নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিবছর নতুন পাঠ্যবইঃ বাস্তবতা ও উপযোগিতা পুনর্মূল্যায়ন

১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৩

পৃথিবীর মোটামুটি সব উন্নত দেশেই- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরির বইই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা; প্রাইমারি থেকে পোস্ট-ডক্টরাল লেভেল পর্যন্ত। খুব প্রয়োজন হলে নিজেদের বই কেনে তারা। এসব দেশে বইয়ের দাম ও মানও অনেক ভালো। বইয়ের দাম বেশি হওয়ার কারণ, তাদের মেধাসত্ত্বের মূল্য। তারা মেধার মূল্যায়ন করে চড়াদামে; তাই বইয়ের লেখকদের সেরকম সম্মান ও সম্মানী দেওয়া হয়।

এসব দেশে শিক্ষাউপকরণ শতভাগ ডিজিটাল/অনলাইন (আমাদের দেশের মত ফাঁকাবুলির না; ৯০ কোটি টাকা দিয়ে ভ্যাক্সিনের এপ্লিকেশন বানানোর মত ধাপ্পাবাজি ও ধান্ধাবাজির না)। ক্লাসেই বেশির ভাগ পড়ালেখা ও মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয়। নিজেদের খাতা-কলম (বা ইলেক্ট্রনিক নোটপ্যাড) এবং প্র্যাক্টিক্যাল ইকুইপমেন্ট ছাড়া বইয়ের প্রয়োজনীয়তা তেমন হয় না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রিন্টেড লেকচার শিক্ষার্থীদের পাঠকাজে সাহায্য করে; যা শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা লাইব্রেরি থেকে প্রোভাইড করা হয়।

আমাদের দেশের শিক্ষানীতি, শিক্ষাকারিকুলাম, শিক্ষক নিয়োগ, মেধাবীদের শিক্ষকতাপেশায় আগ্রহী করে তোলা, গবেষণাকেন্দ্রিক প্রায়োগিক ও কর্মমুখী শিক্ষার অভাব, এসব বিশ্বনন্দিত (নাকি নিন্দিত?!)। সর্বোপরি, মড়ার উপর খাড়ার গা হচ্ছে "বহুমাত্রিক শিক্ষাবাণিজ্য"। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসালয় হওয়া উচিত মোটামুটি দাতব্য, সেবাকেন্দ্রিক, সরকারি ও বেসরকারি সাহায্যনির্ভর। অথচ, এই দুই ধরণের প্রতিষ্ঠানই এই দেশে সবচেয়ে বেশি মুনাফাকেন্দ্রিক, পণ্যনির্ভর। কে যেন সেদিন বলছিল, কেন কোম্পানির মালিকেরা অদক্ষ-অনভিজ্ঞ-পুঁথিগতবিদ্যামুখী দেশী গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে নিজেদের কোম্পানিকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে; সেই কারণেই তারা বিদেশী কর্মী নেয়। আমি সময়ের অভাবে তার প্রত্যুত্তরে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম- ঐ কোম্পানিগুলোর মালিকই কিন্তু দেশের নামকরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক।

একাডেমিক বইয়ের আলোচনায় ফিরে আসি। অন্যান্য অনেক কিছুর মত, একাডেমিক বই ছাপানো বাংলাদেশের একটা বড় সিন্ডিকেট বিজনেস, বিশাল একটা মাফিয়া কাজ করে এর পেছনে। সহজসরল পাবলিক ও গোটা দুনিয়া দেখে প্রতি বছর কোটি কোটি ফ্রি বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, দেশের শিক্ষার মান তড়তড় করে উপরে উঠে যাচ্ছে। সরকারও বেশ ভালো করে পাবলিসিটি করে এই ব্যাপারটার- "এই বছর এত কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হলো; দেশ সোনার বাংলা হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।..."

কিন্তু মূলত, সিলেবাস বদল, কারিকুলাম বদল, পরীক্ষাপদ্ধতি বদল, সবকিছুই ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় মূলত ব্যবসার কথা মাথায় রেখে। আমরা যতই মনে করি না কেন, অমুক জিনিসটা সরকার আমাদের ফ্রি দিচ্ছে, ব্যাপারটা আসলে তা না। সবই ঘুরেফিরে জনগণের টাকা। পাবলিকের টাকা, পাবলিকের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গেই যারা খাওয়ার খেয়ে নিচ্ছে। রাজনৈতিক (সাথে সামাজিক ও ধর্মীয় গুলো-ও অন্তর্ভুক্ত) সব উপলক্ষ ও প্রোগ্রামের জন্য বছরে কত হাজার কোটি টাকার প্রকাশনা বাণিজ্য হয়, সেটার হিসেব কেউ রাখে না। "ডিজিটাল বাংলাদেশ" এর ট্যাবলেট খাইয়ে পাবলিকের সমর্থন জোর করে আদায় এর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক লেনদেন, পাবলিসিটি-প্রমোশন-মার্কেটিং, শিক্ষাউপকরণ, ইত্যাদি কোনকিছুই মোটামুটি সম্পূর্ণরূপে ইলেক্ট্রনিক/অনলাইন/ডিজিটাইজড করা যায়নি। কারণ, সবকিছুর পেছনেই মূল উদ্দেশ্য থাকে- অমুক প্রজেক্টে কত বেশি টাকা লুটপাট করা যায়।

