নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিউশনির টাকাঃ মেরে দেওয়া, এবং মিলায়ে দেওয়া

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৫২

প্রথমত, মিলিয়ে দেওয়া ব্যাপারটাকে আমি অফেনসিভলি নিবো না। যারা টিউটর রাখে, অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি, তারা টিউটরের পরিবারের চেয়েও গরীব। আমি পড়িয়েছি। আমাকে পড়িয়েছে। আমার বোনদের পড়িয়েছে। আমার বোনদের টিউটরের ক্ষেত্রেও আমরা (আমার পরামর্শে) বাবা-মা এরকম পরীক্ষার আগে, ছুটিতে বা বিভিন্ন কারণে, মাসের মোট দিন হিসাব করে, কিংবা ক্লোজিং টেনেটুনে বেতন দিয়েছে। কিন্তু অপমানিত করে বা ছোট করে নয়।

আমরা সবসময় শিক্ষকদের (বয়সে যে ছোট) তাকেও কাছে রেখেছি, সম্মান/স্নেহ দিয়েছি। তখনো তারা আমাদের আর্থিক সংকট বুঝতো। আজ-ও বুঝে। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক সাময়িক নয়, সামাজিক। টিউশন শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও দুই পক্ষ নিজেদের আয়োজনে দাওয়াত আদান-প্রদান করে। আমার বাবা-মায়ের কাছে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে আসে, ফোন করে, বাবা-মা সাহায্য করেন। আমাদের ৩ ভাইবোন আর বাবার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন সব টিউটর।

সবার ক্ষেত্রে সরল সমীকরণ খাটে না। সবার আর্থিক অবস্থা এক রকম না কিন্তু, এটা ঠিক, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিউটরের আর্থিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে খারাপ থাকে। এবং টিউটর যারা রাখে, তাদের অবস্থা ভালো।

আমি এক মেয়েকে স্যাটের প্রিপারেটরী টিউশন দিতাম। খুবই সস্তায়। রেইট বললাম না। এক মাস গেল। ২য় মাসের প্রায় ৭৫% ক্লাস শেষ করে, একদিন হঠাৎ গিয়ে দেখি বসিয়ে রেখেছে, ছাত্রী থেকেও নেই বলা হল, আসছিল না। এরপর আন্টি আর ছাত্রী একই সাথে নাস্তা নিয়ে এল। নাস্তা খেতে জোর করা হল। নাস্তার মাঝে ঐ মাসের অর্ধেক টাকা দিয়ে দেওয়া হল। যদিও আরেকটু দেওয়া যেত। বের হয়ে কিছুটা খারাপ লেগেছিল। কিন্তু আমার সমস্যা হল, আমি খুব সিম্প্যাথেটিক। অন্যকে নিজের জায়গায় ভাবি, নিজেকে অন্যের জায়গায় নিয়ে ভাবি, তারপরে তুলনা করে বিচার করি।

আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার চেয়ে আমাদের দেশে গৃহশিক্ষকদের সাথে যে ব্যাপারটা হয়, সেটা হচ্ছে যথাযথ সম্মান প্রদানের অভাব; সে যতই ছোট বা নগণ্য হউক না কেন। সমস্যা হচ্ছে পেশাদারিত্বমূলক ও দায়িত্বশীল আচরণের ট্রেন্ড নেই সমাজে। কিন্তু একই সাথে ভালো অভিভাবকের বেশ কিছু উদাহরণ আমি দেখেছি, খারাপ অভিজ্ঞতার তুলনায় সংখ্যায় কম বলে সেগুলি আলোচিত হয় না।

আরেক ক্লোজ ফ্রেন্ডের ছোট বোনকে পড়াতাম। তখন চাকরিও করছিলাম। কিন্তু বিসিএসের প্রিপারেশনের সুবিধার্থে ঐ একটা কোচিং ধরেছিলাম। বাসা কাছে, এবং বন্ধুর বাসা হওয়াতে (বন্ধু ইউরোপ সেটেল্ড) প্রথম মাসের পর আমি আমার সুবিধামত ফ্লেক্সিবল টাইমিং সেট করে যাওয়া শুরু করি। কিন্তু একসময় এই কারণে সমস্যা হতে শুরু করে। তাছাড়া, ছাত্রীও সব বিষয়ে সমান গুরুত্ব না দেওয়া, বসিয়ে না পড়ালে পড়া আয়ত্ত্ব না করা, হোম-ওয়ার্ক দিয়ে আসা পড়া শেষ না করা, ইত্যাদি করার কারণে আমার মন উঠে যায়। শেষমেশ, এসএসসি পরীক্ষার ২ মাস আগে, ওকে পড়ার সুযোগ দিয়ে, ১ মাসের বেতন না নিয়ে, ৪ টা নতুন গাইড বই ওর বাসায় রেখে এসে, টিউশনি ছেড়ে দিয়েছিলাম। গণিত, উচ্চতর গণিত এর সম্পূর্ণ সিলেবাস, রসায়ন আর পদার্থর প্রায় শেষ করে দিয়ে এসেছিলাম।

