নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ও শান্তির অন্বেষায় ...

জোবাইর

বিনয়ী মূর্খ অহংকারী বিদ্বান অপেক্ষা মহত্তর।

জোবাইর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্তর মেরুতে নিশি রাতে সূর্য দর্শন - পর্ব ৭

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭


দেখতে দেখতে দিন প্রায় শেষ। হাতে সময় বেশি নাই। তাই আজকে অনেক এলাকা দেখার উদ্দ্যেশে সারাদিন গাড়ি নিয়ে ঘুরার জন্য প্ল্যান করলাম। কিরুনার দক্ষিণ-পূর্বদিকে ফিনল্যান্ডের সীমান্ত পর্যন্ত অনেকগুলো স্থান এর আগে লং ড্রাইভে ঘুরে এসেছিলাম (পর্ব ৫ দ্রষ্টব্য)। সেদিন এক রাস্তা দিয়ে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসায় বেশি এলাকা কভার করতে পেরেছিলাম। কিন্তু এবার যে রাস্তা দিয়ে যাবো সে রাস্তা দিয়েই ফিরতে হবে। কারণ বিকল্প কোনো বড় রাস্তা নাই।



আজ কিরুনার উত্তর-পশ্চিম দিকে নরওয়ের ন্যারভিক পর্যন্ত : kiruna → Nikkaluokta → Abisko → Björkliden → Riksgränsen → Narvik ভ্রমণের পরিকল্পনা। কিরুনা থেকে ন্যারভিক পর্যন্ত এলাকাটা মূলত পর্যটন এলাকা। সুইডেন-নরওয়ের উত্তর প্রান্তে গ্রীষ্মকালে নিশিরাতের সূর্য এবং অন্যান্য সময়ে শীতকালীন ক্রীড়া বা অরোরা দেখতে যারা আসে প্রায় সবাই অবস্থান করে কিরুনা অথবা ন্যারভিকে অথবা এ দূটি শহরের মাঝামাঝি স্থানের কোন একটি ট্যুরিস্ট স্পটে। পর্যটক আকর্ষনের জন্য এই এলাকাতে হোটেল, রিসোর্ট, পর্যটন কেন্দ্র, কটেজ, পার্ক, ট্রেইল/ট্রেক, মিডনাইট সান ও অরোরা ভিউ সেন্টার ইত্যাদি অনেক কিছু স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে কিরুনা - ন্যারভিক - কিরুনা নিয়মিত বাস ও ট্রেন সার্ভিস রয়েছে এবং দৈনিক ও সাপ্তাহিক টিকেটও সস্তায়। সাপ্তাহিক টিকেট দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে যতবার ও যতক্ষণ খুশি বাস-ট্রেনে চড়া যায়। বেশিরভাগ পর্যটক এভাবেই এই কিরুনা - ন্যারভিক ১৮০ কি.মি. এলাকা চষে বেড়ায়। যেসব পর্যটক এখানে বেশিদিন থাকে এবং যাদের বাজেট বেশি তারা এখান থেকে গ্যালিভারে, নরওয়ে-সুইডেন-ফিনল্যান্ড-এর সীমান্ত পয়েন্ট (Treriksröset) এবং নরওয়ের সর্ব উত্তরে অবস্থিত শহর Tromso ভ্রমণ করে।

নিক্কালুকটা (Nikkaluokta)



সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিক্কালুকটা রওয়ানা দিলাম। কারণ এটার অবস্থান একটু উল্টো দিকে। এখান থেকে আবার কিরুনা ফিরে এসে ন্যারভিকের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিতে হবে। কিরুনা থেকে ৭০ কিলোমিটার দুরত্বে নিক্কালুকটা স্থানটি তিনটি বিশেষ এলাকায় প্রবেশের গেটওয়ে বা সদর দরজা হিসাবে পরিচিত।

১ম: ক্যাবনেকাইছে পর্বতারোহীরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এখান থেকেই যাত্রা শুরু করে। পর্বতারোহীদের জন্য পর্বতের বিভিন্ন উচ্চতায় স্টেশন নির্মাণ করা আছে। সৌখিন পর্যটকরা সাধারণত কাছের কোনো স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসে। পর্বতারোহনের প্রয়োজনীয় সবকিছু এখানে পাওয়া যায়। যারা কোনো পরিশ্রম না করে টাকা দিয়ে পর্বতের চূড়া দেখতে চায় তাদের জন্য রয়েছে হেলিকপ্টার।
২য়: পর্বত, উপত্যকা, বন ও নদী বেষ্টিত এলাকার মধ্য দিয়ে ৪০০ কিলোমিটার দুর্গম পথে (কিংস ট্রেইল) হেঁটে যাওয়ার জন্য আসা দেশ-বিদেশের অনেক পরিব্রাজক তাদের দীর্ঘ রোমাঞ্চকর যাত্রা এখান থেকেই শুরু করে।
৩য়: কম সময়ে ঘুরে দেখার জন্য সাধারণ পর্যটকদের জন্য রয়েছে ৭ কিলোমিটার নদীপথে বোটে গিয়ে এবং এরপরে ১০ - ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ভিসতা উপত্যকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার প্যাকেজ ট্যুর।

