![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
close your eyes and try to see
গত পরশু বাসা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বের হবার কিছুক্ষণ আগে,পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা বিশেষ শিরোনামে চোখ আটকে গেলো।শিরোনামটি হলো "আপনার রাশিফল"।আমি ধনু রাশির জাতক।মন দিয়ে আমার সেদিনের সম্ভাব্য কর্মকান্ডগুলো পড়ে নিলাম।সেখানকার একটি লাইন সেদিনের জন্য আমার কাছে ছিলো তাৎপর্যময়।সেটি হলো,"জাতক আজ আপনার দূরের যাত্রা অত্যন্ত শুভ"।
জানি রাশিফল একটা ভুয়া ব্যাপার তারপরও কেউ যখন এতো সুন্দরকরে শুভকামনা জানায় ব্যাপারটা পড়তে এবং ভাবতেও ভালোলাগে।
.
মাগুরা থেকে গোপালগজ্ঞ আমি যাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে।প্রথমে মাগুরা থেকে যশোর।তারপর যশোর থেকে খুলনা এবং সর্বশেষ খুলনা থেকে গোপালগজ্ঞ(ভয় পাবেন না ডিরেক্ট বাসও আছে কিন্তু সেটা এতো সকালে যে কোনোবার ই আমি বাস ধরতে পারিনা)।
মাগুরা থেকে যখন বাসে উঠলাম আমার পাশে বসলেন এক স্বাস্থ্যবান যুবক যার প্রচন্ড সর্দি লেগেছে এবং যিনি একটু পরপর আমার কোলের উপর দিয়ে জানালার উপর ঝাপিয়ে পড়ে সর্দি পরিষ্কার করে গলা খাখারি দিয়ে বলছেন,শালার সর্দি ধুর হ..
তাকে অনুরোধ করলাম জানালার পাশে বসবার কিন্তু তিনি অনুরোধ প্রত্যাখান করে বললেন,তিনি ঐখানেই ঠিক আছেন।জানালার পাশে বাতাস বেশি।বেশি বাতাস তার ঠান্ডার জন্য ক্ষতিকর।এই বলেই ওয়াক থু বলে জানালার উপর ঝাপিয়ে পড়লেন।
.
"তোর হাড় মাংস আমি আলাদা করে ফেলবো"।এটা একটা থ্রেট।যশোর পর্যন্ত বাকি রাস্তাটুকুতে যে হুমকি আমি লোকটিকে মনেমনে দিয়ে এসেছি।
.
যশোর থেকে গড়াই বাস এ উঠলাম।বাসে সিট নাই।দাঁড়িয়ে আছি।যশোর টার্মিনালের একটু আগে সিট পেয়ে কেবল বসেছি হঠাৎ বাস বিনা নোটিশে ফুল স্টপ হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পর জানা গেলো বাসের ইঞ্জিনে গন্ডগোল তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই কারণ আমাদের জন্য নতুন বাস আসছে।
৪৫ মিনিট পর নতুন বাস আসলো কিন্তু তার পেট ইতোমধ্যে ভরা।আবার দাঁড়িয়ে আছি।অভয়নগর পার হয়ে পূর্বজন্মের অশেষপূণ্যবলে আবার সিট পেলাম।সেটাও আবার জানালার পাশে(সবাই বলুন "ওয়াও")।এবার আমার পাশে এক বৃদ্ধা এবং বৃদ্ধার কোলে এক টেকো পিচ্চি।কিছুদূর যাবার পর পিচ্চি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,বমি আমি বমি করবো।বৃদ্ধা পিচ্চিকে আমার কোলে বসিয়ে দিয়ে বললো,বাবা একে একটু বমি করিয়ে দাও তো।
অপরিচিতদের সাথে প্রথম দেখায় অতি আপনজনের মতো কথা বলাটা একটা আর্ট।আমি বৃদ্ধার আর্টে টারসিয়ারি লেভেলের অবাক এবং অনুপ্রাণিত হয়ে পিচ্চিকে দুহাতে উঁচু করে বললাম,চাঁদু আমার বমি করো।
চাঁদু বমি করলো তবে বাইরে না আমার শার্টে।তারপর তার নানুর মতো আপন মানুষের গলায় বললো,আংকেল আপনার শার্টে বমি লেগেছে আপনার কোলে বসবো না।
পিচ্চি তার নানুর কোলে গিয়ে আপেল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো আর আমি কানে হেডফোন গুজে গান শুনতে লাগলাম হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকা দুটি মেয়ের কথা কানে আসলো।তারা দুজন নিচুস্বরে বলছে,দ্যাখ দ্যাখ এতো বড় ধেড়ে মানুষ বমি করে কিভাবে বমি মাখিয়ে বসে বসে গান শুনছে..ছি..