আমি টিউশনি বা শিক্ষকতায় খুব আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পুরোদমে ঢুকতে পারিনি। তাত্ত্বিক ব্যাখায় যাবো না। এই উপরের ছাত্রীর ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলি। ও ম্যাথে জ্যামিতি প্রায় না করে চলে আসতো। বিকল্প ব্যবস্থায় সুযোগ নিত। জ্যামিতি কেন পড়ানো হয়, ওর মাথায় ঢুকতো না। অথচ, আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় এই জ্যামিতি। ওকে তাত্ত্বিক জগতের সাথে প্রায়োগিক উদাহরণের তুলনা দিলাম। এই উপপাদ্যটা কই লাগে, কিভাবে লাগে। কেন এটা মুখস্থের দরকার নেই। কিভাবে দুই লাইন জেনে ২০ লাইন লেখা যায়। কিন্তু, না; কাজ হয়নি। ফিজিক্সেও তাই। ওকে গল্প পারলাম। কিভাবে নাইন-টেনে আমি নিজে পড়ে ফিজিক্সে নব্বইয়ের ঘরে পেতাম, যেটা আমাদের স্কুলে খুব দুর্লভ ছিল।

কিন্তু, পরে আমিই উপলব্ধি করি। উলুবনে মুক্তো ছড়ানো। সবার আগ্রহ এক হয় না। সবাই সবকিছুতে ভালো হয় না। জাপান, চীন বা অন্যান্য দেশগুলি এই অক্ষমতাকে বৈচিত্র্যে রূপ দিয়ে কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে যুগের পর যুগ। আমরাই শুধু শিক্ষাব্যবস্থাকে হালনাগাদ করতে না পারার কারণে আজকের এই দুর্দশাগ্রস্থ পরিস্থিতি।

তো, যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম। ধরেন, কোন টিউটর (পড়ার টিচার, বা গানের টিচার, বা কুরান শরীফ তামিলের হুজুর) সপ্তাহে ২ দিন পড়ান। ৪ সপ্তাহ ধরে মাসে ৮ দিন। যদিও সংখ্যাটা তারতম্য হতে পারে। তারপরেও এই দিনের হিসাবই প্রধান। ৮ দিন অন্তর অন্তর বেতন দেওয়াটাই স্বাভাবিক। এখন কোন শিক্ষার্থীর যদি মাসে ২২ দিন পরীক্ষা থাকে, আর ৮ দিনের মধ্যে ২ দিন টিউটর আসার শিডিউল থাকে, তবে ঐ মাস ছুটি নেওয়া, অসংগতিপূর্ণ বলে আমি মনে করি না। বিশেষত যখন কোন সংসারের ৫ সদস্যের উপার্জনকারী শুধু ১ জন। আরো অগণিত সংকটের কথা না-ই বা জানলেন। সেখানে কয়েক হাজার টাকা সেইভ হওয়া যে কত বড় জিনিস, আপনি সেই স্থানে না হলে বুঝবেন না।

২০০১ সালে আমাকে এক বড় ভাই ফিজিক্স আর ম্যাথ পড়াতেন; অসাধারণ মেধাবী আর প্রতিভাবান। উনি টেবিলে বসে মাত্র নিজ হাতে খাতার উপরে তারিখ, আর লেকচার নং লিখতেন; ক্লাস নং। এটাই ছিল উনার একটা স্পেশালিটি। উনার ক্লাস, পরীক্ষা বা অন্য কোন কাজের কারণে নিজে টিউশন বাদ দিলে, বা মাস ফুরিয়ে গেলেও সমস্যা নেই। নির্দিষ্ট সংখ্যক লেকচার শেষের দিনে সুন্দরমতো বেতন দিয়ে দেওয়া যেত। সবার জন্য সেটাই সুবিধার ছিল। আমিও উনার এই টেকনিক অবলম্বন করতাম। নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্লাস এর প্রথা "ক্রেডিট আওয়ার" ভিত্তিক উচ্চশিক্ষায়-ও আছে। যদিও বিদেশে এসে এর কড়া প্রয়োগ দেখছি। দেশে ক্লাসের সংখ্যা ও সময়ে ফ্লেক্সিবিলিটি ও অনিয়ম ছিল।

আর, টিউশনিতে খানাপিনার কথা লিখতে গেলে হয়তো আরেকটা দিন লাগবে। যদিও আমি চট্টগ্রামের মানুষ হওয়াতে এটা কোনদিন ফেইস করিনি। শুধু খাওয়ার আর্থিক মূল্য হিসেব করলে, আমি টিউশনিতে প্রায় বেতনের অর্ধেক পরিমাণ টাকার খাবার পেয়েছি। ঠিক তেমনি আমাদের বাসার টিউটরেরাও তৃপ্তি ভরে, টাটকা খাবার, ধোয়া প্লেটে, সম্মানের সাথে পেয়েছে। মা হাসিমুখে দিয়ে আসতো। কখনো কখনো এরকম হয়েছে, মায়ের কিছু রান্না করার ইচ্ছে বা সাধ্য ছিল না, কখনো কখনো ঘরে কিছু ছিল না। মা বাইরে থেকে গিয়ে কিনে নিয়ে এসে দিয়েছে। টিউটরেরা আসার কারণে প্রায় সময় ঘরে ঐ সময়ে কিছু খেতে পেরেছিলাম।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: টিউশনি করলে মন ছোট হয়ে যায়।
যারা চাকরি পায় না তারা টিউশনি করে। ভালো চাকরি পাওয়ার পর সবাই টিউশনি ছেড়ে দেয়।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:১৮

সনেট কবি বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন ।

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২৮

ডার্ক ম্যান বলেছেন: জীবনে কখনো টিউশনি করতে পারি নাই। আমার মনে হত , আমি কখনো কাউকে কিছু শিখাতে পারবো না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.