কিংস ট্রেইল (Kungsleden)
ঐতিহাসিক কিংস ট্রেইল ট্রেকের শুরু কিরুণা-ন্যারভিক সড়কের পাশে অবস্থিত অবিস্কো থেকে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এসে যুক্ত হয়েছে নিক্কালুকটায়। এরপর এটি দক্ষিণ দিকে সম্পরসারিত হয়েছে। এখান থেকে কিংস ট্রেইলে প্রবেশের জন্য রয়েছে তোরণ। দেয়ালে পুরো ট্রেইলের বিস্তারিত তথ্যসহ বিরাট একটি নকশা আঁকা আছে। একজন পরিব্রাজক এখানে নকশাটি দেখে যাত্রার সঠিক পরিকল্পনা করতে পারে। কিংসলেডেন (কিংস ট্রেইল) সুইডিশ পর্যটন সংস্থার পরিকল্পনায় উত্তর সুইডেনের পার্বত্য এলাকায় প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি হাঁটাপথ বা ট্রেক। এটি উত্তরে আবিসকো থেকে শুরু করে পাহাড়, পর্বত, নদীনালা, মাঠ, তেপান্তর আঁকাবাঁকা পথে পেরিয়ে দক্ষিণে হেমওয়ানে এসে শেষ হয়েছে। এটি নেচার রিজার্ভের মধ্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা ইউরোপের দীর্ঘতম ট্রেইল। শীতকালে কিংস ট্রেইলের প্রায় একই পথ স্কি ট্রেল হিসাবে ব্যবহার হয়। ট্রেইলটি সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত এবং অনেকগুলি অংশে বিভক্ত। গ্রীষ্মের মৌসুমে হ্রদ এবং নদীগুলি নৌকা বা স্থানীয় চার্টার বোটে পারাপার হতে হয়। ট্রেইলটি পাঁচ ভাগে বিভক্ত।
Abisko – Nikkaluokta (১০৮ কি.মি.)
Nikkaluokta – Vakkotavare (৭২ কি.মি.)
Saltoluokta – Kvikkjokk (৭৩ কি.মি.)
Kvikkjokk – Ammarnäs (১৬৫ কি.মি.)
Ammarnäs – Hemavan (৮০ কি.মি.)


একজন সুস্থ-সবল লোক স্বাভাবিক গতিতে পালাক্রমে বিশ্রাম নিয়ে হাঁটলে প্রতিটি ভাগ পার হতে সময় লাগবে প্রায় ৫ থেকে ৭ দিন। সে হিসাবে পুরো ট্রেইল শেষ করতে লাগবে ২৫ থেকে ৩০ দিন! প্রতিটি অংশের শেষ ও শুরুতে ট্রেইল থেকে নিকটবর্তী পাবলিক রোডের সংযোগ রয়েছে। কেউ চাইলে একটি ভাগ ট্রেইল শেষ করে চলে যেতে পারে। পরে আবার অন্য সময় এসে সেখান থেকে শুরু করে পরের ভাগ হাইকিং করতে পারে। ট্রেইলের সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশটি হলো আবস্কো থেকে কেবনেকেইসে।

১০ থেকে ২০ কিলোমিটার পরপর ট্রেলের পাশে পরিব্রাজকেরা (হাইকার) বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রয়েছে টয়লেট, বাথরুম ও রান্না করার উপকরনসহ কেবিন। তবে ট্রেইলের একটি অংশে প্রায় ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে বিশ্রামের জন্য কোনো কেবিন, কুটির বা ছাউনি রাখা হয়নি। এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হাইকারদের জন্য করা হয়েছে যারা নিজেকে বেশ কাবিল মনে করে। আবার বিলাসী ও সৌখিন হাইকারদের জন্য রয়েছে ট্রেকের পাশে কটেজ যেখানে আরামে ঘুমিয়ে রাত কাটাতে পারবে। এগুলো আগে থেকে বুকিং দিতে হয়। কিংস ট্রেইল ছাড়াও এখানে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের আরো ট্রেইল আছে। এগুলো বিভিন্ন রকমের মানুষের উপযোগী করে বানানো হয়েছে। এমনকি প্রতিবন্ধি ও শিশুদের জন্যও রয়েছে স্বল্প দৈর্ঘ্যের বিশেষ ট্রেইল। পর্যটন কতৃপক্ষ ট্রেইলগুলি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করে।


যারা ঘরে বসে ৪৪০ কিলোমিটারের কিংসট্রেইলে ভার্চ্যুয়ালি হাইকিং করতে চান তাদের জন্য ৪২ মিনিটের এই ভিডিওটি

এখানে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক এসেছে শুধুমাত্র হাইহিং করার জন্য। এখানে নাকি অনেক মানুষের স্বপ্ন থাকে জীবনে একবার সম্পূর্ণ কিংসট্রেইল হাইকিং করা। সবকিছু দেখে বুঝা যায় হাইকিং এখানে বেশ জনপ্রিয়। সময়ের অভাব ও আগে থেকে পরিকল্পনা না থাকায় কিংস ট্রেইলে হাইকিং করা সম্ভব হয়নি। তারপরেও আমরা কিংস ট্রেইলের গেট দিয়ে প্রবেশ করে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার গিয়েছিলাম কিছুটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য। অন্ততপক্ষে ভবিষ্যতে বলতে পারবো ঐতিহাসিক কিংস ট্রেইলে জীবনে একবার হাইকিং করেছিলাম। নিজে পুরো ট্রেইল সফর না করলেও ট্রেইলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো এখানে যোগ করে দিলাম। কারণ যারা ভবিষ্যতে এখানে আসতে চায় তাদের জন্য এই লেখাটি গাইড হিসাবে কাজে আসতে পারে।

ভিসতা উপত্যকা

সুইডেনে অনেকেই প্রাত্যহিক জীবনের একগেঁয়েমী কর্মকান্ড ও মানুষের কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে এখানে এসে কয়েকটা দিন নিসর্গ প্রকৃতির সুনশান নীরবতায় নিজেকে বিলীন করে একাকীত্বকে উপভোগ করে।

