নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেধাসত্ত্ব চুরি

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২৯

আমাদের দৈনন্দিন ঘরোয়া বাজার নেওয়া হয় এলাকার এক মুদি দোকান হতে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা বাজারের লিস্ট দিয়ে আসি; ওরা দোকানের লোক দিয়ে মালামাল পাঠিয়ে দেয়। পরে লিস্ট অনুযায়ী টাকা দিয়ে আসা হয়। খুব কম সময়ই সরাসরি জিনিস কিনে আনি আমরা।

গতকাল আমার মা চাল আনতে গিয়ে হাতেনাতে কেজিতে ২০০ গ্রাম কম দেওয়া হচ্ছে ধরে ফেললেন। ইলেক্ট্রনিক মাপার যন্ত্র দিয়েই দেদারসে চুরি করে যাচ্ছে দোকানদার, ব্যবসায়ীরা। বিশ্বস্ততা, নৈকট্য, পরিচয়ের কোন মূল্য নেই এই চুরির ক্ষেত্রে। দোকানী বায়না দেখালেন, ওজন মাপার যন্ত্রের চার্জ ফুরিয়ে এসেছে। জেনে হোক বা না জেনে হোক, এই মেশিনগুলির খুঁত সংশোধনের দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের। ওজনে কম দিয়ে তারা ভয়াবহ গুনাহের কাজ করছে তাইই নয়, প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ মুনাফা করছে। এগুলিকে সরাসরি "চুরি"-ই বলা চলে।

সবার উদ্দেশ্য এখানে একটু বলে রাখবো- আমাদের মত আপনারাও নিজ নিজ ঘরে ওজন মাপার যন্ত্র রাখবেন। সন্দেহ হলে বা ইচ্ছে হলে যেকোন কিছু মেপে দেখবেন। সাবধানের মার নেই। ওজনে সামান্য কম দিয়ে, পণ্যের গুণাগুণে সামান্য খুঁত রেখেই কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাদের সম্পদের বিশাল পাহাড় তৈরি করে।

আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য আমাদের জাতীয় চৌর্যবৃত্তি প্রসঙ্গে কিছু বলা। আমরা ছোটখাট চুরিকে উৎসাহ দিতে দিতে বড়সড় চুরির দিকে এগিয়ে যাই। সম্পদ চুরি, অর্থ চুরি, কর ফাঁকি, ইত্যাদি বৈষয়িক বস্তু চুরি নিয়ে আজ লিখব না। মেধাসত্ত্ব চুরি বিষয়ক কিছু বলতে চাই।

দেশের বিখ্যাত একজন শিশুসাহিত্যিক এবং বিজ্ঞানকল্পকাহিনী লেখকের দিকে প্রায়সময় বিদেশী সাহিত্য থেকে চুরির অভিযোগ তোলা হয়। আরেকজন থ্রিলার লেখকের থ্রিলার সিরিজ পড়ে বড় হওয়া কয়েক প্রজন্মের মানুষ বড় হয়ে জেনেছে- তাদের এই জনপ্রিয় লেখক একজন চোর। যুগ যুগ ধরে ঢালিউডের চুরিগুলি দেখে মাথায় প্রশ্ন আসে- কিভাবে এতটা মিল রেখে নকল করে যায় তারা? তারা কি জানেনা- "চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পরে ধরা"?

আজকে রাতেই (৭ ডিসেম্বর) এক শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের একটি পোস্ট পড়ছিলাম। অসাধারণ সেই পোস্ট; আগেও পড়েছি কয়েকবার। ওয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান এক্টন, হ্যারি পটার সিরিজের স্রষ্টা জে কে রাউলিং, পৃথিবীর সর্বকালের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্ট- এদের উদাহরণ দিয়ে সেই লেখায় ব্যর্থতাকে শক্তিতে পরিণত করে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করার প্রেরণা দেওয়া হয়েছে পাঠকদের। প্রত্যেকবারই এই পোস্টের নিচে "সংগৃহীত" শব্দটি লেখা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পরেছিলাম। তাই, লেখাটির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাক্য পৃথক পৃথকভাবে মাউসের কার্সর ধরে সিলেক্ট করে গুগলে সার্চ দিলাম। প্রত্যেকবার আসা সার্চ রেজাল্টগুলির মধ্য থেকে বাছাই করে করে দ্রুত এই লেখার লেখককে ট্রেইস করতে গিয়ে একজন ফেসবুক সেলিব্রিটির সন্ধান পেলাম। সাড়ে পাঁচ হাজার ফলোয়ার, শত শত লাইক-শেয়ার-কমেন্ট, প্রত্যেক লেখার নিচে প্রশংসকদের প্রশংসা, প্রত্যেক প্রশংসাসূচক মন্তব্যের নিচে লেখকের ধন্যবাদজ্ঞাপক-স্বীকৃতিসূচক মন্তব্য; এইসব দেখে ভদ্রলোককে "জেনুইন লেখক কাম সেলিব্রিটি" না ভেবে পারলাম না।

দেখলাম, উক্ত ব্যক্তি এই লেখাটি লিখেছেন ৬ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরই মধ্যে উনার নামসহ এবং নামবিহীন "সংগৃহীত" উল্লেখপূর্বক এই লেখাটি অগণিতবার শেয়ার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, আমার প্রথম খটকা লাগলো তখনই, যখন আমার খেয়াল হল, এই লেখা আমি এর আগেও ফেসবুকে দেখেছি। এই লেখা কিছুতেই একদিন আগের লেখা হতে পারে না।

