![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি স্বপ্নের জন্য ঘুমিয়ে পড়তে রাজী নই, আমি জেগে থাকব স্বপ্নের সূর্যোদয় দেখার জন্য...........
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। আমার কাছে এটা খুব সকাল। খুব সকাল না? মাত্র সাড়ে নয়টা বাজে। মেসে থাকলে ফজরের আজান শুনে ঘুমাতে যেতাম। পেট ক্ষুধায় পাখির মত কিচির মিচির শব্দ করা শুরু না করলে ঘুম থেকে উঠতাম না। সেই হিসেবে খুব সকাল বললাম আর কি। কারো কোন অনুভুতিতে লাগল নাকি? বলা যায় না, বাঙালী সম্প্রতি অনুভুতির ফ্যশন দেখাতে বেশ পছন্দ করে। এত সকালে আমি কখনোই উঠতাম না। ক্লাস থাকলেই উঠি না। আর এখন তো সামার ভ্যকেশন! এর জন্যই ফাপড়ে পড়ছি বুঝলেন ভাই। বাসায় এসে পড়ছি বিপদে। বেলা দশটা বাজলে আব্বু চেচানো শুরু করে দেয়- “ বেলা বাজে দশটা, এখনো উঠলে না? সকালের খাবার খাবা কখন?” যাক আড়ামোড়া ভেঙে উঠলাম কষ্ট করে আর কি। উঠেও শান্তি নাই। উঠে বিছানা গুছাতে হবে। নাহলে আব্বু আবার চিৎকার শুরু করবে- “বিছানাটা এভাবে রেখেছো কেন? এত আলসে কেন হ্য?” আরে ভাই আজ রাতে তো আবার খ্যতাটা গায় দিতে হবে, মশারিটাও টানাতে হবে তাহলে কষ্ট করে গোছানোর কি দরকার শুনি! বলতে পারি না আর কি।
ঘুম থেকে উঠে মশারী খুলে, কাথাটা ভাজ করে ঢুলু ঢুলু চোখে ব্রাশটা নাকের দুই আঙ্গুল নিচে গুঁজে ওয়াশরুমের দিকে রওয়ানা দিলাম। বের হয়ে দেখি টয়লেটের পাশের স্টোর রুমের মত জায়গাটাতে আমাদের গাছের তিন কাদি তাল রাখা, আমার জন্যই। একটা কাদি নিয়ে বের হলাম বাইরে চুলায় আম্মু রান্না করছে সেখানে। আম্মুর পাশে বসে দা নিয়ে এসে কেটে খাওয়া শুরু করলাম কচি তালের শাস। আমার ওজন মাত্র সাড়ে তিপ্পান্ন কেজি। বিশ্বাস হয়ত হবে না, তারপরেও বলি আমি দেড় কাদি তাল মানে প্রায় পনেরো থেকে আঠারোটা তাল কেটে খেয়ে ফেললাম। একটা তাল মানে তিনটা শাস। এরপর মনে হল আম খাব। ঝুড়ির পাশে দাড়িয়ে একটা ছিদ্র করে দুই টান দিয়ে খোসাটা ছাড়িয়েই খাচ্ছি। কতক্ষন খেলাম মনে নেই তবে প্লিজ বিলিভ মি, আমার খাওয়া আমের সংখ্যা কম হলের বারোটা হবে। খেয়ে উঠেছি কি উঠিনি। এমন সময় আম্মুর ডাক-"সকালের খাবার খেয়ে নাও।" আমি বাধ্য ছেলের মত টেবিলে গিয়ে বসলাম। এত কিছু খাবার পর কয়টা রুটি গলার নিচে নামানো সম্ভব? আমি দুইটা ভ্যনিশ করলাম। এবার মঞ্চে আবির্ভাব হল আমার আব্বুর-" না মেসে না খেয়ে খেয়ে তোমার নাড়ি মরে গেছে, আমার বয়স ষাটের উপর, আমিও এখনো এক বসায় দশ বারোটা রুটি খেতে পারি। খাওয়া দাওয়া একটু বাড়াও।" পাশ থেকে সেজো কাকা গলা বাড়িয়ে ভ্রু কুচকে স্বভাবসুলভ ভাবে রাগত দৃষ্টিতে(যদিও তিনি রেগে থাকেন না) বলতে থাকলেন-"খাইস না কেন? মাত্র দুইটা রুটিতে কি হবে? তোর বুকের হাড় গেনা যায়। এভাবে খাওয়া দাওয়া করলে হবে?" আম্মু আবদারের ভঙ্গিতে বলেন-"আব্বা আর একটা রুটি খাও, ভাজি পছন্দ হয়নি? রাতের পাঙ্গাস(আমার প্রিয়) মাছটা আছে বের করে দেব? মাছটা আর ঝোল দিয়ে একটা রুটি খাও।" চাচিআম্মারে এতক্ষন দেখিনি। হঠাৎ হ্যলির ধুমকেতুর মত আবির্ভুত হয়ে আম্মুকে বলা শুরু করবেন-"ভাবী দেনতো মাছটা বের করে শাকিলের পাতে। জিজ্ঞেস করতেছেন কেন? দিয়ে দেন।" আমার দেড় কাদি তাল, বারোটা আম খাওয়ার পর খেলাম দুইটা রুটি, তাও আমি নাকি খেতে পারি না। হায়রে কপাল। বাসায় গেলে আমার খারারের প্রতি এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। ভয় না আতঙ্ক। দুইটা ভিতর পার্থক্য কি তা আমি বুঝি এইভাবে, আপনি ভুতের ভয় নিয়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু যদি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন তাহলে সারারাত না ঘুমিয়েই থাকতে হবে।
বাসায় আসার পর একবেলা খাবার পরই আমি মেসের খলার রান্না করা একটুকরো মাংসের মীল আর পানির মত ডাল খুব মিস করি। সবচেয়ে মিস করি কামাল মামার রেস্তোরার নোংরা পরিবেশে বসে চিতকার করে অর্ডার দিয়ে ছোট্ট একটুকরো মাংস নিয়ে ওয়েটার মামার সাথে রাগারাগি। এবার বাসা থেকে আসার সময় আমার উদরে জায়গা না থাকার কারনে আম্মুর রান্না করা বড়ি(চালকুমড়া, ডাল আরো কয়েকটি উপাদান মিশিয়ে তৈরি একপ্রকার খাবার যা তরকারীতে দেয়া হয়) দিয়ে কৈ মাছ রান্না খেতে পারিনি। আম্মু আসার আগেও একবার আমার সামনে এসে ডান হাতের শাহদাত আঙুল দিয়ে এক দেখিয়ে বাম হাত দিয়ে হাত দিয়ে ডান হাতটা ধরে বাচ্চা মেয়ের মত আমাকে বলেছিলেন-"আব্বা একটা একটা মাছ খাও না।" আমি আমার প্রিয় কয়েকটা বড়ীমুখে দিয়ে একটু রাগত স্বরেই বলেছিলাম -"আর কত খাব বলেন। জার্নির আগে আমি খেতেও পারিনা। পরে সমস্যা হয়।" এখন মেসে ফিরে আম্মুর ঐ বাচ্চা বাচ্চা মুখটার কথা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে আমি মনে হয় আম্মুর এই ইচ্ছেটা পুরন করতে পারতাম। একটা মাছ কৈ মাছ আর কত বড়?
©somewhere in net ltd.