নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোকের অভিযাত্রী

স্বপ্নিল রোদ্দুর

আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,জাম আর জামরুলের পাতায়যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।-অমলকান্তি, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

স্বপ্নিল রোদ্দুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সাহিত্যকর্ম ও সমাজ দর্শন

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:০৬

বাংলা সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী একমাত্র সাহিত্যিক রবি ঠাকুর বিখ্যাত হয়ে আছেন সাহিত্যের সব শাখায় তার উজ্জ্বল বিচরণ এর জন্য। কবিতা, ছোটো গল্প, উপন্যাস, গান সহ সাহিত্যের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা তার আলোকছটায় উদ্ভাসিত হয়নি। বিশ্বে তিনিই একমাত্র কবি যার লেখা গান স্তান পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত দুটি দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে। তার লেখা কবিতায় নানা ভাবে ফিরে এসেছে মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, প্রকীতিপ্রেম। তার লেখা গান বিশ্বজুড়ে অমর হয়ে আছে রবীন্দ্র সংগীত হিসেবে। জীবনের কঠিন সময়ে তার কবিতা ও গান আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, আমাদের সাহস জোগায়। সব বয়সের পাঠকের জন্য সাহিত্য রচনা করতে পারাটাও তার বড় কীর্তি। রবীন্দ্রনাথ যে কতো বিষয়ের উপর লিখেছেন, এবং কী রকম বৈচিত্র্যময় ভঙ্গিতে তাঁর হৃদয়ের কথা বলেছেন, সেই কথা ভাবলে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। কতো রকম কবিতা লিখেছেন তিনি : যেমন উচ্ছ্বসিত আনন্দের তেমনি গভীর বিষণ্নতার। আমাদের মনে পড়ে 'নববর্ষা' কবিতার কথা, যার প্রথম চরণ হলো :

'হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচেরে

হৃদয় নাচেরে'।

এর পাশাপাশি আমাদের মনে পড়ে 'দুঃসময়' কবিতার কথা, যার কয়েকটি চরণ হলো :

'নাই স্নেহ মোহ বন্ধন

ওরে আশা নাই, আশা শুধু মিছে ছলনা।

ঊষা দিশাহারা নিবিড় তিমির আঁকা...'

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন কিছু অসাধারণ প্রেমের কবিতা যেগুলুতে মিলন ও বিরহ দুটোই প্রকাশ পেয়েছে। তার অনন্ত প্রেম কবিতায় আমরা পাই,

‘আমরা দুজনে ভাসিয়েছি ভেলা যুগল প্রেমের স্রোতে

অনাদি কালের হৃদয় উৎস হতে ।‘



শেষের কবিতায় আমরা খুঁজে পাই গভীর বেদনা ও ত্যাগের যন্ত্রণা ,



‘তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান

গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়...

হে বন্ধু, বিদায়...’



মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন,

তখন নিজে লিখতে পারেন না, মুখে মুখে বলে গিয়েছেন :



'তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি

বিচিত্র ছলনাজালে

হে ছলনাময়ী...'

এক সময় তো কবি প্রকৃতির মধ্যে শুভ ও কল্যাণের প্রতিমূর্তি দেখেছিলেন, তাহলে কেন ছলনাময়ী? তবে ছলনাময়ী হলেই যে ছলনার জালে ধরা পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। অন্তরে যদি সত্য থাকে তাহলে ছলনার জাল অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাই কবির সর্বশেষ কবিতা 'তোমার সৃষ্টির পথ'-এ আমরা শুনিঃ

'অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে

সে পায় তোমার হাতে

শান্তির অক্ষয় অধিকার।'

এ জাতীয় গভীর দার্শনিক তত্ত্ব সংবলিত বহু কবিতার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ লঘু হাস্যরসাক্রান্ত বেশ কয়েকটি ছড়াও লিখেছেন।

রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি অনবদ্য কাহিনী-কবিতা লিখেছেন। স্মরণ করুন 'সামান্য ক্ষতি', 'পুরস্কার', 'ছুটি', 'ফাঁকি', 'সাধারণ মেয়ে', 'জুতা আবিষ্কার' প্রভৃতি কবিতার কথা। তাঁর সৃষ্টির পরিমাণ, বৈচিত্র্য ও ঐশ্বর্য তুলনাহীন। কবিতা, গান, ছড়া, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, পত্রসাহিত্য, আত্মজীবনী প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান ছাড়াও আছে তাঁর চিত্রকর্ম ও বক্তৃতা-ভাষণ। এবং এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই কতো বৈচিত্র্য, কতো গভীরতা, কতো নতুনত্ব!

রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকার কারণে আমরা অনেক সময় তাঁর সামাজিক-রাজনৈতিক ভূমিকার কথা বিস্মৃত হই। ওইসব ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল বিস্ময়কর। এ প্রসঙ্গে আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করতে পারি জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তাঁর নাইটহুড খেতাব বর্জন, মিথ র্যেথবোনের কাছে লেখা তাঁর খোলা চিঠি এবং তাঁর 'সভ্যতার সংকট' শিরোনামে বক্তৃতার কথা।

রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকার কারণে আমরা অনেক সময় তাঁর সামাজিক-রাজনৈতিক ভূমিকার কথা বিস্মৃত হই। ওইসব ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল বিস্ময়কর। এ প্রসঙ্গে আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করতে পারি জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তাঁর নাইটহুড খেতাব বর্জন, মিথ র্যেথবোনের কাছে লেখা তাঁর খোলা চিঠি এবং তাঁর 'সভ্যতার সংকট' শিরোনামে বক্তৃতার কথা।



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি মাত্র ৫০ বছর বাঁচতেন এবং নোবেল পুরস্কার নাও পেতেন, তা হলেও তিনিই হতেন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি ও গদ্যলেখক। ১৯১২ সালের জানুয়ারিতে যখন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে তাঁর পঞ্চাশতম জন্মদিনের অনুষ্ঠান হয় তখনই তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেখক। তারপর আশি বছরের জীবনের শেষ তিরিশ বছরে তার যে কাজ তার তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো ভাষায় নেই বললেই চলে। গত একশ' বছরে তাঁর চেয়ে বড় আর কোনো কবি-সাহিত্যিক বাংলা ভাষায় আবির্ভূত হননি, উপমহাদেশের আর কোনো ভাষায় তো নয়ই।



ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিক্ষিত বাঙালির চেতনায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব কী তা সহজে বোঝা যায় না, যেমন_ বাতাসের মধ্যে থেকেও আমরা অনুভব করি না বাতাসের অস্তিত্ব। বাঙালির যাবতীয় আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে রবীন্দ্র সাহিত্যে। শুধু তাঁর সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্ম নয়, তাঁর চিন্তা ও কর্মের প্রভাবও বাঙালির জীবনে আর যে কারও চেয়ে বেশি।





রবীন্দ্রনাথ মারা যান অবিভক্ত ভারতে। তাঁর মৃত্যুর ছয় বছর পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রসন্ন ছিল না সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে। প্রকাশ্যে না বললেও প্রধান কারণ ছিল রবীন্দ্রনাথ মুসলমান ছিলেন না, তিনি ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ। অমুসলমান বলেই কেন্দ্রীয় সরকার রবীন্দ্রনাথকে পাকিস্তানের কবি বলে স্বীকার করত না। এক পর্যায়ে রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত বন্ধের হীন চক্রান্ত হয়। সচেতন বাঙালি তা বানচাল করে দেয়। তার কবিতার মাঝে বাঙ্গালী অনুপ্রেরণা খুঁজে নিয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলোতে। তিনি মিশে আছেন আমাদের সংস্কৃতির সাথে, থাকবেন আজীবন। তার জন্ম ভারতের পশ্চিম বংগে হলেও তার জীবনের অনেক সময় কেটেছে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। তার অসাধারণ কিছু সাহিত্য কর্ম সেখানেই সৃষ্টি। এ বছর তার সার্ধশত জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে দুই দেশে পালন করা হয়েছে। এটা রবীন্দ্র প্রেমীদের জন্য খুশির খবর । এর মাধ্যমে তার সুবিশাল সাহিত্য কর্মের প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ যথার্থই তুলনাহীন, তাঁর জুড়ি নেই। আজকের এই ফেসবুক, ইন্টারনেটের যুগ রবীন্দ্রনাথ দেখে যেতে পারেননি । আমার মনে হয় তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক ভাল উপায় হতে পারে তার সব সাহিত্য কর্ম একত্রে একটা ওয়েবসাইট এ রাখা, যেটা করলে নতুন প্রজন্ম আরও সহজে রবীন্দ্র কর্মের সংস্পর্শে আসতে পারবে। আর যেহেতু তিনি দুই বাংলার কবি, এই কাজটা যৌথভাবে করতে পারে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য সরকার। রবীন্দ্রনাথ কে আমরা যত কাছে আনতে পারব, তার সাহিত্য কর্ম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভালো কিছুর দিকে অগ্রসর হতে পারব বলেই আমার বিশ্বাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.