নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার পড়েছে মনে

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:১৯

এখন রাত সোয়া ১টা। বাসায় চলে এসেছি। শনিবার রাত। গায়ে ভারী কাপড় পরা থাকলে হয়তো আরেকটু দেরিতে আসতাম। প্রতিবেশীর থেকে ধার নেওয়া সাইকেলটার গতি বেশি। বাতাস গায়ে লাগে খুব। যদিও আজ বাতাসের বেগ বেশি না। আর, তাপমাত্রাও সহনীয়। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে ও শেষে যেরকম পরে। এটাই এখানকার গরমের রাতের তাপমাত্রা। বাতাসের বেগ যদিও বাড়তি তাপমাত্রাটাকে কমিয়ে দেয়। গায়ে শুধু একটা পাতলা টিশার্ট আর শর্টস পরেছিলাম; সাথে সেন্ডেল। তাই, তাপমাত্রা কমে আসার আগে চলে আসতে হলো।

১২টার একটু আগে তড়িঘড়ি করে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়েছিলাম। ১২টা বাজলেই motion sensorগুলি সক্রিয় হয়ে যায়। কেউ এরমধ্যে ভিতরে থেকে গেলে এলার্ম পরে যায়। সাথে সাথে সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়িটা চলে আসে। যদিও ১২টার পরে রুটিন চেক আপে আসে গাড়িটা প্রতিদিনই।

আজকে জিমে যেতে যেতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। রাত ১০টা। ১০টার পরে আবার স্টুডেন্ট কার্ড দিয়ে ভিতরে ঢুকা যায় না। দরজা অটো লক হয়ে যায়। জিমে যাওয়ার আগে রুটি দিয়ে পনির, আর একগ্লাস চকলেট মিল্ক খেয়ে নিলাম। সকালে ভাত খাওয়ার পর সারাদিন কিছু খাইনি। এরপর মাঝে দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা ঘুম ছিলাম। এক বোতল কমলার রস হাতে নিয়ে জিমের দিকে দৌড় লাগাই। নাহ, দরজা লক হয়নি। যথারীতি জিমে কেউ নেই। Summer vacation, সাথে Weekend, পুরো ক্যাম্পাসই খালি; ভৌতিক পরিবেশ। ভিতরে ঢুকে জানালা খুলে কম্পিউটার অন করলাম। এখানকার স্পিকার বেশ জোরালো। High volume এ কিশোর কুমারের সেই গানটা ছেড়ে দিলাম;

"তোমার পড়েছে মনে
আবার শ্রাবণ দিনে
একলা বসে নিরালায়
হায় তোমায় পড়েছে মনে!"

শুরু করলাম ব্যায়াম। ১২ দিন অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতি দিয়ে গতকাল আবার শুরু করি। আজকে কম সময়ে অনেক exercise করতে হবে। খুব বিনোদিত হই, যখন দেখি অল্প সময়েই আমি ফলাফল পেতে শুরু করি। ব্যায়াম কিংবা অন্য যেকোন কিছু। এজন্যই হয়তো লেগে থাকতে পারি না। ব্যায়াম শেষে ঢিলেঢালা গেঞ্জিটার ভিতর দিয়ে Greek God টাইপের কাঠামো বোঝা যেতে শুরু করে। বেরিয়ে আসি ব্যায়ামাগার থেকে। সাথে ঘাড়ে মেরুদণ্ডের আগায় ব্যাথা; একটা ব্যায়ামের সময় মনসংযোগ ব্যাহত হয়েছিল।

স্টুডেন্ট কমন রুমে গিয়ে ফ্রিজ থেকে Yogurt দিয়ে রুটি খেয়ে নিই দ্রুত। রুটি শেষ করতে করতে দেখি ১২টা বাজতে চললো প্রায়। দইটা হাতে নিয়েই চামচ সহ বের হয়ে গেলাম। Dormitoryর বাইরে ঘাসের উপর কাঠের বেঞ্চ; বসে দধিটা শেষ করতে লাগলাম। সামনের ঘরে এক ক্লাসমেট থাকে। শিষ দিলাম কয়েকবার; ফুসফুস থেকে বাতাস বের হল না। বেচারা সম্ভবত ঘরে নেই। কাজে, কিংবা পার্টি করছে। তার উপরের প্রতিবেশী মেয়েটা ইউটিউব দেখে রান্না করছে। এত দূর থেকেও জানালায় প্রতিচ্ছবি দেখে বুঝতে পারছি। কে যেন গাড়ি নিয়ে পার্কিং এর দিকে গেল। কিছু একটা ঘরে রেখে আবার গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

