নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যায়ামের ছবি দেওয়া কি মানসিক সমস্যা?

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬

সম্ভবত ২০১৬ সালের দিকে লণ্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক একটি স্টাডি করেছিলেন- "কেন এত বেশি মানুষ তাদের শরীরচর্চার ছবি/ভিডিও/কথা (শরীরের ছবি না) সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে"।

এরপরে সেই স্টাডির ফলাফল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসার পরে, নিখিল বাঙ্গালসমাজের হাজার হাজার নামসর্বস্ব অনলাইন পত্রিকা খবরটিকে লুফে নিয়ে, রসকষ মাখিয়ে, সময়ে সময়ে ছাপাতে থাকে। সেই ২০১৬ এর অগাস্ট থেকে আজ অবধি কমপক্ষে ১০০ বার সেই রিপোর্ট (!!) আমি নিউজফিডে ভেসে উঠতে দেখেছি। কমপক্ষে ১০ জন ফ্রেন্ড আমাকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সেই খবরের পোস্টে ট্যাগ করেছে বা ইনবক্সে পাঠিয়েছে।

মজার কথা হলো, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ শরীরচর্চা বা শরীরগঠন সম্পর্কে যেমন বিস্তারিত কিছুই জানে না, তেমনি মানসিক সমস্যা বা মানসিক রোগ সম্পর্কেও অনেক কিছুই জানেনা। "অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী" বা "ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নহে" প্রবাদ বাক্যগুলি বাংলাদেশের সমাজের জন্য খাপে খাপে লেগে যায়। বেশি গভীরে না গিয়ে প্রাসঙ্গিক খাতিরে বলতে হচ্ছে, ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির এই স্টাডির ফলাফল এসেছিলো, এই যে বেশি বেশি ব্যায়ামের ছবি/ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ইন্ডিভিজুয়ালদের অনেকেই "নার্সিসিজম"-এ ভুগছেন। এই নার্সিসিজমকেই "ক্ষেত্রবিশেষে" মানসিক সমস্যা বলছেন বিজ্ঞানীরা, গবেষকেরা, মনস্তত্ত্ববিদেরা।

বাংলা অভিধান অনুযায়ী, নার্সিসিজম (Narcissism) এর বঙ্গানুবাদ দাঁড়ায়- আত্মরতি, স্বকাম, নিজের মধ্যে একান্ত অভিনিবিষ্টতা। অর্থাৎ নিজেকে নিয়ে মগ্ন থাকা, নিজেকে বেশি বেশি তুলে ধরা, নিজেকে ভালোবাসা, নিজের ঢোল নিজে পেটানো। আশ্চর্যজনকভাবে অন্য অনেক কিছুর মতই নার্সিসিজমেরও ভালো ও মন্দ উভয় দিকই আছে। নার্সিসিজমও ভালো গুণ কিংবা বর্জনীয় বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। সাধারণ জনগণের একটা বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের নিজেদের মাঝেই যখন কেউ আত্মরতিমূলক কিছু করে, তখন সেটাকে নিন্দা করা হয়, তামাশা করা হয়। একই কাজ যখন ভিআইপি গোছের, সেলিব্রিটি জাতীয় কেউ করে, তখন তাদের হুঁশই হয় না যে- এটাই নার্সিসিজম!

আপনার-আমার বন্ধু বা আত্মীয়, যে কিনা নিতান্তই সাদামাটা মানুষ, সে যদি আমাদের জীবনের শত কষ্টের মাঝে, সকালের অফিসের আগে সময় বের করে, ৩০ মিনিট শহরের কোন এক পার্কে দৌড়ে এসে সেই ছবি/ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করবে, সেটাকে আমরা একেকজন একেকভাবে নিবো; কিন্তু বেশির ভাগই ভিতরে ভিতরে হিংসা করবো, অতৃপ্তিতে ভুগবো, অযথা চাপ নিবো। অথচ, এই প্রতিক্রিয়াটাই ভয়ানক মানসিক সমস্যা, যেটা একাধিক সামাজিক ও শারীরিক সমস্যা পর্যন্ত তৈরি করে। আবার, ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো যদি বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এডিডাস বা পুমার বিজ্ঞাপনে দৌড় বা অন্য কোন শারীরিক কসরত করে, তার দেহবল্লভ দেখায়, তখন আমরা কোনপ্রকার নেগেটিভ জাজমেন্ট ছাড়াই তা দেখবো এবং গ্রহণ করবো। এই যে হিপোক্রেসি, এই যে ভণ্ডামি, এটা কি নিরাময়যোগ্য মানসিক রোগের চেয়েও আত্মঘাতী না? এটা কি সবার জন্য ক্ষতিকর না?

এছাড়া, ডিপ্রেশন (বিষণ্ণতা) ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা ও রোগের জন্য ডাক্তার, কাউন্সিলর ও থেরাপিস্টরা সেলফ-লাভ বা নিজেকে ভালোবাসার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেন; যা কিনা নার্সিসিজমেরই গ্রহণযোগ্য রূপ!

