নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুষখোরদের ঘুষাবে কে?

০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:২৯

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আপুর ফেসবুক পেইজ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত একটি বাণী চোখে পরল, "দুর্নীতি করতে আসিনি। জনগণের ভাগ্য বদলাতে এসেছি।"

ছবিটি দেখে কয়েকদিন আগের ঘটনা মনে পরে গেল।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসছি। মিরসরাইয়ে ইফতার করলাম বাসযাত্রীরা। ইফতার খেয়ে বাস যাত্রা শুরু করার পর আমার পাশের সিটের মুরুব্বির সাথে কথাবার্তা বলছি।

ভদ্রলোক এর মূল বাড়ি সন্দ্বীপে। চট্টগ্রামের অলংকার মোড় এলাকায় থাকেন অনেক বছর ধরে। ১৯৭২ সালে ১৭ বছর বয়সে আত্মীয়ের সুপারিশে রেলওয়ে তে চাকরি পান। ১৫ বছর চাকরির পরে ছেড়ে দেন। ততদিনে চারদিকে অনেক জানাশোনা হয়ে যায়। লাইসেন্স বানিয়ে কন্ট্রাক্টর ব্যবসা শুরু করেন। চট্টগ্রাম শহর, শহরতলী, সীতাকুণ্ড জেলা, মিরসরাই জেলাসহ আশেপাশের অঞ্চলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রজেক্টে ঠিকাদারি করেছেন। সামনে নিজ এলাকা সন্দ্বীপেও একটা কাজ শুরু করার কথা আছে। কিন্তু এই কাজ শুরু করার জন্য টাকা দরকার। ৪ বছর ধরে আগের একটা কাজের পাওনা টাকা পেন্ডিং আছে। সেটার জন্যই ঢাকা গিয়েছিলেন।

মন্ত্রণালয়ে, সচিবালয়ে ঘন ঘন ধন্না দেন। এই অফিস, সেই অফিস। এই স্যার, ওই ম্যাডাম। আমি বললাম, "ঘুষ দিলে হয় না? আপনার যাতায়াতের খরচ, সময়, এগুলির মূল্য নেই?" বাসায় যাওয়ার সময় একগাদা জিনিসপত্র ও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেখলাম। আংকেলের এসব ব্যাপারে কোন চিন্তা নেই। ঘুষ দিয়েছেন, দিচ্ছেন, দিবেন। বার বার গিয়েছেন, যাচ্ছেন, যাবেন। এসব কড়ায়গণ্ডায় হিসেব রাখছেন। সিস্টেম করে নিবেন।

উনার ভাষ্যমতে, এদেশে "সিস্টেম" ছাড়া কিচ্ছু হয় না। পাঠকের সুবিধার্থে বলে রাখি, ইহাই "করাপটেড সিস্টেম" বা "দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যবস্থা"।

আংকেল নিজের কুয়েট পড়ুয়া ছেলের জন্যেও ঠিকাদারি লাইসেন্স বানিয়ে রেখেছেন; টাকাপয়সা খাইয়ে। যেকেউ এসে টাকাপয়সা খাইয়েও বানাতে পারে না। উনি অনেকদিন ধরে এই লাইনে আছেন, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে সুসম্পর্ক (পেট-পকেটের সম্পর্ক) হয়েছে, বিশ্বাস (একে অন্যের গোমড় ফাঁস না করার বিশ্বাস) অর্জন করেছেন, তাই পেরেছেন। কুয়েট থেকে ছেলে সামনে পাশ করবে, তার অবশ্য এসবে আগ্রহ নেই, তাও লাইসেন্স করে রেখেছেন।
আমি মনে মনে বলছি, সোনার ডিম দেওয়া মুরগীকে কে-ই বা অবহেলা করতে পারে? আর, বাপে যে কাজ করে খাওয়ালো, পড়ালো, সে কাজকে অবজ্ঞা করা কি ঠিক? যদিও তা অন্যের রক্ত চুষে হউক।

মুরুব্বি বলতে লাগলেন, প্রধানমন্ত্রী, সরকার তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহও এই দুর্নীতি বন্ধ করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। উনি এর সাথে বেঁচে থাকা শিখেছেন, ফায়দা নেওয়া শিখেছেন, সবাইকেও মেনে নিতে হবে।

আমি উনার থেকে প্রজেক্ট, বাজেট, ইত্যাদির প্রক্রিয়া জেনে নিতে লাগলাম। ঠিকাদারদের নিজেদের ঝুঁকি তে, নিজেদের টাকায় কাজ শুরু করতে হয়। ২০% কাজ করে ৬০% এর টাকা অনুমোদন করে দিয়ে যান ইঞ্জিনিয়ারেরা। ইঞ্জিনিয়ার, বা কন্ট্রাক্টররাই শুধু না, একটা কমিউনিটি ক্লিনিক বানানোর ক্ষেত্রে কাঁচামাল সরবরাহকারী ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত অতিরিক্ত-অবৈধ পারিশ্রমিক এর ভাগবন্টন হয়। ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কন্ট্রাক্টরদের সম্পর্ক হয়ে যায় হরিণ-বানরের মত (যেখানে জনগণ হচ্ছে বাঘ)। কোন কারণে কন্ট্রাক্টর কাজ অসম্পন্ন করে টাকা নিয়ে ভাগলে, সব টাকা প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারকেই দিতে হয়।

ভদ্রলোক অবলীলায় আমাকে সব বলে যাচ্ছিলেন, নিজের ছেলের মত। আমি ডিটেইলস এত ক্যাপচার করতে পারিনি। তখন, মাথায় শুধু ঘুরছিল, এই কারণেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্রিজ-কালভার্টগুলি ভেংগে পরে, এই কারণেই অসম্পূর্ণ অবস্থায় পরে থাকে সরকারি অবকাঠামোগত কাজ, এই কারণেই সারাদেশের রাস্তাঘাটের নির্মাণব্যায় এত বেশি, এই কারণেই কয়দিন পরেই নষ্ট হয়ে যায় রাস্তা!

