নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তান-ভারত সমর্থন-বর্জনঃ খেলার মাঠ থেকে ওয়ারফ্রন্ট

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯

ফেসবুকে গতকাল জিয়া হাসান নামে একজনের লেখা একটি অসাধারণ স্ট্যাটাস পড়লাম; শেয়ার না করে পারছিনা।

____________________________________________



ফেসবুকিং করা যে,সময়ের কত বড় একটা অপচয় সেইটা ভালো মত বুঝতেছি এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার পর ভারত- পাকিস্তান সমর্থন করার ইস্যুটাকে দেশপ্রেম -ঈমানের অঙ্গ বানিয়ে ফেলে প্রজাতিটার স্ট্যাটাস গুলো পড়ে ।



যেই জাতি, পৃথিবীর একমাত্র জাতি যে সীমান্তে গুলি হত্যা ঠেকাতে পারেনা, যার দেশের হাজার বছরে গড়ে ওঠা কৃষ্টি সংস্কৃতি চোখের সামনে একটা আধিপত্তবাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এর মুখে মাত্র ১০-১৫ বছরে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখে ন্যুনতম সামাজিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করে না, যেই দেশে গুপ্তচর আর প্রকাশ্যচররা জনগণের ভোটের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সেবাদাসদের ক্ষমতায় বসায়, যেই দেশের সকল নদীতে বাধ দিয়ে পুরোদেশকে মরুভূমি করে তার প্রতিবেশী, যেই দেশের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার দায়ে দায়ী প্রধান ১৯৫ জন সেনা অফিসারদের বিনা বিচারে ছেড়ে দেয়া হয় এবং তাদের কোন খোজ খবর যেই দেশ রাখে না, যে জাতি চিহ্নিত সব চেয়ে বড় রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে সূপ খাওয়ায়, আবার রাজাকার এর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে মাঠে নামে, যেই দেশ অলিম্পিকে সবচেয়ে কম মেডাল পাওয়া জাতি হিসেবে গিনেস-বুকে নাম ওঠায় - সেই পরাজিত এবং মানবিক বিকারগ্রস্ত জাতি ক্রিকেট খেলা , খো খো খেলা বা ইত্যাদির সমর্থন করা না করাকে তার দেশপ্রেম প্রকাশের সব চেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে ধরবে এইটাই স্বাভাবিক।



এক একটা মানুষের এক এক ধরনের অনুভূতি। কেও ধর্মীয় বোধের কারণে কোন দলকে সাপোর্ট করে, আরেকটা দলকে অপছন্দ করে, কেউ মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকার জন্যে করে, কেও আঞ্চলিকতার জন্যে করে – এই খানে কোনোটাতেই কারো কবিরা গুনা হয় না।



আমি বেশ কয় একজন হিন্দু বন্ধু দেখছি, পাকিস্তানের ফ্যান। শুধু ফ্যান না বিশাল ফ্যান। কিন্তু, স্বাভাবিক ভাবেই ভারত পাকিস্তান খেলার সময় আবার ভারতকে সমর্থন দেয়। ৯২ সালে ইমরান খান এর অধীনে, পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার পরে, পাড়ায় পাড়ায় মিছিল দেখছি। এদের মধ্যে অনেকেই, আবার পাকিস্তান শ্রীলংকা খেলার সময় শ্রীলঙ্কাকে সাপোর্ট দেয়। এরা কি সবাই রাজাকার এর জারজ সন্তান ছিল ?



বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ ভারতকে সমর্থন করে। এবং ভারতের সমর্থন বাড়ছে যখন ভারত ভালো খেলা শুরু করছে। প্রচুর ভারত বিদ্বেষী মানুষ দেখছি শচিন এবং রাহুল দ্রাবিড়কে অত্যন্ত পছন্দ করে।

প্রচুর মানুষকে দেখছি, অজাহারুদ্দিনের কারণে, ভারত সাপোর্ট দিতো। কেন ? এইটা তার ধর্মীয় চেতনা।



আমরা এখন ভারতীয় অধিপত্তবাদের কারণে সকাল বিকাল ভারতকে গাইল দেই। একটা অনৈতিক নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতা খুক্ষিগত করতে আওয়ামী লীগকে হেল্প করার কারণে বাংলাদেশে এখন একটা ভারত বিদ্বেষ অনেক মানুষের মধ্যে দেখি । কিন্তু, এদের মধ্যে অনেকেই অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া খেলাতে ইন্ডিয়াকে সাপোর্ট দেয়। আবার সারা দিন বসে আইপিএল দেখে।

এরা কি সবাই ভাদা হয়ে গ্যেছে ?



বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষ বাড়লেও গত বেশ কিছু বছরে আমি দেখি ভারতীয় ক্রিকেট দলের সমর্থন বাড়ছে। এইটা উলটা হইলো না ? কারণ টা জেনুইন। যেহেতু, আমরা ভারতীয় চ্যানেলের ভোক্তা তাই আমরা ভারতের খেলা বেশী দেখি এবং ভারত এখন ভালো খেলার কারণে, ভারতীয় প্লেয়ারদের প্রতি অনুরক্ত হই। অনেকে হয় অনেকে হয় না। অনেকে বিজয়ী বা যারা ভালো খেলছে তাদের সাপোর্ট দেয়, অনেকে আন্ডার-ডগকে সাপোর্ট দেয়। এইটা ব্যক্তিগত প্রব্রিত্তির ব্যাপার।



আমি সৌরভ গানগুলির ব্যাপক ফ্যান। সৌরভের যতক্ষণ থাকত, আমি সুযোগ থাকলে টিভির সামনে থেকে নড়তাম না । কেন ? কারণ, হয়ত সৌরভ বাঙালি বলে, মনের মধ্যে একটা টান থাকতো।



ক্রিকেট এখন এতো বেশী খেলা হয় যে, আমি এখন বাংলাদেশের খেলা না হলে ক্রিকেট ফলো করি না। বেশির ভাগ দলের নতুন প্লেয়ারের নামও জানিনা। কিন্তু, ক্লাসিকাল পিরিয়ডে পাগলের মত ক্রিকেট দেখতাম। আমার প্রিয় দল সাউথ আফ্রিকা। হেন্সী ক্রনয়ের কেপ্টেংসী , জন্টি রোডস রোডস এর তিড়িং বিড়িং দৌড় , মার্ক বাউচার এর কিপিং , হার্শেল গিবসের কেলেঙ্কারী , ক্যালিস এর ব্যক্তিত্ব , এলেন ডোনাল্ডের খুনে মনোভাব আমাকে খুব আকর্ষণ করতো। এখন আমি কি, সাউথ আফ্রিকার সাপোর্টার হিসেবে সাউদা হয়ে গেছি।



খেলার সাথে রাজনীতি অবশ্যই মেশানো যাবে। আজকে আমাদের অস্তিত্বের সব কিছু রাজনৈতিক। কিন্তু, দয়া করে বস -খেলার সমর্থন এর সাথে দেশপ্রেম মিশায়েন না। ঐটা করা পরাজিতরা। আমি হারুপাট্টি পরাজিতদের মত ব্যবহার করতে চাই না।

_____________________________________________



লেখক এখানে যা বলেছেন, তা কাঠকোট্টা হলেও সত্য।

আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটের সময় বিনাকারণে দুভাগে বিভক্ত হয়ে উত্তেজনা ছড়ায়; যেন যুদ্ধ চলছে। কেউ মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে পক্ষ-বিপক্ষ নেয়, কেউ বা ধর্মকে ভিত্তি করে বন্ধু-শত্রু নির্ধারণ করে। কিসব অবাস্তব ধারণা!!



যারা পাকিস্তান-ভারতের পতাকা উড়িয়ে, শরীরে/মুখে এঁকে আর "পাকিস্তান জিতেগা" বলে চিৎকার করে তাদের আচার-আচরণকে ভেরিফাই করার জন্য আমি এটা শেয়ার করিনি বা যিনি লিখেছেন তিনিও সেজন্য নিশ্চয় এটা লিখেননি।



যারা এসব করে তারা হতে পারে বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশি; আমি ভার্সিটি পড়াকালীন সময়ে এরকম অনেক লঙ্কান/ইন্ডিয়ান স্টুডেন্ট দেখেছি; ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে অনেক ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানি ইঞ্জিনিয়ার/টেকনিশিয়ান কাজ করে।



আর যদি পাকিস্তান-ভারতের এই সমর্থকেরা বাংলাদেশী হয়, তাহলে তাদের সম্পর্কে বলার মত আমার ভাষা নেই। ভুলে যাবেন না, বিশ্বকাপ-ফুটবলের সময় সারা বাংলাদেশের ছাদে যেভাবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকাতে ভরে যায়, সে উন্মাদনাময় দৃশ্য স্বয়ং আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলে দেখা যায় কিনা সন্দেহ আছে আর পেলে ও ম্যারাডোনাকে এক বাংলাদেশী সাংবাদিক দেশের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তারা বলেছিলেন- "বাংলাদেশটা কি?"



ভু-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করলে দুটো দেশের কোনটাই আমাদের বন্ধু নয়। একটা চিকেন পক্সের মত ভয়াবহ, যার ফলে সাথে সাথেই সারা শরীর রেশে ভরে যায়। আরেকটা ডায়াবেটিসের মত হিডেন-ডেনজার, মানিয়ে চলতে পারলে সুস্থ থাকা যায়, নাহলে সারা শরীরের নানান অঙ্গে ঝামেলা দেখা দেয়।



আশা করি, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরা খেলাকে সবকিছু থেকে দূরে রাখবেন। ভারতের পা-চাটা হলেই যে ভারতীয় ক্রিকেট টিমকে সাপোর্ট করতে হবে, রাজাকার হলেই যে পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে সাপোর্ট করতে হবে- এমন কোন কথা নেই। আর ভুলে যাবেন না, এটা এশিয়া কাপ, গ্যালারিতে বিদেশী দর্শক-ও আছে কিন্তু, তাদের সামনে দেশকে হেয়-প্রতিপন্ন করবেন না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.