নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Ashraful Alam Khan Pranto
পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ১৯২৭ সালে তার বিখ্যাত ''অনিশ্চয়তার নীতি'' বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করেন। ১৯৩২ সালে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে অবদানের জন্য পান নোবেল প্রাইজও। অথচ মাত্র কয়েকবছর আগে, ১৯২৩ সালে, ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের সময় ভীষন অপমানজনক একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হন আমাদের প্রিয় এই বিজ্ঞানী।
মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইজেনবার্গের ডক্টরেট ডিগ্রির মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন উইলহেম ভীন, আরনল্ড সমারফিল্ড সহ আরো দুইজন প্রফেসর। ডক্টরেট রিসার্চ এবং গণিতের প্রশ্নগুলো খুব সহজেই উতরে যান হাইজেনবার্গ। কিন্তু মূল বিপত্তি ঘটে এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্সের প্রশ্নগুলোতে।
গবেষণার কাজে ল্যাবরেটরীতে ফার্বি-পেরট ইন্টারফেরোমিটার ব্যবহার করেছিলেন হাইজেনবার্গ। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় এই যন্ত্রটি নিয়ে একটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন তিনি! পরবর্তীতে তাকে মাইক্রোস্কোপ এবং টেলিস্কোপ নিয়ে সমজাতীয় একটি প্রশ্ন করা হলেও উত্তর দিতে পারেননি হাইজেনবার্গ। সবচেয়ে চূড়ান্ত মূহুর্তে উইলহেম ভীন রাগ করে হাইজেনবার্গকে জিজ্ঞেস করেন, কিভাবে একটি স্টোরেজ ব্যাটারি কাজ করে! দুঃখজনকভাবে হাইজেনবার্গ এই প্রশ্নটিরও উত্তর দিতে পারেননি।
এই পুরো বিষয়টি বোর্ডের সবার কাছে একটি বিরাট শক ছিলো, কারণ হাইজেনবার্গ একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এমনকি তার ডক্টরেট অর্জনের বিষয়টিও ছিলো টার্বুলেন্স সংক্রান্ত একটি জটিল সমস্যার অনুমেয় সমাধান।
হাইজেনবার্গকে ফেল করিয়ে দিতে চাইলেন উইলহেম ভীন। কিন্তু সমারফিল্ড সেবার হাইজেনবার্গকে সর্বোচ্চ নাম্বার দেয়ায়, গড় হিসেবে
তৃতীয় শ্রেণীতে পাশ করে যান হাইজেনবার্গ। হাইজেনবার্গের তাত্ত্বিক জ্ঞানে ভীষন সন্তুষ্ট ছিলেন সমারফিল্ড।
সেই রাতে হাইজেনবার্গের ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের সৌজন্যে সমারফিল্ডের বাসায় একটি ছোট পার্টির আয়োজন করা হয়। কিন্তু হাইজেনবার্গ সেই পার্টিতে যোগ না দিয়ে মধ্যরাতের ট্রেনে, খুব ভোরে হাজির হন ফিজিক্সের আরেক দিকপাল ম্যাক্স বর্নের অফিসে। ম্যাক্স বর্ন হাইজেনবার্গকে নিজের সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আবেগতাড়িত হাইজেনবার্গ নিজের লজ্জাজনক ফলাফলের কথা বর্নকে বলেন এবং জানতে চান তার মতো বাজে ফলাফল করা একজন শিক্ষার্থীকে ম্যাক্স বর্ন নিজের সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিবেন কিনা!
ম্যাক্স বর্নের কাছেও পুরো বিষয়টি শক হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু তিনি ধৈর্য্য সহকারে হাইজেনবার্গের উত্তর দিতে না পারা প্রশ্নগুলো শোনেন এবং হাইজেনবার্গকে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। কেননা বর্ন বুঝতে পেরেছিলেন এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে হাইজেনবার্গের বিশেষ আগ্রহ নেই, তাই এই সামান্য প্রশ্নগুলো দিয়ে হাইজেনবার্গকে বিচার করা সম্ভব নয়।
১৯২৫ সালেই হাইজেনবার্গ, বর্ন এবং প্যাসকোল জর্ডান আবিস্কার করে ফেলেন ম্যাট্রিক্স ম্যাকানিক্স। সহজ কথায় যার মানে হলো, কোয়ান্টাম ফিজিক্সকে একটি গাণিতিক কাঠামো দেয়ার পদ্ধতি।
সব ভালো যার, শেষ ভালো তার। কিন্তু এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্সের দুঃস্বপ্ন পরবর্তী জীবনেও তাড়া করে বেরিয়েছে হাইজেনবার্গকে। বিখ্যাত অনিশ্চয়তা নীতি প্রমাণের স্বার্থে মাইক্রোস্কোপিক হিসাব নিকাশে ভূল করে বসেন হাইজেনবার্গ। পদার্থবিজ্ঞানী নিলস বোর সেই ক্রুটি চিহ্নিত করেন এবং এরই সূত্র ধরে পরবর্তীতে সৃষ্টি হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা।
এই ঘটনাটি থেকে আমরা কি শিক্ষা নিতে পারি?
