নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান অর্জন করতে চাইলে বেশি বেশি বই পড়ুন।

মি. অর্ক

আমি বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধয়্যনরত আছি।

মি. অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

_"রুপার আজ বিয়ে ও বাবার সাথে আমার সাক্ষাৎ"

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪৬


কয়েকদিন আগে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের হিমু সিরিজ পড়ে শেষ করলাম। হিমুর সাথে আমার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি।তবে আমার ছোটবেলার গল্পটা একটু ভিন্ন,বাবা আমার মাকে মেরে ফেলেছিলো ২য় বিয়ে করার জন্য। পরে সবাই জেনে যাওয়ার পর বাবার যাবৎ জীবন জেল হয়, আমাকে ছোট বেলা থেকে আমার মামারা মানুষ করেছেন। যাই হোক সেই এক বিশাল কাহিনী তে না যাই।
.
মামারা আমাকে খুব বেশি ভালোবাসত, তবে মামিদের কটুক্তিমাখা কথা আমার সহ্য হতো না। যখন এসএসসি পাস করলাম তখন মামা কে বললাম আমাকে ঢাকাতে ভর্তি করে দাও। আমি আমার মতো করে জীবন কে চালিয়ে নেব। মামা আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলো। বাবা আমাকে অনেকবার দেখতে চেয়েছিলো,কিন্তু আমি কখনো দেখা করতে যাইনি, প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে বাবা নাম কে ঘৃণা করতাম।
.
মেস বাড়িতে থাকতাম, ছন্নছাড়া জীবন, ল্যাম্পোস্টের আলোতে সিগারেট প্যাকেট হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতাম দুর বহুদুরে। ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘুমিয়ে যেতাম খোলা আকাশের নিচে।
বাবা নাকি আমার নামটা রেখেছিলো, এই নামের প্রতি ও ঘৃণা ছিলো,নিজের নাম বদলে রাখি হিমু। হিমুর মতো চলচলন,তাই মেসের সবাই হিমু নামেই ডাকত আমাকে,অনেকে অবশ্য টিটকারি মেরে বলত_
--চাইলেই কি হিমু হওয়া যায় ?
.
আমার অনেক গুলো হলুদ পাঞ্জাবি, রুপা দিয়েছিলো বেশ কয়েকটা। ও হ্যাঁ তার আসল নাম সিনথিয়া মেহেরীন ইবা। আমি নাম দিয়েছি রুপা। মিলিয়ে নেওয়া আর কি, হেহেহহেহে।
.
--দেখো আমি ছন্নছাড়া, তোমার সাথে আমার যায় না।
.
--তোমার কিসের এতো কষ্ট? আমাকে বলো ?
.
রুপা আমার পিছনে অনেক দিন ঘুরেছে,আমি তাকে পাওা দেয়নি আমার এই ছন্নছাড়া লাইফে। কিন্তু রুপা নাছোর বান্ধা আমার পিছন ছাড়েনি, আমার বুক ভরা কষ্টের কথা জেনে ওর বাণী ছিলো_
.
--আমি এতো কিছু চাই না, আমি শুধু তোমাকে চাই, আমি তোমার সব কষ্ট নিয়ে নিবো!!
.
রুপার সাথে আমার ৪বছরের সম্পর্ক,ভালোবাসার সম্পর্ক বললে ভুল হবে কারন আমি তাকে কখনো বলেনি ভালোবাসি,তোমায় নিয়ে আমি সংসার করব।তারপর ও সে আমার সাথেই ছিলো, সে আমার কাছে কিছুই চাইনি,দামি গিফট, রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়া কিছুই না,শুধু চেয়েছিলো আমার ছন্নছাড়া লাইফ কে গুছাতে,আর একটু ভালোবাসা কিন্তু আমি ইচ্ছা করলেও পারিনি, রাতের আঁধারে কষ্ট গুলো আমাকে চেপে ধরত, রাত-বিরাতে বেড়িয়ে যেতাম বাসা থেকে রাস্তায়।পৃথিবীতে যারা অসহায় তাদের প্রতি কারো না কারো মায়া জন্মায়, আমার সব কিছু জানার পর রুপার মনেও জন্মেছিলো, আমাকে আপন করে নিয়েছিলো।
.
হিমুর অনেক ভক্ত ছিলো, যারা একবার হিমুর সাথে কথা বলত, তার আন্দাজে ভবিষৎ বলা, আর তা সত্য হয়ে যাওয়ার যে শক্তি ছিলো তা আমার নেই, তবে রাতে হাঁটতে বাহির হওয়ার সুবাদে এলাকার টহল পুলিশের সাথে আমার ভালো খাতির ছিলো,ফুটপাথে শুয়ে থাকা মানুষ গুলোর সাথে খুব সহজেই মিশে গেছি, অসংখ্যবার তাদের সাথে রাত কাটেয়েছি!!
.
রুপা আমার এইসব কর্মকান্ড একদমই পছন্দ করত না।
--তুমি কি সারাজীবন এমনি রয়ে যাবে ? তাহলে কিন্তু আমাকে হারাতে হবে।
.
--আমি তো তোমাকে আমার সাথে জড়ায়নি, তুমি জোর করে আমার সাথে পরে আছো, ভালো ছেলে পেলে বিয়ে করে নিও!!
.
---তুমি এই কথা বলতে পারলা ?
.
আমি চুপ করে ছিলাম, আমার কাছে রুপার এই কথার উওর নেই,রুপা কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিলো। ম্যাগাজিনে আমার লেখা একটি গল্প পড়ে রুপা আমার ফেসবুক আইডি খুঁজে বাহির করে, তারপর আমার আমার টাইমলাইনের সমস্ত লেখা পড়ে।লম্বা চুল, হলুদ পাঞ্জাবি, মুখ ভর্তি দাঁড়ি এই রকম চেহারার ছেলের প্রেমে যে কেউ পরে না, রুপা সংস্কৃতি মনা মেয়ে,তাই হয়তো পরেছে আমার প্রেমে। মাঝে মাঝে ম্যাগাজিন অফিস গুলোতে ঢুঁ মারতাম,কিছু লেখা দিতাম সেই সুবাদে তারা কিছু টাকা দিতো, আর মামা কিছু দিতো,এই দিয়ে সারাজীবন চলে যাওয়ার পরিকল্পনা, কিন্তু রুপা হুট করে আমার লাইফে জড়িয়ে যায়।
.
--তুমি আমার দিকে তাকিয়ে বলতো আমাকে কি তুমি ভালোবাসো না ?
.
--রুপা আমার কিছু নেই, আর আমি আমার এই লাইফ কে কখনো বদলাব ও না, তুমি সুখি হবে না আমাকে বিয়ে করলে!
.
--তুমি শুধু বিয়ের আগে একটু চেঞ্জ হও,যাতে মা-বাবা তোমার কাছে আমাকে তুলে দিতে সাহস পায়, পরে তুমি তোমার মতো করে থেকোও,আমি বাঁধা দিবো না!
.
--হেহেহেহে ,না রুপা সব কিছু এতো সহজ না,আমার মনে শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা, কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে না কখনো।
.
রুপা সেদিন রাগ করে চলে গিয়েছিলো, মাস খানেক হয় তার সাথে আমার কথা হয় না,কয়েকদিন ধরে বুকের বাম পাশটা চিনচিন করে ব্যাথা করছে, প্রচন্ড জ্বর সাথে ঠান্ডা। সারাদিন ঘুমিয়ে কেটে দিয়েছি। আজ সারারাত হাঁটব,রাত ৯টায় বাহির হই মেস থেকে,পর পর কড়া লিকারে ২কাপ চা খেলাম, শরীর টা বেশ আরাম লাগছে, চাঁদর গায়ে এবার হাঁটা যায়, গন্তব্য ঠিক করেনি, হাতে সিগারেটের প্যাকেট,হেঁটে চলেছি, চলতে চলতে কখন হুশ হারিয়ে ফেলি জানি নাই,পরে নিজেকে আবিস্কার করি হাসপাতালে।দুই দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়েছি। মেসে যখন আসি ম্যানেজার বলল__
.
--হিমু সাহেব কোথায় ছিলেন ? আপনার রুপা দুইদিন আগে মেসে এসে আপনার খোঁজ নিয়ে গেছে!!
.
--রুপা কি একাই আসছিলো ?
.
--না, সাথে একজন ছেলে ছিলো, ও ভালো কথা আপনাকে একটি কার্ড দিয়ে গেছে।
.
--আচ্ছা আমার টেবিলে রেখে যান।
.
বরফ পানি দিয়ে গোসল করলাম,আর তখনি প্ল্যান করেছি টানা দুদিন দরজা-জানালা দিয়ে ঘুমাবো। হাসপাতাল থেকে আসার সময় ঘুমের ওষুদ নিয়ে আসছি। দুইদিন ঘুমিয়ে যাবো রুপার সাথে দেখা করতে। অনেক দিন রুপার সাথে কথা হয় না।
.

সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙার পর হঠাৎ টেবিলের উপর চোখ যেতেই দেখতে পেলাম রুপার কার্ড আছে,এখনো খোলে দেখা হয় নাই। কার্ডটা হাতে নিয়ে একটু ভেবে নিলাম,কি লেখা হতে পারে? কার্ড খোলে যখন দেখলাম রুপার বিয়ের কার্ড, একটুও অবাক হয়নি আমি, তবে অবাক হয়েছি আজ রুপার বিয়ে ছিলো এটা দেখে!!
.
সন্ধ্যার আযান পরেছে, মেস থেকে বাহির হলাম, উদেশ্য রুপার বাড়ি,তারপর সেখান থেকে বাবার সাথে দেখা করতে যাব।
.
রুপাদের বাসা বিয়ের সাঁজে পুরো বাড়ি আলোকিতো, বাড়ি জুড়ে মানুষ আর মানুষ, খাওয়া দাওয়া হচ্ছে, আমি ও আমন্ত্রিত, তাই বসে পরলাম খাওয়ার জন্য।একজন মেয়ে হয়তো আমার কানের সামনে এসে বলে গেছে রুপার সাথে দেখা করতাম। খাবার খাওয়ায় ব্যাস্ত ছিলাম,তাই খেয়াল করা হয় না,হয়তো রুপার ফ্রেন্ড হবে!!
.
পাশাপাশি দুটো ষ্টেজ একটি রুপা বসে আছে, আরেকটিতে রুপার হবু বর, মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবছি কার কাছে আগে যাওয়া যায়। রুপার ফ্রেন্ড এসে বলল, রুপার বর সব জানে,আপনার সাথে রুপার কিছু কথা আছে, আসুন।
.
আমি রুপার হবু বরের কাছে গেলাম.. একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে আসলাম,আর বললাম আমার হয়ে দিয়ে দিবেন, প্লিজ। কাগজ টা তে কিচু লেখা ছিলো শুধু "স্যারি" এটা আমার পক্ষ থেকে রুপার বিয়ের উপহার।
.
রুপার কাছে যাইনি, কারন আমার বলার মতো কিছু ছিলো না,শুধু স্যারি বলা ছাড়া,রুপা আমাকে ঘৃণা করতে শিখুক, এটাই চাই,তাহলে খুব দ্রুত সে তার স্বামী কে ভালোবাসতে পারবে!!
.
ঢাকা কেন্দীয় কারাগরের ফঠকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কয়েক দিন আগেই বাবা আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো, জেল থেকে আমার কাছে চিঠি গিয়েছিলো, সেটা মনে করে নিয়ে এসেছি।
.
বাবা কে আনা হয় আমার সাথে দেখা করার জন্য,আরো অনেক গুলো লোক তাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে আসছে, আমি চিনছি না আমার বাবা কে, বাবা ও আমাকে চিনছে না, একজন বৃদ্ধ বয়সের লোক দাঁড়িয়ে আছে, সাদা দাঁড়ি,চুল, সবাই যেহেতু কথা বলছে, আর ওনি দাঁড়িয়ে আছেন,তাহলে উনি আমার বাবা হবে,তাই কাছে গেলাম_
.
---আপনি কি আমার বাবা ?
.
বাবা লোহার ওপার থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছেন, আমার মাথায় কপালে চুমু খেয়ে কান্না করছেন, আর নিজের জমানো কথা গুলো বুলেটের গতিতে বলে যাচ্ছেন। বাবার আদর এমন মধুর হয়, আগে বুঝিনি। মায়ের আদর ও মনে হয় আরো মধুর, মাকে মনে পরতেই বাবার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। একজন বলছে,আপনাদের সময় শেষ,চলে আসুন সবাই... আর বাবা আমাকে বলছে,একবার বাবা বলে আমাকে ডাক, আমার পিয়াল একবার আমাকে বাবা বলে ডাক......
--বাবা, বাবা জানো আজ রুপার বিয়ে ছিলো,তাই তোমাকে দেখতে এসেছি।
.
বাবা কান্না করতে করতে চলে যাচ্ছে, আমার চোখে কোন কান্না নেই,শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা। আবার চলছি রুপার বাসার দিকে, তার কান্না দেখব,তারপর নিজে একটু কান্না করব,অনেক দিন না কাঁদতে কাঁদতে চোখে মরিচা ধরে গেছে.........।।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:২২

