নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদ্যুত-ঘাটতিতে নবায়নযোগ্য শক্তিঃ প্রয়োজন পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি

২৬ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই সূর্যের প্রবল উত্তাপ থাকে। গ্রামে-শহরের বাসা-বাড়ি, ক্ষেত-খামার ও কলকারখানায় সৌরশক্তি ব্যবহার করে আমরা জ্বালানী-বিদ্যুত খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারি। বিদ্যুত উতপাদনের ক্ষেত্রে ফসিল-ফুয়েল (ডিজেল-পেট্রোল-অকটেন) ও গ্যাসের উপর চাপ ব্যাপকহারে কমিয়ে দেশকে উন্নয়নের পথে কয়েকধাপ নিয়ে যেতে পারি।

“সোলার সেল” বা “সৌর কোষ” সূর্যের অশেষ প্রখর রশ্মিকে বিদ্যুত শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তাই সস্তা, পরিবেশবান্ধব, সহজে স্থাপন ও মেরামতযোগ্য, সর্বোপরি নবায়নযোগ্য শক্তির উতস হিসেবে “সোলার প্যানেল” বা “পিভি মডিউল” ব্যবহারে নিজে এগিয়ে আসুন এবং অপরকেও ব্যবহার করতে বলুন।

নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এই শক্তি তৈরীর জন্য ব্যবহৃত জ্বালানীর যোগান অপরিসীম। নবায়নযোগ্য শক্তির উদাহরণ হল সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও বায়োমাস (জৈব বর্জ্য)। এর মধ্যে বায়ুশক্তি দিয়ে বিদ্যুত উতপাদনের সুযোগ আমাদের দেশে কম, কারণ আমাদের দেশের খুব কমস্থানেই নিয়মিত প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হয়। এজন্য সৌরশক্তি ও বায়োমাস প্রকল্প আমাদের একমাত্র পাথেয় হতে পারে।

বিদ্যুত শক্তি ছাড়া আজকের সভ্যতাকে কল্পনা করা যায় না। কিন্তু, পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষই বিদ্যুত শক্তিকে শুধুমাত্র একটি ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখে। আমি বাংলাদেশের সোলার প্যানেল ব্যবসায়ী ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি, একে শুধু অন্যান্য সাধারণ ভোগ্যপণ্যের দৃষ্টিতে দেখবেন না। নিজেরা প্রথমে নিজেদের বাসায় সোলার প্যানেল লাগান। তবে এর অপরিসীম সুবিধাকে পুঁজি করে ক্রেতাসাধারণের কাছ থেকে অযৌক্তিক মুনাফা আদায় করবেন না। আমাদের দেশে তো মানুষকে কোন পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত করে ফেলতে পারলেই “কেল্লা ফতে”, ব্যবসায়ীরা আজীবন চুষে চুষে খাবে ক্রেতাদের।

এই প্রসঙ্গে একটা বাস্তব উদাহরণ দিতে চাই। আমার এক কাজিন, উঠতি ব্যবসায়ী, প্রেস-প্রিন্টিং লাইনের ব্যবসা আছে, আবার মালেশিয়ার একটা সোলার প্যানেল কোম্পানির অন্যতম লোকাল ডিস্ট্রিবিউটর, এবং সে জন্মগতভাবে একজন মার্চেন্ডাইজিং (একজনের কাছ থেকে কম মূল্যে জিনিস কিনে আরেকজনের কাছে বেশী মূল্যে বিক্রি করা) বিশেষজ্ঞ [যদিও সে “মার্চেন্ডাইজিং” শব্দটার সাথে পরিচিত না]। আমার এই বড়ভাই বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-সমাজের একজন যোগ্য প্রতিনিধি। পৃথিবীতে শুধু নিজের লাভ-ই তাদের কাছে সবচেয়ে বড়, সেই লাভের জন্য তাকে প্রয়োজনে যা-ই কিছু বিসর্জন দিতে হোক না কেন। যেকোন জ্ঞান/শিক্ষা বা পণ্য/প্রযুক্তি তাদের কাছে তুচ্ছ ও ফেলনা, যতক্ষণ না পর্যন্ত তা’ তাদের জন্য লাভের ফল বয়ে না আনে।

