নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৌচাগারের শোচনীয় সংকট

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৫৭

সবসময়ের ভালোবাসার নাম "ইত্যাদি"। বিদেশে বসে দেশের যে সামান্য কয়টা প্রোগ্রাম দেখার জন্য মুখিয়ে থাকি, তার মধ্যে ১ নম্বর হল এটি। ইউটিউবে সুনামগঞ্জের পর্বটি দেখছিলাম। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ওয়াশরুম এবং টয়লেটের দুরবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসমস্যার কথা কেউই গুরুত্ব দেয়না। চিঠিপত্র বিভাগে এটি উত্থাপিত হয়েছে। এই বিষয়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন আছে।

প্রথমত, চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি থেকে শুরু করতে হবে। আমি বিসিএসের প্রিলিমিনারি দিতে সর্বশেষ গিয়েছিলাম কলেজিয়েট স্কুলে। সুপ্রাচীন স্কুল, স্বনামধন্য, ঐতিহ্যবাহী। কত নামীদামী, ধনী, জ্ঞানী-গুণী এলামনাই। দেশে-বিদেশে বড় বড় পোস্টে। কয়দিন পরপরই সেই কলেজিয়েটের এক-একটা ব্যাচের এক-এক উপলক্ষে বিশাল বিশাল রিইউনিয়ন হয়। কত টাকার খরচ। সেই কলেজিয়েটের টয়লেট আর ওয়াশরুমগুলির এরকম জঘন্য অবস্থা? পরীক্ষার মাঝখানে কোন রকমে প্রস্রাব করে বের হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পরিচ্ছন্নতা-কর্মী ও পিয়নকে বলার পরে ওরা যে তাকানোটা দিল, তাতে মনে হল, তারা স্কুলের বিল্ডিং এর জমিদার, আর আমি কোন ভিনগ্রহের পাগল।

একটি সভ্য দেশের খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্ট, কাঁচাবাজার, এবং টয়লেটগুলিই সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন হওয়ার দরকার। কারণ, মানুষ আর পশুতে দৃশ্যমান পার্থক্য এই দুটি জায়গাতেই। কুত্তা-শুয়োর যেকোন পরিবেশে খেতে পারে, হাগতে-মুততে পারে, এজন্য মানুষ মানুষকে গালি দেওয়ার সময় এই দুটি পশুর নাম তুলে গালি দেয়। অথচ, বাংলাদেশের শহরের নামীদামী স্কুলের টয়লেটের পরিবেশ এই কুত্তা-শুয়োরের হাগা-মুতার জায়গার চেয়েও জঘন্য; লিটারেলি!

এখন, এজন্য যা যা করা যেতে পারেঃ- এক, স্কুলের প্রশাসন থেকে শুরু করতে হবে। টয়লেটে যাতে সবসময় পর্যাপ্ত পানি থাকে। পানির বড় কোন আধার থাকে। বদনা-মগ-বালতি যেন সবসময় ঠিক-ঠাক থাকে। আর, বেসিন ও টয়লেটের পানির নল ও পাইপ। সবকিছু মেটালিক হলে ভালো। প্লাস্টিকের ভরসা নেই। সাবান আর টিস্যুর ব্যবস্থা সাধ্য থাকলে করা যেতে পারে। টিচার বা স্কুলের স্টাফদের ব্যবহারের টয়লেট কিন্তু প্রায়ই ঠিকঠাক থাকে। তাহলে, শিক্ষার্থীদেরগুলির ক্ষেত্রে কেন এরকম হয়, তা খুঁজে বের করতে হবে।

