নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্পর্কের ফাঁকা দর্শন

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩৩

১)
মানুষের ঠিক করে নেওয়া উচিত সে আসলে অন্যের কাছ থেকে কি চায়।
অন্যকে একই সাথে সবকিছু দেওয়ার মত সামর্থ্যবান ও ভাগ্যবান সকলে হয় না।
যে আপনাকে সময় দিতে পারবে, কাজে সাহায্য করতে পারবে, সে হয়তো আপনাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারবে না, সে হয়তো আপনাকে ঘন ঘন দাওয়াত খাওয়াতে পারবে না, আপনি হয়তো তার নাম ব্যবহার করে কোনখানে সম্মানিত হতে পারবেন না, অথবা আপনি তার অর্জনের জন্য গর্ববোধ করতে পারবেন না।
সবাই একসাথে সবকিছু দিতে পারে না। আর, একজন মানুষের কাছ থেকে আপনি পূর্বে যেরকম সাহায্য পেয়েছিলেন, আজীবন একই ব্যক্তির কাছ থেকে একই রকম অবদানের আশাও করা উচিত নয়।
কারো উপকার বা সাহায্য করে (তা যতই ক্ষুদ্র হোক) সেটার প্রতিদান খোঁজা বা অন্য কোন কারণে সে ব্যাপারে তিরস্কার করে কথা বলা যেমন ছোট লোকের আচরণ, ঠিক তেমনি যুগ-যুগ আগের অন্তত এক দিনের যে ক্ষুদ্রতম সাহায্যের কথা আজ আপনি অস্বীকার করছেন, সেটা বরং আরো নিকৃষ্ট মানুষের বৈশিষ্ট্য। মানুষ নিজ জীবনে বছরের পর বছর যেই ধারাবাহিক প্রাপ্তিগুলো অর্জন করে যায়, সেগুলোকে তাসের ঘরের প্রতিটা তাসের সাথে তুলনা করা যায়। শিক্ষাজীবনে বা পেশাগত-জীবনের শুরুতে যিনি আপনাকে পথে চলতে, উপরে উঠতে সামান্যটুকু হাত বাড়িয়েছেন, তার নাম-টা যখন আপনি ভুলে যান, তার সাথে অপরিচিত বা উদ্ভ্রান্তের মত আচরণ করেন, তখন আপনি নিজেকে সফল ব্যক্তিত্ব বলে দাবী করলেও আপনার অর্জনগুলি "তাসের ঘর"-এর মতই ভেঙ্গে পরেছে।
২)
আপনার জীবনের অর্জন, আপনার পথ চলা আপনার কাছে সন্তোষজনক হতে পারে, আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারেন আপনি আপনার জীবন নিয়ে। অন্যেরা সেভাবে নাও ভাবতে পারে। তাহলে আপনি অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিচার করার কে?
যদি আপনি বিনয়ী হন, যদি আপনি মনে করেন আপনি স্বয়ংসম্পূর্ণ নন, যদি আপনি নিজের ভাল-মন্দ নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তবেই অন্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আপনার তোমার আছে; অন্যথা নয়!
বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা, অনেকেরই স্বভাবের বড় একটি অংশ। আমাদের উচিত মানুষকে বিচারের কাঠগড়ায় না বসিয়ে, মানুষের নির্দিষ্ট কোন কাজ-কথা-চিন্তাকে বিচারের কাঠগড়ায় বসানো। কারো সাথে কোন একটি/দুটি কারণে আপনার ঝামেলা হওয়া মানে এই না যে, তার প্রতিটা কিছুতে আপনাকে তার বিরুদ্ধাচরণ করতেই হবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনার পছন্দের আত্মীয়দের অনেকেরই তিনটা করে সন্তান আছে; এমনকি আপনার নিজেরও তিন সন্তান আছে। অথচ, আপনি যাদের অপছন্দ করেন, তাদের তৃতীয় সন্তানের জন্মের আগে থেকে শুরু করে ঐ সন্তানের বিয়ের পরেও সামাজিক সকল সমাবেশে আপনি যদি "তৃতীয় সন্তান নেওয়ার" সমালোচনা করতে থাকেন, এর চেয়ে নোংরা ব্যাপার আর কিছুই হতে পারে না।
৩)
বার্ধক্য, জরা, মুমূর্ষু অবস্থা, এমনকি মৃত্যুও যে দূরত্বকে ঘোচাতে পারে না, যে সংকটের সমাধান করতে পারে না, তার চেয়ে জঘন্য-নিকৃষ্ট-অমানবিক কিছু আর হতে পারে না।
চোখ আর মগজ মানুষকে এই উপলব্ধি করাতে পারে না যে- যে মানবশিশু পৃথিবীতে নাম-পরিচয় ছাড়া আসে, সে মানুষ মরার সময় এই নামটাও সাথে নিয়ে যেতে পারে না। পৃথিবীর দামী বাড়ী-গাড়ী, কাড়ি কাড়ি টাকা, মূল্যবান ডিগ্রী, সম্মানের পেশা-জীবিকা, শত শত সমর্থক, ঘিরে থাকা বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনের বাহার, বাগ্মীতা, পেশীশক্তি, রূপ-সৌন্দর্য, স্ত্রী-সন্তান-নাতিপুতি কিছুই সাথে নিতে পারে না; এতই অথর্ব এই "মানুষ"!
