নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্চশিক্ষার হালচাল: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার ব্যপ্ত প্রতিফলন

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৩৭

পড়াশুনা কেন করছি এইটা নিয়ে মাঝে মাঝে বেশ টেনশনে পড়ে যাই । সবাই পড়াশুনা করছে ,চারদিকে ভুরি ভুরি উচ্চশিক্ষিত কিন্তু বেতনভুক্ত কর্মচারী ছাড়া বাঙালীকে আরকিছুই হতে দেখি না । আইনস্টাইন, স্টিভ জবস, স্টিফেন হকিং , আব্রাহাম লিংকনদের জন্ম এদেশে হয় না , হাতগোনা যে কয়জন সফলতার চরম শিখরে পৌছান তা কোন ভাবেই এত শিক্ষিত মানুষের মাঝে প্রতুল নয় । অনার্স মাষ্টার্স পাশ অর্থাৎ উচ্চশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে ভুরি ভুরি হলেও এর অধিকাংশই পাচ্ছে না সঠিক মূল্যালয় । তাহলে কেন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি যদি এর সঠিক প্রতিফলনই ঘটাতে না পারি ?



মুল বিষয় হল বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহন অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা অনেকটা "জ্ঞান বিতরন" কর্মসূচীতে পরিণত হয়েছে ।। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানের অনুশীলন,জ্ঞানের প্রচার- প্রসার, তদুপরি জ্ঞানের অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের মনষ্তাত্বিক জগতকে এমনভাবে তৈরী করা যাতে সে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সেই সাথে যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে সমাজের অগ্রগতিতে অংশগ্রহন করে পারে ।। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঘটছে উল্টো ঘটনা ।।অনেকটা সার্টিফিকেট নির্ভর , গবেষনাবিমুখী এবং গতানুগতিক এক ধরনের জগাখিচুরী মার্কা শিক্ষায় আমরা শিক্ষিত হচ্ছি ।। আমাদের দেশের মেধাবীরা যখন ছোট বেলা হতেই বুয়েট,মেডিক্যাল কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন লালন করে বড় হয় তখন আন্তর্জাতিক পরিসরে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্হানও বেশ নাজুক । আন্তর্জাতিক Ranking এ বুয়েটের অবস্হান ২৪১৫ তম , আর ঢাবির অবস্হান ৩৮৬১ তম ; মজার বিষয় হল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এই ranking খুজেঁও পাওয়া যায় নি ।। আসলে এই Ranking দিয়ে কি বোঝায় ?? Ranking গুলো আসলে করা হয় মূলত বিশ্বদ্যালয়ের মৌলিক গবেষনা এবং এই গবেষনার ফলাফল বিশ্বের অগ্রগতিতে কেমন ভুমিকা রাখছে তার উপর ।। অতএব Ranking এটিই বলে দিচ্ছে বৈশ্বয়িক অগ্রগতিতে আমাদের দেশের ভুমিকা বেশ নাজুক ।। বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় অগ্রগতি না হওয়ার পেছনে এটিও একটি কারন হতে পারে ।। এমন হতাশাব্যাঞ্জক অবস্হানের পেছনে মুল কারন হল উচ্চশিক্ষার পদ্ধতি,প্রাতিষ্ঠানিক দুবর্লতা এবং যোগ্য শিক্ষকের অভাব ।

প্রথমত, পাশ্চাত্যের মত আমাদের শিক্ষা নয়, আমাদের প্রেজেনটেশন দিতে হয় না, নতুন এসাইমেন্ট করতে হয় না, সহ শিক্ষা বলতে কিছুই নেই । বরঞ্চ দুইচারটা শিট গিলে, ল্যাব খাতা কপি পেষ্ট করে উচ্চশিক্ষিতের তকমা কপালে লাগাতে পারি ।। আরো উদ্বগের বিষয় হলো ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি করলেও চার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবীর পাশাপাশি উপহার দেয় কতগুলো "শিক্ষিত সন্ত্রাস" আর প্রাইভেট বিশ্বিবিদ্যালয় উৎপাদন করছে একজাতীয় কিছু "হাইব্রিড শিক্ষার্থী" ।