কিংস ট্রেইলে কয়েক কিলোমিটার গিয়ে আমরা ভিসতা উপত্যকার দিকে টার্ন নিলাম। সামনে একটা নদী। সেখানে ইঞ্জিনচালিত বোটে ৬ - ৭ কিলোমিটার গিয়ে আমরা একটি ঘাটে নেমে গেলাম। সেখান থেকে বন ও বাগানের মধ্য দিয়ে মিনি ট্রেইল ধরে হেঁটে নিক্কলুকটায় ফিরে আসলাম। সাধারণত পরিবার নিয়ে যারা আসে তারা এভাবে নদীপথে গিয়ে স্থলপথে ফিরে এসে ভিসতা উপত্যকার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে। নদীটি পর্বতের বরফ গলা পানি থেকে সৃষ্টি। নদী, পর্বত, গাছপালা-তৃণলতায় আচ্ছাদিত বন পরিবেষ্টিত এই এলাকায় রয়েছে কিছু ছোট ছোট কুটির (cottage)। এই কুটিরগুলো ভাড়া নিয়ে অথবা পছন্দসই কোনো স্থানে তাঁবু খাটিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষেরা কয়েকদিনের জন্য এখানকার নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটায়। অবাক-বিস্ময়ে দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতির রূপ দেখে যখন মনে হচ্ছিল যে পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো গ্রহে চলে এসেছি তখন পায়ে একটা মশার কামড় খেয়ে সম্বিত ফিরে পেলাম এবং বুঝলাম যে এখনো পৃথিবীতেই আছি। গতকাল রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ঝোপঝাড়ে বেশ কিছু মশা। সাধারণত পালাক্রমে সামান্য বৃষ্টি আবার রোদ চলতে থাকলে খানা-খন্দকের পানি শুকায় না। তখন ঝোপঝাড়ে কিছু মশা দেখা যায়। একনাগাড়ে রোদ পড়লে আর মশা তেমন থাকে না।

অবিস্কো (Abisko)

অবিস্কো ট্যুরিস্ট স্টেশন, অরোরা স্কাই স্টেশন এবং ন্যাশনাল পার্ক

নিক্কালুকটা পর্ব শেষ করে ফিরে এলাম কটেজে। হালকা বিশ্রাম করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এবার নরওয়ের ন্যারভিকের উদ্দ্যেশে লং ড্রাইভের যাত্রা শুরু করলাম। এদিকের ভূপ্রকৃতি আবার অন্যরকম। বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে পাহাড় ও হ্রদ। কিরুনা-ন্যারভিক সড়কটি এই পাহাড় ও হ্রদের কিনার ঘেঁসে এঁকেবেঁকে এগিয়ে গেছে। যাত্রার ৯০ কিলোমিটার পরে অবিস্কো এসে পৌঁছলাম। অবিস্কো ট্যুরিস্ট সেন্টার প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে কাজ করে যাচ্ছে। এদের নিজস্ব হোটেল থেকে শুরু করে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা আছে। এরা পর্যটকদের বিভিন্ন প্যাকেজা ট্যুরের মাধ্যমে কাছের ও দূরের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। তাছাড়া নিশিরাতের সূর্য ও মেরুজ্যোতি দেখার জন্য রয়েছে এদের নিজস্ব ভিউ স্টেশন। এখান থেকে অল্প একটু ভিতরে (৬ কি.মি.) গেলে অবিস্কো ন্যাশনাল পার্ক। এটি বিরাট এলাকা জুড়ে খুবই সুন্দর জায়গা। আমরা কিছুদূর হেঁটে অবিস্কো ন্যাশনাল পার্কে গেলাম। পার্কটি খুবই সুন্দর। এটি হচ্ছে ন্যাচারেল পার্ক। অর্থাৎ পাহাড়, হ্রদ ও উন্মুক্ত মাঠের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে পরিকল্পনার আওতায় এনে বসার ব্যবস্থা ও হাঁটার রাস্তা করে সর্বসাধারণের বিচরণের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। আমাদের হাতে সময় কম থাকাতে দৌঁড়ের ওপর দেখে আবার যাত্রা শুরু করলাম। এখান থেকে অল্প দূরে বিউর্কলিডেন (Björkliden) নামে এলাকায় হোটেল-কটেজসহ আরো একটি পর্যটন অফিস আছে। সেটা অবিস্কো থেকে ছোট এবং বিশেষ করে শীতকালীন পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয়।

রিক্সগ্রেনসেন (Riksgränsen)

এখান থেকে আরো ১০-১২ কিলোমিটার যাওয়ার পর এসে পৌঁছলাম রিক্সগ্রেনসেন নামে একটি জায়গায়। এটি হচ্ছে সুইডেন ও নরওয়ের সীমান্ত সংলগ্ন একটি লোকালয়। এই জায়গাটি শীতকালীন খেলাধুলা বিশেষ করে স্কী চালবার জন্য বিখ্যাত। এখানেও হোটেল-রিসোর্ট আছে। এখান থেকে অল্প দূরে সুইডেন-নরওয়ে বর্ডারের চেকপোস্ট।