দূর থেকে গানের শব্দ ভেসে আসছে। গানের কথা অস্পষ্ট, সুর বুঝা যাচ্ছে। অনেকটা দেশের ওয়াজ বা পূজার শব্দের মত; কিংবা বিয়েবাড়ির গানবাজনা, বা পিকনিকের বাসের হৈচৈ। একটু Nostalgic হয়ে গেলাম। লন্ড্রি রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। চামচ আর মুখটা ধুয়ে, চাবি আর কার্ড এখানেই রাখলাম। এখনই রুমে ফিরছি না। ঠিক করলাম, দেখবো, এই গানের উৎস কই।

সাইকেল শেডের দিকে এগিয়ে গেলাম। ততক্ষণে, সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়িটা চলে এসেছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটা entry point চেক করে দেখছে। আমি সাইকেলের লক খুলে চড়তে যাবো, তখনই গাড়িটা আমার সামনে। সিকিউরিটি অফিসার নেমে সম্ভাষণ দিলো। প্রথমে নিজের ভাষায় কিছু বলতে শুরু করলেও, পরক্ষণেই আমার কাছে এসে ইংরেজিতে বললো, "Are you a student here?" আমি হ্যাঁসূচক মাথা নাড়লাম। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেইক করলাম। ও আমার শেইভড হেড আর ব্রড শোল্ডারে চোখ বুলিয়ে বললো, "Where are you from?" আমি জবাব দিলাম। খেয়াল করলাম, এই অফিসারও শেইভড হেড, কিছুটা দাড়ি, আর সচরাচর সব সিকিউরিটির মত দানবীয় না হলেও, শরীর ভালোই তাগড়া। বিদায় নিয়ে, সাইকেলের গতি বাড়িয়ে ফুটবল মাঠের দিকে চলে গেলাম।

অন্য ছাত্রাবাসগুলির সামনে সাইকেলে চক্কর লাগালাম। পরিচিত এক বিদেশী ছাত্রের সাথে দেখা হয়ে গেল। রাত সাড়ে ১২টা; পার্শ্ববর্তী শহরে যাচ্ছে যুবকটি; পার্টি করতে। শুক্র/শনিবার রাতের সাধারণ বিনোদন পাশ্চাত্যে। এই যুবকের বাবা মারা গিয়েছে এক মাস আগে। ওর বিনোদনের দরকার আছে। আমি well-dressed হলে ওর সাথে অবশ্যই চলে যেতাম। আজ গেলাম না।

গানের শব্দটা আবার শুনতে পাচ্ছি। বুঝলাম, এটা আবাসিক এলাকা থেকে নয়, শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে আসছে। সাইকেল হাকিয়ে সেদিকে ছুটলাম। ধীরে ধীরে শব্দটা কাছে আসছে। এখন মানুষও দেখছি কয়েকজন। চারদিকে সবকিছু কি যে সুন্দর বলে বুঝানো যাবে না। মোবাইলটা বাসায় রেখে এসেছিলাম ইচ্ছে করেই। সাথে নেই বলে সামান্য আফসোস হচ্ছে। যদিও মোবাইলে ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে আমরা আজকাল সবকিছু প্রকৃতভাবে উপভোগ করতে ভুলে যাচ্ছি।

ইচ্ছে করেই নদীর পাড়ের রাস্তাতে সাইকেল নামালাম; যদিও এটা straight route না। সাথে কেউ থাকলে, এই নদীর পাড়ে জীবন পার করে দেওয়া যায়। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন এক বা দুইজন মানুষ ছাড়াও দলবেঁধে চলা কিছু বয়স্ক ও কিশোরকিশোরী দেখলাম। এদের প্রায় সবাই কমবেশি মাতাল; শুধু যারা গাড়ি চালিয়ে ঘরে ফিরবে, বা অন্যদের নিয়ে যাবে, তারা সজ্ঞানে মদ খায়নি।

