![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন আমাকে যা যা শিখাচ্ছে, তা কোনদিনও কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেখাতে পারতো না। দুঃসময় আমাকে একে একে তথাকথিত সফলদের অন্তরের ভিতরের রূপটাকে আঙ্গুল দিয়ে চিনিয়ে দিচ্ছে।
মানুষের জীবনের সব অধ্যায় একরকম যায় না। আমার-ও যায়নি; কখনো খারাপ, কখনো খুবই খারাপ। ভাল সময়গুলোকে পুঁজি করে বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু, চড়াই-উতরাই পার হয়ে বর্তমানের সফলেরা বার বার আমাকে আমার দুর্দশা মনে করিয়ে দেয়।
হ্যাঁ। এইচ-এস-সির পরে বুয়েটের জন্য কোচিং না করাটা আমার অজ্ঞতা ছিল, হেলায়ফেলায় বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষাটা দেওয়া ছিল গাফেলতি, চুয়েটের আগে সাস্টের ভর্তি পরীক্ষাটা ছিল ভাগ্যের দোষ। হ্যাঁ, সাস্টের লিডিং ডিপার্টমেন্ট সিএসই-তে চান্স পেয়ে, এক সেমিস্টার পড়ে, ছোট কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাস্ট ছেড়ে চলে আসা ছিল জীবনের আরেকটি মারাত্মক ভুল। নিজ শহরে চলে এসে আইআইইউসির ইইই-তে ভর্তি হওয়া ছিল তারচেয়েও ভয়াবহ পদক্ষেপ। যদিও আইআইইউসি তখন দেশের ৫৬টি প্রাইভেটের মধ্যে ৯ম।
এরপর নিজের ভুল শোধরানোর জন্য জীবন লাগিয়ে পড়ে গিয়েছি, যাতে ভালো রেজাল্ট অর্জিত হয়। চুয়েটের শিক্ষক, চুয়েট থেকে পাস করা শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত ইইই বিভাগ সম্পুর্ণ চুয়েটের আদলে পরিচালিত হলেও কখনোই চুয়েটের রেজাল্ট ও আইআইইউসির রেজাল্টকে এক পাল্লায় মাপা হবে না- সেটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। তাই আমার সিজিপিএ ৩.৮৪ চুয়েটের ২.৫ এর সাথেও পাল্লা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি।
শিক্ষকদের ব্যবসায়িক ও স্বার্থান্বেষী মনোভাবের কারণে একটি অ-যুগোপযোগী প্রজেক্ট/থিসিস নিয়ে আন্ডারগ্র্যাড শেষ করি। অথচ এই প্রজেক্টের জন্যই অতিরিক্ত এক বছর লাগে আমার! এইচএসসি-র পরে এক বছর গ্যাপ, ৫ বছরের অনার্স শেষে আমি তখন ২০১৩ এর শেষে দাঁড়িয়ে।
২০১১ তে নিজ আগ্রহে চট্টগ্রামের একমাত্র, নতুন জিআরই কোচিং-এ ভর্তি হই। কারণ, আমার কখনোই দেশের কোন জব/ব্যবসায় আগ্রহ ছিল না। বিদেশে ডিগ্রি অর্জনের পরে সম্মানের চাকরি করাই আমার স্বপ্ন ছিল। জিআরই কোচিং-এ আমার পারফরম্যান্সে কোন ঘাটতি ছিল না। কিন্তু, ৩ মাসের কোচিং-এর পরে পরেই জিআরই পরীক্ষা দিতে না বসা-টা ছিল আমার জীবনের আরেক মহাজাগতিক ভুল।
অনার্সের লাস্ট সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষাটা দেওয়ার পরেই ২০১২ এর অক্টোবরে দুই মাসের তাড়াহুড়ার প্রস্তুতিতে বসলাম জিআরই পরীক্ষাতে। জিআরই এমন এক পরীক্ষা, যা প্রতি মাসে মাসে পরিবর্তন হয়, জটিল হয়; এর কোন সাজেশন নেই, নির্দিষ্ট সিলেবাস বা প্রশ্নব্যাংক নেই। প্রায় ২ বছর আগের প্রস্তুতির সাথে হয়তো খাপ-খাওয়াতে পারিনি; তাই ৩৪০ এ পেলাম ২৯৯। ৩০০ পেলেও অন্তত হতো।