.
সোনাডাঙ্গায় নেমে আগে ফ্রেস হয়ে শার্ট চেঞ্জ করে টিকিট কাটতে গিয়ে বললাম,জানালার পাশে সিট হবে??
উনি অবশ্যই হবে বলে সিট দিয়ে দিলো।বাসে ঢুকে সিটের নাম্বার দেখে চোখ কপালে উঠলো।শেষ থেকে দ্বিতীয় সারির জানালা।অন্যমনস্ক থাকার ফল পেলাম হাতেনাতে।বসতে গিয়ে দেখি আমার পেছনে পাখির খাঁচা।এই পাখি টিয়া ময়না পাখি না।এই পাখি মুরগি পাখি।তারা কিচিরমিচির করার সাথেসাথে চারপাশটা মনমাতানো সুবাসে ভরিয়ে রেখেছে।
বাস চলছে।ঠান্ডা হাওয়া বইছে।সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুম এসে যাচ্ছে।খুব সম্ভবত একটু ঘুমিয়েও পড়েছিলাম।ঘুমভাঙ্গলো বজ্রপাতের শব্দে।চোখ মেলে দেখি চারপাশ অন্ধকার।কিছুক্ষণ পর প্রবলবেগে বৃষ্টি শুরু হলো।বৃষ্টি,তারসাথে ভয় পাইয়ে দেওয়া বজ্রপাত।তারউপর বাস কেমন যেনো বাউলি মারছে।বুঝলাম ভার্সিটির মেধাবী ছাত্র হতে আমার আর দেরি নেই।
.
মোটামুটি বিধ্বস্ত হয়ে বাসার সামনে পৌঁছালাম।বাসার সামনে সবাই ফুটবল খেলছে।উপরে উঠতে যাবো এমন সময় ফুটবলটি আমার হাতে এসে আঘাত হানলো।এই আঘাতের গতিবেগ ক্যাটরিনা,নার্গিসের চেয়ে কম ছিলোনা।কয়েকজন এসে বললো,ভাইয়া স্যরি।ভাইয়া ব্যথা লেগেছে??
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,তোমাদের কিকে জোর নাই।তোমাদের বয়সে মিডফিল্ড থেকে এক কিকে গোল দিতাম বুঝেছো..হা..হা..
তারা অবাক হলো এবং আমাকে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানালো।আমি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে হাত ম্যাসাজ করতে করতে চলে আসলাম।
ওদেরকে আর কিভাবে বলি আমি ফুটবলে কিক দিলে কিকের সাথে আমার জুতা খুলে যত দূরে যায় বলও ততটুকু যায়না।
.
রুমে এসে পুরো জার্নিটার কথা ভেবে শিউরে উঠলাম।তারপর মনে হলো ইসস আমি যদি "tahseenation" এর মতো roast করতে পারতাম তাহলে এখন বলতে পারতাম,"আজকের রাশিফলের জ্যোতিষীরা, u r next".
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৪৬
নীল-দর্পণ বলেছেন: জার্নিটা সেইরকম ছিল! একবস্তা সমবেদনা যদিও অনেক লেট!