আর, এই কারণেই মন্ত্রীপুত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিয়েল এস্টেট কিং!

আংকেল যখন জানলেন, আমার বাড়ি রাউজান, তখন বললেন, সাকা জেঠা যখন এমপি ছিল, তখন ফটিকছড়িতে কয়েকটা কাজ করেছিলেন, সবগুলিতে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে একদম উপরের লেভেল পর্যন্ত ভাগ দিয়েই করতে হয়েছে। এসব কারণেই ঠিকাদারেরা ভেজাল পণ্য দিয়ে, কম কাঁচামাল দিয়ে কাজ শেষ করতে বাধ্য হয়। সৎ ঠিকাদার বলতে কিচ্ছু নাই। যারা সৎ, তারা দেউলিয়া হয়ে ভিক্ষায় নেমে যায়।
উনি আরও বললেন- করিম চাচার আমল থেকে চাচার কাছের এবং আস্থাভাজন কিছু লোক ছাড়া আর কেউই রাউজান অঞ্চলে কন্ট্রাক্ট পায় না। এই জন্য আফসোস করলেন। মহিউদ্দীন দাদার প্রশংসা করলেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য উনি রবিনহুড এর মত ছিলেন।

নিজ এলাকা সন্দ্বীপের বর্তমান এমপির ভূয়সী প্রশংসা করলেন। এই এমপি নাকি আমার বয়সী, তার বাবাও নাকি জনপ্রতিনিধি ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পরে রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক সিংহাসন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে।

জাতীয় বাজেট প্রসঙ্গে কথা আসতেই উনি বলে উঠলেন, "আরে আংকেল, আপনারা তো কিছু জানেন না!" গত বছর যদি অবকাঠামো খাতে ৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ধরা হয়ে থাকে, তবে তার মধ্যে ৩০০০ কোটি টাকা-ই হচ্ছে "ঘুষ"! অর্থাৎ, স্বাস্থ্যখাত, সড়কখাত, রেলখাত, যা-ই বলেন না কেন, যেকোন জাতীয় উন্নয়ন খাতের প্রায় ৫০% যায় দুর্নীতিতে। তার চেয়েও ভয়ানক, বাকি ৫০% দিয়েও প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। আমলাদের দেখে দেখে কামলাদেরও তো খেতে ইচ্ছে করে; তাই নাকি? অর্থাৎ, সরকারি অফিসগুলিতে খাওয়ানোর পরে প্রজেক্টের যে টাকা ঠিকাদারেরা পায়, সে টাকা দিয়ে লেবার কস্ট, প্রোডাক্ট কস্ট, স্পিড মানি ইত্যাদি উসুল করার পরে তাদেরকে লাভ-ও কিন্তু করতে হয়।

আমাদের দেশে প্রশংসা-নিন্দা, পরিসংখ্যান-পর্যবেক্ষণ, রায়-নির্ণয় সবই আপেক্ষিক। পারস্পরিক, মুষ্টিমেয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট। বৃহত্তর স্বার্থ যারা দেখে ও ভাবে, তারা এই লেখার লেখকের মত লিখেই যাচ্ছে, গালমন্দ খেয়ে যাচ্ছে।

এটাই বাংলাদেশ।

আর কত?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:৪১

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: দারুন লেখা!
যে যা বলে বলুক,
কলম/কিবোর্ড/টাচপ্যাড চলুক!

@"মুরুব্বি বলতে লাগলেন, প্রধানমন্ত্রী, সরকার তোদূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহও এই দুর্নীতি বন্ধ করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে।"
-- ঐ খাটশটার সমস্যা আছে! সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরী হলে, এসব ম্যাওপ্যাওদের ঠিক করা ব্যাপারই না!X(

বি. দ্রঃ আমাদের দেশে রাস্তা তৈরীর ব্যয় মনে হয় সবচেয়ে বেশী..:(

২| ০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


শেখ হাসিনা দুর্নীতি বন্ধ করবেন না; তিনি মনে করেন যে, দলের লোকদের হাতে টাকা থাকতে হবে।

১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১২:২৩

আবীর চৌধুরী বলেছেন: হুম। সবার শেষে লিংক দিয়েছি।

৩| ০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫২

কাইকর বলেছেন: ম্যাওপ্যাও

১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১২:২৪

আবীর চৌধুরী বলেছেন: কি বললেন এইটা?

৪| ১০ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১০:১০

চোরাবালি- বলেছেন: বছর দুই আগে একজনার সাথে আলাপ কালে জানলাম তিনি পুকুর খননের প্রজেক্ট নিয়েছেন, মন্ত্রনালয় নিল ৩০%, মাধ্যম, উপজেলা এবং রাজনৈতিক মিলে গেল আরো প্রায় ২০%, সব শেষে যা থাকল তাতে ডোবাও খনন করা যায় না।

এটাই বাংলাদেশ। সাবাস বাংলাদেশ। দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ।

৫| ১০ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: বিদেশে কত লোক বাড়ি গাড়ি করেছে।

৬| ১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ৮:১০

হাঙ্গামা বলেছেন: ***এই দেশে দুর্নীতি হয় না। এটা বঙ্গবন্ধুর দেশ, শেখা হাসিনার সরকার।








***উপরের কথাটা ডাহা মিছা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.