দুই, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়ে দুটি প্রধান সমস্যা। এক তাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি, আরেকটা তাদের প্রতি অন্য সবার দৃষ্টিভঙ্গি। এটা শুধু স্কুলগুলিতে না; সারা দেশে এই অবস্থা। তারা তাদের কাজ ও উপস্থিতি দিয়ে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করা শিখে গিয়েছে, কারণ মানুষ তাদের কাজগুলি করতে চায় না। তারা ফাঁকি দেওয়াও শিখে গিয়েছে, সাথে তাদের করণীয় কাজের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে বকশিশ নেওয়াও। সাধারণ মানুষ যেমন, টিচার, স্টুডেন্ট, স্টাফেরা যদি তাদের নিজেদের টয়লেটের আগে-পরে প্রয়োজনীয় পরিস্কারটা করে আসতে পারে, এবং একই সাথে পরিচ্ছনতাকর্মীদের উপর নির্ভর না হয়ে, তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া শিখে, তবে পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। অন্তত, দিনের শুরুতে ও দিনের শেষে যাতে মোট দুই বার আগাগোড়া টয়লেট পরিস্কার করা হয়, এই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য প্রত্যেক স্কুলের ছাদে রেইন-ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রজেক্ট থাকলে খুব ভালো; কিংবা স্কুলের আঙ্গিনায় বা পাশে পুকুর বা কোন জলাশয়। এতে কখনোই ওয়াসার উপর নির্ভর করে পানির জন্য হাহাকার করতে হবে না।

তিন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষার্থী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও অন্যান্য সবাইকে "বিশ্ব স্যানিটেশন দিবস" বা অন্য কোন আন্তর্জাতিক তাৎপর্যপূর্ণ দিবসে বিদেশী স্কুলের (বিশেষত জাপান) ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখাতে হবে। স্কুলগুলির সার্বিক কার্যক্রমের ভিডিও দেখানোর পাশাপাশি এটাও বলতে হবে, েই জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা বন্ধু। এই জাপান ২য় বিশ্বযুদ্ধে দুই-দুইটা এটমিক বোম হজম করেও বর্তমান বিশ্বে সবদিক দিয়ে মহা-পরাশক্তি; এটমিক বোম মারা প্রাক্তন দুশমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এখন জাপানের সাথে হাতে হাত রেখে চলে। এসবের মূল কারণ, জাপানের মানুষের ইচ্ছাশক্তি, আন্তরিকতা ও পরিশ্রম।

বিডি-ক্লিনের মত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি শুধুমাত্র বছরে এক-দুইটা ইভেন্ট করতে পারবে। সবসময় দায়িত্ব পালন করা ও সচেতন থাকা স্থানীয়দেরই শিখতে হবে। ছেলে বা মেয়ে উভয়েরই ইউরিনারি ইনফেকশনসহ নানা প্রকার সংক্রমণ ঘটতে পারে টয়লেটের অপরিচ্চছন্নতাজনিত কারণে। আর, সামনে এমন দিন আসতে যাচ্ছে, যখন তুচ্ছ ইনফেকশনের কারণেই মহামারির মত মানুষ মারা পরবে; কারণ, এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা। মানুষ বসে থাকলেও, ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত বসে নেই। তারা বিবর্তিত হয়ে চলেছে।

ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার ল্যাবগুলির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার হতে পারে সিংগাপুর, জাপান, ফিনল্যান্ড, চীন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডের মত দেশগুলির স্কুল-কলেজ, শহর-গ্রাম, দৈনন্দিন জীবনযাপন ও কাজের দৃশ্যগুলি স্কুলের সবাইকে মাসে অন্তত একবার দেখানো। তাহলে, প্রত্যেকে নিজের আপেক্ষিক অবস্থান নির্ণয় করে, সিদ্ধান্ত নিতে পারতো, সে কি উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শুনে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে, নাকি উন্নতির জন্য হাত-পা ছুঁড়ে কিছু করার চেষ্টা করবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা বড় বড় পদে যোগ্য লোক নেই।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২১

নয়া পাঠক বলেছেন: ভাইরে আমাদের যাদের ইচ্ছে থাকে ভাল কিছু করার তাদের হাতে থাকে না ক্ষমতা। আর যারা ক্ষমতা পায়, তারা তা টাকার বিনিময়ে পায় বলেই কিনা জানিনা তারা প্রকৃত ভালো কিছু করতে একদমই ইচ্ছা করেন না। তাদের এমন মনমানসিকতা যে.....। যাক আপনার চিন্তাধারা অনেক কার্যকর। সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন। এমন অনেক বিষয় আমাদের চারপাশে ঘুরছে অহর্নিশ, দেখবার কেউ নেই। যাদের দেখার জন্য আমরা বেতন দিয়ে রাখছি তারাই আমাদের উল্টো-পাল্টা বুঝিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.