এরপরের ভুল-টা ছিল সাথে সাথে আবার জিআরই না দেওয়া। তখন আবার প্রজেক্ট/থিসিসের কাজ নিয়ে ভার্সিটিতে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছিল। ভাবলাম, পরে দেওয়া যাবে। কিন্তু পরে আর দেওয়া হয়নি; সেই সাহস ও সময় যোগাড় করে হওয়া উঠেনি। যে প্রজেক্টের জন্য দ্বিতীয়বার জিআরই সাথে সাথে দিলাম না, সেই প্রজেক্ট-ও আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে একে একে প্রত্যাখাত হচ্ছিল। কারণ, আমার প্রজেক্টের মড্যুলের ব্যপ্তি কম ছিল, আর ইউরোপের ঘরে ঘরে ইতিমধ্যে ঐ যন্ত্রটি চালু হয়েছে। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছিল।
মাঝে মাঝে প্রতিনিয়ত জবসাইটগুলোতে যেই জব-ই দেখি, তাতে এপ্লাই করে যাচ্ছিলাম। একটা থেকেও পজিটিভ নিউজ আসে না। মাঝে প্রথম অভিজ্ঞতা হিসেবে ৩৪ তম বিসিএস দেই, প্রিলি-তে যথারীতি আসিনি; কারণ বিভিন্ন কারণে সরকারি চাকুরীর প্রতি আমার একটা ঘৃণা ছিল। ২০১৩ এর শেষে আইইএলটিএস কোচিং করি, ২০১৪ এর শুরুতে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেই; ৭.৫ আসে। ইতিমধ্যে, এক বন্ধুকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি টপ ভার্সিটিতে এপ্লাই শুরু করি, যেখানে সিজিপিএ ও আইইএলটিএস-এর ভিত্তিতে বৃত্তির-ও সম্ভাবনা ছিল। আইইএলটিএস রেজাল্টের পরে শুধু একটা ইউনিভার্সিটিতে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করি; বাকিগুলোতে আপ্লিকেশন ফি দিতে হচ্ছিল, তাই দিলাম না। রয়েল মেলবোর্ন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইমেইল আসে- রিজেক্টেড! কারণ, আমার আন্ডারগ্র্যাডের বেশ কিছু ক্রেডিট ওদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে; ইসলামসংশ্লিষ্ট কোর্সগুলো, যেগুলো আইআইইউসির নিজস্ব কারিকুলামের অংশ ছিল।
মাঝখানে প্রতিনিয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অগণিত ভার্সিটির অসংখ্য প্রফেসরকে ইমেইল আদান-প্রদান, তাদের রিসার্চগুলো পড়ে নিজেকে গাধা থেকে আরো গাধা বানানো, আর একে একে প্রত্যেকেরই নেগেটিভ রিপ্লাই। বুঝতে পারলাম, লো জিআরই স্কোরে হয়তো এডমিশনের সম্ভাবনা আছে, কিন্তু স্কলারশিপের সম্ভাবনা নেই। তার উপর, প্রফেসরেরা আমার অনার্সের রিসার্চে সন্তুষ্ট না হওয়াতে আমার ভবিষ্যত রিসার্চের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না। এমনকি, আইইএলটিএসের রেজাল্ট-ও আমাকে টিচিং এসিস্টেন্টশিপ এনে দিতে পারছিল না।
তারপরেও আমি হতাশ হলাম না। যেহেতু, অনার্সের আইআইইউসি-তে পড়া আমার জীবনের একটা ব্যাক-স্টেপ ছিল, তাই আমার মনেপ্রাণে ইচ্ছা ছিল এমন কোন ভাল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হয়ে নিজের বদনাম-টা ঘুচানোর, যাতে আমিও গর্ব করে বলতে পারি- আমি অমুক জায়গার স্টুডেন্ট! আর সেই স্বপ্নের ভার্সিটিটা এমন হতে হবে, যাতে সেটার ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং অন্তত আমাদের দেশের বুয়েটের চেয়ে বেশি হয়। আর সেটাই করে যাচ্ছিলাম। বিশ্বের যে দেশেই বিনাখরচে মাস্টার্সের জন্য এপ্লাই করতে পারি, সেখানে আপ্লাই করেছি।
