নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ও শান্তির অন্বেষায় ...

জোবাইর

বিনয়ী মূর্খ অহংকারী বিদ্বান অপেক্ষা মহত্তর।

জোবাইর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী মোনায়েম খান

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৭


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কিছুদিন আগেই পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদ থেকে অবসরে যান মোনায়েম খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি থাকতেন রাজধানী ঢাকার বনানীতে। একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যতম দোসর ছিলেন এই ব্যক্তি। সাবেক গভর্নর ও দখলদার পাকিস্তানিদের দোসর হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বাড়িতে নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল না। রাতদিন কড়া পাহারায় থাকত পুলিশ-মিলিটারি। বাড়িতে ব্যক্তিগত চাকর-বাকরেরও অভাব ছিল না। এত নিরাপত্তার মধ্যেও গেরিলা বাহিনী ‘ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গ্রুপে’র সর্বকনিষ্ঠ সদস্য মোজাম্মেল হক বীরপ্রতীক হত্যা করেন মোনায়েম খানকে। ১৯৭১ সালের এইদিনে (১৩ অক্টোবর) এক দুর্ধর্ষ গেরিলা অপারেশনে ১৪ বছর বয়সী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের স্টেনগানের গুলিতে নিজ বাসায়ই লুটিয়ে পড়েন মোনায়েম খান। সেইসাথে পাকিস্তানের এদেশীয় দোসর, জামায়াত-মুসলিম লীগের নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক ও ভয়। রচিত হয় এক মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরব-উজ্জ্বল ইতিহাস।

মোনায়েম খান (২৮ জুন ১৮৯৯ – ১৩ অক্টোবর ১৯৭১)
আইয়ুব খানের অনুগত ও বাঙালী স্বাধিকার বিরোধী আবদুল মোনায়েম খান ছিলেন বাঙালি রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর। তিনি ২৮ অক্টোবর ১৯৬২ থেকে ২৩ মার্চ ১৯৬৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরদের মধ্যে তার মেয়াদ সবচেয়ে দীর্ঘ ছিল। আবদুল মোনেম খান ১৮৯৯ সালের ২৮ জুন কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার হুমায়ুনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৬ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল হতে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ১৯২০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। আবদুল মোনেম খান ১৯২৭ সালে ময়মনসিং জেলা বারে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৩৫ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগে যোগ দেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৩৬ সালে তার আমন্ত্রণে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ময়মনসিংহ সফরে আসেন। ১৯৪৫ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের সদস্য হন। পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে তিনি অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ড করেছেন। ১৯৬২ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। সেই বছর আইয়ুব খান তাকে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নিযুক্ত করেন। কয়েক মাস পরে তাকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। ১৯৬২ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ১৯৬৯ সালের ২৩ মার্চ তিনি এই পদে ছিলেন। তার শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ব্যবসা, কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি হয়েছিল। তিনি আইয়ুব খান প্রবর্তিত মৌলিক গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি কাজ করেছেন। তার শাসনামলে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা ও এগারো দফা দাবি এবং বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। ছাত্রদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে তিনি দম্ভভরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, যতদিন গভর্নর পদে আছেন শেখ মুজিবকে জেলে থাকতে হবে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়েরের পেছনে তিনি ছিলেন অন্যতম উস্কানিদাতা। পাকিস্তানের এমন নির্লজ্জ, নৃশংস আচরণের জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্তও মোনায়েম খানের পাকিস্তানের প্রতি প্রভুভক্তি একচুলও কমেনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করায় ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা তার বনানীর বাড়িতে আক্রমণ করে। এসময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
১৯৬৭ সালের মার্চের শুরুতে ময়মনসিংহে আয়োজিত এক জনসভায় আইয়ুব খানের ভাষণ মোনায়েম খান নিজেই ভাষান্তর করবেন বলে তাঁর (প্রেসিডেন্ট) সামরিক সচিবকে অনুরোধ করেন। সেটি ছিল বেশ বড় সমাবেশ। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে আসামি করায় তা আরও বেড়ে গিয়েছিল। যাইহোক, তিনি প্রেসিডেন্টের এক ঘণ্টার ভাষণের ভাষান্তর করতে দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করলেন। এরপর দ্রুতগতিতে তা জনসভায় পাঠ করলেন। ভাষনে তিনি রবীন্দ্রনাথ, গালিব ও ইকবালের কবিতা থেকে আবৃত্তি করলেন, যা প্রেসিডেন্ট বলেননি। এটি ছিল একবারেই নজিরবিহীন ঘটনা। বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে প্রেসিডেন্ট তাঁর পাশে বসা গভর্নরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মোনায়েম সাব, আমি তো অত বড় বক্তৃতা দিইনি। আপনি যে কবিতাগুলো আবৃত্তি করলেন, আমি সেসব বলিনি। এমনকি টেগরের (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) কোনো কবিতাই আমি পড়িনি। আপনার ভাষান্তরে এসব এল কীভাবে?’মোনায়েম খান হাসলেন এবং বললেন, ‘স্যার, কিছু মনে করবেন না। আপনি কী বলেছেন আর আমি কী যোগ করেছি, সেটি বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো, জনগণ তা শুনতে চেয়েছে। আপনি কি লক্ষ করেননি, আমি যখন গান গাইছিলাম, তখন তারাও গান গাইছিল। আমি যখন হাসছিলাম, তখন তারাও হাসছিল। দূরদূরান্ত থেকে আসা এই মানুষগুলো আপনার বা আমার বক্তৃতা শুনতে চায়নি। তারা এসেছে আনন্দের জন্য, স্যার। তাদের একঘেয়ে জীবনে আনন্দের প্রয়োজন আছে। এ কারণেই তারা যৌনতার প্রতি বেশি আকৃষ্ট, বিশেষ করে যখন যৌনতা ছাড়া তাদের কিছু করার থাকে না। আপনি দেশব্যাপী যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছেন, তারপরও জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটছে। তারা এসব কেন্দ্রে যায় বিনা মূল্যে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী নিতে নয়, এটির ব্যবহারবিধি শুনে যৌনানন্দ পাওয়ার জন্য।’ তখন আইয়ুব খান ও তাঁর পাশের আরোহীরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।
সূত্র: প্রথম আলো : ০২ মার্চ ২০১৭

