নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুটো ঘটনা যা না দেখলেই নয়

১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০০

আমাদের দেশের প্রত্যেক নবীন/প্রবীণ আইনজীবি/বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারব্যবস্থাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী কতৃপক্ষের সকলকে নিচের এই ভিডিও দুটো দেখার জন্য অনুরোধ করছি।



১ম ভিডিওঃ

http://www.youtube.com/watch?v=F6iiEKmgono



২য় ভিডিওঃ

http://www.youtube.com/watch?v=eFSuB2p3-18



ভিডিও লিঙ্ক শেয়ার করার পরপরই অনেকে হয়তো ভাবছেন, এ আবার নতুন কোন জঙ্গি হুমকি নয়তো। না, তা নয়। জঙ্গিবাদ নিয়ে আমাদের দেশে বরাবরই বাড়াবাড়ি করা হয়েছে ও হচ্ছে, কারণ এর সাথে অনেকের রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থ জড়িত আছে। এর চাইতেও অনেক বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ সমস্যায় আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত হোঁচট খাই।



ভিডিও দুটো ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল সনি-র “ক্রাইম প্যাট্রোল” নামক প্রোগ্রামের দুটো অসাধারণ পর্ব। “ক্রাইম প্যাট্রোল” প্রতি শুক্র ও শনিবার লেট-নাইটে সম্প্রচারিত হয়। “ক্রাইম প্যাট্রোল” এমন একটি প্রোগ্রাম, যেখানে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অপরাধসংশ্লিষ্ট ঘটনার নাট্যরূপ উপস্থাপন করা হয়।



যে ভিডিও দুটো আমি শেয়ার করলাম, সেগুলোর মূল কাহিনী বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা-ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পুরোপুরি মিলে যায়। তাছাড়াও ভারতের সামাজিক অনেক ভাল-খারাপ দিকের সাথে আমাদের অনেক মিল, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেও এই সাদৃশ্য লক্ষণীয়। তবে, “ক্রাইম প্যাট্রোল”-এর মত সাহসী ভূমিকা দেখাতে পারে, এরকম কোন প্রোগ্রাম আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলো এখনো করতে পারেনি; এর কারণ সম্ভবত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াও দূর্নীতি বা স্বজাতপ্রীতির দোষ থেকে মুক্ত হতে পারেনি।



এখনকার সব পেশাজীবিই ভাব দেখাতে দামী স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, এলসিডি বা এলইডি মনিটরসহ ডেস্কটপ এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন বা ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। আশা করি, ইউটিউব থেকে এই মূল্যবান ভিডিও দুটো দেখতে তরুণ উকিল বা পুলিশ বা বিচারকদের কোন অসুবিধা হবে না।



প্রথম ভিডিওটিতে একটি সদ্য কৈশোর পেরোনো (সাবালক) দরিদ্র তরকারী-বিক্রেতার কথা বলা হয়েছে, যে তার অসুস্থ ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে ছোট বোনের সাথে সুদূর গ্রামে ফেলে এসে রাজধানী দিল্লিতে জীবন-সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে। পর্বটিতে দেখানো হয়, এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা বাজার করতে গিয়ে তার মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলেন, যাতে ২০০ টাকা ও ক্রেডিট কার্ড ছিল। তিনি নিকটবর্তী থানায় জিডি করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় এবং সর্বোচ্চ সন্দেহভাজন হিসেবে ঐ তরকারী-বিক্রেতা ছেলেটাকে ধরে নিয়ে আসে, কারণ তার শার্টের পকেটে ২০০ টাকা ছিল। কোন মানিব্যাগ ও ক্রেডিট কার্ড পাওয়া না যাওয়ায় ঐ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা ছেলেটিকে অপরাধী হিসেবে সনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু তারপরেও এফআইআর হয়, ছেলেটিকে কোর্টে পেশ করা হয়, ছেলেটি বারবার অস্বীকৃতি জানানোর পরেও বিচারক উপযুক্ত প্রমাণ খোঁজা ও নানারকম অযাচিত বায়নার নিরিখে একের পর এক মামলার তারিখ দিতে থাকেন। এর মধ্যে ছেলেটি জেলে অপরাধীদের সাথে দিন-রাত কাটাতে থাকে, আর আদালত থেকে নিয়োগ দেওয়া ছেলেটির পক্ষের আইনজীবিও ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হন। ২০০ টাকা চুরির সাজা ৩ মাস, ইতিমধ্যে এক বছর কেটে যায়। মাঝখানে বিচারক ছেলেটিকে জামানত হিসেবে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন, ছেলেটি অপারগতা জানালে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে আবার আরেকটা “তারিখ” দেন। এদিকে সুদূর গ্রামে ছেলেটির অসুস্থ বাবা মারা যায়, একমাত্র ছেলের পাঠানো টাকায় যে পরিবার চলত সে পরিবারটার তখন বেহাল দশা। বাকিটা নিজেরাই দেখুন, না দেখলেও আপনার আশেপাশেই ঘটা এরকম অনেক ঘটনা চোখে পরা অস্বাভাবিক কিছু না।



