![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এত স্বপ্ন, এত আয়োজন শুধু মাত্র মাথার উপরে থাকা নীল আকাশটাই দেখে। আমি নাহয় আকাশ হয়েই থাকি?
-বৃহঃবারের ক্লাসটা এগারোটায় শুরু হবে। তাহলে শেষ হতে দুপুর একটার কাছাকাছি। তুমি একটা কাজ কর একটা রেষ্টুরেষ্ট ঠিক কর যেখানে ভালভাবে লাঞ্চ করা যাবে।
-কথা গুলো কি ইথ্রা বলছে আমাকে? বাহ! মন জুড়াই গেল একদম।রেস্টুরেন্ট ঠিক আছে।ইথ্রার জন্য অপেক্ষা করছে।
-একদম ফাইজলামু করবেনা।রাখছি!
রাখছি মেসেজটা দেয়ার পর সাধারনত ওকে আর মেসেজ দিনা। এক ধরনের আনন্দ লাগছে।একসাথে লাঞ্চ করবো একদিন ভাবতেছি আর উচ্ছাসিত হচ্ছি। আমায় ফরমাল ড্রেসে দেখবে মেয়েটার শখ পূর্ন হয়না, এবার বোধহয় হবে।
কথাগুলো আচমকা মনে হওয়াতে চোখের পানি যাচ্ছে। তখন ইথ্রা ছিল সামনে, এখন গল্পে। চ্যাপ্টা গোলাকার পৃথিবীরটার অনেক কিছু আমাদের দেখা হয়না সুযোগ থাকা সত্ত্বেও। ইথ্রার সাথে সম্পর্কের বয়স বেড়েছে।সাথে কষ্টদের বয়স আর ভয়ের বয়সটাও বেড়েছে। ইথ্রা খুব ভয় পেত। আমি তার সাহসের বাতিঘর।
ওর প্রিয় কালারটা আকাশি ছিল।এখন বোধহয় নেই। সর্বশেষ ও কিন্তু অনেকদিন রঙ, ভালোলাগা এসব নিয়ে কথা বলেনি।একরকম ঘোরের মধ্যে থেকেছে।
আমাদের প্ল্যানিং করে কখনো কিছু হয়নি। সেইদিনের লাঞ্চ করাটাও হয়নি।যেটা নিয়ে আমরা সবচেয়ে উচ্ছাসিত থাকতাম কখনোই হতোনা সেটা। এর আগে ওর প্রথম জন্মদিনটার কথা যেটা আমি সেলিব্রেট করেছি ও সহ, সেটাও প্ল্যানিং ছিলনা।ওর সাথে একদিন শুধু বৃষ্টিতে রিকশায় চড়ে ওর ভেজা হাতটা ধরার সুযোগ পেয়েছিলাম সেটাও প্ল্যানিং ছাড়া। সেইদিন বোধহয় ও সর্বোচ্চ সাহস দেখিয়েছিল।
চন্দ্রপৃষ্ঠের এক পৃষ্ঠ দেখছি, প্রকৃতির তীব্র স্বার্থহীনতা দেখেছি, আর আমি ইথ্রাকে দেখছি। একটা বিঃসর্গ আকারে।
ইথ্রার কাছে আবেগ বলে কিছু নেই।বাস্তবতাই সব। আগে ছিল।যখন ও রাত জাগত। কথা বলতে বলতে ভোর উঁকি দিত। এমন ও হয়েছে সম্পর্কের তিন বছরের মাথায় আমরা ছ'মাসে ষাটহাজারের বেশি মেসেজ করেছি।ভাবা যায়! আশ্চর্য হলেও এটা সত্যি।
আস্তে আস্তে দিন বাড়ছে।ও ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়টা একদিন আমাদের সম্পর্কের বয়স থেকে বেড়ে যাবে। কেউ বিশ্বাস করবেনা। প্রকৃতি আমাদের দুধরনের আনন্দ দেয়। একটা পাওয়ার আনন্দ আরেকটা পৈশাচিক আনন্দ। যেটা কান্না দিয়ে অনুভব করি।
ওহ! ইথ্রার সাথে সম্পর্কের পাঁচ বছর পূর্ন হল গত ২রা অক্টোবর। ইথ্রার মনেই নেই। কারনটা পরে বলছি। এসব তো মেয়েদের সবচেয়ে বেশি মনে থাকে।কিন্তু ইথ্রায় এবেলায় অলস প্রকৃতির!
