নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন, নতুন বছরটাকে "শুভ" করে তুলি

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৩৩

প্রথম যখন "আনলাকি থার্টিন" কথাটি শুনেছিলাম, তখন মনে প্রশ্ন জাগত কেন ১৩ কে দূর্ভাগ্যের প্রতীক বলে ধরে নেওয়া হয়। পরে ইন্টারনেট আর পত্রিকার মাধ্যমে এই ধারণার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক চমতকার কারণ জানতে পারি। সম্ভবত বিপক্ষের কারণগুলোর সংখ্যা বেশী ও যৌক্তিক হওয়াতে "আনলাকি থার্টিন" একসময় আমার কাছে কুসংস্কার হিসেবেই পরিণত হয়।

এ তো ছিল ২০১৩ আসার আগের ঘটনা। ২০১৩ শুরু হওয়ার পর সবার সাথে ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর সময় মজা করে বলতাম, "এসে তো গেল- আনলাকি থার্টিন!" তখন-ও চিন্তা করিনি, আমার এই মজাটাই একসময় অন্তত সব বাংলাদেশীর জন্য সত্য হয়ে দাঁড়াবে! এখন তো বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর সময় "শুভ নববর্ষ" বলাটাও প্রমাণ করে, দেশের "কর্পোরেট ফেস্টিভ্যাল-ক্রেজ জেনারেশন" কতটুকু উদাসীন অথবা উচ্চ-আশাবাদী হতে পারে! নববর্ষ শুভ হওয়ার কামনা করা ভাল, আশা করাও ভাল, কিন্তু সে আশা বীজ না লাগিয়ে ফল খাওয়ার আশা করার মতই!

এই বছরটা আমাদের অনেকের জন্যই অন্যরকম হতে পারত। এস-এস-সি ও এইচ-এস-সি পরীক্ষার্থীরা আরো নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে পারত; রপ্তানীমুখী ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হত আরো বেশী; দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক রেমিটেন্সের পরিমাণ-ও বাড়ত; বিদ্যুত-গ্যাস-বন্দর-জ্বালানী প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরকারের মনোযোগ আরো বাড়ত; গত ৪ বছরে ঘটে যাওয়া সব সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজা যেত। কি হতে পারত, তার তালিকা দিয়ে সময়ক্ষেপণ না করে কি করা যেতে পারে, তার ভাবনা ভাবাই শ্রেয়।

"শুভ নববর্ষ"-এর এই অশুভ পরিণতি হওয়ার জন্য আমি সবসময় সরকারকেই দায়ী করব। কারণ, সরকার রাষ্ট্রের অভিভাবক, জাতির কাণ্ডারী। সন্তানের দোষের দায়ভার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে অভিভাবকের উপরেই বর্তায়! আর সরকারের আগেও আমি দায়ী করব, দেশের ঘুণে ধরা রাজনীতি আর মরচে পড়া সমাজব্যবস্থাকে!

এই দেশে মানুষ এখন দুটো কারণে রাজনীতি করে- একটি হচ্ছে ক্ষমতা আর অর্থের রাজনীতি, অন্যটি হল "মগজধোলাই"-এর রাজনীতি! ক্ষমতা আর অর্থের রাজনীতির দুষ্ট চক্র দেশকে গত ৪২ বছরে চোরাবালির ভিতরে ধীরে ধীরে ডুবিয়ে দিচ্ছে, আর যারা মগজধোলাই-এর রাজনীতি করে তারা এই চোরাবালির ভিতরে অর্ধ-নিমজ্জিত থাকা জাতিকে সাহায্যের সূক্ষ ছলনায় মানুষের বিবেক-বুদ্ধি নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।

"মরার উপর খাড়ার ঘা" বলতে যা বুঝায়, তা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করল গত তিন-চার মাসে! ক্ষমতা আর অর্থের রাজনীতির কালো-হাত মানুষের আঁতে সরাসরি আঘাত হানে না, কিন্তু যখন মগজধোলাই-এর রাজনীতির ধারক-বাহকেরা একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নামল, তখন সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, প্রথাগত অপরাজনীতিবিদেরাও রীতিমত "কিংকর্তব্যবিমূঢ়" হয়ে গেলেন। দেশ হয়ে গেল বিভক্ত, ধর্মকে নামিয়ে আনা হল অধর্মের স্থলে, পাপ-পূণ্য একাকার হয়ে গেল, বন্ধুত্বে-আত্মীয়তায় ফাটল ধরল। কার ফায়দা এই নৈরাজ্য? কার আনন্দ এই অনৈক্য? কার সন্তুষ্টি এই সহিংসতায়? কার তৃপ্তি এই উন্মত্ততায়?