সুইডেন ও নরওয়ের বর্ডারের দুটি ছবি

আমার কাছে যেহেতু ডিক্লারেশন করার মতো কিছু নেই, তাই গ্রীন ট্রেক ধরে গাড়ি চালালাম। সুইডেনের বর্ডারে কেউ পাসপোর্ট-ভিসা চেক করেনি। এরপর একইভাবে নরওয়ের চেকপোস্ট পাস হওয়ার সময় নরওয়ের বর্ডার গার্ড আমাদের গাড়ি থামাবার জন্য সিগন্যাল দিলেন। আমাদের পাসপোর্ট-ভিসা দেখলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন আমরা সুইডেনে ফেরত আসবো কিনা। আমি বললাম, এ গাড়িটা কিরুনা থেকে ভাড়া নিয়েছি, এটা ফেরত দিতে তো আসতেই হবে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকেও জানতাম যে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের লোক 'জঞ্জাল' এদের দেশ থেকে বের হলেই এরা খুশি। মনে হয় তাই বের হওয়ার সময় তেমন একটা চেক করে না। আর ঢোকার সময় ম্যগনেফিসিয়েন্ট গ্লাস দিয়ে পাসপোর্ট/ভিসা চেক করে, আবার অনেক প্রশ্ন। যা-ই হোক চেকপোস্ট থেকে বিদায় নিয়ে নতুন দেশে নতুন অ্যাডভেঞ্চারের অনুভূতি নিয়ে ন্যারভিকের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করলাম।

ন্যারভিক (Narvik)

ন্যারভিকে যাওয়ার রাস্তার দুটি ছবি

নরওয়ে আয়তন ৩,৮৫,২৫২ বর্গ কিলোমিটার (বাংলাদেশ থেকে প্রায় আড়াই গুণ বড়), লোকসংখ্যা মাত্র ৫৪ লক্ষ! (বাংলাদেশের ৩০ ভাগের ১ ভাগ) চিটাগাং শহরের লোকসংখ্যার সমান। আমাদের চট্টগ্রামে অনেক বড় লোক আছে যারা নরওয়ের সব অধিবাসীকে প্রতিদিন মেজবানী খাওয়াতে পারবে :)। নরওয়ে দেশটা সাপের মতো, উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার লম্বা। এটি উত্তরদিকে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে টপকিয়ে রাশিয়া ছুঁয়েছে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সাথে যথাক্রমে ১৬০০ ও ৭০০ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমানা (শুধুমাত্র মহাসড়কে চেকপোস্ট)। দেশের বেশিরভাগ অংশ পার্বত্য এলাকা। আবার বেশিরভাগ পাহাড় শুধু পাথরের সেখানে কিছুই উৎপন্ন হয় না। দীর্ঘ শীতকালে সবকিছু বরফের নিচে ঢাকা থাকে। বছরের দুই মাস এখানে সূর্য ওঠে না। এরকম একটা দেশ বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি! উত্তর সাগরের বিপুল পরিমাণ তেল ও গ্যাসের মালিক এখন নরওয়ে। ইউরোপর একমাত্র তেল রপ্তানীকারক দেশ নরওয়ের সবচেয়ে বড় আয় হচ্ছে এই তেল ও গ্যাস।

ন্যারভিক শহর ও বন্দর

ন্যারভিক একটি ছোট শহর। লোকসংখ্যা মাত্র ১৫,০০০। এটি মূলত গড়ে উঠেছে বন্দরকে কেন্দ্র করে। এই শহরের গোড়া পত্তনের পেছনে রয়েছে সুইডেনের লোহার আকরিক। আজ থেকে প্রায় ১২০ বছর আগে সুইডনের উত্তরাঞ্চলে প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ লোহার আকরিক বহির্বিশ্বে রপ্তানীর জন্য নিকটস্থ এলাকায় একটি সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজন পড়ে। মূলত সুইডেনের উদ্যেগে কিরুনা থেকে ন্যারভিক পর্যন্ত ১৭০ কিলোমিটার রেলসড়কও নির্মিত হয়েছিল ঠিক একই কারণে। বছরের দীর্ঘসময় বরফে ঢাকা পার্বত্য এলাকায় রেলসড়ক ও বন্দর নির্মাণ তখনকার জন্য ছিল একটি ব্যয়বহুল মেগা প্রজেক্ট। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানীর হিটলার উত্তর নরওয়ে দখল করে নিয়েছিল। যুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এখানে রয়েছে একটি ওয়ার মিউজিয়াম।

ন্যারভিকে ঢুকে প্রথমে যেখানে মার্কেট দেখলাম সেখানে থামলাম। মার্কেটের পাবলিক টয়লেটে গিয়ে ভিতরে-বাইরে ফ্রেশ করে Peppes Pizza নামের একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া সেড়ে নিলাম। এখানকার ছোট ছোট শহরগুলো দেখতে আমার কাছে প্রায় একরকম মনে হয়। হাতে সময়ও বেশি নেই। তাই বেশি ঘোরাঘুরি না করে ফিরতি পথে রওয়ানা দিলাম। কিছুদূর আসার পর রাস্তার পাশেই বিরাট একটি হ্রদ। পাহাড়-পর্বতে জমে থাকা বরফ গলা পানি পাথর গড়িয়ে এখানে এসে জমা হয়। তাই পানি খুবই পরিস্কার ও একটু ঠান্ডা। হ্রদটার পাশে পাথর দিয়ে গোসল করার ব্যবস্থা। চারিদিকে দৃষ্টির সীমানার মধ্যেই কোনো লোকজন নেই। পাহাড়গুলোর দিকে দেখলে মনে হয় আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নীরব-নিস্তব্ধ ভৌতিক পরিবেশ! মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে দু-একটা গাড়ি যাওয়ার সাঁ সাঁ শব্দ। সাহস করে আমরা বাপ-বেটি হ্রদে গোসল করলাম, সাঁতার কাটলাম। এখন নিজেদেরকে খুব সতেজ মনে হচ্ছে। কিরুনার উদ্দ্যেশে আবার যাত্রা শুরু করলাম।