তারপরেও বাহাদুরি চলতে থাকে।
৪)
নিচুজাতের মানুষেরা হয় বহিঃসর্বস্ব।
সবকিছু পুরোপুরি বাইরের দিক দেখে বিবেচনা করে। তারা নিজেরা যেমন অন্তসারশূন্য হয়, তেমনি অন্যের অন্তরে দেখতেও তারা অক্ষম। খুব দ্রুত তারা অনুমান করে ফেলে, সত্য ঘটনা জানার পরেও তাদের কলুষিত মন পূর্ব-অনুমানের উপরই অটল থাকে।
এরা সম্মান দিতে চায় না, সম্মান পেতে চায়। নিজের সন্তানদের সিদ্ধান্তের বা অনুভূতির উপর তারা সহজেই প্রভাব ফেলে, এবং তাদের সন্তানেরাও তাদের মত হলে তারা সহজেই তাতে প্রভাবিত হয়। ফলে, ধীরে ধীরে বহিঃসর্বস্বতা বংশ থেকে বংশে প্রবাহিত হয়। অথচ, নিজ সন্তানদের থেকে তারা যা আশা করে না,ঠিক তা-ই অন্যের সন্তানদের থেকে তারা আশা করে।
তারা দাড়ি দেখে ধার্মিকতা (বা জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা), পোশাক দেখে পেশা, টাকা দেখে সক্ষমতা, ডিগ্রি দেখে মেধা, বাচলামি দেখে প্রতিভা, ভুড়ি দেখে শারীরিক শক্তি, টাক দেখে অভিজ্ঞতা, চামচা (বা ফেসবুকে লাইক) দেখে জনপ্রিয়তা, গায়ের রঙ দেখে জাতের বিশুদ্ধতা নিরূপণ করে।
৫)
আপনি হয়তো ভাগ্যের লিখনে অবিশ্বাস করতে পারেন, তবে যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ দূর্ভাগা হন, তাহলে জীবনে মরার আগ পর্যন্ত আপনার সাথে যাদের দেখা-সাক্ষাত হবে, তাদের বেশীর ভাগই আপনার কোন না কোন ব্যাপারে অসন্তুষ্ট থাকবে; মৃত্যুর পরেও সেই অসম সম্পর্কের দূরত্ব কাটবে না, বরং তা বংশপরিক্রমায় পরিবাহিত হবে।
মানুষে-মানুষে সম্পর্ক পুরোপুরি রাসায়নিক মৌলসমূহ দ্বারা যৌগ গঠনের প্রক্রিয়ার অনুরূপ। সব মৌল একে অন্যের সাথে যৌগ গঠন করে না। আর, নতুন যৌগগুলোর বৈশিষ্ট্যও হয় আলাদা, অদ্ভুত।
সম্পর্কের তিক্ততা বা কলহ থেকে বাঁচতে মানুষের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, দূরে থাকার সুযোগ আছে। একজন আরেকজনকে সেই সুযোগটা অবশ্যই দেওয়া উচিত। সুখে থাকার জন্য কিছুটা ত্যাগ তো করতেই হবে। কারণ, "and, they live happily forever!" কথাটা শুধু রূপকথাতেই হয়।
৬)
বাসার টবে গোলাপফুলের চাষ করবেন। নার্সারিতে গেলেন, সবচেয়ে ভালো গোলাপের প্রজাতির একটি চারা কিনে নিলেন এবং বাসায় আনলেন। টবে শহরের সবচেয়ে ভালো জায়গার গোলাপ-চাষের-উপযুক্ত মাটি ভরলেন। গোলাপ চারাটি যত্ন সহকারে লাগালেন। রাত-দিন আলো-বাতাস, উৎকৃষ্ট সার, পর্যাপ্ত পানি দিতে লাগলেন। চারাটি বড় হয়ে একটি ভালো গোলাপ গাছে পরিণত হল, সুন্দর সুন্দর গোলাপ ফুল ফুটল। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটা ঘটনা।
