নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্যানভাসের আঁচড়

বিশিষ্ট ভাবুক,সব সময় ভাবি,আর ভাবতেই ভাল লাগে।

একজন বাঁধন

মাঝে মাঝে লিখতে ভাল লাগে তাই টুক টাক লিখার চেষ্টা করি।

একজন বাঁধন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বকুল ফুলের মালা

০৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭

খুব সাধারণ একটি ছেলে মুরাদ।কখনও মা-বাবা কে ছেড়ে একা একা কোথাও থাকেনি।এস এস সি তে ভাল করায় জেলা শহরের একটি নাম করা কলেজে ভর্তি হয়েছে।আজ ওর কলেজে প্রথম দিন।একটু ভয় ভয় করছে ওর।মা কে খুব মনে পড়ছে ওর।



কলেজে এসে মুরাদের ভয় আরও বেড়ে গেল।কাউকে চেনে না সে ,তাই ভয়টা আরও বেড়ে গেল।সবাই সবার পুরাতন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যাস্ত।কি করবে ভেবে পায়না মুরাদ।শেষে মুরাদ ক্লাস রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকে এবং সবাইকে দেখার চেষ্টা করে,কেউ গল্প করছে কেউবা মোবাইলে গান শুনছে আর কেউবা ওর মত চুপচাপ বসে আছে।



আজ শুক্রবার কলেজ বন্ধ।মুরাদ তাই চুপচাপ শুয়ে থাকে বিছানায়।কলেজে যাওয়ার তাড়া নেই।এর মধ্যে মুরাদের বেশ কয়েকটা ভাল বন্ধু জুটে যায়।রুমকির কথা হঠাৎ করে মনে পড়ল ওর। মেয়েটাকে খুব ভাল লাগে ওর।রুমকি ওকে দেখলেই কেমন যেন করে আর চুরি করে ওর দিকে তাকায় সবসময়।"এটা কি সত্যি,না আমি ভুল দেখি"মাঝে মাঝে ভাবে ও।হয়তোবা ভুল দেখে ও তবে যাই হোক না কেন মেয়েটাকে খুবি ভাল লাগে ওর।এখন রুমকিকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ওর।কিন্তু আজ যে দেখা হবে না।কখন যে শনিবার আসবে এই ভেবে আবারও ঘুমিয়ে পরে ও।



একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায় রুমকির।দুঃস্বপ্নটা মুরাদকে নিয়ে।"ছেলেটা এমন কেন, কিছুই বোঝে না।যতই বোঝানোর চেষ্টা করি ততই যেন অবুঝ হয়ে যায়।"বিড়বিড় করে রুমকি।"এই সাত সকালে কি বিড়বিড় করিস তুই?"টুম্পা চেচিয়ে বলে। "কিছু না আপু,তুমি পড়াশুনা কর"রুমকি উত্তর দেয়।টুম্পা রুমকির রুমমেট।দুজনের অনেক মিল।মুরাদের ব্যাপারটা টুম্পাও জানে।রুমকি সব কিছু শেয়ার করে টুম্পার সাথে।টুম্পা রুমকিকে নিজের ছোট বোনের মত দেখে।টুম্পা ছাড়াও আর একজন আছে যাকে সব কিছুই বলে রুমকি।ঝুমুর,রুমকির খুব কাছের বান্ধবী।রুমকি বিছানা ছেড়ে ওঠে,ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে বারান্দায় বের হয়।"অনেক দিন তো হল,আর না।কালকেই সব বলব ওকে।না বলে দিলে দিবে কিন্তু এভাবে তো আর থাকা যায় না"মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় রুমকি।



খুব ভোর বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেল মুরাদের।সারা রাত একটুকুও ঘুমাতে পারেনি মুরাদ।শুধু রুমকির কথা মনে হচ্ছিল আর খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল ওকে।আজ কলেজ খোলা তাই মুরাদের মনটা খুব ছটফট করছে কখন ওকে দেখবে এই ভেবে।"রুমকিকে মনের কথাটা বলা দরকার।কিন্তু ও যদি না করে দেয়"আনমনে বিড়বিড় করে মুরাদ।খুব ভয় লাগে মাঝে মাঝে মুরাদের,রুমকিকে হারানোর ভয়।এই ভেবে মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায় মুরাদের।