আর, আম্রিকাতে অনেক ভেবেচিন্তে ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স প্রোগ্রামে এপ্লাই করলাম। কারণ, ঐ প্রোগ্রামে জিআরই লাগে না, আর, ডিপার্টমেন্টের রিসার্চ লাইন-টাও আমার ট্র্যাকের। তাছাড়া, ফ্লোরিডার আবহাওয়ার সাথে বাংলাদেশের অনেক মিল। ওখানে বাংলাদেশীও আছে অনেক। ২০১৪-এর জুলাই-এ শুরু হওয়া এই আবেদন প্রক্রিয়া চলতে চলতে ২০১৫-এর মে মাসে তারা এডমিশন নিশ্চিত করল। কোন এসিস্ট্যান্টশিপ, স্কলারশিপ, ফেলোশিপ দিল না। অনেক অনুনয় বিনুনয়ের পরে ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক অফিসিয়াল ইমেইলে এক বিশেষ প্রোগ্রামের অধীনে আমাকে ৩০% টিউশন ফি ওয়েভার দিতে সম্মত হল। আমি ভিসা পাওয়ার জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া শুরু করলাম। ভিসা পাওয়ার সময় কন্স্যুলেট অফিসারকে দেখানোর জন্য ঐ ৩০% ওয়েভারের কোন অফিসিয়াল ডকুমেন্ট দেওয়ার কথা বললাম; কিন্তু ইমেইলে এডমিশন অফিস জানালো, তাদের এখনো ওটা তৈরি করা হয়নি, আর, তাছাড়া ভিসা পাওয়ার সাথে স্কলারশিপ/এসিস্ট্যান্টশিপের কোন সম্পর্ক নেই।
আমিও তাদের কথা মেনে নিলাম। আমার জন্য এটাই প্রথম কোন বিদেশের ভিসা ইন্টারভিউর অভিজ্ঞতা। ঢাকায় না থাকার কারণে আজীবনই বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত ছিলাম; এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছিল না। ঢাকাবাসী হওয়াটা আপনা থেকেই একটা লেভারেজ! আর, লোকলজ্জার কারণে ইন্টারনেটেও আমি সিনিয়র ও প্রবাসী বন্ধুদের থেকে অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছিলাম; তাই অনেক টিপস থেকে বঞ্চিত ছিলাম।
৭০ লক্ষ টাকার-ও বেশি ক্যাশ টাকা দেখানোর পরেও ভিসা ইন্টারভিউ-এর দিনে প্রায় ১ ঘন্টার আশ্চর্যজনক কথোপকথনের পরে আমাকে ভিসা না দিতে পেরে দুঃখপ্রকাশ করল ৩ জন এম্বেসী কর্মকর্তা। কারণ ছিল, তারা মনে করেছে, আমি আম্রিকায় গিয়ে নিজেকে সচ্ছলভাবে পরিচালিত করতে পারব না, ইত্যাদি, ইত্যাদি। সেদিন মনে হচ্ছিল, আমি ভিসা পেয়ে যাচ্ছিলাম প্রায়। যারা আম্রিকার ভিসা ইন্টারভিউর সম্পর্কে জানেন, তারা আমার ইন্টারভিউর সময়কাল ও ইন্টারভিউ কর্মকর্তার সংখ্যা দেখে নিশ্চয় বিস্মিত হবেন। সেদিন, প্রায় ৭০০ ভিসাপ্রত্যাশীর শুধুমাত্র প্রায় ১০ ভাগ ভিসা পেয়েছিল। ভিসা দেওয়ায় শুধুমাত্র একটাই ক্রাইটেরিয়াঃ "যাকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে, সে ওখানে গিয়ে আম্রিকার টাকা নিজ দেশে পাঠাবে না। স্টুডেন্ট ভিসায় গেলে তারা শুধু পড়বে; পার্ট-টাইম জব করতে হবে না।"
এই ভিসা রিজেক্ট হওয়ায় আমি হঠাৎ উদ্বাস্তু হয়ে পড়লাম। তখন, ঈদ-উল-ফিতরের উৎসবমুখর পরিবেশ চারদিকে। আমি ভাবতে লাগলাম, গত ৭-৮ বছর আমি কাটিয়েছি লজ্জায়, সংকোচে। শৈশব থেকে পড়াশোনা ও এক্সট্রা-কারিকুলার বিষয়ে অপ্রতিদ্বন্দী আমি, প্রাইভেট-শিক্ষক-নির্ভরতাবিহীন শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করা আমি, কোচিং কিংবা স্যারের বাসায় নিজের প্রত্যুতপন্নমতিত্ব বা স্ফুর্তিপূর্ণ মনোভাবের জন্য সাধুবাদ পাওয়া এই আমি- আজ কোথায় এসে পরেছি? বলা হয়ে থাকে, অহংকার পতনের মূল কারণ; জ্ঞানত কারো সাথে কখনো অহংকার করলাম না। তাহলে, কেন আমার এই দশা? কেন, সেই সময়ের লুকিয়ে থাকা, ঝিমিয়ে থাকা মানুষগুলো আজ এই দুর্দশায় আমার সাথেই অহংকারপ্রসূত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে?