গেম চেঞ্জার বলেছেন: গল্প হলে সবচেয়ে খুশি হই। ব্লগে স্বাগতম।

হৃদয়ের অতল ছুঁয়ে দিলেরে ভাই। অসাধারণ! নতুন বলে বিবেচনা করায় কিছু মনে না করলে বলি- ব্লগে ঘুরুন। অন্যদের গল্পগুলো পড়ে আরো অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করুন। পোস্টে ১ম প্লাস।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৩০

মি. অর্ক বলেছেন: ভাইয়া আমি গিটারের ছিড়া তার{মি অর্ক} এই নামে দীর্ঘ দিন ফেসবুকে লেখালেখি করি,
ফেবুর সব বড় পেজের সাথে কাজ করেছি, ব্লগে নতুন, ব্লগ জিনিসটা বুঝতাম না আগে,
এখনো বুঝি না ভালো করে!! আস্তে আস্তে করে বুঝে যাবো ইনশা-আল্লাহ। ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য।

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ট্রাজেডি ! নতুন হিসেবে ভাল লিখেছেন বলা যায় । হুময়ূন আহমেদের বড় ফ্যান আপনি বোঝা যাচ্ছে । স্বকীয়তা নিয়ে লিখতে থাকুন । এক সময় লিখালিখি আপনার হতে ধরা দেবে ।

শুভ ব্লগিং সুপ্রিয় ব্লগার ।+++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.