দ্বিতীয়ত, আসা যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে, এদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো মেধাবীদের আশা আঙ্কাকার প্রতীক হলেও শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ,রাজনৈতিক কলকাঠি , পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণে কাঙ্কিত সামগ্রীক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় না ।। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক সাড়া বছর ক্ষেপ মারার কাজে ব্যস্ত, অনেক ছুটি নিয়ে করেন প্রাইভেটে শিক্ষকতা,অনেকে উচ্চতর ডিগ্রীর নামে ঘুরে বেড়ান দেশে দেশে ; তখন নিজের প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির চিন্তা করার সময় কোথায় আর ছাত্রদের নিয়ে গবেষনা করারই বা সময় কোথায় ?? তবে এই কথাও সত্য যে উনারা প্রাইভেটে ক্লাশ না নিলে এইখানকার শিক্ষার্থীরা আমাদের মত শিক্ষাখরায় ভোগত । আর রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলে শিক্ষাকে পন্য হিসেবে ব্যবহার করাটাও উচ্চশিক্ষার মান অবনমের অন্যতম প্রধান কারণ ।। আগে কিছু মানুষের অল্প টাকা হলে একটা কোচিং সেন্টার দিত, এরপর দিত কেজি স্কুল আর এখন এই টাকা ইনভেষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার মাধ্যমে ।। যে দেশে ভবনের নিচ তলায় দোকান কিংবা ফিলিং স্টেশন, ২/৩ তলায় বিশ্ববিদ্যালয় আর তার উপর ফ্ল্যাটবাসা সে দেশের উচ্চশিক্ষিতরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো অবাক করার মত নয় ।। ১৯৯২ সালের পর এদেশে ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে এবং অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে নির্দিধায় !! এমন অবস্হায় দেশে মোট শিক্ষিতের যখন ১৮% উচ্চশিক্ষিত তখন বলতেই হয় "আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষিতের হার বাড়ছে কিন্তু মান কমে যাচ্ছে সমানুপাতিক হারে" ; এসব কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আমার মত হয়ত অনেকের মনে হতাশার বীজ অঙ্কুরীত হয়ে কবিতার চরণগুলো আপন বনে যায় ...



"ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !

আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !

আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !"



তৃতীয়ত, একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্হার মূল ভিত্তি হল শিক্ষক । কিন্তু বর্তমান সময়ে এই ভিত্তিটি বেশ নড়বড়ে অবস্হায় আছে ।। বর্তমান সময়ে অনুকরনীয় বা অনুসরনীয় শিক্ষক বিলুপ্তই বলা চলে । শিট দেখে দেখে ক্লাস নেয়া, দুইচার প্রশ্ন লিখে দিয়ে ক্লাস শেষ করা, কোচিং সেন্টার স্টাইলে নোট দেয়া এসবের কোনটাই একজন আদর্শ শিক্ষকের গুন হতে পারে না । আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এই স্যার হতে এইখাতাটা,বা এই শিটটা কিংবা ল্যাপটপের এই ফাইলটা চুরি করে ফেললে মনে হয় তিনি আর ক্লাস নিতে পারবেন না । আসলেই অনেকক্ষেত্রেই তাই । আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক দেখে এসেছি স্কুলের প্রণতোষ স্যার কিংবা কলেজের কয়েকজন স্যার ; যা এখন কেবলই ইতিহাস। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে UGC এর নিয়মের তোয়াক্কা না করা, মৌলিক গবেষণা বা প্রজেন্টেশন স্কিলে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল মুখস্ত করে অর্জন করা CGPA দেখে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া মানসম্মত শিক্ষকের অভাবের প্রধান কারণ । এছাড়া বেশীর ভাগ শিক্ষকই প্রোফেশনাল না বরঞ্চ দিন গুনে সিলেবাস শেষ করতে পারলেই তারা যেন হাফ ছেড়ে বাচেঁন । এছাড়া আজকের শিক্ষকরাই তৈরি করে দিবে আগামী দিনের শিক্ষক তথা বর্তমান সময়ের ছাত্রদের ।। কিন্তু তাদের বর্তমানের ব্যর্থতা চক্রাকারে যোগ্য শিক্ষকের অভাবকে আরো ত্বরান্বিন করবে ।। আমার দৃষ্টিতে সবসময়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পেশা হল শিক্ষকতা ! ইনারায় এক একটা মানুষের,এক একটা প্রজন্মের পরিপূর্ণ স্বপ্নদ্রষ্ট্রা । চরম হতাশ,দিশেহারা মানুষকেও জীবনের নতুন কোন অর্থ খুজেঁ দিতে পারে শিক্ষকরা, আর কেউ নয় । কিন্তু একজন ব্যর্থ শিক্ষকের পক্ষে এসবের কিছুই করা সম্ভব হয় না যেকারণে তৈরী হচ্ছে না যোগ্য মানুষ কেবল উৎপাদিত হচ্ছে নামেমাত্র শিক্ষিত জনগোষ্ঠি । এছাড়া গনহারে পাশের হার কিংবা ভুরি ভুরি A+ শিক্ষার মান কোনক্রমেই উন্নত করছে না বরঞ্চ শিক্ষাকে ক্রমেই নিয়ে যাবে অনিশ্চিত কোন সংকটে । যে জালে কোন মাছই আটকাই না, ঐ জাল দিয়ে করবটা কি?? ঠিক যে পরীক্ষা কোন ছাত্রকে আটকাতে পারে না সেই পরীক্ষা কি করে মেধা যাচায়ের মাধ্যম হয় ? তাই ভাল শিক্ষকের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার মান্নোয়নে ভাল ছাত্রেরও বিকল্প নেই ।।





