নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাটুকারদের প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকুন

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩

বাপ্পা এলাকার নেতা-গোছের মানুষ; স্থানীয় বাসিন্দা; বাড়ি-জমি আছে। আশেপাশের এলাকায়ও তাদের পরিবারের বেশ দাপট। বাল্যকাল থেকে আজ পূর্ণবয়স্ক বয়স পর্যন্ত ছোটবড় নানান ঝামেলাতে সে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে জড়িয়ে এসেছে; নিজের ক্ষমতা, শক্তি, বাহাদুরী, প্রভাব দেখিয়ে এসেছে। এলাকার নিরীহ, ভীতু, নির্ভেজাল লোকেরা তাকে এড়িয়ে চলে, সমীহ করে।

বাপ্পার ছোট ভাই পরিবার এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের দাপট-প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় বখাটেপনা করে বেড়ায়। কিছুটা তামাশা করেই যার তার কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়; খুব কম ক্ষেত্রেই সেই সেটগুলি প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত যায়। মোবাইল বিক্রির টাকা দিয়ে বাপ্পার ভাই তার বন্ধুদের নিয়ে আমোদ-ফূর্তি করে বেড়ায়।

এখন একই ঘটনার দুটি ভিন্ন রূপ এবং ফলাফল দেখুন।

ঘটনা একঃ

পূজন এলাকার একজন সজ্জন ব্যক্তি। সে বাপ্পার ভাইয়ের মাস্তানি দেখে ভুক্তভোগীদের অনুরোধে ব্যাপারটি নিয়ে বাপ্পাকে বলতে গেল। সে বাপ্পাকে বলল- "ভাই, আপনাদের পরিবার শুধু এই এলাকাতেই নয়, আশেপাশের অনেকের দৃষ্টিতেই সম্ভ্রান্ত এবং প্রভাবশালী পরিবার। বড়সড় মানুষদের সাথে আপনাদের চেনাজানা, উঠাবসা। অন্যদের ঝামেলায় আপনি এগিয়ে আসেন, সাহায্য করেন। এ অবস্থায় আপনার ছোট ভাইয়ের সাম্প্রতিক কিছু আচরণ আপনার এবং পরিবারের সম্মানহানি করছে বলে আমরা মনে করি। আপনি যদি দায়িত্বশীলভাবে আপনার ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু উদ্যোগ নেন, তাহলে এটি সবার জন্য আদর্শ দৃষ্টান্তে পরিণত হবে। আপনার খ্যাতি এবং সুনামও এতে বৃদ্ধি পাবে।"

পূজনের সুন্দর এবং উৎসাহমূলক উপস্থাপনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাপ্পা সমাজে নিজের এবং পরিবারের মান বাঁচাতে ভাইকে সঠিকভাবে শাসন করল, বখাটে যুবকদের সুপথে আনতে বিভিন্ন কার্যক্রম আরম্ভ করল, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিল। এর ফলে, এলাকায় বাপ্পার পরিবারের নামযশ আরো বৃদ্ধি পেল। একই সাথে, আসন্ন কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতার জন্যে নিজের যোগ্যতার প্রমাণও দিয়ে দিল বাপ্পা।

ঘটনা দুইঃ

পূজন এলাকার একজন আগাছাগোছের, চাটুকার, সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি। সে বাপ্পা এবং তার মত ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থাকে; তাদেরকে তৈলমর্দন করে সে নিজে সুবিধা লাভের সুযোগে থাকে। বাপ্পার নাম বেচে সে অন্যদের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে প্রতিনিয়ত।

বাপ্পার ভাইয়ের মাস্তানির শিকার ব্যক্তিরা যখন তাদের নিজেদের দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা করছিল, তখন পূজন আড়িপেতে সেগুলি শুনে যায়। পরবর্তীতে সে বাপ্পাকে গিয়ে বলে, "দাদা, দেখেছেন কারবার? সবার সাহস তো বেড়ে যাচ্ছে। আপনার আদরের ভাইটা বন্ধুবান্ধব নিয়ে একটু দুষ্টামিও করতে পারবে না এইসব হিংসুকদের জ্বালায়! তার বয়সই বা কত? এই বয়সে দুরন্তপনা না করলে কখন করবে? সে তো শুধু সামান্য কয়টা মোবাইল সেটই না নিয়েছে। এত বড় বংশের ছেলে, এলাকায় বন্ধুবান্ধব নিয়ে ব্যান্ড-প্রোগ্রাম করবে, পিকনিকে যাবে, আইপিএল-বিপিএলে বাজি ধরবে, হাতখরচ লাগবে না? আপনার ভাই বলে কথা; সবার তো আপনার ভাইকে টাকা দেওয়া কর্তব্য! আপনি, আপনার পরিবার এই এলাকার জন্য কি কম করেছেন? সামনে আপনি ইলেকশনে লড়বেন; অথচ এই লোকগুলি আপনাদের দিকে আঙ্গুল তুলে! আপনি গত বছর এত বড় কেন্দ্রীয় নেতার ভাগনেকে এত মানুষের সামনে মেরে সাইজ করে দিয়েছিলেন, আরেকটু হলে মার্ডার হয়ে যেত। পুলিশ-প্রশাসন-সরকার-সমাজ সব আপনার নখদর্পণে। এরা এত কিছু জেনেও ছোটমুখে বড়কথা বলার সাহস কিভাবে পায়, ভাই?"

চামচা পূজনের উস্কানিমূলক প্ররোচনায় উত্তেজিত হয়ে দাম্ভিক এবং মাথামোটা বাপ্পা তার ভাই এবং ভাইয়ের বন্ধুবান্ধবদের এলাকার জনসমাগমপূর্ণ স্থানে সমবেত করে, এবং সমস্বরে বলে- "আজ থেকে তোরা যার থেকে ইচ্ছা, যখন খুশি তখন টাকা-মোবাইল-খাবার-জিনিসপাতি নিবি। কোন বাপের ব্যাটা কি বলে দেখি! কেউ বাধা দিলে ধরে টাইট দিয়ে দিবি। দিতে রাজি না হলে মেরেধরে ছিনিয়ে নিবি। পুলিশ কিংবা অন্য কেউ কিছু বলতে আসলে আমাকে বলবি! আমি তোদের পিছনে আছি।"

এভাবে, ধূর্ত, ধান্ধাবাজ পূজনের কুপ্ররোচনার ফাঁদে পরে সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক-সামাজিক নেতা বাপ্পা মূহুর্তেই পরিণত হল সন্ত্রাসীদের গডফাদারে।
--------------------

এটি একটি রূপক কাহিনী। নিজেদের প্রতিদিনের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার সাথে এর আমেজটা মিলিয়ে নিলে আপনারা সকলে আশা করি বিপথ এবং বিপদ থেকে নিজে যেমন দূরে থাকবেন, তেমনি অন্যদেরও নিরাপদে থাকতে সাহায্য করবেন। সুজনদের কাছে রাখুন, কুজনদের চিনে রাখুন।

(সবগুলি চরিত্র এবং উপাদান কাল্পনিক; কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নহে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০৫

বিজন রয় বলেছেন: কাহিনীটা রূপক হলেও এটার মর্মকথা বাস্তব।
++++

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০৬

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: হুমম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.