নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুর ডায়েরী থেকে-৩: "কৃষ্ণকলি তারেই বলি‬"

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫১

মধ্যম আয়ের দেশ হলেও মন মানসিকতার দিক থেকে আজও আমরা সেই ঠিক আগের অবস্থাতেই রয়েছি...।।
It is a True story copied from a brother and i respect his thinking.
আল্লাহ আমাদের চিন্তা চেতনা এবং মন মানসিকতার দিক থেকে আরও বড় হবার তৌফিক দান করুক।।
(যে সকল ভাই ব্রাদার, আংকেল শখের বশে সুন্দরী কন্যা বিয়ে করে তীব্র (অ)সুখে এবং (অ)শান্তিতে সংসার করছেন লেখাটা তাদেরকে উৎসর্গ করা হল)
.
আমি বাসায় সবার সামনে ঘোষণা করলাম সামনের মাসে বিয়ে করব। বাসায় আনন্দে হুলস্থুল পড়ে গেল । কিছুক্ষণ পর যখন জানা গেল মেয়ের গায়ের চামড়া কালো এবং সেটাকে কোন ভাবেই ভদ্রতা করে শ্যামলা বলে চালিয়ে দেয়া সম্ভব না তখন পাল্টা হুলস্থূল পড়ল। এবার ক্ষোভে।
.
হুলস্থুলের অংশ হিসেবে তিন দিন পর বাসায় বড় ফুপু আসলেন। যে কোন সমস্যা যখন কন্ট্রোলের বাইরে চলে যায় তখন ফুপুকে ডাকা হয়।
বড় ফুপু আমার পাশে বসে ফিসফিস করে বললেন, একটা সত্য কথা বলবি?
আমি বললাম, বলুন ফুপু। আমি মিথ্যা কথা বলি না।
.
ফুপু পান মুখে দিয়ে বললেন, দেখ বাবা বয়স বড় খারাপ জিনিস। যুবক বয়সে মানুষ অজান্তেই ভুল করতে পারে, সেটা খুব বেশি দোষের না। বিশেষ অবস্থায় কালো মেয়ে সাদা মেয়ে মাথায় থাকে না। মানে আমি বলতে চাই তুই কি ঐ মেয়ের সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করেছিস?
.
আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি উল্টাপাল্টা কি করব?
ফুপু বিরক্ত হয়ে বললেন, আমার ঢং ভাল্লাগেনা। সোজা শাপটা বলি, ঐ মেয়ের সাথে কি তোর ভাব ভালোবাসা ছিল? কোন ভাবে পেট হয়ে গেছে, এখন মেয়ে বিয়ে করার চাপ দিচ্ছে?
.
ঘেন্নায় আমার গা গুলাতে লাগল। বড় ফুপুকে কিছু কঠিন কথা শুনাতে ইচ্ছে করল। কিন্তু তাঁকে বলা যাবেনা। এ বাসার সবাই তাঁকে যমের মতো ভয় পায়। কেউ কিছু বললেই তিনি বাসার দলিল দস্তাবেজ ধরে টানাটানি শুরু করে দেন। তার হাব ভাব দেখে মনে হয় তাকে কিছু বলার আগে তার সম্পত্তি আলাদা করে দিতে হবে।
.
আমি শান্ত স্বরে বললাম, ফুপু এ রকম কিছু নেই। আমার প্রতি আপনার বিশ্বাস থাকা উচিত।
ফুপু বললেন, বিশ্বাস কেমনে রাখি বাবা? বলা নাই কওয়া নাই একটা নিগ্রো মেয়ে তোর পছন্দ হয়ে গেল! যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে বলতে পারিস। থাপ্রাইয়া মেয়েরে সোজা করে আসব। পেট বান্ধাইতে হুশ নাই, বিয়ার সময় হুশ।
:
:
তিন দিনে মনে হচ্ছে আমার বয়স ৩০ বছর বেড়ে গেছে। আমি বড় রকমের আইনবীদ হলে আইলে একটা ধারা যোগ করতাম। অপরাধের নামঃ কালো মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা। শাস্তিঃ গৃহত্যাগ, অন্যথায় বিয়ে ইচ্ছে বিসর্জন।
.
প্রথম দিনেই আমার নামে সালিশ বসল। জরুরী সালিশে মা, বাবা, বড় ভাই, ভাবী আর বড় চাচা উপস্থিত।
প্রথম কথা বাবা বললেন, এই মেয়ের সাথে তোমার কত দিনের পরিচয়?
আমি বললাম, সাত মাসের।
- মেয়ের নাম?
- নীলা।
- করে কি?
- অনার্স কম্লপিট করেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
.
আমার বড় চাচা পণ্ডিত মানুষ।
এই পর্যায়ে তিনি প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বাবা জাতীয়তে কত জন স্টুডেন্ট আছে?
- ১০ লাখের মতো।
- তার মধ্যে মেয়ে নিশ্চয়ই ৫ লাখের কম না। এই ৫ লাখ মেয়ে বাদ দিয়ে এই মেয়েকেই কেন পছন্দ সেটা বলো?
