![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
'ফিতরাত' বলে একটি আরবী শব্দ আছে যার কাছাকাছি বাংলা অর্থ হতে পারে 'সৃষ্টিগতভাবে পাওয়া স্বাভাবিক প্রবৃত্তি'। রাস্তায় হাঁটার সময় আপনার ডান পা বাড়াবার পর স্বাভাবিক নিয়মেই বাম পা দিতে হবে, আবার থেমে ডান পা বাড়ানো যাবে না-এটাকে বলা যায় ফিতরাত। আবার যে কোন মাতা বা পিতা তার সন্তানের জন্য টান অনুভব করবে তাও এক ধরণের ফিতরাত। ধর্ম মানুক বা না মানুক পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই ফিতরাতের কারণে মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রকের সুবিশাল অস্তিত্বকে বা স্রষ্টার উপস্থিতিকে অস্বীকার করতে পারে না। নাস্তিকতার মতো একটি ভয়াবহ প্রবণতা তাই হাজার হাজার বছরের পৃথিবীর ইতিহাসে অল্প কিছু লোকই কেবল গ্রহণ করেছে। তবে তারাও অন্তরের ভেতর এক ধরণের পীড়াদায়ক আতংকে ভোগে এই ভেবে যে-মৃত্যুর পরের জগত সম্পর্কে তো কেউ কিছুই জানে না। তখন সত্যিই যদি ধর্মের কথা ফলে যায় তাহলে আমার কি হবে? আর তাই দেখা যায় শেষ বয়সে পৌঁছে কোন নাস্তিক নিজের অজান্তেই কাছের মানুষকে বলে ফেলে, "ভাবছি নামাজ টামাজ শুরু করব কিনা"। কিংবা সারাজীবন ধার্মিকদের গালি দিয়ে নিজের মৃত্যুর পর জানাজা, সৎকার বা ফিউনারেল প্রেয়ার না দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়ে যায় না অধিকাংশ নাস্তিক, বরং কোন হুজুর বা পাদ্রী তা না দিতে চাইলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা।
নাস্তিকতার মতো মানবিক ব্যাধির বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান সত্যিই অবাক করার মতো। মানব ফিতরাতের বাইরের এই ব্যাপারটিকে আল্লাহ্ ততটুকুই গুরুত্ব দিয়েছেন যতটা স্বল্প তার প্রাপ্য হতে পারে। সমগ্র কুরআনে আল্লাহ্ নাস্তিকদের উল্লেখ করেছেন হাতে গোনা একটি কি দুটি আয়াতে। অথচ আল্লাহ্ কুরআনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুমিনদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন যারা আল্লাহ্র অস্তিত্বে শুধু নয়, আল্লাহ্র দেয়া বিধানকেও মেনে নিয়েছে। তিনি অসংখ্যবার মুশরিকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন যারা আল্লাহ্কে বিশ্বাস করার পরও তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরিক করে। তিনি উদ্দেশ্য করেছেন বনী ইসরাইল জাতিকে যাদের প্রতি তিনি সর্বাধিক সংখ্যক নবী পাঠিয়েছেন। তিনি উদ্দেশ্য করেছেন কাফির সম্প্রদায়কে, যারা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর রিসালাতকে বিশ্বাস করেনি। তিনি বলেছেন সমগ্র মানব জাতির উদ্দেশ্যে যাদের ভেতর মুসলিম-অমুসলিম, আস্তিক-নাস্তিক সবাই পড়ে।
