নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

(ব্যালট) বাক্সের বাইরে

০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৩৮

রনি, আশা করি খোদার রহমতে সব দিক দিয়ে ভালো আছো।
আমাকে চিনবে না; আমি অখ্যাত একজন; পুরাই সাধারণ মানুষ।
ব্যাচমেট বলে তুমি করে বলছি। মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছো। ইমরানের (মুসলিম হাই-এর) মুখে তোমার প্রশংসা শুনেছিলাম।

ফেসবুকে বা এর বাইরে তোমার রাজনৈতিক/সামাজিক কার্যক্রম ফলো করি। গতানুগতিক বা মান্ধাতার আমলের দেশীয় রাজনৈতিক ধারার বাইরের কর্মী বলে মনে হয় তোমাকে। বিভিন্ন ব্যাচের অনেক বন্ধু উচ্চ পর্যায়ের লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছে; তাদের মুখেও তোমার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য শুনতে পাই।

ফালতু কথা বাদ দিয়ে মূল কথায় আসি। যদিও পরের কথাগুলোই তোমার ফালতু মনে হতে পারে। তোমার সময়ক্ষেপণের জন্য আগে থেকে দুঃখিত বলে রাখছি!

সময় পেলে মাসে ৩/৪ বার ছুটির দিনগুলিতে ২/১ জন বন্ধু সাথে নিয়ে প্যারেডের মাঠে সন্ধ্যায় হাঁটতে যাই। বাসার কাছাকাছি এটাই প্রাকৃতিক বিনোদন স্থল; অবসর কাটানো, আড্ডা দেওয়া, বা শরীরচর্চার উন্মুক্ত স্থান।

চিটাং কলেজ বা মহসিন কলেজের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকাগুলিতে খেলাধূলা বা জনসাধারণের চলাচলের জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ ছিল। কারণ, তখন দুই বিবাদমান পক্ষের বিবাদ বা কলহ শুরু হওয়ার মত ঝুঁকি/আতঙ্ক ছিল না। কিন্তু, এর পর থেকেই সব বদলে গেল।

আমার বোন মহসিন কলেজে ইন্টার ১ম বর্ষে পরে; ও বলেছে ওদের মাঠে আগের মত কেউ খেলে না। প্যারেডেও দেখলাম গেল শীতে ব্যাডমিন্টনের কোর্টগুলি বসেনি। মাঝখানে অনেকদিন প্যারেডের হাঁটাহাঁটি/দৌড়াদৌড়ি বন্ধ ছিল; সব গেইটে তালা লাগানো ছিল। এই বন্ধ অবস্থার আগে আমি অনেক বেশি যেতাম। একা একা গিয়ে মাঠের মাঝে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।

আজ (৩১ মার্চ) ৭.৩০ টার দিকে এক ডাক্তার বন্ধুকে সাথে নিয়ে গুলজার টাওয়ারে শপিং করতে আসি। শপিং সেরেই আমরা প্যারেডে হাঁটতে চলে আসি; উদ্দেশ্য হাঁটার সাথে সাথে মাঝে বসে আড্ডা দেওয়া; অনেক দিন পরে দেখা। আবহাওয়া ভালো; পুরা মাঠে হাতে গোনা ২০-৩০ জন মানুষ আছে।

কথা বলতে বলতে প্রায় ৯টা হয়ে এল। ৯টা বাজার ৭/৮ মিনিট আগে আমার বন্ধু বলল, "চল বের হয়ে যাই; বাসায় যেতে হবে।" আমার-ও বাসায় বাজামালের দোকান থেকে জিনিস নিতে বলেছিল; তাই মাঠের গেইটের কাছে হেঁটে চলে আসতে লাগলাম।

গেইটের কাছে আসতেই লোহার কাঁটাওয়ালা বাউন্ডারির ওপাশ থেকে ছেলে একটা ভূতের মত হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে বললো- "কে আপনারা? এখানে কি করেন? নাম কি? কোথায় থাকেন? সাহস তো কম না আপনাদের?" প্রথমে আমি ভাবলাম, ছিনতাইকারী-টাইপের কেউ। পরে বুঝলাম, সে গার্ড-টাইপের কেউ হবে।

আমি বললাম, "আমরা হাঁটতে এসেছি। সবাই যেরকম আসে। আগেও অনেক-অনেক বার এসেছি। কই, এরকম তো হয়নি?" সে ছেলে বলল, "এখন ৯টা বাজে। জানেন না???!! আমার বন্ধু ভয়ে নির্বাক। আমি বললাম, "কই জানি না। আর এখনো তো ৯টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি। আর, ঐ দেখেন মাঠের ভেতর অনেকে বসে আছে। ওদের কি হবে? ওদেরকে ডাকেন?"