ওর প্রথম জন্মদিনের সেলিব্রেশানের সময় কেকটা ও কাটবেনা। ওর ফ্রেন্ডরাও বলছে কাটতে।নাহ কাটবেনা। কারনটা হচ্ছে, গত রাতে আমি যে ওকে না জানিয়ে বাড়ি এসেছি সেটা ওকে কষ্ট দিয়েছে।হাজার সরি পরে বলবো বলে কেক কাটিয়েছি।
এনিভার্সারি মনে না রাখার কারন সেদিন সে খুব ব্যাস্ত ছিল।এর আগে ১৬ দিনের বেশি ইথ্রার সাথে আমার কথা হয়নি। কাজিনের বিয়ে। ব্যাপারটা অনেকটা কষ্টের জন্মের দিয়ে দেয়।
ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন সকাল ১১.২৪ এ সর্বশেষ মেসেজ দেয়। ঐইদিন এত ভাল করে মেসেজ দেয়, বুঝতেও পারিনি ও চলে যাবে।অবশ্য দুইদিন কথা, মেসেজ নাহওয়ার পর বুঝছি। সেই দুইটা দিন এত অস্থিরতা খারাপ লাগার ভিতর দিয়ে কেটেছে বুঝতেই পারিনি।
আমাদের ভিতরে কিছু ভালবাসার জন্ম হয় যেটা মৃত্যু নিয়ে জন্মায় না। অমৃত্যু থেকে যায়। আমি কল্পনায় এসব ভাবছি। ভেতর ভেতর ঘুমরে কাঁদছি। বিঃসর্গের বিয়োগ মেনে নিলেও সইতে পারা কষ্টের। আস্তে আস্তে অনুভূতিদের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বর্ষার কাল নাহয়েও অজোরে বৃষ্টি ঝরছে। হূয়ামুন স্যারের একটা গানের কথা মনে পড়ছে,
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো,এক বরষায়...
একদিন মেসেজ করতে করতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ল। রাত ১.২১। আমি জাগনা রইলাম।হঠাৎ ২.২৩ এ উঠে বললো কি হল মেসেজ দাওনা যে? কারো সাথে ব্যস্ত? (এক দুই মিনিট লেট হলে ব্যস্ত কথাটা বলাটা অভ্যাসে রূপান্তিত হইছে) আমি বললাম, তুমি এক ঘন্টা ঘুমাইছো।মেসেজ টাইম দেখো...
আবার সারারাত চ্যাট শুরু। পরীক্ষার দিনগুলো ও এগুচ্ছে। পড়ালেখায় খুব ভালো না হলেও একদম খারাপ ছিলাম না। সন্ধ্যার পর পড়ালেখার জ্ঞান। তাও চ্যাটে। আমাদের ফোনগুলোর যদি মুখ থাকতো এতদিনে হয়তো বলে ফেলতো, ভাই আমারে ছাড়!
ইথ্রা আমার স্বপ্ন গুলোকে মাঝে মাঝে মেনে নিতোনা। কিন্তু আমিও নাছোড় বান্দা। স্বপ্নহীন মানুষকে মানুষ বলে নাকি। দুচোখের কি তীব্র বাসনা দুজনকে দুজনার করার।
একঘেয়েমি ভাব ভালবাসায় জন্মায়? কই না তো।
একসময় অনলাইনের মানুষগুলো অফলাইনে চলে যেতে হয়। কি জানি কেন যেতে হবে। তাড়ার একটা ব্যপার থেকে যায়। ইথ্রাও সেইম। আমার জীবনটাতে অনলাইনের মত ছিল। তীব্র শূন্যতা এখন ঘ্রাস করে। সম্পর্কের কত রং থাকে। আমাদের টা সাদা কালো ছিল।
সাদা কালো রঙে মানুষ থাকতে চায়না।মানুষ রঙিন চায় সব। সাদামাটা ব্যাপারটাতেও রঙিন ব্যাপারটা নিয়ে আসে মানুষ।
রূদ্র আমার প্রিয় কবি।রূদ্রের জীবনে কিছু অংশ কেটেছে খিদার তাড়নায়। একটা সিঙারা খেয়ে দুপুর পেরিয়েছে এমন অনেক দিন গেছে রূদ্রের জীবনে। অথচ এখন রূদ্র মেলা হয়। সেই মেলায় রূদ্র নেই। জীবনটা বোধহয় এমন।একসময় তসলিমা নাসরিনকেও তার জীবন থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
আমার তীব্র ভালোবাসার চাওয়া, ভালো বাচার চাওয়া, তাকে পাওয়ার চাওয়ার তীব্রতা বুক চেপে ধরে। ইথ্রা বাঁচুক স্বপ্ন আঁকড়ে...
