নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় দিবসে কি করবে একজন নাগরিক?

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩০

লেখাটি মূলত নিচের প্রতিবেদনের উত্তরে লেখা।

http://ctgnews.com/01/92977.php

ctgnews.com কতৃপক্ষের কাছে অনুরোধ রইল, যদি নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী মনে করেন, তবে আমার কমেন্টটা মুছে ফেলবেন না, এবং গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন।

একটু ব্যখা করেই সব বলি।

আমি সাস্টে ১ বছর সিএসই তে পড়েছিলাম। মাঝখানে একটা এক্সিডেন্টের কারণে সিলেট থেকে চলে আসতে হয়। ভর্তি হই বাসার কাছেই আইআইইউসি'র ইইই-তে; ইইই তে পড়া আমার স্বপ্ন ছিল। আমি ছিলাম ইইই-র ৪র্থ ব্যাচের সেকেন্ড বয়। আমার ভর্তির সময় থেকেই দেশের প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোর মধ্যে ৮ম/৯ম স্থানে ছিল এটি; চট্ট্রগ্রামে তো নিঃসন্দেহে প্রথম। বর্তমানে প্রায় ২৫০০০ ছাত্রছাত্রীর সংস্থান দেওয়া আইআইইউসি দেশের উচ্চশিক্ষাঙ্গনে আসলেই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
আমি শুরু থেকে দেখে এসেছি; বুয়েট-চুয়েটের পদ্ধতি অনুসরণ করে, সরাসরি চুয়েটের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধান ও পরামর্শে বেশ ভালো রেপুটেশন নিয়েই এগিয়ে এসেছে আমাদের ইইই বিভাগ। সিএসই, ইটিই (ইসিই), ফার্মেসী, ইত্যাদি বিভাগগুলোও বিবিএ, ল' বিভাগের পাশাপাশি যোগ্যতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরী করে এসেছে।
শুধু ইংলিশ বা বাংলা মিডিয়াম নয়, এমনকি মাদ্রাসা থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদেরও ইংরেজী ভাষায় নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের জন্য তৈরী করার কৃতিত্ব দিতে হয় আইআইইউসিকে। দেশের অন্যান্য প্রাইভেটের তুলনায় খরচ কম ও মানে ভালো হওয়ায় এখানে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, পার্বত্য জেলা থেকে শুরু করে নেপালী-সোমালিয়ান-শ্রীলঙ্কানসহ আরো নানা দেশ থেকে পড়তে আসতে দেখেছি এখানে। "রাজনৈতিক বিবেচনায় কেউ এখানে ভর্তি হয় না"- এর প্রমাণস্বরূপ বলতে পারি অগণিত অমুসলিম ছাত্র-ছাত্রী, এমনকি কট্ট্রর নাস্তিকমনা মানুষ-ও এখানে পড়েছে,পড়ছে, হয়তো সামনেও পড়বে।

কিন্তু শুরু থেকেই মানুষের বিশেষ নজরে দেখার প্রবণতাটা আমার খুব খারাপ লেগেছে। জামাত-শিবিরের প্রশাসন (এটা তাদেরই সেবাধর্মী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান) হওয়ার কারণে যারা জামাত-শিবিরকে অন্ধভাবে দেখতে পারে না, যারা ৪৩ বছরের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক জটিল পথপরিক্রমাকে নিমিষেই সরলীকরণ করে ফেলে, তারা- এখানকার শিক্ষার্থী বা গ্র্যাজুয়েটদের একচেটিয়াভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী/ধর্মান্ধ/জঙ্গি/উগ্রপন্থী/সন্ত্রাসী ইত্যাদি মনে করে এবং কোণঠাসা করে রাখে। সব বলতে গেলে হয়তো আমার কমেন্টটা উপন্যাস হয়ে যাবে।
তবে এখানকার পাশ করা ছেলেমেয়েরা দেশে নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়; ইন্টারভিউ বোর্ডে অপমানিত হতে হয়; বলছি না যে সবাই মেধাবী ও যোগ্য, কিন্তু যারা মেধাবী ও যোগ্য তারাও দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে অপমানের বোঝা নিয়ে নিম্ন বেতন ও নামমাত্র সম্মানের সাথে কোনভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। আইইবি-র অনুমোদন পাচ্ছে না ইইই বিভাগ; অথচ সিএসই বিভাগের অনুমোদন আছে; কারণ সিএসই খুলেছিল বিএনপি আমলে, ইইই খুলেছে আওয়ামী আমলে। ৫ বছর ধরে আমরা শিক্ষার্থীরা অনেক চেষ্টা করছি; ভার্সিটি কতৃপক্ষ ও পাত্তা দেয় না, আইইবিও দেয় না। আইইবির এক কর্মচারী বলেছে যতদিন এই সরকার ক্ষমতায় আছে, ততদিন আমাদের আইইবির সদস্য হওয়ার সুযোগ নাই; ততদিন আমরা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশে পরিচয় পাব না। এভাবেই বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে "ব্রেন-ড্রেইন" হয়!

কি অপরাধ এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও অতীতের শিক্ষার্থীদের?