সন্দেহ পরক্ষণেই পাকাপোক্ত হল যখন ৭ই ডিসেম্বর দুপুর দেড়টায় লেখা তার অন্য একটি পোস্ট দেখলাম, যেটি আগের পোস্টটির চেয়ে অন্তত একশত গুণ বেশি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক এবং অন্যান্য ব্লগসাইটগুলিতে। "কোটিপতি বাবার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এ বসে নিজেকে Prince/Princess ভাবতে ভালোই লাগে"- এই বাক্য দিয়ে শুরু করা লেখাটিও আগের লেখাটির মত নামে-বেনামে, কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করে, হাজার হাজার বার শেয়ার হয়েছে। কোন বার এর প্রকৃত লেখকের সন্ধান পাইনি। অনেকে শুধু এই লেখা দিয়েই ফেসবুক সেলিব্রিটি হয়ে গিয়েছেন।

দুই মিনিট খুঁজেই প্রকৃত লেখকসহ আসল লেখাটি পেয়ে গেলাম। লেখাটি লিখেছেন তুষার হাসান।
(web.facebook.com/T.VAIrus/posts/10206900611096723)

এই যে সামান্য ফেসবুক পোস্ট কপি-পেস্ট করে পোস্ট করা নিয়ে আমার উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকে অনেকেই হয়তো বাড়াবাড়ি বলবেন। কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করুন, তুষার হাসানের এই লেখাটি প্রথমেই যারা উনার ওয়াল থেকে পড়ে, মুগ্ধ হয়ে শেয়ার করেছেন, উনারা কি উনার নামসহ শেয়ার করতে পারতেন না? যাদের মনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না, তারা প্রথম দর্শনেই উনার এই "পাবলিক" পোস্টটি "শেয়ার" বাটন চেপেই শেয়ার করেছেন; যাতে এই অসাধারণ লেখাটির লেখককে সামান্য স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে।

ফেসবুকের এই চুরি-চামারি যে শুধু লাইক বা ফলোয়ার বাড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাই-ই নয়। অনেকে অন্যের লেখা দিয়ে নির্দ্বিধায় বই ছাপিয়ে ফেলছেন, পত্রিকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন, কাহিনীর উপর নির্ভর করে নাটক-টেলিফিল্ম-সিনেমা বানিয়ে ফেলছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাধর্মী বা সৃজনশীল যেকোন কাজে, থিসিস বা প্রজেক্টের লেখালেখিতে, এমনকি সাধারণ ক্লাস এসাইনমেন্ট বা রিপোর্ট লেখার সময়ও শিক্ষার্থীদের গণহারে Plagiarism করতে দেখা যায়। Plagiarism এর সহজ বাংলা হল "অন্যের রচনা চুরি"। এই ব্যাপারগুলি আমাদের রক্তে মিশে গিয়েছে। Google-এ গিয়ে অন্যের লেখা চুরি করা যেরকম সহজ, তার চাইতেও সহজ কোন লেখার প্রকৃত লেখক খুঁজে বের করা। চোরের উপাধি থেকে বাঁচার উপায় খুব সহজ। আপনি যদি অন্যের যেকোন লেখা আপনার লেখায় ব্যবহার করেন, তবে তা' উদ্ধৃতির মধ্যে রাখবেন, এবং লেখকের নাম একসাথে লিখে দিবেন।

ভালো কাজ করতে, ভালো চিন্তা করতে, সর্বোপরি ভালো হতে অর্থকড়ি লাগে না। ফেসবুকের লেখা যেখানে আমরা স্বেচ্ছায়-অনিচ্ছাবশত "চুরি" করছি এবং মাগনা বাহবা নিচ্ছি, সেখানে শিল্পীর কাজের মর্যাদা/পারিশ্রমিক না দিয়ে পাইরেসিকে উৎসাহ দিতে আমাদের বিন্দুমাত্র বিবেকে বাঁধবে না; অন্য দেশের সংস্কৃতি থেকে চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া চলতে থাকবে অনন্ত কাল।

সবকিছু বিনামূল্যে, বিনাশ্রমে পাওয়ার চেষ্টা বা চিন্তা করা আমরা যতদিন না বন্ধ করব, ততদিন আমাদের প্রকৃত উন্নতি হবে না। কারণ, আপনি যেটা করছেন, আপনার যে যোগ্যতা বা প্রতিভা, সেটার জন্য অন্যদের কিছু না কিছু অবশ্যই খরচ করতে হবে। আদান-প্রদান এবং লেনদেনের ভারসাম্যের উপরেই মানবসমাজ টিকে আছে।

[প্রথম লেখাটির প্রকৃত লেখকের সন্ধান পেয়েছিঃ web.facebook.com/humanist.camelia/posts/10154404488914383]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চোরের লজ্জা নাই।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সবকিছু বিনামূল্যে, বিনাশ্রমে পাওয়ার চেষ্টা বা চিন্তা করা আমরা যতদিন না বন্ধ করব, ততদিন আমাদের প্রকৃত উন্নতি হবে না। কারণ, আপনি যেটা করছেন, আপনার যে যোগ্যতা বা প্রতিভা, সেটার জন্য অন্যদের কিছু না কিছু অবশ্যই খরচ করতে হবে। আদান-প্রদান এবং লেনদেনের ভারসাম্যের উপরেই মানবসমাজ টিকে আছে।

ভাল বলেছেন। সহমত।

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪২

ঢাকাবাসী বলেছেন: পৃথিবীতে সবচাইতে দুর্ণীতিবাজ মানুষের দেশ হল এই ....।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.