গানের উৎস খুঁজে পেলাম। নতুন চালু হওয়া বড় একটা রেস্টুরেন্ট এটা। সাথে স্টেজ, বার, আরো অনেক কিছু আছে। সাইকেল আর গাড়ির ভিড়। মানুষের ভিড়। ইংরেজি আর স্ক্যান্ডেনেভিয়ান, দুই ভাষাতেই গান শুনছি। গিয়ে দেখলাম, স্টেজের কলাকুশলীদের তিনজনই আমার বাবার বয়সী। যদিও তাদের body language এবং গানের দক্ষতা তরুণদের মতই। এদের গানগুলি আমার ভালোই লেগেছে; আজকালকার অর্থহীন আর সুরবিবর্জিত গানগুলোর মত না। ইভেন্টের দুটো প্রবেশপথ। একটার পাশে সাইকেল পার্ক করে, দাঁড়িয়ে গান শুনতে লাগলাম। প্রবেশপথে চেক করে ঢুকানো হচ্ছে। সম্ভবত টিকেট কিনতে হয়। যদিও অনেকে আমার আশেপাশে আছে। বাইরেও অনেকে আড্ডা দিচ্ছে।

পরিচিত বেশ কিছু মানুষকে দেখলাম। ছোট শহর; ঘুরেফিরে পরিচিত মুখ। সবাই ড্রিংক করছে, আর নাচানাচি। সাথে সহপাঠী বা বন্ধুরা কেউ থাকলে ভিতরে ঢুকতাম। কেউ নেই, তাই রওনা দিচ্ছিলাম। যাওয়ার আগে রেস্টুরেন্টের অন্য প্রবেশ পথের দিকে গেলাম। এদিকে সুন্দরীদের আনাগোনা বেশি! সেজন্য নয় তবে! আমি মূলত রেস্টুরেন্টের ম্যানেজমেন্ট এর কাওকে খুজছিলাম। ওদের এখানে কয়েক মাস আগে এপ্লাই করেছিলাম, রেসপন্স পাইনি। ভাবলাম এখন কথা বলে দেখি। প্রবেশপথে দায়িত্বরত ছিল তরুণ এক Bouncer. আমাকে দূর থেকে দেখে চেচিয়ে বললো, "Come on man! Get inside!" আমি প্রথমে ভাবলাম আমাকে চলে যেতে বলছে। পরে দেখলাম, এই বেচারারও চুল ছোট, দাড়ি যদিও বড় (my target), এবং পেটানো শরীর। বুঝলাম, ভাই, ভাইকে টানে। কাছে গিয়ে আমি Fist shake করলাম। বললাম, "Bro, not today!" ওকে বললাম, আমি কি খুজছি। ও বললো, weekdays এ আসতে।

বাসার দিকে রওনা দিলাম। দামী গাড়ির বাইরে এক পাশে বসে এক বিশালাকার তরুণী বমি করছে। তার স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড তাকে সামলাচ্ছে; সে আরও বিশাল। বুড়োবুড়ির দল বাইরে জোরে জোরে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে। বাসস্ট্যান্ড এর আশেপাশে অপেক্ষারত মানুষের ভিড়। আমি দ্রুত সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি। এক শ্বেতাঙ্গ তরুণী দ্রুত রাস্তা পার হচ্ছিল। বাংলা ভাষা হয়তো সে বুঝে না। কিন্তু, আমার গাওয়া গানটার সুরে সে গলা ঘুরিয়ে তাকিয়ে হাসলো। মিশরীয় অপ্সরার মত চেহারা। আমিও হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম।

"...ভিজে যাওয়া বরষার হাওয়া
কেন নিয়ে এলে বেদনার খেয়া
মেঘলা মনের কিনারায়
হায় নিরাশায় ডুবে যাওয়া এই নিরালায়!"

আমার গাওয়া গানের অডিও

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৫৫

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:২০

রাজীব নুর বলেছেন: পদ্মার ঢেউ রে
মোর শূণ্য হৃদয়
পদ্ম নিয়ে যা যারে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.