তো সেদিন গেলাম আমার এই কাজিনের বাসায়। তাদের ৫ সদস্যের বাসায় ১৮টা ছোট-বড় ফ্যান, ৩টা বিশালকার টিভি, ২টা ফ্রিজ, ২টা শক্তিশালী আইপিএস, ১টা এসি, অগণিত লাইট। আপনারা হয়তো ভাবছেন, আমি কি বলতে গিয়ে কি বলছি! না, এই বৈদ্যুতিক ব্যবহার্য জিনিসগুলোর সংখ্যা আমি এমনিতেই দেইনি। কথাপ্রসঙ্গে আমার কাজিনকে আমি বললাম, “ভাইয়া, তুমি তো সোলার প্যানেলের ব্যবসা কর, বাসায় আইপিএস সরিয়ে দুই-তিনটা সোলার প্যানেল লাগালেই তো পার।” ভাইয়ার উত্তর শোনার আগে আমি আপনাদের বলে নিই, আমি মনে করেছিলাম যে মানুষ এই লাইনে ব্যবসা করে, সে পণ্যের গুণ-মান সম্পর্কে সব জানবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম, “টাকার অদম্য নেশা মানুষকে সামগ্রিকভাবে প্রতিবন্ধী করে তোলে!”

ভাইয়া আমার প্রস্তাবে জবাব দিল, “আরে, পাগল নাকি! এত টাকা খরচ করে ওগুলো লাগাবো কেন? আর আইপিএস তো ভালই সার্ভিস দিচ্ছে”। আমি মনে মনে ভাবলাম, “আরে গর্দভ! যে মানুষ নিজে তার ব্যবসায়িক পণ্যের উপযোগিতাকে অস্বীকার করে বা বুঝতে পারে না, সে ক্রেতাদের মাঝে একে কি করে সমাদৃত করে তুলবে?”

একটা সোলার প্যানেল তার ক্ষমতা অনুসারে কার্যক্ষম থাকা পর্যন্ত সূর্যরশ্মি থেকে বিদ্যুত উতপাদন করে যাবে, অতিরিক্ত উতপাদিত শক্তি ব্যাটারীতে সংগৃহিত থাকবে, রাতে বা মেঘলা দিনে যখন সূর্য থাকবে না তখন ব্যাটারী থেকে সংগৃহিত বিদ্যুত দ্বারাই ঐ সোলার প্যানেলের সাথে সংযুক্ত ইলেক্ট্রিক্যাল লোডগুলো পরিচালিত হবে। আইপিএস ও সোলার প্যানেলের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল, আইপিএস লাইট-ফ্যানের মতই একধরণের ইলেক্ট্রিক্যাল লোড, মেইন লাইনে পাওয়ার থাকা অবস্থায় আইপিএস ব্যাটারীতে বিদ্যুত শক্তি সংগ্রহ করে এবং ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে ব্যাটারী ব্যাকআপ পাওয়ার সাপ্লাই দেয়। অর্থাৎ, আইপিএস বিদ্যুত খেয়ে নেয়, খাওয়া বিদ্যুত থেকে কিছুটা পরে সাপ্লাই দেয়; কিন্তু সৌরকোষ কখনোই বিদ্যুত খায় না বরং এটি সর্বদা বিদ্যুত উদগীরণ করে।

সোলার পাওয়ার নিয়ে যখন এত কিছু বললাম, তখন বায়োমাস নিয়ে না বললেই নয়। সূর্যশক্তির যেমন কোন শেষ নাই, তেমন মানুষের আশেপাশের জৈববর্জ্যের-ও শেষ নাই। মানুষের মলমূত্র, গবাদিপশুপাখির মলমূত্র, খাবার-উচ্ছিষ্ট, ইত্যাদি জৈববর্জ্য থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরী করা যায় এবং এই গ্যাস জ্বালানী (রান্না ও পরিবহন) হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং একইসাথে এই গ্যাস বিদ্যুত উতপাদনেও কার্যকর। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে ছোট-ছোট বায়োমাস বা বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের সফলতা সম্পর্কে শোনা গেলেও শহরাঞ্চলে বড় আকারের কোন সফল উদ্যোগের কথা শোনা যায়নি। আমি আমার কৈশোর থেকে আমাদের চট্টগ্রামে জাপানী প্রযুক্তিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উতপাদনের আশাবাদের কথা শুনে আসলেও, আজ অবধি বর্জ্য-বিদ্যুত দিয়ে আমি কাউকে একটা মোবাইল-ও চার্জ দিতে শুনি নাই! কয়দিন খবরের পাতায় দেখলাম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এই প্রকল্প নিয়ে বিশাল অঙ্কের কেলেঙ্কারী হয়েছে, হচ্ছে, হয়তো বা হতে থাকবে।



মনে রাখবেন, একটা দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে বিদেশী প্রভুদের সাথে কোন চুক্তি-ফুক্তি লাগে না, শুধুমাত্র দেশের প্রত্যেকের সদিচ্ছাই যথেষ্ঠ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.