এমন এক সময় ছিল, যখন এক শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তার আগের শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার করতো নিঃসংকোচে- গ্রামে, মফস্বলে, শহরে; যেকোন সামাজিক স্তরে, সেটা ছিল এক অন্যরকম আনন্দের, স্বস্তির। যদিও তখনও নতুন বই ব্যবহার করা ছিল সৌখিনতার, বিলাসিতার, স্বচ্ছলতার নিদর্শন। দিন বদলেছে মনে হলেও, মানুষের চিন্তাচেতনা ও ধ্যানধারণা সামনে এগোয়নি, বরং পিছিয়েছে। জামাকাপড় থেকে শুরু করে বইপুস্তক, সবকিছুতে মৌসুমভেদে, প্রতি-বছর, বিনা প্রয়োজনেই আপডেট করার পুঁজিবাদী, বস্তুবাদী এবং পরিবেশঘাতী প্রবণতা এখন আরো বেড়েছে। পুরো দুনিয়া যে পথে হাঁটছে, বাংলাদেশ যথারীতি হাঁটছে বিপরীত দিকে। টেকসই জীবনযাপনের মূলনীতি হলো, প্রয়োজনীয়তা এবং অপ্রয়োজনীয়তাকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে, সেই অনুযায়ী উৎপাদন, ভোগ, চাহিদা, বিনিয়োগ, যোগান এবং সরবরাহকে বাস্তবায়ন করা।

প্রতিবছর নতুন নতুন পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও সরবরাহ করার মাধ্যমে গোটা এডুকেশন সিস্টেমে জটিলতা ও অস্থিরতা বাড়ছে শুধু তা-ই নয়, মূল্যবান সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে তা-ই নয়, রোপণের তুলনায় অনেক বেশি হারে গাছ কাটা হচ্ছে। একই সাথে প্রতিবছর বিশাল পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় বইয়ের ভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে, যা অব্যবহার্য বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে, যা ঠিকমত রিসাইকেল বা রিইউজ হচ্ছে না পরিমাণমত। যে কাঁচামাল দিয়ে প্রতিবছর নতুন নতুন বই ছাপানো হচ্ছে, সেই একই কাঁচামাল দিয়ে অপরিহার্য এমন সব ভোগ্যপণ্য বানানো যেতো, যেগুলো পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জীবনযাপনে আমাদের সাহায্য করতো।

পৃথিবী ২০০-র মতো দেশ বা জাতিতে বিভক্ত হলেও গোটা মানববজাতির ভবিষ্যৎ এক ও অভিন্ন সুতোয় গাঁথা। মানবজাতির একটাই বসবাসযোগ্য নিবাস- যেটা মানুষেরাই ধ্বংস করছে প্রতিনিয়ত। মানুষের নিজের অস্তিত্বে স্বার্থেই গোটা জীবজগত ও প্রকৃতির স্বার্থবিরোধী কোন পদক্ষেপই নেওয়া চলবে না। অন্যান্য জাতির চেয়ে আমরা বাংলাদেশী জাতি এই ট্র্যাকে অনেক অনেক পিছিয়ে আছি। আমরা আমাদের নিজেদের বাবলে এত আবদ্ধ, আমরা বিগ পিকচারটা কল্পনা করতে পারি না, তোয়াক্কাই করিনা এসব। আর, পেটপূজাই আমাদের সব। পরিবেশবান্ধব, দূষণ-রোধী, জিরো ওয়েস্ট, মিনিমালিস্টিক জীবনযাপন যে আমাদের নিজেদের, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলির জন্য, এবং গোটা পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা সিরিয়াসলি ভাবার ও কাজে পরিণত করার সময় এখনই।

ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের থিসিসগুলো ভারী ভারী রিসার্চ নোটবুক আকারে ছাপানোর কয়েক বছর পরেই সেগুলির ঠাই হয় শহরের সীমানার বাইরের ময়লার ভাগাড়ে। যেখানে ময়লার ভাগাড় কিভাবে কমানো যায়, আধুনিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা থেকে কিভাবে বর্জ্য ও প্রয়োজনীয় বস্তু উৎপাদন করা যায়, ল্যান্ডফিল থেকে মিথেন নিঃসরণ কমিয়ে কিভাবে আমাদের নিজেদের বাঁচানো যায়- এসব নিয়ে গবেষকদের গবেষণাগুলি কার্যকর হওয়ার কথা, সেখানে সেই গবেষণাপত্রগুলিই গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছে আমাদের অস্তিত্বে। অথচ, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই রিসার্চগুলো অনলাইন ডোমেইনে প্রায়োরিটি দিয়ে পাবলিশ করা হয়, উল্লেখযোগ্যগুলো ছাপিয়ে লাইব্রেরিতে সংগ্রহ করা হয়, এবং ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে না- সেরকম কোন কিছুই থিসিস করতে দেওয়া হয় না।

ক্ষতিকর ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, বিলবোর্ড নিয়ে আগের একটা ব্লগে/লেখায় লিখেছিলাম বলে এখানে বিস্তারিত বলছি না। লেখা শেষ করবো ক্যালেন্ডার দিয়ে। নতুন বছর শুরু হলো। ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা দেশের ব্যাংকগুলোরও সারাদেশে বিনামূল্যের শুভেচ্ছাস্বরূপ পঞ্জিকা বিতরণ শুরু হয়ে গেল। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ক্যালেন্ডার ছাপানো ও বিতরণ করা হয় সারাদেশে, হাজার হাজার সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। নিজেদের মোবাইল, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ সবখানে ক্যালেন্ডার থাকার পরেও এত এত ছাপানো কাগজের বা প্লাস্টিক-মিশ্রিত উপাদানের তৈরি ফিজিক্যাল ক্যালেন্ডারের প্রাচুর্য কতটা সময়োপযোগী ও উপকারী, সেটা ভাবারও সময় চলে এসেছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: পাঠ্য বই পরে, আগে তো শিক্ষার মান ঠিক করতে হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে হবে। যোগ্য এবং দক্ষ শিক্ষা মন্ত্রী লাগবে।
দুই হাজার সালের পর থেকে শিক্ষার মানতে নামতে শুরু করেছে আমাদের দেশে। আজও সেটা অব্যহত আছে।

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:১৩

সাসুম বলেছেন: ভাইরে ভাই! আপ্নারা আছেন পাঠ্যবই এর অপচয় নিয়ে। পুরা দেশের এডুকেশান সিস্টেম পচে গলে ক্ষয় হয়ে গেছে সেই হিসাব নেই এখন আমরা যুদ্ধ করব বই নিয়ে?

আমাদের এডুকেশান সিস্টেম এ সেখানো হয় না মানবতা, সম্মান, সহানুভূতি, আমাদের শেখানো হয় কিভাবে নাম্বার বেশি পাওয়া যায়।

আমাদের সেখানো হয় না বড় দের কে সম্মান বা অসহায় দের সাহায্য করার কথা আমাদের সেখানো হয় কি করে নিজেকে আরো বড় করতে হবে। আমাদের টিচার রা সেখায় কি করে বেশি নাম্বার পেয়ে রোল ১ করতে হবে কিন্তু কখনো আমাদের কে শেখায় নি রাস্তায় একজন অসহায় দেখলে তার সাহায্যে এগিয়ে যেতে, আমাদের কে শেখায় নি বাসে মহিলা বা দুর্বল কাউকে দেখলে তার জন্য সীট টা ছেড়ে দিতে, আমাদের কে শেখায় নি কোন কিছু কুড়িয়ে ফেলে সেটা ফেরত দিতে আমাদের কে শেখায় নি কিভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়। আমাদেরকে শেখায় নি আত্মনির্ভরশীলতা বরং শিখিয়েছে কি করে নোট গাইড আর শিট এর উপর নির্ভর করে এগিয়ে যেতে হয়। আমাদের এডুকেশান সিস্টেম আমাদের শেখায় না মানবতা বরং তেলা মাথায় তেল দেয়া শেখায়। আমাদের স্কুলে দুনিয়ার সব শেখায় শেখায় না প্রাণির প্রতি মমতা বা আদর।

উন্নত দুনিয়ার এডুকেশান সিস্টেম এর দিকে তাকালেই বুঝা যাবে আমরা আর তারা কে কোথায়। আমাদের শুরু করতে হবে গোড়া থেকে গাছের ঢাল পালা কাটার দিকে নজর দিয়ে কি হবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.