কাফির শব্দটির অর্থ একেক ধর্ম বিশ্বাসীর কাছে একেক রকম দাঁড়াবে। খৃশটানদের হিসাবে কাফিরের সংজ্ঞা এক, মুসলিমদের কাছে আরেক তেমনি হিন্দুদের কাছেও আরেক রকম। মুসলিমদের কাছে নাস্তিকতার ব্যাপারে ইসলামের সামগ্রিক অবস্থান অন্য অবিশ্বাসী জাতিগুলোর মতোই যারা ইসলামকে অস্বীকার করেছে। শুধুমাত্র অস্বীকার করার জন্য কোন অবিশ্বাসীকে যে কোন প্রকার আঘাত বা অপমান করার সুযোগ ইসলামে নেই, বরং ইসলাম তাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় স্বাধীনতা সহ সকল নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে। প্রায় দেড় সহস্রাব্দ জুড়ে ইসলাম তার ভূমিতে এর অনন্য নজির পৃথিবীকে দেখিয়েছে। তবে এই অবস্থানের সীমা ততোক্ষণই অটুট থাকবে যতক্ষণ না কেউ আল্লাহ্, তাঁর রাসুল এবং ইসলামের কোন বিধান নিয়ে কটাক্ষ বা কুৎসা রটনা করবে। কোন মুসলিমের জন্য যেমন অন্য কোন ধর্ম বা তাদের উপাস্য নিয়ে কটুক্তি করার পথ আল্লাহ্ কুরআনে রুদ্ধ করে দিয়েছেন, তেমনি অবিশ্বাসী কেউ যদি এমন আল্লাহ্ ও রাসুলকে নিয়ে এমন কোন কাজ করে, তাহলে তাকে ছাড় দেয়ার কোন অবকাশও আল্লাহ্ ইসলামে রাখেননি। তাই নাস্তিকতাবাদে বিশ্বাসী কোন লোক যদি সারা জীবন তাদের বিশ্বাস নিয়ে মুসলিম মহল্লায় কাটিয়ে দেয় তাহলে তাদের সকল অধিকার সুনিশ্চিত থাকবে অন্য অমুসলিম জাতিগুলোর মতোই। তবে দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশের নাস্তিক সমাজ নাস্তিকতার নামে ইসলাম বিদ্বেষের পসরা খুলে বসেছে। তাদের এই বিদ্বেষ যদি একইভাবে সব ধর্মবিশ্বাসের বেলাতেও হতো, (ব্যাপারটা গ্রহণযোগ্য না হলেও), তাহলেও বলা যেত যে, তারা কেবল ইসলাম বিদ্বেষীই নয়, তাদের ধরণটাই এমন। কিন্তু তা নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে ইসলামকে সবার মখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে এরা এক পায়ে খাড়া।
যেমন-
এরা ইসলামকে নিয়ে কটাক্ষ করে লিখলে আপনি ধৈর্য্য ধরে বললেন, "আপনি নিজের বিশ্বাস নিয়ে থাকুন। অন্যের বিশ্বাস নিয়ে কটাক্ষ না করে সম্মান করুন বা অন্তত চুপ থাকুন"। তারা বলবে, "ইসলামের বিশ্বাস এতো ঠুনকো কেন যে সামান্য কথাতেই তার সম্মানহানী হবে?" আপনি যদি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো বা কপালে তিলক দেয়াকে হিন্দু কালচার বলে অন্য মুসলিমকে তা থেকে দূরে থাকার কথা জানান তাহলে এবার তারা বলবে "এরা মঙ্গলপ্রদ্বীপ তিলককে হেয় করে। ইসলামের বৈশিষ্ট্যই এইরকম যে এটা অন্য ধর্মকে সম্মান করতে জানে না"।
রাতে ভার্চুয়াল জগতে ধর্ষণ/ব্যভিচারের ইসলামী মৃত্যুদন্ডের শাস্তি নিয়ে পাতার পর পাতা লিখে যাবে। সকাল এলে এরা মানবতার মুখোশে ব্যানার নিয়ে দাঁড়াবে-"শিশু মহুয়া ধর্ষণকারীদের ফাঁসী চাই" বা "দিল্লীর বাস ধর্ষকদের ফাঁসী চাই"।