.
বড় চাচা টেবিলে চাপড় মেরে প্রশ্ন শেষ করে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন।
আমি মুখ কালো করে বললাম, চাচা এই মেয়েকে কেন পছন্দ হবে না সেটা আপনি আমাকে বলেন।
,
চাচা বিস্ময়ে তব্দা খেয়ে গেলেন। আমার কাছে বোধহয় এ রকম উত্তর আশা করেননি।
তার চেয়ে বেশি অবাক হলেন মা। তিনি গলা উঁচু করে বললেন, বেয়াদবের মতো কথা বলা শিখলি কবে? আগে তো বলতি না। ঐ মেয়ে শিখিয়েছে নাকি?
.
বাবা আবার কথা বলা শুরু করলেন।
- আচ্ছা তুমি আমাকে এটা বলো কি দেখে ঐ মেয়েকে পছন্দ হল? মেয়ের শিক্ষা ভালো না। পরিবারের অবস্থাও নিশ্চয় আহামরি না। অবশ্যই কিছু একটা দেখে পছন্দ হয়েছে। আমি আশা করি তুমি বলবে না নাক দেখে পছন্দ হয়েছে, চুল দেখে পছন্দ হয়েছে...
.
আমি বললাম, বাবা মেয়েটা অসম্ভব ভালো মনের মানুষ। সে...
আমার কথা কেড়ে নিয়ে চাচা বললেন, তুমি কেমনে জানো মন ভালো? তুমি কি মনোবিদ?
আমি বললাম, সে একটা সংস্থা চালায়। পথ শিশুদের বিনামুল্যে পড়ানো হয়। মানুষের কষ্টে আমি তাঁকে কাঁদতে দেখেছি।
আমার কথা শুনে বড় চাচা হাসতে হাসতে বললেন, দেখো বাবা, আমাদের সংসারে কোন পথ শিশু থাকে না যে তাকে শিক্ষা দান করতে হবে। সংসার আর মানবতা আলাদা জিনিস। বন্যেরা বনে সুন্দর মানবতাবাদীরা রাস্তায়।
.
আমার ধৈর্য তখন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমি সরাসরি প্রশ্ন করে বললাম, আপনাদের সব সমস্যাই কালো নিয়ে। সাদা মেয়ে হলে মনে হয়না এত কথা আসতো। কালো হলে সমস্যা কি বলেন তো?
.
মা এতক্ষণ পর কথা বললেন, দেখ বাবা, তুই কানা না খোঁড়া যে কালো মেয়ে বিয়ে করবি? তুই এত সুন্দর মানুষ, তোর বউ কালো হলে মানুষ বলবে কি? সাদা মানুষের মধ্যে কি ভালো মানুষ নাই? ভালো দেখে একটা সুন্দর মেয়ে বিয়ে কর। আমাদেরও তো মান সম্মান আছে, নাকি?
.
গায়ের চামড়ার সাথে মান সম্মান এত ওতপ্রোত ভাবে জড়িত সেটা তখনই বুঝতে পারলাম। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
চাচা বললেন, শোন, একটা বয়সে সমাজতন্ত্র আর মানবতা সবার ভেতরে হুট করে চলে আসে। সমাজ পাল্টে ফেলব, দেশ পাল্টে ফেলব ধরণের চিন্তা মাথায় ভর করে। বাস্তবতার চাপে পড়ে সব বের হয়ে যায়। কিছু দিন পর আর সেই মন থাকে না। আবেগের বশে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই। পরে পস্তাতে হতে পারে।
.
সালিশ সভার এ পর্যায়ে ভাবী প্রথম কোন কথা বললেন, আচ্ছা দেবর তোমাদের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা কখন থেকে শুরু?
আমি মুখ কঠিন করে বললাম, আমাদের মধ্যে কোন প্রেম ভালবাসা নেই। কেবল ভালো পরিচয় আছে।
.
উপস্থিত সবার চোখে মুখে স্বস্তি ফুটে উঠল।
মা বললেন, তাহলে তো কোন সমস্যা রইল না। বিয়ের চিন্তা শেষ হল।
আমি মুখ আরও বেশি কঠিন করে বললাম, মা আমি বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করব।
.
সিধান্তহীনতার মধ্য দিয়ে সালিশ শেষ হল। সবাই আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে চেয়ার ছাড়ল। পুরো সভায় কোন কথা না বলা বড় ভাই যাওয়ার সময় বললেন, গুরু জনের আদেশ অমান্য করা কি ঠিক? তোর ব্যাপার তুই দেখ। আমি আর কি বলব?
:
:
পরের দিন ছোট খালা আসলেন। আমার ছোট খালা ধুরন্ধর মহিলা। তিনি এসেই আমাকে বললেন, যৌতুকের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়েছে? মেয়ের বাবা কত টাকা দিয়ে মেয়ে হাত বদল করছে?
