![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উৎসর্গঃ “জঙ্গি হামলায় আক্রান্ত সাহসী মুক্তপ্রান”
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের পর যখন মীরজাফরেরা আনন্দে মেতেছিল; সেদিন থেকেই আমাদের পরাধীনতার শুরু। স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলার বংশ বিস্তার তথা স্বাধীনচেতা মনুষত্বের বিকাশ সেদিন থেকেই শ্লথ হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে, মীরজাফর আর তার দোষর বেঈমানদের বংশ বিস্তার সেদিন থেকেই বেগবান হয়েছিল, যা আজও বাধহীনভাবে চলমান। তাই আমাদের যেকোন শ্রেণী বা পেশার লোকজনের ভেতরে মীরজাফরের বংশধর কেউ না কেউ থাকেই।
সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমরা আসলে আর কোনদিনই স্বাধীনতা লাভ করতে পারিনি। ৭১’এর মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের স্বার্বভৌমত্বের নিশানা ঠিক হলেও, আজ পর্যন্ত আমরা বাঙ্গালীরা স্বাধীনতা কিংবা স্বাধিকারের স্বাদ নিতে পারিনি। ১৬-ই ডিসেম্বরকে স্বাধীনতা বিজয়ের দিন বলে সুখভাবটা মনে পুষে আছেন অনেকেই। কিন্তু আমার কাছে এটা সাময়িক তৃপ্তি বা আংশিক অর্জন ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
আসলেই কি আমরা স্বাধীন জাতি? যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে আজকেও কেন আমাদের জনগণ তাদের নিজস্ব জাতিস্বত্বা নিয়ে বিভ্রান্ত? আমাদের দেশের মোট জনগোষ্ঠীর সিংহ ভাগ মানুষ আজও তাদের জাতিস্বত্বাকে সম্মান জানাতে পারে নাই, মনেপ্রানে লালন করতে শিখে নাই। এই সিংহ ভাগের কেউ কেউ আজও মনেপ্রানে সমর্থন করেন মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতায় পুষ্ট পাকিস্থানকে। কেউ কেউ দালালী করেন বিকৃত মনুষত্বের অধিকারী এবং শোষক রাষ্ট্র ভারতের।
দয়াকরে শুধুমাত্র রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করেই রুমালে মুখ মুছবেন না। আমাদের দেশের বর্তমান জনগোষ্ঠীতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কর্পোরেট লিডার, শ্রমিক নেতা কিংবা যেকোন পেশাজীবি সংগঠনের কর্তাব্যক্তির কেউ-ই এইসব দুঃশ্চরিত্র থেকে দূরে নেই। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ লোকই আজকে দালালী, চামচামী আর স্বার্থসিদ্ধির অপচেষ্টায় লিপ্ত। আমাদের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতা দখলের লোভ সামলাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। নৈরাজ্য আর সন্ত্রাসের বিনিময়ে ক্ষমতার অধিগ্রহন আর দখলে রাখার নেশায় মত্ত সবাই। নিজস্ব জাতিস্বত্বা ভুলে গিয়ে, কেউবা পাকিস্থানি দোষরদের সাথে হাত মিলিয়েছেন, কেউবা আবার নীতি-আদর্শের চিন্তাশক্তিকে পায়ে দলে ভারতের দালালীতে আত্মনিয়োগ করেছেন।
দুঃশ্চরিত্র কর্পোরেট লিডাররা তাদের নিজস্ব দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে ভারত-পাকিস্থান থেকে আমদানীকৃত অথর্ব কর্তাদের পদলেহলনে বদ্ধ পরিকর। শ্রমিক নেতারা তাদের স্বজাতি শ্রমিকদের অধিকারের কথা ভুলে গিয়ে, ভারত কিংবা পাকিস্থান পন্থী দুষ্ট রাজনীতিতে লিপ্ত। মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ কিংবা মূল্যবোধহীন লেজুড়ভিত্তিকে অপাংতেয় পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা।
সেই ঘাতক মীরজাফরের বহমান রক্তের ধারা আজও আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ক্লান্তিহীন তর্কে তটস্থ। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবল আজও আমাদের কপালে ক্ষতচিহ্ন এঁকে যাচ্ছে দ্যার্থহীনভাবে। আজও আমাদের দেশে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের মত কুখ্যাত অপরাধীদের শাস্তির বিরোদ্ধে মিছিল হয়, হরতাল হয়, মারামারি-কাটাকাটি হয়। অপমৃত্যু আর জঙ্গিবাদের বিরোদ্ধে এখনও কাউকে প্রতিবাদ করতে কিংবা রুখে দাড়াতে কোন সুযোগ দেয়া হয় না। অসাম্প্রদায়িক মুক্তমনা জনগোষ্ঠী আজও বাধাহীন জঙ্গি আক্রমনের শিকার হয়েও কোন বিচার পায় না।
সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদের শৃঙ্খলতো আজও কেউ ভাংতে পারে নি! তাহলে কিভাবে, কেমন করে আমরা স্বাধীন হলাম? কিভাবে স্বাধিকারের বিজয়ে আমরা গর্বিত হলাম? কিভাবে তাহলে আমরা আমাদের সার্বভৌমত্বের নিশানাকে মুক্ত বলে মেনে নিলাম?
অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে কিংবা মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদের বিরোদ্ধে কেউ কথা বললে, আজও আমাদের দেশে তাঁকে মেরে ফেলা যায়; যখন, যেখানে, যেভাবে ইচ্ছা... !!! মতের অমিল হলেই মেরে ফেলা, সসস্ত্র আক্রমন করা, পঙ্গুত্ব উপহার দেওয়া আজও আমাদের দেশে ন্যায্য বলে মনে করা হয়। আজও এসব হত্যাকারী কিংবা জঙ্গি হামলাকারীদেরকে ন্যায় বিচারের আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি! তাদেরকে বিচারের আওতায় ফেলতে আজও আমরা একটা অক্ষম জাতি।
সচেতন, সাবলীল, অসাম্প্রদায়িক মন-মানুষিকতা নিয়ে আমাদের চলার পথ আজও রূদ্ধ। জঙ্গি আক্রমণ কিংবা বিচার বহির্ভূত হত্যাযজ্ঞের শিকার আমি কিংবা আপনি, যে কেউ – যে কোনদিন হতে পারি। কারণ আপনার-আমার সাথে, কারো না কারো, কোন না কোন বিষয়ে মতের অমিল আছে। আর তারা শুধুই অপেক্ষা করছে যেকোন একটা সুবর্ণ সুযোগের ...
ব্যক্তিগতভাবে আমি বলতে পারি, অপমৃত্যু কিংবা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলার ঝুকি আমার জীবনেও আছে। কারণ, স্পষ্টতঃ
১। আদর্শহীন রাজনীতি আর ভারত পাকিস্থানের দালালী নিয়ে রাজনীতিবিদদের সাথে আমার মতের অমিল।
২। আমদানীকৃত অথর্ব কর্তাদের পদলেহন, অকর্মন্যতা আর দুর্বলতা নিয়ে অযোগ্য কর্পোরেট লিডারদের সাথে আমার মতের অমিল।
৩। মূল্যবোধ পরিত্যাক্ত অন্ধকার রাজনীতির লেজুড়ভিত্তি নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সাথে আমার মতের অমিল।
৪। বাণিজ্যিক মনোভাব আর দায়িত্বহীন আচরন নিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবিদের সাথে আমার মতের অমিল।
৫। অসাম্প্রদায়িক, সাবলীল এবং সচেতন চিন্তাধারা নিয়ে মৌলবাদী আর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে আমার মতের আজন্ম অমিল...
এরকমের শত শত অমিলের হিসেব আর জীবনের ঝুকি নিয়েই আমাদের নিত্যদিনের পথচলা। তাহলে কেমন করে আমরা স্বাধীন?? আমার স্বাধীনতার হিস্যাটুকু আমি স্বজ্ঞানে কারো কাছে বর্গা দেই নি!!!
তবে এই পরিস্থিতিতেও আমি কিংবা আমরা বিন্দুমাত্র হতাশ নই। আমাদের ঘরেও একদিন সত্যিকারের স্বাধীনতা আসবে, মুক্তচিন্তার শক্তি বিকাশ পাবে। ঝুকিহীন-নির্ভয়-সুগম পথ আমাদের জন্য একদিন রচিত হবেই।
কারণ আমাদের কলম কোনদিন-ই থামবে না; আমাদের কালি কোনদিনই ফুরাবে না; আমাদের কন্ঠস্বর কোনদিনই নিম্নগামী হবে না; মুষ্ঠিবদ্ধ প্রতিবাদী হাত কোনদিনই পকেটে লুকাবে না; আমাদের সংগ্রামী পদচারনা কোনদিনই শৃংখলিত হবে না; আমাদের সাবলীল মুক্তচিন্তার শক্তি কোনদিনই লুপ্ত হবে না; আমাদের হৃদয়ের গহীনে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ শিখার আলো কেউ কোনদিন ম্লান করে দিতে পারবে না ...
আমাদের এই গণআন্দোলনের প্রকৃত পত্তন হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতাকামী পূর্বপুরুষদের হাতে; আজকে আমরা সেই গণআন্দোলনের অকুতভয় নেতৃত্ব আমাদের কাঁধে নিয়েছি; আর আমাদের উত্তর-প্রজন্ম কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের সেই রঙ্গিন পতাকা মুক্ত আকাশে উড়াবেই। এটাই আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়।
সাহস থাকলে শামিল হউন ...
©somewhere in net ltd.