পুলিশ যখন মসজিদে ঢুকে নামাজরত মুসল্লিকে লাঠিপেটা করে, তখন এরা আড়ালে বসে হাসে। আর যখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসলামের নাম দিয়ে কোন অমুসলিম উড়ো চিঠি পাঠিয়ে ধরা পড়ে, তখন তার অধিকার রক্ষায় তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে।
রাসুলুল্লাহ সাঃ ও তাঁর স্ত্রীদেরকে নিয়ে তারা নানা কটুক্তি করে অথচ হাজার ব্যাভিচার ও অশ্লীলতায় ভরা গ্রীক মিথ বা অন্য কোন ধর্মীয় ব্যাভিচারকে তারা প্রশংসার বন্যায় ভাসায়।
মুসলিম নারীদের হিজাব পরা তাদের কাছে নারীদের বন্দীত্বের প্রতীক অথচ হিজাব পরিহিতা চার্চের নানদেরকে তারা কিছুই বলে না।
ধর্মীয় লেবাস দাড়ি টুপিকে কটাক্ষ করা তাদের প্রতিদিনের রুটিন কাজ অথচ অন্য ধর্মীয় লেবাস ক্রুশ, ধুতি, গেরুয়ার বিরুদ্ধে তাদের কোন কথা নেই।
মায়ানমারে হাজারো মুসলিমকে বিনা বিচারে মেরে ফেললে তা তাদের কাছে কিছু নয় অথচ ব্লাসফেমি আইন নিয়ে তাদের চিন্তার কোন শেষ নেই।
আরব উপদ্বীপে একটি ক্রিমিনালের মৃত্যুদন্ড দেয়া হলেও তারা তাদের কলমে আগুন ঝরায় অথচ আরবের বুকেই যখন ইসরাইল অগণিত অসহায় মুসলিমকে হত্যা করে তখন তারা নিরবে হাসে।
বাংলাদেশ ছাড়াও সারা পৃথিবীতেই নাস্তিক আছে এবং তারা তা গোপন না করে সরাসরি প্রকাশ করে। স্টিফেন হকিং থেকে শুরু করে চার্লস ডারউইন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা, যারা নাস্তিকদের যুক্তির অন্যতম আশ্রয়স্থল, তারা পর্যন্ত ইসলাম বা নবীদের নিয়ে এতো বিদ্বেষ পোষণ করেননি, যেমনটি করে বাংলাদেশের নাস্তিক সমাজ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কি দারুণভাবেই না বলেছেন কুরআনে, "বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে তাদের বাইরে। তবে তাদের অন্তর যা গোপন করা তা আরো ভয়াবহ"।
২
আপনি যদি কোন ভালো কাজ করেন তাহলে কেন তা করবেন? কারণ আপনি জানেন আল্লাহ্ তার যথাযথ বিনিময় আপনাকে দেবেন। রাস্তায় অসহায় একটি লোক আপনার কাছে খাবারের জন্য টাকা চাইলো। আপনি সবার অজান্তেই তার হাতে কটি টাকা তুলে দিলেন। আপনার মনে প্রশান্তির শীতল ঢেউ বয়ে গেল। আপনি জানেন কেউ দেখুক না দেখুক আল্লাহ্ দেখেছেন। তিনি আপনাকে এর প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। যদি কোন খারাপ কাজ করতে গিয়ে আপনি ফিরে আসেন তাহলে কেন ফিরে আসবেন? কারণ আপনি জানেন তা করলে আল্লাহ্র সীমা লঙ্ঘন করে আপনি তাঁর ক্রোধে পড়তে পারেন এবং বিরত থাকলে তার পুরষ্কারও রয়েছে আপনার জন্য।
কিন্তু যে লোকটি আল্লাহ্র অস্তিত্বকেই মানে না, মানে না কোন পরকাল বা কর্মের হিসাব নিকাশের ব্যাপারকে, তার ব্যাপারটা কতই না ভয়াবহ। সে যদি ভালো কাজ করে তাহলে সে জানে এতে লোক দেখানো ছাড়া আর কোন বিনিময় নেই। এরা যদি কোন খারাপ কাজ করে তাহলে এরা জানে এর জন্য কোন কিছুই তাদের আটকাবে না। বিয়ে করে সংসার করবে? দরকার কি? কয়েকটি লিভ টুগেদার করলেও কি এসে যায়। সন্তানের ভরণ-পোষণ করবে? না করলেই বা কি এসে যায়। বাবা-মাকে সম্মান করবো, ভালোবাসব? না করলে কি হবে? কিছুই না। লোক দেখানো ছাড়া আর কোন পিছুটান তো নেই। এই লোক দেখানোর জন্যই যদি কেউ মানবতা, নারী সমাজ বা বিশ্ব কল্যাণের একনিষ্ঠ সেবক হিসাবে আপনার পাশে দাঁড়ায় তাহলে ভেবে দেখুন তার আশ্রয়ে বা তার বন্ধুত্বে কতটুকু নিরাপদ আমি-আপনি-নারী সমাজ বা বিশ্ব মানবতা।