আমরা চাই না, আমাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নের প্রতিফলন অনাকাঙ্কিত হোক । আমরা চাই না , আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস,ক্যাম্পাস আর করিডোরে অবহেলায় কাটুক আমাদের সোনালী ভবিষ্যত । সবশেষে জয় হোক সকল স্বপ্নবিলাসী শিক্ষার্থীর, জয় হোক মননশীলতার ,জয় হোক মনষ্তাত্বিক জাগরনের ।।



লিখেছেন: Rabiul Hossain Chowdhury

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৪৭

কালোপরী বলেছেন: একমত

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:১২

কালীদাস বলেছেন: কয়েকটা স্টেটমেন্ট নিয়ে দ্বিমত আছে, ঠিক এই মুহুর্তে ভ্যাজর ভ্যাজর করতে ইচ্ছে করছে না :| সিলেকশন ক্রাইটেরিয়াতে এসএসসি/এইচএসসিতে গণহারে এ+ দেয়ার টপিকসটা বাদ পড়েছে।

৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৩৯

এম ই জাভেদ বলেছেন: বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক আর ছাত্র রাজনীতি যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন উচ্চ শিক্ষার মান যে তিমিরে সেই তিমিরেই থাকবে।

উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আপনার সামগ্রিক মূল্যায়ন অত্যন্ত যৌক্তিক।

কিন্তু রবিউল হাসান চৌধুরী ব্যক্তিটা কে ? উনি আপনার কে হয় ? আপনি কেন তার লেখা কপি করেছেন ?

২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৬

আবীর চৌধুরী বলেছেন: হা হা হা। রবিউল আমার এক জুনিয়র ভাই। একজন নবীন ফার্মাসিস্ট, বিতার্কিক, সংস্কৃতিকর্মী।
চট্টগ্রামের ইউএসটিসি থেকে পাস করেছে, "দৃষ্টি"-র সাথে জড়িত।

ওর সামু আইডি নেই, কিন্তু ওর লেখাটা সবাই পড়ার মত।

তাই ওর লেখাটা ওকে বলেই দিলাম। বিশ্বাস না হলে ওর মোবাইল নাম্বার বা ফেবু আইডি দিতে পারি।

এসব লেখা কপি করার মত কিছু না। এগুলো অন্ধত্ব দূর করার পাথেয়।

৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৯

মাহবু১৫৪ বলেছেন: আপনার সাথে একমত

৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:০৯

বশর সিদ্দিকী বলেছেন: চাকরি আর করুম না। ব্যবসা করুম। আমার ব্লগে আমন্ত্রন রইল।

৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮

রন৬৬৬ বলেছেন: I do agree with the writer. I did my SSC in 1985 and HSC (Commerce group) in 1987 and then got admission in B.Com (Hons.) Accounting Dept. of Dhaka University on July 10, 1988. I left D.U. and got admitted to B.Com (Hons.) at Delhi University, New Delhi, India. This university ranked 393 in the QS World University ranking. I did my Master of Commerce (Accounting) from Griffith University which ranked 346 in the world. Since I studied Dhaka University for nearly six months I can tell you the real differences between these universities. First of all, the medium of instruction was not in English. Same Lecturer prepared question papers and also checked by the same person. No research work done by the Faculty!

However, during our time passing rate of SSC were 37% in 1985 and 39% for HSC in 1987. Total of 500 students got Star marks (75% or above) from Dhaka board. I was one of them. At present what is happening in the name of education is known as ‘Mockery Of Education.’ Ever heard of student vote bank for the political party in other countries?

By the way, I was a Faculty of Business Department in IUBAT, Uttara Model Town for nearly one year (2012). I have seen majority of my colleagues (around 90%) giving A+ to students just to satisfy the Vice Chancellor (who happened to be an Ex-Program Director of IBA, Dhaka University way back late 90s). This so called V.C. making money illegally. There is no Bachelor of Nursing recognition by BNC and UGC. But he admitted many students in this course and some of them from Nepal, India & Pakistan. Now their fate is uncertain! In addition, he put Advanced Accounting subjects (e.g., Auditing, Taxation, Cost Accounting & A/C for Mgt. Control) for THM students (Tourism and Hospitality Management) in their course outlines. Moreover, this VC also collects money from the Faculty too. When the Faculty is being recruited he asks them to deposit two months equivalent money (which is sometimes non refundable due to undue circumstances). This so called VC of IUBAT is proud of establishing one of the pioneering of Private University in Bangladesh (1992). Therefore, haphazard situation does exist in education, social, economic and political life of Bangladesh.

To sum up, there is no escape route other than to jump off to the Bay of Bengal which is located to the south of this country.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.