বীরপ্রতীক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক
মোজাম্মেল হক, বীরপ্রতীক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ঢাকা শহরের নিকটবর্তী ভাটারায়। রাজধানীর ছোলমাইদে তাঁর বেড়ে ওঠা। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন স্টাফ ওয়েলফেয়ার স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। কম বয়স সত্ত্বেও তিনি যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ করেছেন ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে। দীর্ঘ দুইযুগ ধরে পাকিস্তানী শাসকরা যেভাবে বাঙালিদের উপর অত্যাচার করছিলো, সেটি এই এত অল্প বয়সেই তার কাছে ধরা পড়ে। তিনি জানান, “আমরা বাসে চড়লে অবাঙালী কন্ডাক্টর-হেল্পাররা আমাদের সিট থেকে তুলে দিয়ে বিহারীদের সেই সিটে বসতে দিতো। তাছাড়া, পূর্ব পাকিস্তানে কাগজের কল হওয়া সত্বেও এখানে কাগজের দিস্তা যখন ১৪ আনা, তখন পশ্চিম পাকিস্তানে কাগজের দাম ছিলো ৬ আনা।” সেকারণে যুদ্ধ শুরু হতেই তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেবেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতে ট্রেনিং নিতে গিয়েও প্রথমবার ফিরে আসতে হয় তাঁকে। কিন্তু মন মানে না। উপায় বের করে মুক্তিযোদ্ধা রহিমুদ্দীনের সহায়তায় আবার চলে যান মেলাঘর ট্রেনিং সেন্টারে। সেখানে ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দার তাকে দেখেই রহিমুদ্দীনকে ধমক দিয়ে বলেন, “কী সব পোলাপাইন নিয়ে এসেছো! এই সব দিয়ে কী যুদ্ধ করা যায়?”
কিন্তু, মেজর হায়দারের সম্মতিতে এবার সত্যি সত্যি গেরিলা ট্রেনিং শুরু হয় মেলাঘরে। ২১ দিনের ট্রেনিংয়ের পর তাদের ১৫ জন নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গেরিলা গ্রুপ তৈরি হলো। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সেকেন্ড ইন কমান্ড এটিএম হায়দারের কাছে ট্রেনিং নিয়ে গেরিলা হিসেবে যখন ঢাকায় ফিরছে ওদের দলটা, কুমিল্লার কাছে অ্যামবুশে পড়ে গেল ওরা। যারা বেঁচে গেল, তাদের আর সরাসরি যুদ্ধে পাঠাতে চাইলেন না হায়দার। হেডকোয়াটারের গোলাবারুদ আনা-নেওয়ার কাজে লাগিয়ে দিলেন তাদের। কিন্তু মোজাম্মেল হক নামের সেই তারছিঁড়া কিশোরের গোলাবারুদ টানাটানিতে মোটেও আগ্রহ ছিল না। যুদ্ধে সে করবেই। তখন হঠাৎ তার মনে হলো, মেজর হায়দারের মন জয় করতে না পারলে আর গেরিলা যুদ্ধ হবে না। তাই সে ক্যাপ্টেন হায়দারের ছাউনির সামনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে শুরু করলো। একটানা বাইশ-তেইশ দিন। ঘন্টার পর ঘন্টা। তার দিকে তাকিয়ে থাকতো মোজাম্মেল। ওর টার্গেট হলো হায়দার মোজাম্মেলকে দেখেন আর জিজ্ঞেস করেন, তুই এখানে খাড়ায়া আছস কেন! কারণ কি? অনেক অপেক্ষার পর একদিন সেই সুযোগ হলো।
তিনি মোজাম্মেলকে বললেন, “কিরে এইহানে দাঁড়ায়া আছস ক্যান?”
মোজাম্মেলের জবাব, “আমারে গেরিলা যুদ্ধে পাঠান।”
মেজর হায়দার এবার জিজ্ঞেস করলেন, “তুই ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা পাক গভর্নর মোনায়েম খানকে মারতে পারবি?”
খুশীতে ডগমগ হয়ে মোজাম্মেল উত্তর দেন, “স্যার, এটা আমার জন্য অনেক সহজ। আমি তার বাসা চিনি। ছোট বেলায় তার বাসার ওখানে খেলতে গিয়েছি। আমার এক দূর সম্পর্কের জব্বার চাচা তার বাসার গোয়ালা”।
তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “স্যার, যদি অপারেশন সাকসেসফুল হয়, আমাকে কী পুরস্কার দেবেন?” মেজর হায়দায় জিজ্ঞেস করেন, “তুইই বল, তুই কী চাস?” মোজাম্মেলের দুঃসাহসী উত্তরটা ছিল, “অপারেশন শেষে আমি আপনার কোমরের রিভলবারটা চাই!”