৩
খুব বিখ্যাত নন কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম সারির একজন সাবেক নাস্তিক যিনি পরবর্তিতে অত্যন্ত তাকওয়াবান একজন মুসলিমে পরিণত হয়েছেন তাঁর কথা বলি। একদিন তিনি বলছিলেন, "কুরআনের বিরুদ্ধে আমি অনেক বলেছি। কিন্তু সব অন্য রেফারেন্সে বা অন্য বই পড়ে। একদিন ভাবলাম কুরআনটা পড়েই আমি তার ভুলগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরছিনা কেন? বাজার থেকে সবচেয়ে ভালো ইংরেজি অনুবাদ কুরআন কিনে আমি বসলাম সেটা নিয়ে। হাতে দাগানোর জন্য রেখেছি লাল কলম। পড়ছি আর আমি অবাক হচ্ছি। কোন ভুল তো খুঁজে পাচ্ছিনা বরং অনেক কথা অন্তরে গিয়ে বিদ্ধ হচ্ছে এলোমেলো করে দিচ্ছে মনটাকে। এক সময় শেষ করলাম পুরোটা। কোথাও লাল কালি বসাতে পারলাম না। আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এবার কালো কালি নিয়ে বসলাম কুরআনের চমৎকার কথাগুলো দাগানোর জন্য। দেখলাম পুরো কুরআন কালো কালি দিয়ে দাগিয়ে ফেলেছি। আমি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। আল্লাহ্র বিরুদ্ধে কত কিছুইনা বলেছি অথচ আল্লাহ্ আমার মতো পাপিষ্ঠকে কুরআনের স্বাদ বুঝতে দিয়েছেন"। সেদিন তিনি বলছিলেন, "আল্লাহ আনসারস্ মি। আমি আল্লাহ্কে যা বলি তিনি তার জবাব দেন। আমি যা চাইছি তিনি তা শুনেন আমি বুঝতে পারি। তিনি আমাকে ফিরিয়ে দেননি"।
চোখের পানি ধরে রাখা কষ্টকর হয়েছিল।
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:১১
আবু উযাইর বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০০
বালক বন্ধু বলেছেন: এরা আসলে নাস্তিক না। এরা যে আসলে কি তা তারা নিজেরাও জানে না।
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:১২
আবু উযাইর বলেছেন: হা হা। ভাল বলেছেন।
৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০০
কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: অসাধারন লিখেছেন ভাই।
আপনাকে ধন্যবাদ।
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:১৩
আবু উযাইর বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেকদিন পর দেখা হলো।
৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
ফারজানা শিরিন বলেছেন: ভালো লাগলো । : )
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০০
মুহিত হোসেন সাহেল বলেছেন: কোটি কোটি লাইক
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++