নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের অব্যক্ত সব কথামালা

মরা পাখি

আমি মরে গিয়েছি।তবে আমার প্রাণটা এখনো মরেনি।মরেছে শুধু মনটা।

মরা পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ ঠিকানা অবশেষে "বিদ্ধাশ্রম"

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪


মোজাম্মেল হক! বাংলাদেশের অন্যতম
নামকরা এক ব্যবসায়ীর নাম। নামটা ঠিকই
আছে কিন্তু লোকটার অবস্থান কেউ
বর্তমানে জানেনা। মোজাম্মেল সাহেবের ২
ছেলে, ২ মেয়ে। স্ত্রী ২০ বছর আগেই মারা
গেছেন পেরালাইসড হয়ে। সেই থেকে
মোজাম্মেল সাহেব তার সন্তানদের নিয়েই
থাকতেন।
,
মোজাম্মেল সাহেবের ছেলে মেয়েরা
দেশের এবং বিদেশের নামকরা
প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন। কেউ
ঢাবির,কেউ আবার অক্সফোর্ডের ছাত্র ছিল।
মোজাম্মেল সাহেব সন্তানদের সব ইচ্ছাই
পূরণ করতেন। যখন যা চাহিদা থাকত, সাথে
সাথেই তা তিনি মিটিয়ে দিতেন। লাখ,লাখ
টাকা মাসে খরচ করতেন। কোন হিসাব
করতেন না খরচের টাকার। টাকাও ছিল তার
অনেক। খরচ করতে কোন সমস্যাও হতনা। ভালই
চলছিল সব।
,
হঠাৎ করেই একদিন মোজাম্মেল সাহেব
প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পরেন,তার একটা ব্রেন
স্ট্রোক হয়ে যায়। মোজাম্মেল সাহেবের
সন্তানেরা দেশে বিদেশে ওনার চিকিৎসা
করে ওনাকে মোটামুটি সুস্থ করে তুলেছিল।
ডাক্তার বলেছিল ওনি এর থেকে বেশি ভাল
হবেননা। মোজাম্মেল সাহেব অল্প করে কথা
বলতে ও আস্তে আস্তে হাটতে পারতেন তখন।
,
একদিন তার দুই ছেলে এসে তাকে জানায় যে
তার প্রতিষ্ঠানের মালিক এখন তার
সন্তানেরা। মোজাম্মেল সাহেব ব্যাপারটা
নেগেটিভ ভাবে নেন নি।কারণ এক সময়
তাদেরই তো সব হবে।কিন্তু হঠাৎ করেই
মোজাম্মেল সাহেবের প্রতি অযত্বান হয়ে
গেল সন্তানেরা। ব্যাপারটা তিনি লক্ষ্য
করতে লাগলেন।কিন্তু কাউকে কিছু
বলছেননা।
,
কিছুদিনের মাথায় মোজাম্মেল সাহেব
আবার স্ট্রোক করেন। এবার আর তার কপালে
বিদেশী চিকিৎসা জুটলনা। এবার তাকে
সন্তানেরা ঢাকা মেডিকেলের বারান্দায়
ফেলে রেখে চলে যায়। ডাক্তারকেও কিছু
বলে যায়নি তারা। মেডিকেলের বারান্দায়
ওনাকে পরে থাকতে দেখে এক ইন্টার্নি
ডাক্তার ওনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
,
এবার আর তেমন সুস্থ হতে পারেননি
মোজাম্মেল হক সাহেব।হয়ত কপালেও নেই
তেমন সুস্থতা। ওনি বুঝতে পরেছেন কেন
ওনার আজ এ অবস্থা। একটু সুস্থ হয়ে
হাসপাতালে সন্তানদের জন্য অপেক্ষায়
ছিলেন মোজাম্মেল সাহেব। অবাক করার
বিষয়। কেউ তাকে বাসায় নিতে আসছেনা।
তাই তিনি নিজেই কয়দিন পর একটা
সিএনজিতে করে বাসায় যান। বাসায়
পৌছানোর পর তার ছেলেরা তাকে দেখে
খুবই বিরক্ত হয়। তারা ওনার দায়িত্ব নিতে
পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়। ওনার
সন্তানেরা আজ নাকি অনেক ব্যস্ত।
,
সন্তানেরা একদিন বাসার বাইরে গেলে ওনি
একটা চিরকুট লিখে বাসা থেকে বের হয়ে
পরেন। চিরকুটটাতে লেখা ছিল "পাপের
শাস্তি দেরিতে হলেও পেয়ে গেলাম"।
,
মোজাম্মেল সাহেব অনেক ভেবে চিন্তে
সিদ্ধান্ত নিলেন উনি বাকি জীবনটা
বৃদ্ধাশ্রমেই কাটাবেন। কারণ এখানে তাকে
কেউ চিনবেনা। আর তার খবরও কেউ
নিবেনা। আর সবচেয়ে বড় কারণ হল, তিনি
উপলব্ধি করতে চান তার মায়ের কত কষ্ট
হয়েছিল বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে। একদিন তিনিই
তার অসুস্থ মাকে জোড় করে বৃদ্ধাশ্রমে
দিয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন ওনার মা অনেক
কান্নাকাটি করেছিল।কিন্তু মোজাম্মেল
হকের মনে সেদিন একটুকুও মায়া জাগেনি।
যেমনি আজ তার বেলাতে হয়েছে।
,
মোজাম্মেল সাহেব এখন অনেক অনুতপ্ত।
কিন্তু তার এই অনুতপ্ততা কোন কাজে আসবে
কিনা এই শেষ সময়ে সেটা ওনার জানা নেই।
ওনি এখন সারাদিন মৃত্যুর প্রহর গোনেন।কিন্তু
বয়স ১০০ পার হবার পরও মৃত্যুর দেখা ওনি
এখনও পাননি। ওনার এখন একটাই
চাওয়া,সেটা হল দ্রুত পৃথিবীর মায়া ছেড়ে ঐ
পরপারে যাওয়া।কিন্তু সেটা কবে,কিভাবে
হবে সেটা তার জানা নেই।মরতে পারলেই
যেন ওনি বাঁচতে পারবেন এটা তার ধারনা।
আসলেই কি তিনি বাঁচতে পারবেন??
,
(কাল্পনিক)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.