গত ৩ বছর অপেক্ষা করছিলাম, কখন আমার সুদিন আসবে। কখন বন্ধু-আড্ডায় গিয়ে একটা বড় পরিচয়ে পরিচিত হব। কখন ফেসবুকের এবাউট সেকশনে নিজের আকাঙ্খিত পরিচয়-টা লিখতে পারব। বন্ধুরা একে একে বিয়ে করছে; যাদের বিয়েতে যাচ্ছি, তাদের বউ/জামাইসহ দাওয়াত দিয়ে নিজের টাকায় রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর মত পরিস্থিতিও হল না এখনো। সামাজিক জীবন ধ্বংস হয়ে গেল।
অসহযোগিতা আর উক্ষেপিত হয়ে আসা আমার জন্য ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের মত হয়ে গিয়েছে। সবাইকে সহযোগিতা করতে চাইতাম, সবাই বেস্ট পজিশনে যায়- সেটাই চাইতাম; কিন্তু অন্যরা আমার এই অতি-ভাল মুর্তিকে সন্দেহের চোখে দেখত, ভাবতো প্রতিদানে আমি মূর্ত কিছু চাই। না, আমি সবসময় বিমুর্ত প্রাপ্তিকেই বড় মনে করতাম। একটু বন্ধুত্বপূর্ন কথাবার্তা আমার অকেজো ইঞ্জিনকে সপ্তাহখানেক জ্বালানি যোগাতে পারতো। জানি না, মানুষ কেন অনেক সময় আমাকে প্রতিদ্বন্দী মনে করত।
ইউএসএ-র হাজার হাজার ভার্সিটির মধ্যে কোনটা না কোনতে ফুল ফান্ডিং পেয়েই যেতাম; যদি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। যদি কেউ তার নিজের ভার্সিটির নাম আমাকে সুপারিশ করত, যদি কেউ নিজ ফ্যাকাল্টিতে থাকা সুযোগটা আমাকে আগ বাড়িয়ে জানাতো। না, তা কেন তারা করবে। আমি তাদের কাল্ট বা গোষ্ঠীতে পরি না; সবাই কিছু অঘোষিত গোষ্ঠী মেনে চলে। সমাজ ও সভ্যতায় সৃষ্ট এসব অঘোষিত গোষ্ঠীর সৃষ্টির উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক বা সামাজিক সুপেরিয়রিটির উপর ভিত্তি করে সাহায্য করা।
কাক কাকের মরণেই চেঁচাবে, কুকুর কুকুরের ডাকেই সাড়া দিবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই আমার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে- বুঝে গিয়েছি অনেক আগেই।
না, আমার পথ চলা বন্ধ হবে না। পৃথিবীতে পথের যেমন শেষ নেই, দরজার-ও শেষ নেই। নিজের অন্তরে শান্তি আসে এমন কাজ আমি নিভৃতে করে যেতে পারবো। চলার পথে শুধু এসব অবাঞ্চিত মানুষদের দেখা না পেলেই স্বস্তি লাগতো।
Eventually, People always run behind Big Names...!
©somewhere in net ltd.