নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ পাওয়ার সেক্টরের ভবিষ্যত

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩১

মহেশখালী দ্বীপে দেশের প্রথম কেন্দীয় কয়লা উত্তোলন কেন্দ্র হবে। চীনের একটি কোম্পানী এই কয়লা উত্তোলন ও বিতরণের জন্য আগামী মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিবে। এখান থেকে উত্তোলিত কয়লা দিয়ে আগামী এক দশকের মধ্যে যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে সেগুলো পরিচালিত হবে।



অন্যদিকে সরকারের এমন একটা পরিকল্পনা রয়েছে, ১০০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৮ থেকে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরী করে মহেশখালীকে দেশের শক্তিকেন্দ্রে রুপান্তরিত করা হবে। যখন সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়ে যাবে, তখন এই দ্বীপের ভূ-অভ্যন্তর হতে বছরে ২৭ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলিত হবে!

দেশে এখন যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোর কোন-কোনটি মাঝেমধ্যেই সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়; উৎপাদনের এই স্থবিরতা হয় কয়লার যোগানের অভাবে বা অন্য কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। সরকার আশা করছে, মহেশখালীতে এই কেন্দীয় কয়লা উত্তোলন কেন্দ্র নির্মাণ হলে সস্তা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে তা সরাসরি সহায়তা করবে।



দেশের যেসব স্থানে ভূ-ত্বকের নিচে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানী পাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব স্থানের ভূতাত্ত্বিক গবেষণা করা দরকার। এটা নিশ্চিত হওয়া দরকার, কোন উত্তোলন কেন্দ্র থেকে কি পরিমাণ কয়লা কতদিন ধরে উত্তোলন করা সম্ভব। যদি সেটা ২০ বা ২৫ বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কয়লা সরবরাহ করতে পারে, তবেই নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরী করার মত ঝুঁকি (বা বিলাসিতা) নেওয়া উচিত। ভুলে গেলে চলবে না, কয়লা একটি অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎস।

একসময়ে না একসময়ে এই কয়লা ফুরিয়ে আসবেই। কিন্তু ততদিনে দেশের মানুষের বিদ্যুত ব্যবহারের অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যাবে। মানুষ অভ্যাসের দাস, যেখানে মানুষ ফ্যান চালিয়েই সন্তুষ্ট থাকত, তখন এসি চালিয়েও শরীর জুড়াবে না। আর যখন সেরকম বিপুল বিদ্যুতের যোগান থাকবে না, তখন দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরবে। অচল হয়ে পরবে প্রায় নতুন ৮-১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।



যেখানে উন্নত বিশ্ব ক্রমশ জীবাশ্ম-জ্বালানীনির্ভর শক্তি থেকে দূরে সরে আসছে, সেখানে বাংলাদেশ হাঁটছে উলটো পথ ধরে। নাসা কার্বন নির্গমন অনুসরণকারী স্যাটেলাইট নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে বিশ্বের যেসব স্থান গ্রীন-হাউজ গ্যাস নিঃসরণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, সেসব স্থানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়। সৌরশক্তিচালিত উড়োজাহাজ আর কিছুদিন পরেই পরীক্ষামূলক উড়ানে পুরো বিশ্ব পরিভ্রমণ করবে, যা সফল হলে আকাশ পথে যাতায়াত ও পরিবহনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।



তবে, ধনকুবের উদ্যোক্তা বিল গেটস সম্প্রতি তার এক ব্যক্তিগত লেখায় অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোর শক্তির দারিদ্র্যতা বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, যদিও বিশ্বের এই জলবায়ু বিপর্যয়ের পিছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখছে জীবাশ্ম-জ্বালানীনির্ভর শক্তি, কিন্তু অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো "ক্লিন এনার্জি" ও "চীপ এনার্জি"-র মধ্যেকার দ্বন্দে টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। এই দেশগুলো হঠৎ করেই বৃহদাকারে "নবায়নযোগ্য ও পরিস্কার শক্তি" ব্যবহার শুরু করতে পারছে না; কারণ, এখনো নবায়নযোগ্য ও পরিস্কার শক্তি তাদের বাজেটের বাইরে। তাই ঘুরেফিরে এসব দেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ এর মত সস্তা শক্তির দিকেই ঝুঁকছে, যা আপাত দৃষ্টিতে উন্নয়নের চিহ্ন হলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বা পুরো পৃথিবীর জন্য তা বয়ে আনবে ভয়াবহ বিপর্যয়।

সাময়িক সমাধান হিসেবে বিল গেটস তার লেখায় যা উল্লেখ করেছেন, তা হল- সস্তা শক্তিকে কি করে আরো পরিস্কার শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়, সেজন্য গবেষণা ও উন্নয়নধর্মী কাজ করা। হয়তো বা গেটস ফাউন্ডেশন এর জন্য প্রচুর বিনিয়োগ-ও করবে।



বাংলাদেশের মত "দিনে আনে দিনে খায়" স্কীমের দেশে এরকম ব্যয়বহুল ও জটিল গবেষণার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা ও সুযোগ কম। জীবাশ্ম-জ্বালানীনির্ভর শক্তির ব্যাপারে এরকম চটজলদি সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ফলপ্রসূ পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।

এ ক্ষেত্রে প্রথমেই যা করতে হবে, তা হল দেশের মোট জনসংখ্যার জন্য সর্বনিম্ন কতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে তা নির্ণয় করা। শহরভিত্তিক ও গ্রামীণ গ্রাহকদের পৃথকভাবে বিবেচনা করা। বিদ্যুৎ বিপণনের ক্ষেত্রে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প-কলকারখানাভিত্তিক, কৃষিভিত্তিক ইত্যাদি জোন বা এলাকা নির্ধারণ করা। প্রত্যেক জোনের জন্য আলাদা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্ধারণ করা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, গ্রাহক পর্যায়ে অপচয় কমানো, সিস্টেম লস কমানো- এগুলোতো অবশ্যকরণীয়।



সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে, বাংলাদেশে প্রতি মাসে ৭০০০০টি করে এ বছরের মে পর্যন্ত ৩১ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেম (শুধুমাত্র একটি ঘরের জন্য সৌরশক্তিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র) লাগানো হয়েছে, যা বিশ্বে্র অন্যান্য দেশের চেয়ে দ্রুততর। এই ৩১ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেমের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৪০ মেগাওয়াট, যা ১ কোটি ৪০ লক্ষ গ্রামীণ মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে। এই প্রোগ্রাম ৭০০০০ মানুষকে কর্মসংস্থান দিতে সফল হয়েছে। বছরে ৫ লাখ টনের-ও বেশি কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃসরণ কমাবে এই ৩১ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেম। এই সফলতা দেখে ও অন্যান্য সুফল বিবেচনা করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এই প্রোগ্রামে আরো ৭৮ মিলিয়ন ডলার লোন দিতে যাচ্ছে।



গাইবান্ধা, রাজশাহী, বান্দরবান, সাতকানিয়াসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বায়োগ্যাসভিত্তিক শক্তির সফলতা-কাহিনী শোনা যায়। কৃষিজ বর্জ্য, জৈববর্জ্য, প্রভৃতি থেকে গ্রাম-গঞ্জে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ছোট ছোট বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করা যায়, যেগুলো থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংস্থান হবে, জাতীয় গ্রিডের উপরেও প্রচুর চাপ কমে যাবে। সরকারের "একটি বাড়ী, একটি খামার" প্রকল্প তখন "একটি বাড়ী, একটি খামার, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র"-এ পরিণত হবে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩২

আহসানের ব্লগ বলেছেন:

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৮

আবীর চৌধুরী বলেছেন: ?

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ১:০৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

দেশে কত টাকাই কত অকাজে ব্যায় হচ্ছে তার চেয়ে ঋণ না নিয়ে যদি এইসব অর্থ এইসব কাজে ব্যায় হতো তাহলে দেশ কত এগিয়ে যেত!!!

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ২:২৮

এইচ তালুকদার বলেছেন: আশাব্যান্জক লেখা,পড়ে ভাল লাগল

৪| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৩৫

দাড়ঁ কাক বলেছেন: বস্তুনিষ্ঠ লেখা। তবে যেহেতু অনেক নিউমেরিক উপাত্ত এসেছে তথ্যসুত্র থাকলে ভালো হত, প্রয়োজনে অন্য কেউ একাডেমিক কাজে ব্যাবহার করতে পারতো।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৫

আবীর চৌধুরী বলেছেন: Click This Link

Click This Link

Click This Link

Click This Link

Click This Link

৫| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:২৫

রিফাত হোসেন বলেছেন: Achha, ato boro prokolpo dip ar poribash ar upor ki rokom provab falba?

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৮

আবীর চৌধুরী বলেছেন: ভয়াবহ!

৬| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭

অতঃপর জাহিদ বলেছেন: আগের চেয়ে বিদ্যুৎ এখন অনেক কম যায় (বাংলাদেশের এই সেক্টরের অবস্থা ছাওয়ালের নাম বিদ্যুৎ বাপ মরিছে অন্ধকারে)

৭| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

খেপাটে বলেছেন: হাহাহাহাহাহাহাহা,,,,, দুঃখিত,,,হাসির জন্য। বাংলাদেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশ তাহলে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব তাদের আরো ৭ বছর আগে করা উচিত ছিল। যে দেশের রাজনীতির প্রতিটা লোকই এসব দেখার পরও চুপ করে থাকে সেখানে এসব আশার বাণী দুঃখজনক। ঢাকার মানুষ যখন ভেজাল খেয়ে খেয়ে তাদের অভিযোজন ক্ষমতাটাই এমন হয়েছে যে ভাল জিনিস খেলে অসুখে পরবে। ঠিক দেশের যে অবস্হা আছে তা পরিবর্তন করতে গেলে সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে নতুন কোনো শিক্ষিত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে হবে। কারন, প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার কারনে পুরোনো আমলের রাজনৈতিক লোক দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মন্ত্রিরা কম্পিউটার চালাতে পারে কি না আমার সন্দেহ হয়। এর সুখি মানুষের গল্পের সুখি মানুষ হিসেবেই বেঁচে আছি। আর এসব আশা আর রাজনীতিকে আমার ভারতীয় মেগাসিরিয়াল ছাড়া কিছুই মনে হয় না

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৯

আবীর চৌধুরী বলেছেন: :)

৮| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:০৪

রেজা এম বলেছেন: এই প্রকল্প গুলো আমার ঠিক হজম হয় না । :( :( :( :-< :-< :-<

৯| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২৮

পার্সিয়াস রিবর্ণ বলেছেন: ছোট দেশ হলেও আমাদের প্রচুর রিসোর্সেস আছে । কেবল আন্তরিকতা থেকে সেগুলো কাজে লাগানোর মত উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে । সুন্দরবন থেকে প্রচুর পরিমাণে জীবাশ্ম জালানী আহরণ করা যায়, তবে সেখানকার জীববৈচিত্রের প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে ।

ভালো লাগলো ।

১০| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫

খেপাটে বলেছেন: এখন আপনার সুন্দরবনের প্রতি ঝোঁক চলে গেল। আপনারা একবার ভাবেন তো এসির প্রয়োজন খুব বেশি নয়। এটি ব্যবহারের ওপর শর্তআরোপ করলেই বিদ্যুতের ঘাটতি অনেক কমে যাবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.