ডানদিকের রাস্তাটি সুইডেনের কিরুনা যাওয়ার, সোজা রাস্তাটি চলে গেছে নরওয়ের সর্বউত্তরের শহর Tromso অর্থাৎ উত্তর মেরুর দিকে।

এই মোড়ের সামনে এসে ভাবতে লাগলাম, বারবার তো আর এখানে আসা হবে না। এতটুকু পথ যখন এসেছি পৃথিবীর আরো উত্তরে যাই যতটুকু যাওয়া যায়। মানুষের মন যত পায় তত চায়। আমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলাম ওর মতামত কী। সে গাড়িতে বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়েই কাঠিয়েছে, তারপরেও খুব ক্লান্ত। সেও দেখলাম বেশ উৎসাহী। আল্লাহ ভরসা করে ছুটলাম উত্তরের দিকে। এখান থেকে ট্রমসো শহরের দূরত্ব ২৩০ কিলোমিটার। এখানে কিছু কিছু রাস্তা পাহাড়ের পাশ দিয়ে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। একটু এদিক-সেদিক হলে গাড়ি অনেক নিচে পড়ে যাবে। নরওয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যও খুব সুন্দর, তবে ভূ-প্রকৃতি প্রায় একই রকম - পাহাড়, নদী/হ্রদ। কিছু পাহাড়ে সামান্য গাছপালা আছে, আর কিছুতে শুধু পাথর।


Bjerkvik নামে একটি জায়গায় এসে রাস্তার পাশে এই অপরূপ দৃশ্য দেখে থামলাম। উপরে ঝলমলে নীল আকাশ নীচে নীল দরিয়ার জলে সূর্যের চিকচিক আলো দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হওয়ার এখনও অনেক বাকী। যখন ঘড়ির দিকে দেখলাম ভয় পেয়ে গেলাম, রাত সাড়ে দশটা! না, পাগলা মনের লাগাম ধরে একটা টান দিলাম। উত্তরের খেপ এখানে শেষ করে এবার কটেজে ফিরতে হবে। এখান থেকে সুইডেনের কিরুনা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। পথে ছোট ছোট বিরতি নিয়ে একনাগাড়ে গাড়ি চালিয়ে গেলে কটেজে পৌঁছতে রাত দু'টা বেজে যাবে। তাই দেরী না করে এখান থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু করলাম। সহি-সালামতে কিরুনার কটেজে গিয়ে পৌঁছলে আবার আগামী (শেষ) পর্বে কথা হবে।

ফটো গ্যালারি:

১। উত্তর সাগরে নরওয়ের তেল উত্তোলনের প্লাটফরম (Oil rig)

২। ২য় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্য ন্যারভিক ওয়ার মিউজিয়াম

৩। ভিসতা উপত্যকায় হাঁটা পথের পাশে তোলা আমার মেয়ের ছবি

৪। ন্যারভিকের অদূরে সড়ক পাশে একটি হ্রদে আমাদের স্নান ও সাঁতার

৫। কিংস ট্রেইলের মানচিত্র

৬। কিংস ট্রেইলের পাশে তাঁবুতে রাত কাটানো

৭। কিরুনার কিংস ট্রেইলে এই ভ্রমণ কাহিনীর লেখক


(আগামী পর্বে সমাপ্ত)
_________________________________________
তথ্য ও ছবিসুত্র: ছবি কিছু নিজের, কিছু ইন্টারনেট থেকে নেওয়া

     ◄ পর্ব ৬ - উত্তর মেরুতে নিশি রাতে সূর্য দর্শন

মন্তব্য ৩৪ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (৩৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১২

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: ভয়ংকর সুন্দর জায়গা।ছবিগুলো চমৎকার। ছবিগুলো পোস্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৭

জোবাইর বলেছেন: প্রথম মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৭

জুন বলেছেন: আহা কি মনোরম দৃশ্য, শান্ত সমাহিত পরিবেশ চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত। সুন্দর বর্ননা। কিংস ট্রেইলে ট্রাকিং পুরোটা না হলেও কিছুটা তো স্বাদ পেয়েছেন মাইল চারেক হেটে।
ভ্রমণ ব্লগ লিখতে শুরু করেছেন যখন তখন সেই সব জায়গার ছবি তুলে আনবেন আপনাদের ছাড়া। আপনার তোলা ছবি দিতে পারবেন । চীনে যখন ঘুরতে যাই তখন আমি ব্লগ কি জিনিস জানতাম না। সুতরাং চীনের বেশিরভাগ ছবিতেই দেখা যাচ্ছে আমরা আছিই। এখন তাই লেখার জন্য আলাদা ছবি তুলি :)
+

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০৭

জোবাইর বলেছেন: প্রসংশিত মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। এখন থেকে ভ্রমণ করলে ব্লগের জন্য আলাদা ছবি নিতে আর ভুল করবো না। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দৃশ্যের সুন্দর প্যানোরামা ছবি তোলা এক সময় আমার শখ ছিল। এখন পরিবার নিয়ে ভ্রমণে গেলে সময়ের অভাবে আলাদা করে ছবি তোলার সময় হয় না। তাই পোস্টে নিজের তোলা ছবি তেমন দিতে পারি নাই।

৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৩

রামিসা রোজা বলেছেন:
জায়গাটাও যেমন সুন্দর আপনার হাতের দক্ষতাও তেমন‌।
নীল আকাশের ছবিগুলো খুব ভালো লাগছে।
ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোষ্ট শেয়ার করার জন্য।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২২

জোবাইর বলেছেন: আপনার নিকটা (রামিসা রোজা) খুবই সুন্দর! আগে চোখে পড়েছে বলে মনে হয়নি। সামু ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। আপনার ব্লগ বাড়ি থেকে ঘুরে আসলাম। আপনি ব্লগে নতুন হলেও এরমধ্যে চমৎকার দুটি পোস্ট ও ৮৫টি মন্তব্য করেছেন! আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন। নীল আকাশের ছবিগুলো আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। পাঠ ও মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একদিকে চোখ ধাঁধাঁনো ছবি, দারুন রোমাঞ্চকর বর্ণনায় মুগ্ধতা
আর অজানিতেই দীর্ঘশ্বাস এর চিনচিনে ব্যাথা মনের কোথাও!
আহারে- আমার সোনার স্বদেশ কি এমন ছভির মতো হতে পারে না!!!!

যাক ব্লার করা হলেও লেখক দর্শন দেয়ায় ধন্যবাদ।
নুন ছাড়া তরকারীতে আজ নুন পেয়ে সোয়াদ যেন বেশি হলো :)

++++

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫১

জোবাইর বলেছেন: ভৃগু ভাই, শুভেচ্ছা নেবেন। এসব দৃশ্য দেখে দীর্ঘশ্বাস ও মনে চিনচিনে ব্যাথা লাগারই কথা। এসব দেশের এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্থায়িত্ব মাত্র চার থেকে পাঁচ মাস। এরপর দীর্ঘ শীতকালে বেশিরভাগ গাছ ন্যাড়া হয়ে বরফে ঢেকে থাকে। অথচ আমাদের দেশের জলবায়ু প্রায় সারা বছরই সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের অনুকূলে। তারপরেও আমরা পারি না।

আমাদের দেশের এত সুন্দর প্রকৃতি সরকার, কতৃপক্ষ এবং মানুষের অবহেলা ও ধংসাত্মক কার্যকলাপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর আমরা সবুজ বনারণ্য, নির্মল বায়ু, উন্মুক্ত নীল আকাশ এবং নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন সৈকতের উদ্দেশ্যে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি! লজ্জার কথা।
এই ভ্রমণটি অনেক আগের। তখনকার এনালগ ক্যামেরায় তোলা বেশিরভাগ ছবিই পারিবারিক। ব্লগে দেওয়ার মতো যুতসই তেমন ছবিও পাচ্ছি না। তাই ভাবলাম ব্লগে প্রায় একযুগ হয়ে গেল, পর্দার আড়াল থেকে একটু সামনে আসি :)। ব্লারটা হলো নববধূর ঘোমটার মত আর কি! এক সময় সেটাও আর থাকবে না। চমৎকার অর্থবহ মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৯

ইসিয়াক বলেছেন: ছবি দেখে এতোটাই মুগ্ধ যে কি বলবো। আপনার ছবিটা ব্লার করলেন কেন? পোস্ট পড়ে মন্তব্য করবো।
শুভকামনা।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৮

জোবাইর বলেছেন: ধন্যবাদ, ছবি আগামীতে সময়ের সাথে সাথে আরো পরিস্কার হয়ে যাবে।

৬| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৭

তারেক ফাহিম বলেছেন: পোস্ট পড়ে পড়ে আপনার সাথে ঘুরে আসলাম।

ছবিটি ব্লার হলেও লেখককে দর্শনের সুযোগ হয়েছে।
পোস্টে ৬ষ্ঠতম ভালোলাগা।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫৫

জোবাইর বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনীর সহযাত্রীকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

৭| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: সুইডেন আর নরওয়ের বর্ডার এর রাস্তা কি সুন্দর।

এদিকে আমাদের বাংলাদেশ আর ভারতের বর্ডার পার হবার সময় মনে হয় এক বস্তি দেশ থেকে আরেক বস্তি দেশে এলাম।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৩

জোবাইর বলেছেন: সাধারণ মানুষ বিদেশ ভ্রমণের জন্য দীর্ঘ সময় টাকা সঞ্চয় করে। এরপর নতুন দেশ দেখার রোমাঞ্চ ও স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এ ধরনের পর্যটকরা ভারত-বাংলাদেশ বর্ডারে নতুন দেশে প্রবেশের শুরুতেই নোংরা পরিবেশ ও চেকপোস্টের বাজে আচরনে হতাশ হয়। ভারত-বাংলাদেশ বর্ডারের উভয়দিকে পরিস্থিতি একইরকম হওয়ার কারণ দেশ দুটো হলে কি হবে জাত তো এক - বাঙালি!

