নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়!"- written by Salman B Hosain

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬



১.



তিনি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। হয়তো ভাবছেন আমি দুষ্টামি করছি। আবার জিজ্ঞেস করলেন, “কোন ভার্সিটিতে অনার্স করেছো বললে?”আমি প্রানপণে হাসি চেপে রেখে ভার্সিটির নাম আবারো বললাম। তাকে এবারো সন্তুষ্ট মনে হলোনা। বাধ্য হয়ে আমাকেই প্রসঙ্গ পাল্টাতে হল। পুরো গল্পটা সবসময় বলে বেড়াতে ইচ্ছে করেনা।



২.



এস এস সি দেবার সময় হোস্টেলে একদিন ধরা খেলাম চুরি করে ডাব পাড়তে গিয়ে। গণিত পরীক্ষার আগের দিন ধরা খেলাম সিগারেট নিয়ে। স্কুল ছিল ভয়াবহ কড়া। ফলস্বরুপ, আমাকে একই স্কুলে আর পড়তে দেয়া হলনা। চলে আসার আগে প্রিন্সিপাল আবৃত্তি করে শোনালেন, “দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল”। পাবলিক স্কুল থেকে এক লাফে সরকারি কলেজ, পড়াশোনা চুলোয় উঠলো। নতুন তাশ খেলা শেখা, বিতর্ক অনুশিলন, বন্ধুদের সাথে সারা সন্ধ্যা আড্ডা, রাত করে বাসায় ফেরা, ভয়াবহ আনন্দময় একটা সময় কাটিয়েছি তখন। অতঃপর কোনরকমে এইচ এস সি পাস করতে হলো। হটাত উপলব্ধি হলো, আমি আমার জীবনটা শেষ করে ফেলেছি। এই কোন রকম রেজাল্ট নিয়ে কোথায় ভর্তি হব? আর দশ-পাঁচটা ধনীপুত্রের মত দামী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রশ্নই ওঠেনা। মায়ের ক্যান্সার, বাসার অর্থনৈতিক অবস্থাও সুবিধার না। ভাগ্য সহায় হলেন। দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাইয়ের কল্যানে একটা সদ্যভূমিস্ট প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে গেলাম। ডাকসাইটে ফার্মাসির শিক্ষকরা আমাদের ক্লাস নিতেন। মূলত তাদের কারণেই একদিন ফার্মাসির প্রেমে পড়ে গেলাম। এই প্রেমই আমার কাল হল। মাথায় ভূত চাপলো পি এইচ ডি করলে কেমন হয়। নিজের মায়ের ক্যান্সার। পি এইচ ডি করে ক্যান্সার সারাতে না পারি, অন্তত কিছুটা মানসিক শান্তিতো পাবে আমার মা-বাবা। আমার পরিকল্পনা শুনে আমার বন্ধুরা হেসেই খুন। এই ভার্সিটি থেকে পাশ করে তুই চাকরি পাবি কিনা দেখ, আবার পি এইচ ডি। গরীবের ঘোড়া রোগ আর কি। কিন্তু কেন জানি আমার জিদ দিন কে দিন বাড়তেই থাকলো। কিছু শিক্ষক খুবই সমর্থন জানালেন আমার ইচ্ছের প্রতি। আমি আশা ছেড়ে দিলাম না। অনার্সের রেজাল্ট ভাল হল। বেশ ভাল। বন্ধু মাসুমকে প্রস্তাব দিলাম, “চল, ব্যাটম্যান সিরিজের নেক্সট সিকুয়াল আমেরিকার একটা থিয়েটারে বসে দেখি”। মুভিপাগল আমার বন্ধুটি আমার প্রস্তাবের বাস্তবতা যাচাই বাছাই না করে সম্মতি দিয়ে দিলো। এরপর বহু ঝড়ঝাপটা গেলো। জি আর ই, টোফেল, বড় ভাইদের কাছে সাজেশন চেয়ে ইমেইল, ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি, বিভিন্ন প্রফেসরের সাথে কথা বলা, এপ্লাই করা। মাথায় সবসময় এটা কাজ করতো যে টাকা দিয়ে আমার পক্ষে পড়া সম্ভব না। স্কলারশিপ পেতে হবেই, যেভাবেই হোক। হাল ছেড়ে দেইনি কখনও।



৩.



একটা ইউনিভার্সিটিতে এসেছি বায়োমেডিকেল সায়েন্স কনফারেন্সে আমার রিসার্চের উপর প্রেজেন্টেশন দেয়ার জন্যে। এসে বেশ কিছু বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রিদের সাথে পরিচয় হয়ে গেলো। একটা বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি করছি। আমি জানালাম ব্রেস্ট ক্যান্সার স্টেম সেল টার্গেটেড কেমোথেরাপি নিয়ে গবেষণা করছি। তিনি খুশী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমি নিশ্চই অনার্স করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমি বিনয়ের সাথে জানালাম আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। তাকে আমার ভার্সিটির নামও বললাম। তিনি অবিশ্বাস চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন “কোন ভার্সিটিতে অনার্স করেছো বললে?”



৪.



থিয়েটারে বসে আছি। ইউ এস এ তে উইকেন্ড মানে হচ্ছে মুভি দেখতে থিয়েটার যাওয়া। অনেকটা অলিখিত নিয়মের মত। মুভি ট্রেইলার দেখাচ্ছে কিছু। একটুপরই মুভি শুরু হবে। শুরু হয়ে গেলো ‘ দি ডার্ক নাইট রাইজেস’। ব্যাটম্যান সিরিজের তৃতীয় মুভি। আমি হাসিমুখে ডান দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম মাসুমেরও মুখ হাসিতে একান ওকান হয়ে আছে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:০০

বোকামানুষ বলেছেন: অনেক সুন্দর

মন ভাল করে দেয়া একটা লেখা

অনেক ভাল লাগলো

আমার নিজেরও বাইরে থেকে মাস্টার্স করার অনেক ইচ্ছে জানি না পারবো কিনা

++++++

২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:০৬

স্বপ্নখুঁজি বলেছেন: খুব্‌ই ভালো লাগলো।এটা যে ব্যক্‌তির জীবনের ঘটনা,তার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪

কালোপরী বলেছেন: :) :)

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯

জানতে চায় বলেছেন: অনেক ভালো লেখা .. :)

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪

আবীর চৌধুরী বলেছেন: all credit goes to Salman bhai.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.