রুমকি কলেজে এসে মুরাদকে খুঁজতে লাগল।আজ যে করেই হোক মুরাদকে সব বলতেই হবে।কিন্তু গেল কই ও।রুমকির চিন্তা একটু বেড়ে যায়,মুরাদ কি তাহলে আজ কলেজে আসেনি।শেষ পর্যন্ত মুরাদকে খুঁজে পায়না রুমকি।চোখে জল এসে যায় রুমকির।খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে ওর।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে ক্লাসে যায় এবং শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসে রুমকি।



মুরাদ কলেজের শহীদ মিনারের পাশে বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে।এখান থেকে ও কলেজ আসার সময় লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিদিন দেখে রুমকিকে।একটু পর রুমকিকে দেখতে পায় ও।আজ রুমকিকে অনেক সুন্দর লাগছে।প্রতিদিন কোন দিকে না তাকিয়েই ক্লাস রুমের দিকে হেঁটে যায় রুমকি।আজ কেন জানি ক্লাসে না গিয়ে পুরো কলেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।মনে হয় কাউকে খুঁজছে,মনে মনে ভাবে মুরাদ।এক সময় ক্লাসের দিকে চলে যায় রুমকি।মুরাদ অপলক চোখে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে।"ভাইয়া একটা বকুল ফুলের মালা নেন, না?"মুরাদের ঘোর কেটে যায়,দেখে একটা মেয়ে বকুল ফুলের মালা হাতে নিয়ে ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।মুরাদ একটা বকুল ফুলের মালা কিনে পকেটে রেখে দেয়।রুমকির খুবি প্রিয় বকুল ফুলের মালা।রুমকিকে প্রায়ই বকুল ফুলের মালা কিনতে দেখে মুরাদ।মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে রুমকিকে অনেক গুলা বকুল ফুলের মালা কিনে দিতে।আজ যে করেই হোক বকুল ফুলের মালাটা রুমকিকে দিতেই হবে,নিজেই নিজেকে বুঝায় ও।মুরাদ উঠে দাঁড়ায় আর ক্লাসের দিকে হাঁটতে শুরু করে।



রুমকি চুপচাপ বসে আছে।কাল সারাদিন কত ভাবেই না নিজেকে প্রস্তুত করেছে আজকের দিনটার জন্য।আর আজকেই মুরাদ আসল না।খুব রাগ লাগছে ওর, মনে হচ্ছে মুরাদের কানটা ধরে নিয়ে আসতে পারলে ভাল হতে।এমন সময় রুমকি দেখল মুরাদ ক্লাসে ঢুকছে ।মুরাদকে দেখে ওর মনটা খুশিতে নেচে উঠল।



মুরাদ এবং রুমকি পাশাপাশি বসে আছে।ঝুমুরের কল্যাণে তাদের এই এক সাথে বসা।দুজনের মুখে কোন কথা নেই।প্রথমে মুরাদই বলল......



-কেমন আছ?



-ভাল।



-শুধু ভাল আর কিছু না?



-হুম।



-কিছু বলবা।



-হুম



-কি?



-কিছু না।



-একটু আগেই তো বললা যে কিছু বলবা।



-হুম



-হুম কি?



-কিছু না।



রুমকির মুখ থেকে আর কিছুই বের হচ্ছে না।গোটা শরীরটা কেমন যেন অবশ হয়ে হয়ে গেছে।ও বেশ বুঝতে পারছে আজও বলা হবে না কিছুই।কিন্তু একটা বিষয় ও বুঝতে পারছে না কিছুতেই,মুরাদ ওকে ডেকে পাঠাল কেন?আজ যে চেষ্টাটা ও অনেকবার করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি সেটা মুরাদ করল।মুরাদকে ঝুমুর কিছু বলে নি তো?ঝুমুর ছাড়া তো আর কোন বান্ধবীকেই মুরাদের কথা বলে নি ও।



-চুপ করে গেছ যে?