মাঝখানে ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের স্লোগানে নিজে নিজের ভার্সিটির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে এসে পরের দিন ক্লাস করতে পারিনি। এর কয়েকদিন পরে একটা গুজব শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম- "সরকার নাকি আইআইইউসি-কে অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে; জামাতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না আর এটি"; পরে শুনলাম এটা উড়ো খবর।

দেশে জামাত-শিবির করে না, বা সমর্থন করে না, এরকম অগণিত মানুষ দেশের জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য জানে না, বুঝে না, মানে না, জানলেও পালনের সময় পায় না, বুঝলেও পালন করা তাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে বিলাসিতা। দিবসের মাহাত্ম্য অতীত আঁকড়ে পরে থাকার মধ্যে নয়, এর মাহাত্ম্য বর্তমানের অবিকশিত "বুদ্ধিজীবিদের" পথ তৈরী করে দেওয়া, ও বিকশিত "বুদ্ধিজীবিদের" নিজের বুদ্ধিভিত্তিক কাজকে শ্রেষ্ঠত্বেত শিখরে পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে।

আমি বরাবরই রাজনৈতিক দলগুলোর (বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলগুলোর) কট্টর সমালোচনা করে এসেছি, তাই অধিকাংশ প্রগতিশীল/সংস্কৃতিমনা/বিজ্ঞানমনস্ক/মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি/ধর্মনিরপেক্ষ মানুষেরা আমাকে ভুল বুঝে এসেছে; তারা আইআইইউসির সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা-কে একটা শক্ত "এভিডেন্স" হিসেবে কাজে লাগিয়েছে।
আজকাল আমাদের সমাজ ধীরে ধীরে অস্থির হচ্ছে; সর্বত্র বিভক্তির রাজনীতি; এমনকি একই দলের মধ্যেও কতভাবে যে বিভক্তি আছে তা ভেবে পাওয়া যায় না। প্রত্যেক মানুষের স্বকীয়তা থাকবে, স্বাতন্ত্র্য থাকবে, মতপার্থক্য থাকবে; কিন্তু এই মতভেদ যদি সীমা লঙ্ঘন করে তবে তা স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য হারিয়ে ফেলে, অরাজকতা সৃষ্টি করে।

১৪ ডিসেম্বরে বেদিতে ফুল দেওয়া, মোমবাতি জ্বালানো, এসব মানুষের ছবি দেখানো হয়, এসব সেলিব্রেটিকে টক শোতে ডাকা হয়, কিন্তু বুদ্ধিজীবিদের আত্মার শান্তি চেয়ে যে মানুষ কবর জিয়ারত করল, যে মানুষ কোরান খতম দিল, যে মানুষ মন্দিরে বিশেষ পূজা দিল, তাদের খবর তো দেখানো হয় না! ধর্ম কে ফেলনা বস্তুতে রূপান্তর করার জন্যই কি জামাত-শিবিরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ধর্মকে গুলি চালানো হয়?
আমার ছোট বোন খাস্তগীরে পড়ে, ও আজকে এসএসসি মডেল টেস্ট দিয়ে এল, আর বুদ্ধিজীবিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ক্লাস পার্টিতে হিন্দি গানের সাথে নাচ-গান করে এল। আরেক ছোট বোন বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেলে নিয়মিত ক্লাস করে এল, যেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত হিন্দু-অধ্যুষিত; কই? কোথায় এদের নামের রিপোর্ট? যত দোষ, নন্দ ঘোষ?
আমাদের বাসায় যত ক্যালেন্ডার আছে, কোন ক্যালেন্ডারে ডিসেম্বরের ১৬ ও ২৫ তারিখ ছাড়া কোন দিনে সরকারি-ছুটির চিহ্ন নেই! আমি এমন খবর শুনেছি সরকারি মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা ঈদের দিনে পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা দিয়ে এসেছে; জাতীয় দিবসে হাত-পা ছেড়ে দিয়ে "লোক-দেখানো" সম্মান জানিয়ে সেকুলারিজমের বিজয়ধ্বনি দেওয়া উচিত, নাকি যার যার মত শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের কাজ ও আন্তরিকতা দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগকে স্বার্থক করার চেষ্টা করা উচিত?

বিশ্বের লাখো দেশ আছে, যেখানে ক্রিস্টমাস ডে-ই একমাত্র ন্যাশনাল হলিডে; সেখানে থাক মুসলিম-হিন্দুরা ঈদ-পূজাতে ছুটি পাওয়া তো অনেক দূরের কথা, দেশে থাকা আত্মীয়দের সাথেও কথা বলার সুযোগ পায় না। কেন এসব বাস্তবতাকে মাথায় রাখেন নি এই প্রতিবেদনের সম্মানিত প্রতিবেদক??!!

"ধর্ম যার, যার, রাষ্ট্র সবার" এরকম আধুনিক মতবাদ দেওয়া হলেও কেউ কি কখনো এসবের গভীরে চিন্তা করেছেন। মানুষের স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা থেকেই ধর্মের উদ্ভব। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনদর্শনকে পরিচালিত করে ধর্ম। সেক্ষেত্রে ধর্মের গুরুত্ব রাষ্ট্রের অনেক উর্ধে। হ্যাঁ, এরকম সময় একসময় আসবে, যখন পৃথিবীতে সবাই স্রষ্টাকে অস্বীকার করবে, কিন্তু পৃথিবীর সেই শেষ দিন এখনই আসেনি।

ctgnews.com কে আমি অনুরোধ করব, সাংবাদিকতাকে কলঙ্কিত করবেন না। নিজের মতবাদের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তমূলক সংবাদ দিবেন না। খবরের এ পিঠ-ও পিঠ দুটোই প্রকাশ করুন। মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিব্রত করবেন না। মুক্তিযুদ্ধ-যুদ্ধাপরাধীর বিচার-ধর্মবিশ্বাস-জাতীয়তা-দেশপ্রেম-জীবন সংগ্রাম সবকিছুকে এক গ্লাসে গুলিয়ে ফেলবেন না।

জীবন এত সহজ নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.