৮| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৫৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আপনার ছবি অনেক অদেখাও দেখা হলো জানা হলো ।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৫

জোবাইর বলেছেন: ধন্যবাদ, ছবি দেখেছেন এবং সেই সাথে অনেককিছু জেনেছেন শুনে খুশি হলাম।

৯| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫২

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: কী সুন্দর! কী সুন্দর! লিখেছেন খুব গুছিয়ে। পোস্টে অনেক ভালোলাগা।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৩

জোবাইর বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পোস্ট ভালো লেগেছে জেনে ভবিষ্যতেও লেখার উৎসাহ পেলাম।

১০| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৫

করুণাধারা বলেছেন: উত্তর মেরুতে নিশি রাতে সূর্য দর্শনের চতুর্থ পর্ব প্রথম পড়ে এতটাই ভালো লেগেছিল যে ঠিক করেছিলাম প্রথম পর্ব থেকে পড়া শুরু করব। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের অর্ধেক পড়া হয়েছে, খুবই ধীরে সুস্থে প্রতিটি ছবি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে পড়ছি। আপনার বর্ণনা এমন যে মনে হয় সবকিছু দেখতে পাচ্ছি। ম্যাপ দেয়ায় বুঝতে সুবিধা হচ্ছে।

ষষ্ঠ পর্বও পড়ে মুগ্ধ হয়েছি; এই পর্ব পড়ে ভাবলাম ভালো লাগাটা জানিয়ে রাখি। আজকাল পরে করব বলে কিছু করবো বললেও করতে পারব তার নিশ্চয়তা কই!!

আপনার ছোট্ট কন্যাটিকে দেখে ভালো লাগলো। ওর জন্য অনেক শুভকামনা।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৭

জোবাইর বলেছেন: আপনি সবগুলো পর্বের ছবি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে পড়ছেন জেনে মনে হলো ভ্রমণ কাহিনীিট লেখার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। সময়ের অভাবে যখন ব্লগে এক ঝলক চোখ বুলিয়ে যায় তখন কিছু পোস্টের শিরোনাম দেখে আমিও মনে করি লেখাগুলো পরে সময় নিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু পোস্টগুলো প্রথম পৃষ্টা থেকে সরে গেলে আর মনে থাকে না। আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড!

আন্তরিকাপূর্ণ চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনার জন্যও শুভকামনা।

১১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১০

নতুন বলেছেন: প্রিয়তে রেখে দিলাম্। অরোরা দেখতে যাবার ইচ্ছা আছে। তখন আবার পড়ে নেবো।

খুবই ভালো লেগেছে। ++

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০৩

জোবাইর বলেছেন: ভালো লাগায় ধন্যবাদ। আশা করি তখন কাজে লাগবে।

১২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৮

মুজিব রহমান বলেছেন: লেখা ও ছবিগুলো খুবই সুন্দর। ছবিগুলো থেকে যেনো ঠাণ্ডা নেমে আসছে।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৮

জোবাইর বলেছেন: ধন্যবাদ। ছবিগুলো গ্রীষ্মকালের হলেও কিছুটা শীতের আমেজ রয়ে গেছে! উত্তরের এ দেশগুলোতে দীর্ঘ শীতকালের জমাট বরফ স্বল্পদিনের গ্রীষ্মে সম্পূর্ণ গলে না। তার আগেই আবার শীত চলে আসে।

১৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৫

মা.হাসান বলেছেন: আগের পর্বের মতোই অসাধারণ লেখা।

ঐ সময়ে লেকের পানি কি ঠান্ডা ছিলো না? এই সব দেশ সম্পর্কে আমার ধারনা- ১২ মাসই ঠান্ডা। ৬ মাস ফ্রিজের মতো ঠান্ডা, বাকি কয় মাস আমাদের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মতো ঠান্ডা। আমার ধারণা নিশ্চয়ই ভুল ।

এত নির্জন জায়গা দেখলেও তো ভয় লাগে।

চাটগার লোকেরা শুধু মেজবান খাওয়াতেই জানে না, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে খেলাপি হতে হয় কি ভাবে, আর তার পরেও কিভাবে নিরাপদে থাকতে পারা যায় সেই রহস্যও জানে। #:-S

নিক্কালুকটা থেকে ন্যারভিক- ম্যাপ দেখে প্রথমে মনে হয়েছিলো এত ঘোরা পথ কেনো? বিইসফোর্ড-স্যানগেলি-অ্যালেসিয়াউরেস্টুগরনা-টারফালা হয়ে আসলে তো পথ কম হবে। ম্যাপে খোজ করে দেখি ওখানে হাঁটা পথ ও নেই!

কিংস ট্রেইলের পাঁচটা অংশ আলাদা যোগ করলে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার হয়। মনে হয় ওভারল্যাপিং আছে, বা ঐ পথ গুলোর কোনো কোনো অংশ ট্রেইলের বাইরেও বিস্তৃত। যা হোক অভিনন্দন আপনি সেই ট্রেইলের ১ শতাংশ হলেও হেঁটেছেন! যারা এক মাস ভ্যাকেশনের পুরোটাই হাঁটতে চান তারা পুরো করুক, আমাদের আপত্তি নাই।

আবার বলছি, অতি চমৎকার লেখা।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৯

জোবাইর বলেছেন: চমৎকার অভিমতসহ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, হাসান ভাই। এখানে লেক/নদীর পানি ঠান্ডা কারণ গ্রীষ্মকাল এতই ছোট যে পানি গরম হওয়ার মতো পর্যাপ্ত রোদ ও তাপ পায় না। গোসল অনেকটা আমাদের দেশে শীতকালে গ্রামের পুকুরে যেভাবে করতাম - ঘাটে বসে কিছুক্ষণ রোদ পোহালাম, তারপর পানিতে লাফ দিয়ে একটা ডুব মারলাম, কিছুক্ষণ সাঁতার কাটলাম। এরপর গোসল শেষে আবার কিছুক্ষণ রোদ পোহালাম।