অপারেশন মোনায়েম খান
মোনায়েম খানের বাসার ভেতরে ঢুকতে পারলেও পর পর দুবার ব্যর্থ হয় অপারেশন। মোজাম্মালের মন খুব খারাপ হয় পর পর দুবার অপারেশনে বাধা পেয়ে। এদিকে শাজাহান ভাটারা এসে একদিন তাকে ধরে বলে, “কী ভাই, যুদ্ধ হবে না? তার কথায় আবার মনোবল ফিরে পান মোজাম্মেল। এবার সহযোগি হিসেবে সঙ্গে নেন আনোয়র হোসেন(বীর প্রতীক)কে। আবারো সন্ধ্যার পর মোনায়েম খানের বাসার ভেতরের সেই কলাঝোপে লুকিয়ে বসে থাকেন দুজন। একটু পরে শাজাহান এসে খবর দেন, আজকে অপারেশন সম্ভব। মোনায়েম খান, তার মেয়ের জামাই (জাহাঙ্গীর মো. আদিল) আর শিক্ষামন্ত্রী (আমজাদ হোসেন) বাসার নীচ তলার ড্রইং রুমে বসে গল্প করছেন। একটি সোফায় তিনজনই একসঙ্গে বসে আছে। মাঝের জনই মোনায়েম খান, তার মাথায় গোল টুপি রয়েছে। অপারেশনের পরের পরিস্থিতি আন্দাজ করে জব্বার চাচা আর শাজাহানকে জামাকাপড় নিয়ে বাসা থেকে পালাতে বলে অপারেশনের প্রস্তুতি নেন মোজাম্মেলরা। শুনশান নিরবতার মঝে হাতিয়ার বাগিয়ে দুজন মূল বাড়িটির দিকে এগিয়ে যান। প্ল্যান হচ্ছে, স্টেন গানের একটি ম্যাগজিন পুরো খরচ করে দেবেন মোনায়েম খানের ওপর। বাকি দুজনকে আরেকটি ম্যাগজিন দিয়ে ব্রাশ করা হবে। ব্যাকআপ আর্মস হিসেবে থাকবে হ্যান্ড গ্রেনেড আর ফসফরাস বোমা।
বাড়ির ড্রইং রুমের দরজায় পৌঁছে তারা দেখেন দরজাটি খোলা। দরজার দিকে মুখ করে তিনজন একটি সোফায় ঘনিষ্টভাবে বসে মাথা নীচু করে কোনো শলা-পরামর্শ করছে। মাঝখানে গোল টুপি মাথায় মোনায়েম খান। মোজাম্মেল স্টেন দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করেন। কিন্তু একটি মাত্র সিঙ্গেল ফায়ার বের হয়ে গুলিটি মোনায়েম খানের পেটে লাগে। সে ‘ও মা গো’ বলে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বাকি দুজন ভয়ে ‘বাবা গো, মা গো, বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুরু করে। কিন্তু, স্টেন গান দিয়ে আর ফায়ার হয় না। ম্যাগজিন বদলে বাকী ম্যাগজিন দিয়ে ফায়ার করার চেষ্টা করা হলে তাতেও কাজ হয় না। আনোয়ার সেফটি পিন খুলে গ্রেনেডটি ছুঁড়ে মারেন। এবারো ভাগ্য খারাপ। গ্রেনেডটিও ছিলো অকেজো, সেটি দেয়ালে বারি খেয়ে ফেরত আসে। এদিকে তার বাড়ির বেলুচিস্তানী পুলিশরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে একের পর এক ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করতে থাকে। মোজাম্মেলরা দেয়াল টপকে পালান। পরেরদিন রেডিওর খবরে জানতে পারেন মোনায়েম খান মারা গেছে। এর সাথে শেষ হয় একজন বাঙালি বিশ্বাসঘাতক, দাম্ভিক রাজাকার মোনায়েম খানের কাহিনী। সাথে রচিত হয় মোজাম্মেল হক নামক একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বের ইতিহাস।

