![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি যে ব্যাংকে চাকরি করতাম, সেই ব্যাংকের চেয়ারম্যান (দেশের নামকরা শিল্পপতি) কয়েক বছর আগে গুলশানে হেড অফিসে সকাল ৯টায় গিয়েছিলেন একটি রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য।
তখনো অন্যান্য সব প্রাইভেট ব্যাংকের মতই সকাল ১০টা ছিল প্রবেশের শেষ সময়। উনি এমনিতে তাড়াতাড়ি গিয়েছিলেন, হয়তো আর কোথাও যাওয়ার ছিল না। কিংবা ওই রিপোর্টটা নিয়েই তিনি পরের কাজে যাবেন, তাই আগেভাগে চলে এসেছিলেন।
যে কর্মকর্তা রিপোর্টটা দেওয়ার কথা, সে প্রতিদিনের মতই যথাসময়ে এসেছিল। এসেই চেয়ারম্যানকে দেখে তড়িঘড়ি করে রিপোর্টটা প্রসেস করে প্রিন্ট বের করে দিল।
এই কাহিনি আমি যখন আমার ব্রাঞ্চের এক কলিগের মুখে শুনছিলাম, তখন কাহিনির এই মোড়ে এসে ভেবেছিলাম, হয়তো ওই সময়, ওই অফিসার রিপোর্টে কিছু মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছিলেন, দ্রুত করতে গিয়ে।
কিন্তু, তাও না।
রিপোর্ট নিয়ে চেয়ারম্যান তার কাজে চলে যায়। পরে হয়তো, ম্যানেজমেন্ট এর উচ্চপর্যায়ের কারো সাথে ক্যাসুয়ালিই ব্যাপারটা বলেছিলেন ব্যাংকের কর্ণধার।
পরের দিনই, ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়, ৯.২০ এর পরে ঢুকলে "লেইট কাউন্ট" করা হবে।
চক্ষুলজ্জাহীন পদলেহনকারী উচ্চবেতনভোগী বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের ১১৩টা শাখার হাজার হাজার মানুষকে মূল্যবান সময় বলি দিতে হচ্ছে।
তার চেয়েও বড় কথা, অসহনীয় যানজট, জলাবদ্ধতা, উপযুক্ত যানবাহনের অভাব, এসবের সাথে মোকাবেলা করার জন্য ব্যাংকের চাকরিজীবীদের উপর থেকে আদেশ/উপদেশ দেওয়া হয়, এই বলে যে--
ঘর থেকে কয়েক ঘন্টা আগে বের হয়ে গিয়ে সঠিক সময়ে ফিংগার ইমপ্রেশন দিতেই হবে। যদিও রাতে বাসায় পৌঁছতে ৯/১০টা বেজে যাক। প্রয়োজনমত ঘুমের প্রচন্ড অভাব সত্ত্বেও সকাল ৬.৩০/৭.০০টায় উঠে রওনা দিয়ে দিতে হয় কোট টাই পরা কামলাদের।
তার মধ্যে জলাবদ্ধ পথের সমাধান দেয় তারা, সাঁতরে আসা, জুতা মাথায় তুলে হাফ প্যান্ট পরে এসে, অফিসে ফুল প্যান্ট পরে ফেলা, ইত্যাদি, ইত্যাদি। মোজা-প্যান্ট নোংরা পানিতে ভিজে গেলে সেগুলি পরিস্কারের জন্য সাবান-পানি-টিস্যু থাকে না এসব অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠানে। ফ্যানে শুকাতে গেলে সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখে অফিসারকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করে বড়কর্তারা।
যাদের এসবে চুলকায়, তারা থাকেন অফিসের কাছাকাছি হাইফাই এপার্টমেন্টে, চলাফেরা করেন ব্যাংকের দেওয়া গাড়িতে। জ্যামে গাড়িতে ঘুমিয়ে নেন; শুধু মলমূত্র ত্যাগ ছাড়া আরো অনেক কিছু তারা করে নেন গাড়িতে বসেই। অফিসে দেরি হয় না তাদের সচরাচর। হয়ে গেলেও তাদের ৭ খুন মাফ।
শুক্র শনিবার তারা যখন সুইমিংপুল এ সাঁতার কাটতে যান, কুর্মিটোলায় গল্ফ খেলতে যান, গাড়িতে চরে ১০/১৫টা দাওয়াত এটেন্ড করে আসেন, তখন অফিসের নিচের দিকের অফিসারেরা ঘরে বিছানা এলিয়ে ঘুমায়, কিংবা সপ্তাহজুড়ে ফেলে রাখা সব কাজ হুলস্থূল করে করেন।
তাদের সামাজিক জীবন, ব্যক্তিগত জীবন বলে কিচ্ছু থাকে না। বিনোদন তো দুরের কথা। ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়া, ভবিষ্যৎ এর জন্য পরিকল্পনা করা, পুঁজি সংগ্রহ, এসবের জন্য কোন সময়ই বরাদ্দ নেই তাদের। তারা হয়ে যায় অনুভুতিহীন যন্ত্রমানব। স্বপ্নহীন সাদা কাগজ।
দিন যত যায়, ফালতু নিয়মের বোঝা বাড়তেই থাকে। চাকরিতে প্রবেশের যোগ্যতা বাড়তে থাকে, অফিস আওয়ার বাড়তে থাকে, শাস্তির ঝুঁকি বাড়তে থাকে। বেতন-সুবিধা কমতে থাকে, পদোন্নতি জটিলতর এবং পদোন্নতির সময়ব্যবধান বেড়ে যায়, পদবিও নিচে নামতে থাকে।
অফিসে কোন কাজ না থাকলেও তরুণ ব্যাংকারদের মাছি মারতে হয়। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোচিং/ব্যাচে পড়ার সময় বের করা তো দূরের কথা, নিজের স্মার্টফোনে বা ওয়ার্কস্টেশনে পড়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকে না কর্পোরেট কামলাদের। নিজের স্বপ্নকে সত্যি করতে হলে তাই অনেক ক্ষেত্রে বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় তরুণদের। চাকরির হাতকড়ায় বাধা পরে গেলে জীবন ওই চাকরির গোলাম(চাকর) হবেই নিশ্চিতভাবে।
কর্কশ বাস্তব।
২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৪
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আপনারাও তো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব একটা খারাপ বেতন পাননা। পদোন্নতি হলে আপনারাও আয়েশ করতে পারবেন। তার আগ পর্যন্ত একটু কষ্ট করে যান। আপনারা আপনারাই তো!
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০১
সুমন কর বলেছেন: তারা থাকেন অফিসের কাছাকাছি হাইফাই এপার্টমেন্টে, চলাফেরা করেন ব্যাংকের দেওয়া গাড়িতে। জ্যামে গাড়িতে ঘুমিয়ে নেন; শুধু মলমূত্র ত্যাগ ছাড়া আরো অনেক কিছু তারা করে নেন গাড়িতে বসেই। অফিসে দেরি হয় না তাদের সচরাচর। হয়ে গেলেও তাদের ৭ খুন মাফ। -- পুরোটাই দারুণ বলেছেন। সহমত।
+।