"১২ মাসই ঠান্ডা। ৬ মাস ফ্রিজের মতো ঠান্ডা, বাকি কয় মাস আমাদের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মতো ঠান্ডা।" - আপনার ধারণা ৯০% সঠিক। তবে জুলাই-আগস্ট মাসে এক নাগাড়ে কয়েকদিন রোদ পড়লে আবহাওয়া অনেকটা আমাদের বসন্ত কালের মতো হয়। তখন এরা পরনে কাপড়চোপর রাখতে চায় না, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রোদ লাগাতে চায়। :)
প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এখানেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ছোট হয়ে যাচ্ছে এদের শীতকালও।

চাটগার লোকেরা মেজবান খাওয়ানোর টাকা কীভাবে আয় করতে হয় সেটাতো জানেই, তাছাড়া আবার বিশ্বাস করে যে আয় অবৈধ হলেও সমস্যা নাই। মেজবান খেয়ে হাজার হাজার লোক যে দোয়া করবে তাতেই তারা বেহেস্তে চলে যাবে।!
নিক্কালুকটা থেকে ন্যারভিক বিরাট এলাকা হলেও রাস্তার সংখ্যা কম হওয়ার কারন বিরল জনবসতি। রাস্তা যেগুলো আছে সেগুলোতেও হাঁটা-চলার মানুষ নাই।

কিংস ট্রেইলের বেশিরভাগ অংশ পড়েছে দুর্গম পার্বত্য এলাকায়। এখানে গ্রীষ্মেও মেঘলা দিনে হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে ক্ষণিকের জন্য তুষারপাত হয়। অনেকটা আমাদের দেশের শিলাবৃষ্টির মতো। এ ধরনের বৈরি আবহাওয়ায় অনেক হাইকার অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থতা বা অন্য যে কোনো কারণে কেউ রণভঙ্গ দিয়ে যদি ফিরে যেতে চায়, তাকে প্রথমে মূল ট্রেইল থেকে নিকটস্থ পাবলিক রোডে যেতে হবে। এই দূরত্বও প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার। প্রতিটা ধাপের পর এ ধরনের সংযোগ হাঁটারাস্তা আছে, নিরাপত্তার কারণে হাইকারদের এই সংযোগ রাস্তা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত করা হয়। এই সংযোগ রাস্তাগুলোর দৈর্ঘ্য মূল ট্রেইলের সাথে যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৫০০ কিলোমিটারের ওপর হতে পারে।

আসলে জায়গাটা পড়েছে পৃথিবীর এক কিনারে, অনেক দূর! কাছে হলে মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিয়ে কিংস ট্রেইলের পুরোটাই হাঁটতে আবার আসতাম।
ভালো থাকুন, আগামী (শেষ) পর্বে আবার কথা হবে।

১৪| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৩৮

শায়মা বলেছেন: ছবিগুলো দেখে মনে হয় অপার্থীব সুন্দর কোনো স্বর্গরাজ্য!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:১৫

জোবাইর বলেছেন: অনেকটা তাই! ধন্যবাদ।

১৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:০২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



বেশ মনযোগ দিয়ে পোষ্টটি পড়লাম ।
বিববণ ও ছবিগুলি খুবই সুন্দর ও ভাল লেগেছে ।
বিবরনী থেকে অনেক অজানা বিষয় জানলাম ।
পোষ্টটি প্রিয়তে গেল ।
আপনার মেয়ে তথা আমাদের মামনির জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা ।
উত্তরের যাত্রা নিয়ে আমার পর্বাকারে বেশ কয়েকটি পোষ্ট রয়েছে ।
লিংক ফলো করে দেখে আসতে পারেন
উত্তরের যাত্রা - ১ম পর্ব : মেরুজ্যোতি দর্শন

ভাল থাকার শুভ কামনা রইল ।





০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫৪

জোবাইর বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার উত্তরের যাত্রা সিরিজটি পড়েছি। বিস্তারিত বর্ণনাসহ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। আমার এই সিরিজে প্রাসঙ্গিক স্থানে আপনার লেখাগুলোর লিংক যোগ করে দিয়েছি।

১৬| ৩০ শে জুন, ২০২১ রাত ১২:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: কোলাজকৃত ছবিগুলো স্বপ্নের মত সুন্দর!
পায়ে একটা মশার কামড় খেয়ে সম্বিত ফিরে পাওয়ার বর্ণনাটা বেশ চমকপ্রদ হয়েছে! :)
আবিস্কো এবং ন্যারভিক যাওয়ার রাস্তার দুটো ছবি খুব সুন্দর! ফটো গ্যালারিও।
পোস্টে ত্রয়োদশ ভাল লাগা + +।

২৮ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৩:৫৪

জোবাইর বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যের জন্য আবারো অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনেকদিন পরে এদিকে ঘুরতে এসে আপনার মন্তব্যটি চোখে পড়লো। প্রতিমন্তব্যে দেরি হওয়ায় দুঃখিত।

১৭| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৫৪

মিরোরডডল বলেছেন:




ছবিগুলো অদ্ভুত সুন্দর !
চোখ ফেরানো যায়না এমন ।



২৮ শে আগস্ট, ২০২২ ভোর ৪:০৩

জোবাইর বলেছেন: সুইডেনের উত্তরাঞ্চলে শীতকালে অত্যন্ত শীতের কারণে জনবসতি খুবই কম। গ্রীস্মের দিনে এই দিগন্ত বিস্তৃত চোখ ধাঁধানো সুন্দর এলাকাগুলোতে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য্য উপভোগ করার সময় যখন দেখি আমার দৃষ্টিসীমানার মধ্যে কোন জনমানব নেই তখন মনে হয় পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো গ্রহে চলে এসেছি।

পোস্টের ছবিগুলো সুন্দর লেগেছে জেনে খুশি হলাম, ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.