বীজ থেকে ফল-ফুল সৃষ্টি পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার যেকোন একটিতে ব্যাঘাত ঘটলে বা ব্যতিক্রম দেখা দিলে আশানুরূপ ফলাফল আসাটা কল্পনাতীত।
এছাড়া, আপনি ভালো প্রজাতির বীজ ব্যবহার করলে ফসল ভালো হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রশংসার যোগ্য সে চাষী-ই, যে প্রতিকূল পরিবেশে, ভালো বীজ বা চারা ব্যবহার না করেও ভাল ফলন দিতে পারে।
ব্যাপারগুলি ভেবে দেখার মত। তাই, দৈব বৈশিষ্ট্য নিয়ে গর্বিত হওয়ার কিছু নেই। আকাশে থেকেও যে মাটি ছুয়ে চলার মত বিনয়ী হতে পারে, তাকে নিয়েই গর্ব করা উচিত।
৭)
সৎ সাহসিকতা কি?
ফেসবুকে আপনার আইডি আছে। নিজের (প্রকৃতপক্ষে, পিতামাতার) পছন্দের মামা-খালা-চাচা-ফুফুদের সন্তানদের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ আছে। এই বৃত্তের বাইরের ভাই-বোনদের সাথে আকাশ-কুসুম চিন্তা না করে ফেসবুকে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার নামই "সৎ সাহসিকতা"!
আপনার বন্ধুর বাসার জমিদারের বড় ছেলের বিয়ে। জমিদারের ছোট ছেলে আপনাদের সমবয়সী; তার সাথে আপনার বন্ধুর "স্নায়ুযুদ্ধ"। আপনি পেশায় ফটোগ্রাফার। ঐ বিয়েতে আপনি নিজে ডেকে আপনার বন্ধুর পরিবারের ছবি তুলে দিলেন। পরবর্তীতে, পেশাগত দাম্ভিকতা বা আর্থিক লাভ বা কারো কুপরামর্শে প্রভাবান্বিত না হয়ে বন্ধুকে তার ফ্যামিলি-ফটোর একটি কপি দিয়ে দেওয়ার নামই "সৎ সাহসিকতা"!
আপনার নিজ ঘরের একান্ত ব্যক্তিগত অনাকাঙ্খিত ঘটনা বা অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদ আপনি অবশ্যই গোপন রাখতে চাইবেন। অন্য কারো ক্ষেত্রে একই রকমের কিছু হলে সেটা গোপন রাখা, সক্ষম হলে সাহায্য করা, কাউকে ওসব নিয়ে গালগল্প বা রসালাপ করতে দেখলে তিরস্কার করার নামই "সৎ সাহসিকতা"!
আপনার চেয়ে বয়সে বড় এক ভাইকে রাস্তায় অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে থাকেন প্রায়সময়। তাকে নিয়ে ফি-বছর আশেপাশের এলাকার মানুষেরা আজেবাজে মন্তব্য করে। সত্যতা যাচাই না করেও সেই বড় ভাইয়ের পক্ষ অবলম্বন করে যাওয়ার নাম-ই "সৎ সাহসিকতা"! যদিও তার জায়গায় আপনি হলে ঘুণ্ণাক্ষরেও একই কাজ করত না সেই বড় ভাই।
নিজের অন্তরের ঋণাত্মকতাকে নিজের সন্তানদের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবাহিত না করে সবার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের শিক্ষা দেওয়ার নামই "সৎ সাহসিকতা"!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০০

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ভাই কঠিন কঠিন কথা লিখেছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.