নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা আন্দোলনঃ উপলব্ধি ২০১৩

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৫

এই যে মাতৃভাষায় এত ঠাঁটের সাথে লিখছি, এর জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত নাম জানা ও অজানা সকল ভাষা-শহীদদের প্রতি, এরপর তাদের আত্মার শান্তির জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করা উচিত।



এ তো গেল পারলৌকিক কৃতজ্ঞতা-প্রকাশের কথা! যারা এসবের তোয়াক্কা করেন না, বিশেষ করে তাদের কথা ভেবেই এবার আমার কৃতজ্ঞতা মোড় নিচ্ছে ইহলৌকিক প্রেক্ষাপটের দিকে।



কখনো চিন্তা করেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, অতীত-ভবিষ্যত-বর্তমানের কথা না ভেবেই, পরিবার-বন্ধু-স্বজনদের মায়া উপেক্ষা করে যেসব সাহসী মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়ে গিয়েছে, তাদের জন্য আমরা কি করেছি বা করছি!

অনেক ভাষা-শহীদের নামই আমরা আজ-ও জানি না, যাদের চিনি তাদের অনেকের পরিবার ও উত্তরসূরীর খবর আমরা রাখি না। বেঁচে থাকতে তারা অনেকেই মানবেতর জীবন-যাপন করেছিলেন, আর মরে যাওয়ার পরে মরণোত্তর একুশে পদক পান!



আমাদের দেশের সব বিশেষ দিবসের মত একুশে ফেব্রুয়ারীকেও ধীরে-ধীরে চাতুর্যের সাথে একটা কর্পোরেট-কমার্শিয়াল লুক দেওয়া হচ্ছে। যে দিবসের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত শহীদদের সম্মান জানানো, বাংলা ভাষা-সাহিত্যকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সমুন্নতকরণ ও বাংলার ইতিহাস-চর্চা, সেদিনে দেশের বেশীর ভাগ মানুষের ঝোঁক থাকে একটা হুজুগে উতসব পালনের দিকে, রঙ আর ফুলের ব্যাবসাকে চাঙ্গা করার দিকে!

বাংলাকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার আগেই দেশের উচ্চ-আদালতে এর স্থান পাকা-পোক্ত করা উচিত। আদালতের ভাষা তো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বা প্রযুক্তিগত ভাষা নয় যে তার পারিভাষিক শব্দ থাকবে না! তাহলে কেন বাংলাকে এক্ষেত্রে অবহেলা করা হচ্ছে?



দেশের বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে লিখতে শুরু করলে তো কি-বোর্ড আর আস্ত থাকবে না। তারপরেও বলতে হয়, সমাজের একটি ধরা-ছোয়ার বাইরে বিশেষ শ্রেণী রয়েছে, যাদের সন্তানেরা বেড়ে উঠছে "দেশে থাকা বিদেশী" হিসেবে। ইংরেজী-মাধ্যমের শিক্ষাকে মধ্যবিত্ত (যাদের বেশীর ভাগ বাংলা মাধ্যমে পড়েন) লোকেরাও পূজনীয় হিসেবে দেখেন, কারণ এইসব ইংরেজী-মাধ্যমের ফার্মের মুরগীগুলোকে পড়িয়ে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যায় এবং মধ্যবিত্তেরা এও স্বপ্নে দেখে যে তাদের সন্তানেরা একদিন এসব ইংরেজী-মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে "স্ট্যাটাস-সুইচ" করবে!

ইংরেজীর প্রতি আমার বিরাগ নেই, আবার মাত্রাতিরিক্ত অনুরাগ-ও নেই! যারা মাদ্রাসা-শিক্ষাকে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণে তুলোধুনো করেন, তারা জেনে রাখুন- সেখানে অন্তত বাংলার অস্তিত্ব আছে; তাদের ছাত্ররা অন্তত এতটুকু জানে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস না (আজ এটিএন নিউজের খবরে এক মোটা-সোটা বেবি যা বল্লো, তা শুনে তো লজ্জায় পা-জোড়া কানে ঢু্কিয়ে দিতে ইচ্ছা করেছিল!)



আশ্চর্য হতে হয়, দেশের বেশীর ভাগ লোকের মাতৃভাষা বলার ধরণ দেখে! নিজেরটাই জানে না আবার সাইফুরস-এফএম মেথডে দৌড়ায়! স্কুল-কলেজের ৯৯% শিক্ষার্থী বাংলায় "এ+" পাওয়ার জন্য গাইড পড়ে, অন্যের নোট গিলে, পরীক্ষায় নাম্বার পাওয়ার আশায় স্কুলের স্যার-ম্যাডামদের দ্বারস্থ হয় (শিক্ষকের কাছে পড়াটা দোষের না, সমস্যা বাংলা-শিক্ষার ধরণে)। সৃজনশীলতা এখন একটা "হট নিউ প্যাকেজ", ছাত্রসমাজকে সৃজনশীল করার চেষ্টা পুরোটাই বৃথা, কারণ "বাংলা"-কে এখনো সবাই দেখে একটা বিষয় হিসেবে, মাতৃভাষা হিসেবে না!



সব শেষে বলে রাখি, সকল শহীদদের ঋণ আমরা কোনদিনেও শোধ করতে পারবো না, তবে তাদের প্রতি আমাদের তখনই প্রকৃত সম্মান জানানো হবে যখন আমরা অতীতের গ্লানি মোচন করে সামনে এগিয়ে যাবো, বারবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে একে অন্যের ভুল ধরার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসবো, রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজ-সংস্কৃতি থাকবে দুর্নীতিমুক্ত, বৃহত্তর স্বার্থে সবাই থাকবো অসাম্প্রদায়িক!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.