দ্বিতীয় ভিডিওটি আরো মারাত্মক। ভারতের কোন এক গ্রামের তরুণ এক ডাকপিয়নের করুণ দশার কাহিনী। ১৯৮৪ সাল; বাবার মৃত্যুর পর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ছেলে হিসেবে বাবার চাকরিটা পেয়ে যায় সেই তরুণ। ততদিনে সে বিয়ে করেছে, দুই সন্তানের পিতা। পোস্ট অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তারা এই সহজ-সরল গ্রাম্য তরুণের এত নির্ঝঞ্ঝাট চাকরি পেয়ে যাওয়াটাকে মোটেই ভালভাবে নিতে পারেনি। একদিন তাকে ফাঁসানোর সুযোগ চলে এল। গ্রামগঞ্জ ঘুরে চিঠি ও মানি-অর্ডার বিলির পরে দিনশেষে পোস্টম্যানের টেবিলে বিলি-না-করা টাকাবাবদ ৩৫৭ টাকা ৬০ পয়সা জমা দেয় ঐ গোবেচারা পিয়নটি। এখানে বলে রাখা ভাল ১৯৮৪ সালের ৩৫৭ টাকা ৬০ পয়সা আজকের দিনের ৫০ হাজার টাকার চেয়েও অনেক বেশী। পোস্টঅফিসের বড়বাবু কাজের ব্যস্ততার ভান করে টাকাগুলো গণনা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পিয়নকে তার টেবিলে টাকাগুলো রেখে চলে যেতে নির্দেশ দেন। দুই মাস পরে একদিন রাতে ভাত খাবার আগে পিয়নের কুঁড়েঘরে পুলিশের গাড়ী আসে। ওয়ারেন্ট দেখিয়ে থানায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ ঐ পিয়নকে, পোস্টম্যান অভিযোগ করেছে সেদিনের জমাবাবদ টাকায় ৫৭ টাকা ৬০ পয়সা কম ছিল, পিয়ন ৩০০ টাকা জমা দিয়ে বাকিটা চুরি করেছে। জামিনে কোনমতে বের হয় পিয়নটি, পোস্টঅফিসের সরকারি চাকরি থেকে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত বরখাস্ত হয়। বিচারালয়ে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়, বিচারক পিয়নকে নিজের উকিল ঠিক করতে বলেন, আর পটভূমিতে অবতীর্ণ হয় আরেক রক্তচোষার যে মূর্খ এই বিবাদীকে অনবরত মিথ্যা আশ্বাস দিতে দিতে তার সময়, শক্তি ও অর্থের অপচয় ঘটাতে থাকে। কিভাবে এই পিয়নের ৫৭ টাকা ৬০ পয়সা চুরির মিথ্যা মামলা বিংশ শতাব্দী থেকে একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ২৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তা নিজেই দেখে নিন না!



আমার বাবা চট্টগ্রামের একজন সিনিয়র আইনজীবি। আজ প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি এই পেশায় জড়িত থাকায় আমি খুব কাছ থেকে আইনপেশা, বিচারকাজ ও বিচারব্যবস্থাকে দেখে আসছি। বাবা যতটা না মামলা সামলান, তার চেয়ে বেশী সালিশে মধ্যস্থতা করেন, এবং মামলা না করে বাদীকে সালিশ করতে উৎসাহ দেন। বেশীর ভাগ মানুষ-ও সালিশ বা আদালতের বাইরের কোন পন্থার মাধ্যমে সমস্যা নিষ্পত্তি করতে চান।



প্রচলিত এক প্রবচন আছে- "বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। পুলিসে ছুঁলে বত্রিশ ঘা।" আর এখন যেকোন মানুষই বুঝে- "আদালতে গেলে সত্তর ঘা!" আদালতে যাওয়াটাই আমাদের দেশের ক্ষেত্রে যেকোন মানুষের জন্য চরম শাস্তিস্বরূপ, অপমানজনক। অর্থ, সময় ও শক্তির সাথে সাথে মানুষের আত্মমর্যাদাকেও শুষে নিয়ে ফেলে এই দীর্ঘ-ক্লান্তিকর বিচারিক প্রক্রিয়া। আর এসবের জন্য পুরো সিস্টেমটাই দায়ী। বিচার যদি দ্রুত হয়ে যায়, তবে তাতে বাদী-বিবাদী সবারই লাভ, ক্ষতি হয় তাদেরই যারা এই দীর্ঘসূত্রিতার ফায়দা নিয়ে অধিক মুনাফা গুণতে পারে।



সবাই ভাল থাকবেন, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবেন না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০২

হাসিব০৭ বলেছেন: :( :( :( :( :( আমাদের দেশটা দূর্নীতিমুক্ত হলে ৫০ বছরেই উন্নত দেশগুলোতে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারত

২| ২২ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৩৪

মোবারক সরকার বলেছেন: Valo laglo

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.