সে ছেলের মুখটা যেন কুকুরের মত হয়ে গেল। আমাকে যেন খেয়ে ফেলবে। আমি পাত্তা না ফদিয়ে মাঠের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে তালি দিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগলাম- "আসেন, আসেন। ওঠেন। গেইট বন্ধ করে দিবে!!"

তারপর মাঠের খোলা গেইট দিয়ে বেরিয়ে গেলাম দুজনে। দেখি কলেজের হোস্টেলের প্রবেশের মোড়-টাতে ১০/১৫ জন মানুষের বিক্ষিপ্ত জটলা। একজন টুলে বসে আছে। বাকিরা শকড, বিরক্ত, আতঙ্কিত, স্তব্ধ! এদের কেউ বয়স্ক পুরুষ/মহিলা, কেউ মধ্য বয়স্ক, কেউ বৃদ্ধ; আমরা ৪/৫ জন শুধু অপেক্ষাকৃত তরুণ।

আমি কিছু তোয়াক্কা না করে বন্ধুকে নিয়ে পশ্চিম গেইট (পার্সিভিল হিলের বিপরীতে) দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। যাওয়ার আগে ঐ ছেলেটাকে সামনে ডেকে শিক্ষামূলক ভঙ্গিতে বললাম- "দেখ, তুমি এভাবে বললে তো কেউ বুঝবে না। অনেকেই এখানে হঠাৎ আসে, নতুন আসে। আজকের আবহাওয়া ভালো বলে অনেকের সময়ের কথা খেয়ালই নেই। আর তুমি যেভাবে সবাইকে সতর্ক না করেই চার্জ করছো, সেটা তো খারাপ ব্যবহার! মাঠের মুঝে দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিলেই তো সবাই চলে আসতো। এভাবে তো ভদ্রলোকের সাথে কথা বলা ঠিক না! আমরা কি সন্ত্রাসী?"

আমি এরকম আমার মত বলে যেতে লাগলাম। সে সাধারণ নিরাপত্তা-প্রহরী-কর্মচারী, বয়সেও ছোট। আমার কথার টোনে ভড়কে গিয়ে চুপ করে থাকলো। অন্যান্য মানুষ-ও আমার কথা শুনে সম্মতি দিতে লাগলো। এক আন্টি তো রীতিমত এই আচমকা "কার্ফিউ"-তে বিরক্ত/ভীত সন্ত্রস্ত!

এসব বলে আমি চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ, অন্যদিকের রাস্তার পাশে টুলে বসা এক ষন্ডামত গুন্ডাটাইপের লোক দূরে থেকে আমাকে জোরে জোরে ডাক দিলেন। আমি একা এগিয়ে গেলাম। আমার বন্ধু ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকলো।

ব্যাটা বলল- "কে আপনি? কই থাকেন? কি করেন এখানে? বাড়ি কই? বাসা কই?"
আমি সংক্ষেপে উত্তর দিলাম।
সে বলে- "আপনার সাহস তো কম না। এভাবে আমার ছেলেকে বড় বড় কথা বলেন। জানেন, আপনার এখন কি অবস্থা হতে পারে?"
আমি আর সেই লোক ছাড়া পুরা জায়গা চুপ। আমি ভদ্রভাবে বললাম, "আমরা তো বাইরের কেউ না। এই এলাকারই ছেলে। স্টাডি আর জব লাইফের কারণে হয়তো এলাকার রাজনীতি করি নাই। আর ওর সাথে তো আমি হম্বিতম্বিও করিনাই পাওয়ার-ও দেখাই নাই। যা বলেছি, ঠিক বলেছি। অন্ধকার, কারেন্ট নাই। যারা নতুন আসে, তারা ৯টায় বন্ধ হওয়ার নিয়ম জানে না। আর, আমরা এমনিতেও ৯টায় বের হচ্ছিলাম। আমরা তো যাযাবর না! যারা কিছু জানে না, মাঠে একটু আগেও বসেছিল, তাদেরকে সতর্ক করার জন্য ছেলেটি কিছু করেনি বলেই তাকে ওসব বললাম! আমরা নাহয় তরুণ মানুষ; অন্যান্য বয়স্ক পুরুষ/মহিলার সাথেও এভাবে ভয় দেখিয়ে কথা বলা তো ভদ্রতা না!"

