নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ব্লগের লেখা সম্পূর্ণরূপে আমার ব্যক্তিগত মতামতের প্রতিফলন। আমার চাকুরী, চাকুরীদাতা কর্তৃপক্ষ ও কর্মস্থলের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নাই।

জওয়াদুল করিম খান

জওয়াদুল করিম খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোন কিছুই ফেলনা নয় -২: বেখাপ্পা চাকা

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১১



এক বনের মধ্যে বাসা বানিয়ে এক সাথে থাকত এক মোরগ, সঁজারু, ব্যাঙ আর মৌমাছি। নানা জাতের হলেও তারা খুব সুন্দর মিলে মিশে থাকত ও প্রত্যেকে যথাসাধ্য পরিশ্রম করত। যত কাটাকুটি রান্না বান্না আর সংসারের ভারী কাজ করত মোরগ। সঁজারু বনে বনে ঘুরে ফলমূল, শাকসব্জি ও খাদ্যশস্য কুড়িয়ে আনত। ব্যাঙ ছিল পানির দায়িত্বে। আর দলের সবচেয়ে ছোট সদস্য মৌমাছি বুনে দিত সবার কাপড়-চোপড়। এই ভাবে তারা বেশ সুখে দিন কাটাত। তবে তারা ভাবত কি করে যার যার কাজ আরও আধুনিকভাবে করা যায়।

একদিন বিকালে তারা ঘুরতে বেড়িয়েছে। দেখে পথের উপর একটি চার চাকার কাঠের ঠেলাগাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তারা ঠিক করল গাড়িটি তারা নিয়ে গিয়ে নিজেদের কাজে লাগাবে। কিন্তু চার জনে মিলে অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও গাড়িটিকে একচুলও নড়াতে পারল না। “আরে, বোকার দল, তোমরা দেখেছো গাড়ির চাকাগুলি কেমন? বহু দিন আগে এক ভালুক এটা বানিয়েছিল, ঠিকমতো হয় নি দেখে ফেলে দিয়েছে” তারা তাকিয়ে দেখে এক খরগোশ তাদের প্রতি হাসতে হাসতে কথাগুলি বলছে। তারা লক্ষ্য করে দেখে সত্যই তো এই গাড়ীর চার চাকা চার সাইজের, ঠেলে নেওয়া অসম্ভব। তখন তারা করল কি, গাড়ীর চাকাগুলি সব এক এক কওে খুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সবচেয়ে বড়ো চাকাটি নিল মোরগ, পরেরটা সঁজারু, পরেরটা ব্যাঙ, আর সবচেয়ে ছোটটি নিল মৌমাছি, চাকাগুলি গড়িয়ে নিয়ে তারা বাড়ি চলল। খরগোশ তাদের কাজ দেখছিল আর হাসছিল, “আরে, পাগলার দল, এই চাকাগুলি নিয়ে কি করবে? যাহোক পথ থেকে আবর্জনা সরাচ্ছো এটাই ভাল।” এই বলে সে লাফাতের লাফাতে নিজের পথে চলল।


যাহোক কয়েক মাস কেটে গেছে, ঐ পথ দিয়ে যেতে যেতে সেই খরগোশের হঠাৎ মনে হল দেখি তো সেই চার পাগলা কি করছে, তার নিজের সময় অবশ্য আজকাল খুব ভাল যাচ্ছে না, কিছু না করে কি খাওয়া জোটে। যাহোক টুক টুক করে সে গেল মোরগদের বাসায়। তাদের বাসা সে আগেও দেখেছে কিন্তু এবার মনে হল বাসার জৌলুস বেড়েছে। বাসার সামনে ছোট্ট লন্। খরগোশকে দেখে তারা খুব সমাদার করে সেখানে বসালো।

মোরগ নিয়ে এল এক প্লেট ভর্তি গরম গরম পিঠা আর কেক। সে সেই যে চাকা কুড়িয়ে এনেছিল, তাতে কয়েকটি পাত লাগিয়ে বাড়ীর পাশের ঝরণায় ফিট্ করছে, যা দিয়ে সে তার গম-ভাঙানো যাঁতা ঘুরায়, তাদের এখন আটা ময়দার অভাব নাই।

একটু পর সঁজারু নিয়ে এল খুবই সুন্দর কিছু আপেল। খরগোশ অবাক, “এই আপেল তো এদিক হয় না, কোথায় পেলে?” সঁজারু তার চাকাটি দিয়ে এক চাকার এক ঠেলাগাড়ী বানিয়েছে তাই দিয়ে সে অনেক দূরের বন থেকেও ফলমূল নিয়ে আসতে পারে। আর ব্যাঙ বললো, “এসো, দেখে যাও, আমি কি করি।” খরগোশ দেখে ব্যাঙ তার চাকা দিয়ে একটি কপিকল বানিয়েছে, আর পানি তুলছে কুয়ো থেকে। সেই পানি দিয়ে কুয়োর পাশে খুব সুন্দর একটি বাগান করেছে। এগুলি দেখে আর ভরপেট খেয়ে খরগোশ যখন বিদায় নিতে যাচ্ছে, ছোট্ট মৌমাছি একজোড়া হাতমোজা নিয়ে উড়তে উড়তে এল, খরগোশের জন্য উপহার। সে তার চাকা দিয়ে একটি বুনন যন্ত্র বানিয়েছে, তা দিয়েই এই হাতমোজা বানানো।

খরগোশ অভিভূত, সত্যই কত কাজের এই চারটি প্রাণি। একটি বাতিল গাড়ীর চাকাগুলি দিয়ে কতো কি বানিয়েছে। যেতে যেতে হঠাৎ সে ঘুরে তাকালো, সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।

“আমাকে তোমাদের দলে নেবে? আমিও খুব পরিশ্রম করবো।” খরগোশ হাত কচলাতে কচলাতে বললো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩৭

জুন বলেছেন: এই রাশান উপকথাটি অনেক ছোটবেলায় পড়েছি প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত আর বইটির নাম নানা চাকা নৌকা । অনুবাদ যতদুর মনে পরে ননী ভৌমিক ।
বহু বছর পর আবার আপনার লেখায় ছবিগুলো মনে ভেসে উঠলো । ভালোলাগলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.