অনির্বাণ! তোর চোখ তো দিনকে দিনকে শকুনের চোখ হয়ে উঠছে।"
-"তাহলে আমরা এই দারোয়ানের খোজে কেনো আছি?"
-"এমনও তো হতে পারে যে মেয়েটি মিথ্যে বলছে! মেয়েটিই কৌশলে অলোকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে ওই গেট খুলে রেখেছিল। পরে যেটা আটকাতে ভুলে গেছে।"
-"হ্যাঁ তাও হতে পারে কিন্তু!"
-"আচ্ছা এবারে একটা সিগারেট জ্বালা এ জট খুব সহজে খুলবে বলে মনে হচ্ছেনা। থানায় যেতে হবে।"
-"থানায় কেন?"
-"পোস্টমোর্টেম রিপোর্টটা একবার দেখা দরকার।"
থানা থেকে পোস্টমোর্টেম রিপোর্ট দেখে থানার অফিসারের সাথে কথা বলে বাড়ি ফিরলেন অতনু। সারা রাত ঘুমাতে পারেনি সে। রাত্রি প্রায় তিনটার দিকে খুন করা হয়েছে। খুব ধারালো কোন কিছুর সাহায্যে একবার মাত্র আঘাত করেই খুন করা হয়েছে। আর আঘাতটা একেবারে ঘারের দিকে করা হয়েছে যাতে দ্বিতীয়বার আঘাত করতে না হয়। খুনী খুবই চালাক আর প্রফেশনাল। পাশের বাসার দারোয়ানকে সন্দেহ করাটা ঠিক হবেনা। কারন সে এত সূক্ষ্ণভাবে খুন করতে পারবেনা। কিন্তু তাহলে খুনী কে? আর পাশের বাসার দারোয়ানকে খুজেই পাওয়া যাচ্ছেনা কেন? নাকি প্রফুল সাহেব! রাত্রে বাসায় ফেরা নিয়ে সমস্যা বাব্র অজান্তে ডুপলিকেট চাবি বানিয়েছেন। যেটা দারোয়ান ছাড়া কেউ জানবার কথা নয়। দারোয়ান এ নিয়ে তাঁর সাথে টাকা পয়সার চাপ দিচ্ছিল ভয় দেখিয়ে যে, তা ন হলে বিশ্বনাথ বাবুকে বলে দিবে। টাকা পয়সার জন্য দারোয়ানকে খুন! কি হতে পারে।
টেবিলের সামনের দেয়ালে দোতলা বাড়ির একটা ছবি আর তাঁর চার পাশে ছোট ছোট কাগজে লিখে একের পর এক পিন দিয়ে লাগিয়ে দিচ্ছে অতনু। হঠাত তাঁর মনে হলো মিসেস মল্লিকের কথা। কি বলতে চান এই মহিলা যে ছয় মাস ধরে বিছানায় পরে আছে। চেয়ারে বসে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে টেবিলের উপরে পা তুলে দিয়ে নতুন একটা সাদা কাগজ হাতে নিয়ে ঠায় বসে আছে অতনু।
চেয়ারেই ঘুম এসে গেছে অতনু। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো টেলিফোনের শব্দে। বিশ্বনাথ মল্লিক টেলিফোন করেছেন।
-"হ্যালো, অতনু সেন বলছি।" ঘুম ঘুম চোখে ফোন তুললো অতনু।
-"এখনি একবার আমার বাড়িতে আসবেন দয়াকরে। আমার মিসেস কেও খুন করা হয়েছে গতকাল রাত্রে।"
বিদ্রঃ কি লিখছি জানিনা। ভালো লাগা মন্দ লাগা বইলেন দয়াকরে। পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসবে।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪১
শুন্য বাইট বলেছেন: ভালোবাসা নিয়েন
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: রহস্যের জট খোলার আগেই আরেক রহস্য!!!!!
চলুক
+++