এই বলে মুরাদও চুপ করে যায়।মুরাদের খুব ইচ্ছা করছে আজ ওর মনের কথা গুলো বলতে।কিন্তু সাহস পাচ্ছে না।এরই মধ্যে রুমকির বান্ধবী ঝুমুর চলে আসে।ঝুমুর ইতি মধ্যেই মুরাদকে সব কথা বলে দিয়েছে।মুরাদের অস্বস্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।মুরাদ খুব সাহস করে বকুল ফুলের মালাটা আর একটা চিঠি রুমকিকে দেয়।চিঠিটা অনেক দিন আগেই লিখেছিল ও।কিন্তু দেয়ার আর সাহস হয়নি ওর।



এরপর রোজ একটা করে বকুল ফুলের মালা রুমকিকে দেয় মুরাদ।সারাদিন কত কথা হয় দুজনার।কত রঙ্গিন স্বপ্ন বোনে ওদের দুটি মন।স্বপ্নের ডালপালায় ফোটে আরও নতুন নতুন স্বপ্ন।সেই স্বপ্ন নিয়েই পার হয় অনেকটা সময়।কিন্তু হুট করে স্বপ্ন গুলো সব হারিয়ে যায়।স্বপ্নগুলো ছুটি নিয়ে পালিয়ে যায়।



দুজনেরই পরিবার ওদের বিষয়টা জানতে পারে একসময়।বিষয়টা দুই পরিবারই মানতে পারে না।মুরাদ বুঝতে পারে তাদের দুজনের পরিবার এই সম্পর্ক কখনই মেনে নিবে না।কিন্তু রুমকিকে ছাড়া ও কিছুই কল্পনাও করতে পারেনা।একসময় আবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।রুমকির পরিবারে আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা মুরাদের পরিবারের চেয়ে অনেক ভাল হওয়ায় মুরাদের পরিবারকে চরম মূল্য দিতে হয় একসময়।মুরাদের আর কিছুই করার থাকেনা।সে রুমিকে বলে দেয় তার পক্ষে আর সম্ভব না।রুমকি অনেক অনুরোধ করে মুরাদকে কিন্তু মুরাদ নিরুপায় হয়ে রুমকিকে ফিরিয়ে দেয়।এর পর এক সপ্তাহ কেটে যায়।হঠাৎ একদিন ঝুমুর ফোন করে মুরাদকে রুমকির মৃত্যুর সংবাদ দেয়।রুমকির হার্টের সমস্যা ছিল,এটা মুরাদ জানতো।কিন্তু রুমকি যে তাকে হারানোর ব্যাথা সহ্য করতে পারবেনা এটা সে কখনই ভাবতে পারে নি মুরাদ।



দুজনে রিক্‌সায় করে সারাটা দিন ঘুরে বেড়ায় ওরা।ঘোরা শেষে রুমকিকে অনেক গুলো বকুল ফুলের মালা কিনে দেয় মুরাদ।রুমকির হেসে বলে

-তুমি এত ভাল কেন?

-না,আমি খুবি খারাপ।

-না, তুমি অনেক ভাল।

-তো আমায় ছেড়ে চলে গেলা কেন?

-কই আমি তো তোমার সাথেই আছি।এই যে দেখ তোমার দেয়া বকুল ফুলের মালা গুলো আমি খোপায় পরেছি,হাতে পরেছি আর তোমার হাত ধরে বসে আছি।

মুরাদ অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে রুমকির দিকে।মুরাদ জানে ও স্বপ্ন দেখছে,চোখ খুললেই রুমকিকে আর দেখতে পাবে না ও।তাই দুচোখ ভরে প্রাণপণে দেখার চেষ্টা করে মুরাদ।



পুনশ্চঃএটি একটি সত্য ঘটনা।রংপুর সরকারি কলেজ ১২ ব্যাচের ঘটনা এটি।ছেলেটার বাসা জল ঢাকায়।শুধু এই টুকুই জানি ছেলেটার সম্পর্কে,আর মেয়েটার সম্পর্কে কিছুই জানিনা।একটি এফ এম রেডিওর অনুষ্ঠানে ওর এই ঘটনা শুনে আমার মনটা অনেক খারাপ হয়ে গিয়ে ছিল।এখানে নাম গুলো সব কাল্পনিক।ছেলেটার নামটা মনে পড়ছেনা তবে ওর কান্না আমার মনটাকে দুমড়ে মুছরে দিয়েছিল সেটা আজও ভুলতে পারিনি।ওর শেষ কথাটা আমার মনে এখনও বাজে"ও বেঁচে থাকতে আমি ওর ভালবাসার মূল্য বুঝতে পারিনি।ও আমায় এত ভালবাসত আর আমি ওকে তাড়িয়ে দিয়েছি"।এরপর আর একটা কথাও বলতে পারেনি ছেলেটা তারপর যা ছিল তা শুধুই কান্না।জানিনা ছেলেটা এখন কেমন আছে,তবে ভাল যে নেই সেটা হলপ করে বলতে পারি।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.