একটা ছেলেকে যেরকম বাস্তববাদী হওয়ার কথা ছিল আমি বোধহয় তেমনটা নই।ঠিক ততটা উল্টো স্বপ্নবাজ। নাহয় ইথ্রাকে কি কম স্বপ্ন দেখাই।প্রতারনা একরকম। নাহয় কেন আমি এরকম স্বপ্ন দেখালাম এত? ও ইবা চলে গেল কেন!
ইন্জিনিয়ারিং এ পড়লেও ইদানিং সময় কাটে সাহিত্য পড়ে।আমার স্বপ্নটা কখনো ইন্জিনিয়ারিং কেন্দ্রিক ছিলনা। ইথ্রার জন্যই ইন্জিনিয়ার হওয়া।প্যাশনের জায়গা সাংবাদিকতা, লেখালেখি। হুমায়ূন স্যারের লিখা গুলো খুব হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
আমার অভিজ্ঞতার জায়গাটা অভিনয়। কিন্তু ইথ্রা গান শুনতে চাইতো। বাজে কর্কশ গলাটাও ওর কাছে অনেক সুন্দর। আগের দিন বলে দিত এই গানটা আমাকে শুনাতে হবে, পরেরদিন শুনাতে হবে।
এসব কেন ভাবছি।একটা একটা কথা কেন এভাবে মনে উঠছে আমার। আস্তে আস্তে বুকের ব্যথাটা বাড়ছে। রাত হচ্ছে। রাতটাতে আমি সবচেয়ে একা হই।
ভার্সিটির দিনগুলো প্রথম থেকে ভালো লাগতো না, এখন একদমই না।ভালো না লাগার কারন ছিল, শহর থেকে কত দূরে গিয়ে ক্লাস করা,ইথ্রা আরেক জায়গায় করবে কেমন একটা কষ্ট হত! কখনই মন বসেনি ক্লাসে। আজো আমি আতাহার স্যারের থেভনিস থিউরি বুঝিনা। যে স্যারের ক্লাসে সবাই বুঝে সেই প্রোগ্রামিং ক্লাস আজও মাথার উপর দিয়ে যায়। এটা কাকে বুঝাবো?
তোমায় যখন বলবো, তুমি বল এত ডিপেডেন্ট হইয়োনা, নিজের ভিতর ও রাখতে পারিনা তাইলে কই যাবো! কিছু প্রশ্নের উত্তর থাকেনা। বের করার ও জায়গা নাই। সেমিষ্টার ফাইনাল সামনে।
ইথ্রা প্রশ্নগুলো দেখবেনা। ইথ্রার কাছে উত্তর ও নেই। সকাল হচ্ছে নতুন উদ্যমে।আমার সকাল থেমে গেছে।
চন্দ্রবিন্দুর ভিনদেশি তারা অনেকবার শুনিয়েছি ইথ্রাকে। কয়েকটা লাইন চোখের পানি হয়ে ঝরছে।
আমার রাত জাগা তারা,
তোমার আকাশ ছোঁয়া বাড়ি
আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়,
আমার একলা লাগে ভারী!
২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৮
আবির চৌধূরী বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১৬
মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: কিছু কিছু কথা দুর্দান্ত লেগেছে
ইথ্রা খুব ভয় পেত। আমি তার সাহসের বাতিঘর।
আমাদের ভিতরে কিছু ভালবাসার জন্ম হয় যেটা মৃত্যু নিয়ে জন্মায় না। অমৃত্যু থেকে যায়।
সাদা কালো রঙে মানুষ থাকতে চায়না।মানুষ রঙিন চায় সব। সাদামাটা ব্যাপারটাতেও রঙিন ব্যাপারটা নিয়ে আসে মানুষ।