আমাদের দেশের পুরোনো একটা প্রথা আছে, ভাল বা সুন্দর কিছুতে যাতে নজর না লাগে সেজন্য ব্যক্তি বা বস্তুটিতে "কালো টিপ" লাগিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের দেশের উপরেও কারো না কারো কুনজর পরেছে, আর এই কুদৃষ্টি এড়াতে এখন আর কালো টিপ-ও কাজে আসবে না।

প্রথম প্রথম যখন একটার পর একটা সমস্যা জট পাকাতে শুরু করল, তখন মনে হত সরকার নিজেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে একটা একটা নতুন নাটক মঞ্চায়ন করছে। এখন বুঝি, সব কিছুরই আসল গন্তব্য হল আসলে ক্ষমতা! ক্ষমতায় যেতে যত মঞ্চের দরকার সবই সরকার তৈরী করবে। নিজেদের ভাল কাজের উপর আস্থা থাকলে কোন রাজনৈতিক দলই কখনো নির্বাচন নিয়ে কূটকৌশল খেলতে পারেনা। টিআইবির মধ্যস্থতায় হোক অথবা অন্য যেকোন সংগঠনের মধ্যস্থতায় হোক, সরকারের উচিত এখন “নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার”-এর রূপরেখা তৈরীর জন্য প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসা।

“তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু” মিটমাট হয়ে যাওয়ার পর বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের জন্য আপাতদৃষ্টিতে বিরোধিতার কোন ইস্যু থাকে না! এরপরে সরকার ইচ্ছে করলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করুক অথবা সেটাকে পুঁজি করে পরবর্তীতে আবার ক্ষমতার সোনার সিংহাসনে বসার চেষ্টা করুক, তা সম্পূর্ণ একচেটিয়া ব্যাপার।

আর রাজনীতির মাঠে খুবই নোংরা একটা নিয়মের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে- “আমার জন্য যে যুক্তি প্রযোজ্য, তোমার জন্য সে যুক্তি প্রযোজ্য নয়”। এই অপসংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। মিডিয়াকে আরো নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল হতে হবে। ব্লগ ও ফেসবুকে ফ্যানাটিক আচরণ প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে হবে! যারা গণমানুষের রাজনীতি করেন, তারা “জনগণ” বা “সাধারণ মানুষ” বা “আমজনতা” শব্দগুলোকে সাম্প্রদায়িক বা পক্ষপাতদুষ্ট করে ফেলবেন না; তাহলে আপনারা মানুষের সাথে আরো সম্পৃক্ত হতে পারবেন।

এরকম চরম মূহুর্তে একতা, সহনশীলতা আর সহমর্মিতার কোন বিকল্প নেই। দেশে কেউ কারো শত্রু নয়, সবাই বাংলাদেশের, দেশটাও সবার। রাজনৈতিক দলের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা অপরাজনীতি আর অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে যাবেন না, নিজ নিজ উর্ধতন নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করুন, তোষামোদী করবেন না, ভয় পাবেন না, দেশের মানুষ আপনাদের সাথে আছে। মনে রাখবেন, দেশটা কারো নিজের টাকায় কেনা সম্পত্তি নয়!

শেষ বাক্যে বলতে চাই, সবকিছুর একটা শেষ আছে, আবার শেষের পরে নতুন শুরু আছে। সব শেষ হয়তো সুখের হয় না। মানুষ যখন নিজের মেধা ও জ্ঞানের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন প্রকৃতপক্ষে সে অন্তঃসারশূন্যহয়ে যায়, সৃষ্টি হয়ে স্রষ্টাকে চ্যালেঞ্জ করে, সেসময় মানুষের শেষটা সুখের হলেও, শেষের পরের শুরুটা সুখকর হয় না।



১৪২০ বঙ্গাব্দ শুভ হোক!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.