একচেটিয়াভাবে ব্যায়ামের ছবি (বা পেটানো শরীরের ছবি) ফেসবুকে দেওয়া যেমন মানসিক সমস্যা না, তেমনি মানসিক সমস্যা হলেও সেই সমস্যা কারো বিশেষ কোন ক্ষতির কারণ কখনোই হওয়া সম্ভব নয়। আপনার অমুক প্রতিবেশী যদি তার সময়, শ্রম, আগ্রহ ও অর্থ বিনিয়োগ করে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান কাঠামো বানায়, সেটা যদি সে নিজের পোস্টার ছাপিয়ে এলাকার দেওয়ালে দেওয়ালে লাগিয়ে দেয়, এতে আপনার কি ক্ষতি হচ্ছে? আপনি কি জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছেন? সে তো নিতান্তই আপনার একান্ত সমস্যা!! অথচ, চরিত্রহীন লম্পট লুটপাটকারী ইতরগুলা যখন সময়ে সময়ে আপনার এলাকায় পাবলিসিটি করে ভোট চায়, তখন তো চাপে পরে, ভীতসন্তস্ত্র হয়ে, কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে ঠিকই তাকে ক্ষমতার চূড়ায় পৌছিয়ে দেন। এটা কখনো বিব্রত করে না আপনাকে?

কি অদ্ভুত আমাদের চিন্তাধারা। ত্রিশের উপরে বয়স সত্ত্বেও আমার ভুড়ি নাই বলে বাঙ্গাল সমাজে কত কটু কথাই না শুনতে হয়। আমাদের দেশে ৬০ এর পরে কাজ না করা, বিছানায় শুয়েবসে পরে থেকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা, অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে অপমানিত হওয়া, শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে যাওয়া, এরকম আরো নানান জিনিস অনুমোদিত প্রথা হয়ে গিয়েছে।

অথচ, জাপান, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড এর মত অনেক দেশে বয়স্ক মানুষেরা দিব্যি সুস্থসবলভাবে, সামাজিক মর্যাদার সাথে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জীবনযাপন করে যায়; যদি না তাদের ভয়াবহ কোন শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা থাকে। এর মূল কারণ, তাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিমিত ও প্রয়োজনমাফিক শারীরিক কাজের উপস্থিতি, শৈশব থেকে শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উপর গুরুত্বারোপ, এবং যৌবন ও বার্ধক্যে স্বনির্ভরতার উপর প্রাধান্যদান।

যে দেশে আমার মা গ্রামে বাজার করতে বের হলে মানুষ নানা কথা বলে, বোরকা না পরলে সম্মানই করে না, সন্ধ্যার পরে শহর থেকে বোন কাজ শেষ করে আসলে বাকা চোখে তাকায়, ছেলে হিসেবে ঘরের যেকোন কাজ করলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, সে দেশে শরীর গঠনের জন্য পুরুষ মানুষও চামড়া দেখালে সবার দুপায়ের মাঝের জিনিস খসে পরে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
শরীরচর্চার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক গুরুত্ব বুঝতে পারার মত সৌভাগ্যবান জাতি আমরা না। অথচ, জাতীয় পতাকার নকশাকারী প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী "পটুয়া" কামরুল হাসান তার পেশাদারী শরীরগঠনের ফলস্বরূপ একসময় "মিস্টার বেঙ্গল" হয়েছিলেন। এস এম সুলতানের ছবিগুলিতেও গ্রামবাংলার নারীপুরুষকে সুঠামদেহী দেখানো হয়েছে।

কালে কালে পানি গড়িয়ে কালো হয়ে গিয়েছে৷ এটাই বাস্তবতা।

[ফটোঃ Chengdu Economic Daily থেকে সংগৃহীত। ৭২ বছর বয়স্ক একজন চীনা ভদ্রলোক পার্কে ব্যায়াম করছেন]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ব্যায়ামের ছবি দেয়া মানে মানসিক সমস্যা হতে পারে - এই ধারণাই তো মাথায় আসে নি।

শরীরচর্চার গুরুত্ব আমরা জানি না। তাই অল্প বয়সেই শরীর ভেঙে পড়ে। তবে, ২০/২৫ বছর আগের চাইতে মানুষ এখন একটু বেশি সচেতন বলেই আমার মনে হয়।

ভালো পোস্ট।

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৯

আমি সাজিদ বলেছেন: সোশাল মিডিয়াটাই একটা মানসিক সমস্যা।

৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: ছবি দেখতে আমার ভালো লাগে। হোক ব্যায়ামের ছবি, বা হোক জন্মদিনের ছবি।

৪| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৪

স্থিতধী বলেছেন: ভালো বিষয় তুলেছেন। বাস্তবিকভাবে ই আমাদের অনেক মানসিক সমস্যার শেকড় আমাদের শারীরিক সমস্যার সাথে জড়িত থাকে, আর আমাদের খ্যাদ্যভ্যাসটির সাথেও। শরীর যে মনের আধার, এটা আমরা ভুলে থাকি বেশীরভাগ সময় ।

৫| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২১

পদ্মপুকুর বলেছেন: আমি সাজিদ বলেছেন: সোশাল মিডিয়াটাই একটা মানসিক সমস্যা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.