লোকটা এতক্ষণ পায়ের ওপর পা তুলে বসেছিল। আমার কথা শুনে মুখের উপর এসে দাঁড়াতে গেল। পাশ থেকে আমার মায়ের সমান দুই মহিলা এসে আমার তর্কটি তাদের নিজেদের উপর তুলে নিল। অন্যান্যরাও এসে ঘিরে দাঁড়ালো। আমি সাইডে গিয়ে মোবাইল বের করে আমার বন্ধু বাপ্পীকে ফোন করতে যাচ্ছিলাম। সেই ব্যাটা এসে বলে, "কাকে ফোন দেন?"
আমি চট করে মুখ দিয়ে বললাম, "নুরুল আজিম রনি"; বাপ্পীর নাম নেই নাই। কারণ ওকে চিনতে নাও পারে। তোমার নাম নিলাম, কারণ কয়দিন আগে চিটাং কলেজের প্রোগ্রামে পত্রিকায় তোমার ছবি দেখেছিলাম। সেই লোকে কথা ভালোভাবে না শুনেই বলল- "কোন রনি-টনি দিয়ে কাম হবে না। আপনার সাহস বেশি। দেখি আজকে কি করেন? (দূরে আরেক লোককে সে বলল) তালা ভালোমত লাগাইছস তো?" মহিলা দুজন তাদের মত কথা বলে যেতে লাগলো লোকটার সাথে।
আমি আর আমার বন্ধু আরো কয়েকজনের সাথে গেইট পর্যন্ত গিয়ে তালা লাগানো দেখে আবার ফেরত আসলাম। আমার বন্ধু আমাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলল। কয়েকজন বলল, এই দেওয়াল/গেইট তো সহজে টপকে ফেলা যায়। আমি নিষেধ করলাম। আমি বললাম, "আমরা কি খারাপ মানুষ নাকি? যেভাবে ঢুকেছি, সেভাবেই বের হব। চলেন দেখি, তালা কিভাবে না খুলে!"

এক আঙ্কেল বলল, লোকগুলা পুলিশের। আরেক আঙ্কেল বললেন, " না, না। সে বলেছে, তারা যুবলীগ।"
আমি বললাম, যেই হোক না কেন; তাদের উদ্দেশ্য ভালো হলেও কাজের ধরণ ঠিক না। আমরা কি সন্ত্রাসী নাকি?!

মহিলা দুজনের চাপে পরে গেইট খুলতে বাধ্য হল। আমিও আর লোকগুলিকে কিছু বলি নাই। তারাও আমাকে ঘাঁটায় নাই।
আমি বের হতে হতে সবাইকে বলতে লাগলাম, "প্যারেডের আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় সময় দেখি বিভিন্ন বয়সের মানুষ খেলার উদ্দেশ্যে বা যাতায়াতের সুবিধার জন্য উঁচু লোহার দেওয়াল ডিঙ্গিয়ে চলে যাচ্ছে। বয়সের লজ্জা না থাকলে আমিও তাই করতাম আজকে! কিন্তু এরা কি বোঝে না, যাদের জন্য এদের এত আগাম ভীতি, তারা যদি কুকর্ম করতে চায়, তবে তারা এসব দেওয়াল/পাহারার তোয়াক্কাই করবে না??!!"



আপাত দৃষ্টিতে ঘটনাটা খুব তুচ্ছ। কিন্তু এইসব তুচ্ছ ঘটনা থেকেই বড় বড় ভয়ঙ্কর ঘটনার সূত্রপাত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছেও; মানুষ খুন হচ্ছে আপনজনের হাতেই!
ক্ষমতার দাপটে অন্ধ হয়ে যাওয়া, জনগণকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা, সাধাসিধে মানুষকে সন্দেহবশত জোরপূর্বক বিরোধী পক্ষের লোক বানিয়ে নাজেহাল করা- এসব অহরহ হচ্ছে।

তোমরা নতুন দিনের রাজনীতিবিদ। তোমরা না বদলালে এসব কারা বদলাবে? রাজনীতিবিদ হবে, নাকি রাজনীতিজীবি হবে- এটা তোমার বিবেকের উপরই নির্ভর করছে।

সামনাসামনি হলে হয়তো সময় পেলে আরো কথা বলতাম। অনেক প্রসঙ্গে। বন্ধুত্ব হয়তো নেই; আশা করি হবে।

সবসময় শুভ কামনা থাকবে। ভাল থেকো!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৫:৩৪

আহসানের ব্লগ বলেছেন: আপনিও ভাল থাকবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.