মোনায়েম খানের উত্তরসুরি ও মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক
স্বাধীনতার পরে বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশের রাজনৈতিক অবস্থা পাল্টে যায়। মোনায়েম খানের উত্তরসুরি তথা স্বাধীনতা বিরোধীরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে রাজাকার-আলবদরদের পুনর্বাসন করে আর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বস্তরে অবহেলিত ও অপমানিত হতে থাকে। তাই সেদিন দম্ভ করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান বলেছিলেন, "একাত্তরে আমরা ভুল করিনি"। কুখ্যাত গভর্ণর আবদুল মোনায়েম খানকে হত্যা করা ১৪ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ৫০টা মামলা করেছিল জিয়ার আমলে ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হওয়া মোনায়েম খানের জামাই জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল। অবর্ণনীয় কষ্ট আর যন্ত্রণা দিয়েছে সে মোজাম্মেলকে, তিলে তিলে তার জীবনটা বিষময় করে তুলেছে। শেষ পর্যন্ত জেল খাটতে বাধ্য হয়েছিল এই মুক্তিযোদ্ধকে, স্বাধীন দেশে এক রাজাকারের জামাইয়ের মামলায়! কুখ্যাত নরপিশাচ সাকার চাচাশ্বশুর সেই জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেলের দুই ছেলে মোনায়েম খানের নাতিদ্বয় তারেক আদেল আর জোবায়েদ আদেল ২০০০ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানী পতাকা উত্তোলন করে, আর তাদের এই নোংরা পাকিপ্রেমের প্রতিবাদ করায় ৮টি বুলেটে ঝাঁজরা করে দেয় আরমানিটোলা এলাকার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহসম্পাদক কামাল হোসেনকে। সেদিন আক্ষেপ করে মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, "একাত্তরে কি আমরা ভুল করেছিলাম!"

বীরপ্রতীক মোজাম্মেল হকের সাক্ষাৎকার


সূত্র:
ইন্টারনেট ও পত্র-পত্রিকা

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা! বীরত্বের কাহিনীতে রক্ত নেচে ওঠে।


আমাদের অনেক বেশী নাটক চলচিত্র দরকার এসব বাস্তব ঘটনা নিয়ে।
বুঝিনা যাদের সামর্থ আছে তারা কেন এদিকে ভাবেনই না।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৪৩

জোবাইর বলেছেন:
প্রথম মন্তব্য ও প্রথম লাইকের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আপনার প্রথম লাইক পেয়ে নিশ্চিত হলাম যে পোস্টটি দিয়ে ভুল করি নাই!
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:১৪

সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেছেন: কত শত ত্যাগে যে এই দেশের স্বাধীনতা। না এই দেশের মানুষ পারল এদের সম্মান দিতে, না পারল দেশের মর্যাদা মহিমান্বিত করতে! খালি করে গেল কামড়াকামড়ি ।
জয় বাংলা!

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:১৭

জোবাইর বলেছেন:

সব ত্যাগের কথা ইতিহাসে লেখা হয় নাই, যাদের কথা লেখা হয়েছে তাদেরও দাম দিতে পারি নাই!

“হয়তবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না
বড় বড় লোকেদের ভীড়ে জ্ঞানী আর গুনিদের আসরে
তোমাদের কথা কেউ কবে না,
তবু এই বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা
তোমাদের এই ঋণ কোন ঋণ কোন দিন শোধ হবে না
না না শোধ হবে না।”

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:২৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এই ঘটনাটা অনেক তরুণের জন্যই অনুপ্রেরণা দায়ক...

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৯

জোবাইর বলেছেন:
ধন্যবাদ,
মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও বীরত্বের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত করবে...

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হককে শ্রদ্ধা জানাই।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৫

জোবাইর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

৫| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৪৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: জোবাইর,




সহব্লগার মোঃ সাকিবুল ইসলাম এর কথাতেই বলি - কত শত ত্যাগে যে এই দেশের স্বাধীনতা ! এই দেশের মানুষ না পারল এদের সম্মান দিতে, না পারল দেশের মর্যাদা মহিমান্বিত করতে! খালি করে গেল কামড়াকামড়ি ।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৩:০৪

জোবাইর বলেছেন:
ভাইজান, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.