আমি বিস্মিত হয়ে খালার দিকে তাকালাম। খালাকে হাত ধরে রুমের বাইরে পাঠিয়ে দিলাম। খালা যাওয়ার আগে মায়ের সাথে ফিসফিস করে কি সব আলোচনা করলেন। রাত থেকে নিয়ে আমার পানির গ্লাসে কাগজের টুকরো পাওয়া গেল। মুখে কি হয়েছে বলে মা আমার চোখে মুখে সরিষার তেল মাখিয়ে দিলেন।
মেয়ের আমাকে করা যাদু টোনা কাটানোর একটা চেষ্টা।
.
এই পুরো বিষয়ে এক জন মানুষ আমাকে সমর্থন করলেন, তিনি আমার ভাবী। অথচ ভাবীর সাথে কোন কালেই আমার সম্পর্ক ভালো না।
ভাবী কেন আমাকে কতটা নিঃস্বার্থ সমর্থন করছেন সেটা পরিষ্কার হল পরের দিন।
ভাবী আমাকে ডেকে নিচু গলায় বললেন, দেওর পরের কথা শুনতে নাই। তোমার বউ মানুষের পছন্দের হলে হবে? সবাই কি আর ফর্সা হয়, হয়না।
.
ভাবী একটা অহংকারের হাসি দিলেন। আমি ঘটনা বুঝতে পারলাম। এই মহিলার নিজের রূপ নিয়ে সারা জীবনই অহংকার ছিল।
:
:
নীলা আমাকে ফোন করল।
- কি খবর আপনার? বাসায় নিশ্চয়ই দৌড়ানি খেয়েছেন? আপনার চাচা আর বাবা আপনার উপর ফায়ার, না?
- তুমি কিভাবে জানো? আমাদের বাসার কারো সাথে কথা হইছে?
- আমার গায়ের রং কালো হলেও বুদ্ধি এত খারাপ না। একটা কালো মেয়েকে ভুলে কেউ বিয়ে করতে চাইলে যে কমপ্লিকেশন আসে সে গুলো কমন।
.
আমার কিছু বলার থাকল না।
নীলা বলল, ভাইয়া আপনি ভালো জব করেন, বড় ফ্যামেলির ছেলে, চেহারা ভালো। এ সব চিন্তা বাদ দিন। আমি রাস্তার বাচ্চাদের নিয়ে বেশ ভালোই আছি। আমাকে শুধু শুধু কোন স্বপ্ন দেখাবেন না। স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা বড় কঠিন।
.
আমি বললাম, এ জন্যই আমি আমার স্বপ্ন ভাঙতে দেব না। স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা বড় কঠিন।
:
:
বড় ফুপুর সাথে কথা হওয়ার পর আমি একটা অদ্ভুত কাজ করলাম। বাংলা সিনেমার ২য় সারির এক নায়িকার ছবি নিয়ে মা কে দেখিয়ে বললাম, মা আমি তোমাদের সাথে একটু বেশি মজা করেছি। আমি আসলে এই মেয়েকে পছন্দ করি।
.
বাসায় আবার হুলস্থুল পড়ল। আমাদের বাসায় এই নায়িকাকে কেউ চেনে না। সবার মুখ হাসি হাসি হয়ে গেল। বাবা কপট রাগ দেখিয়ে বললেন এই ফাইজলামির বিচার হওয়া দরকার।
চাচা বললেন, ছেলে তো বিরাট ফাজিল হয়ে গেছে। কান ধরে উঠবস করাতে হবে।
সবার আনন্দের মাঝে কেবল ভাবীর মুখটাই একটু মলিন মনে হল।
.
বাসার কেউ ই জানেনা এই ফর্সা চামড়ার নায়িকার মোট তিনটে বিয়ে হয়েছে। 'বিয়ের আগেই বাচ্চা' শিরোনামে পত্রিকায় কিছুদিন লেখালেখি হয়েছে। অন লাইন পত্রিকায় তার নামে "একি করলেন" বলে প্রায়ই খবর আসে।
:
:
আমি আমার সিধান্ত নিয়ে নিয়েছি। আমি নীলাকেই বিয়ে করব।
এখন আমার বয়স ২৯। বয়স ২৯ এ থেমে থাকবে না। সাদা চামড়ার গুরুত্ব আমার কাছে বড়জোর ৩৯ বা ৪৯ পর্যন্ত থাকবে। তারপরেই আমার কাছে চামড়ার গুরুত্ব হারিয়ে যাবে। এক সময় আমার বয়স ৫৯ হবে, ৬৯ হবে, ৭৯ হবে। আমি বিছানার নিচে নামতে পারব না। তখন আমার পাশে একটা মানুষের হাত থাকতে হবে। হাত যদি কাজ না করে তবে একটা নির্মল মনের মানুষ থাকতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে একটা মানুষের হাত আমার দরকার, কোন সাদা জীব না।
.
বাসার সবাই আমাকে বোকা বলে। আমি জানি আমি বোকা না।
আমি শেষ সময়ের কথা ভাবছি। যারা শেষ সময়ের কথা ভাবে তারা বোকা হতেই পারে না।
কখনই না।
:

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.