হাইজেনবার্গ নিঃসন্দেহে একজন জিনিয়াস ব্যক্তি ছিলেন। তবে আমাদের মতো গড়পড়তা বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিকস এবং ক্যারিয়ারের জন্য এক্সপেরিমেন্ট, ল্যাবরেটরী এসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু দুঃখের সাথেই বলতে হয়, আমাদের দেশের দূর্বল শিক্ষা ব্যবস্থায় ল্যাবরেটরীকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। বিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ন পরীক্ষাগুলো ছাত্র অবস্থায় সঠিকভাবে না করার কারনে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিজ্ঞানভীতি বা অপবিজ্ঞান প্রেম!
আশা করি ভবিষ্যতের কর্তা ব্যক্তিরা জাতিকে এই অন্ধকূপ থেকে উদ্বারে এগিয়ে আসবেন।
তথ্যসূত্র: Click This Link
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৫
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি নিজেও পাঠ্যবই লেখার একটি প্রজেক্টের সাথে যুক্ত আছি। বাজারে প্রচলিত পরীক্ষা ভিত্তিক পাঠ্য বইয়ের বাইরে গিয়ে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর পাঠ্যবই লেখার চিন্তায় আছি।
প্রার্থনায় রাখবেন।
২| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৪৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ঔপনিবেশীক ক্লারিকার শিক্ষানীতি থেকেতো আগে বের হোক।
দু,শ বছরের গোলামীর শিকল ছিড়লেও চেতনায় পরাধীনতার অনুসরন থেকে আজো তো বের হতে পারলো না!
এই উচ্চমার্গীয় ভাবনাতো দূরপরাহত!
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: উপনিবেশ পরিচয় থেকে বের হয়ে আপনি কোথায় যাবেন? আপনার নিজের কি এমন কিছু আছে যা দিয়ে বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে পারবেন?
তিক্ত বাস্তবতা। ইংরেজদের গালি দিয়ে অযথা বাক্যব্যয়ের বাইরে বিশেষ লাভ নেই।
স্বচ্ছতা এবং দূর্নীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করুন। তাতেই যথেষ্ঠ হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:২৪
শোভন শামস বলেছেন: খুব ভালো লাগল।শিক্ষা ব্যাবস্থায় সাবলীল পাঠ্যবই ও শিক্ষক প্রয়োজন।
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ, আমিও একমত আপনার সাথে।
৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪
আমি সাজিদ বলেছেন: বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিস এর কয়েকটি বিশেষ ক্যাডার ছাড়া আপাতত এক্সপেরিমেন্ট ও ল্যাবরেটরির কোন দাম নাই।
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: দুঃখজনক কিন্তু সত্য।
ল্যাব আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে বিরক্তির নাম।
আগ্রহ উদ্দীপক অনুসঙ্গ আমাদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কমই আছে।
৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫
আমি সাজিদ বলেছেন: শিক্ষা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য এখন ওরাকল কনফিডেন্সের কোচিং আর একটি সরকারী চাকরিতে ঢুকে ধরাকে সরাজ্ঞান করা!
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৫০
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: কাগজ কলমের পরীক্ষায় পাশ করে নিজের লিগ্যাল জমিদারি খোলার সুযোগ কয়জনই হারাবে বলুন?!
৬| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: অজানা বিষয় জানলাম।
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:২৮
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৩২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপনা।
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বয়ং সম্পূর্ণ ল্যাবরেটরি নাই। অনেক স্কুল-কলেজে হয়ত এসব নাইও। ক্লাস নাইন-টেন থেকে ল্যাবরেটরির কাজ শুরু হয়। পর্যাপ্ত স্পেসের অভাবে ল্যাবের কাজও ঠিকমতো হয় না। বরং, ল্যাব না করাইতে পারলেই ছাত্ররা বাঁচে। থিওরিট্যাল পাঠদানে আবার স্বাচ্ছন্দ্যও বেশি।
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩০
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: যথাযথ বলেছেন।
শিশুদের প্রাথমিক বিজ্ঞান বোঝাতে ক্লাস থ্রি থেকে কার্যক্রম শুরু করা উচিত।
যেমন জাপানের শিশুরা কিন্ডারগার্ডেনে পরাগায়ন শেখে, আমরা শিখি ক্লাস সেভেনে।
৮| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:০১
নেওয়াজ আলি বলেছেন: শিক্ষণীয় লেখা । শিক্ষার সাথে আনন্দ অপরিহার্য ।
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১২
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনার সাথে একমত।
৯| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩১
ইফতি সৌরভ বলেছেন: আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সয়ংসম্পূর্ণ ল্যাব দিলেও কাজের কাজ কতটুকু হবে - তা পরিষ্কার না। শিক্ষক যেমন সারাজীবন বিসিএস এর ২-৩টি ক্যাডারের স্বপ্ন দেখে তেমনি ছাত্রদের মাঝেও তা বিলিয়ে দেয়। সুতরাং, বর্তমান দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিসিএস গাইড এবং কিছু সাধারণ গণিত & লজিক এর উপর প্রতিষ্ঠিত।
০২ রা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো অনুপ্রেরণা নেই। আমাদেরই ঘুরে দাড়াতে হবে।
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৪২
অধীতি বলেছেন: খুব ভালো লাগল।শিক্ষা ব্যাবস্থায় নতুনত্ব ও ছাত্রছাত্রীদের হন্য সাবলীল পাঠ্যবই ও শিক্ষক প্রয়োজন।