নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Abu Jarir

আঃ জারীর

আঃ জারীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

১৯ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৫২

মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ



আল মায়েদাহ৩) আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে গ্রহণ করেছি৷



আল্লাহ তা'আলা ইসলামকে আমাদের জন্য জীবন বিধান মননীত করে আমাদের ধন্য করেছেন। আর আমরা যারা আল্লাহর ইসলাম নামক নি'য়ামত কবুল করেছি তারা হলাম মুসলিম। এখন প্রশ্ন হলো মুসলিম কি

শুধু দাবী করার বিষয় নাকি অন্য কিছু?



প্রথমেই আমরা জেনে নিব, মুসলিম কাকে বলে?

যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত হয়, আল্লাহকে নিজের মালিক, প্রভু ও মাবুদ হিসেবে মেনে নেয়, নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়ায় আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে সে-ই মুসলিম। এ আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির নাম 'ইসলাম' মানব জাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেসব নবী এসেছেন এটিই ছিল তাঁদের সবার দীন ও জীবন বিধান।



দ্বিতীয়তঃ কিভাবে মুসলিম হতে হয়? আমরাকি সত্যিকার অর্থে মুসলিম হতে পেরেছি?

﴿

আল বাকারাহ ১৩১) তার অবস্থা এই যে, যখন তার রব তাকে বললো, “মুসলিম হয়ে যাও৷ তখনই সে বলে উঠলো, “আমি বিশ্ব-জাহানের প্রভুর ‘মুসলিম’ হয়ে গেলাম৷”



তৃতীয়তঃ কেমন মুসলিম হতে হবে?



আল বাকারাহ ২০৮) হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না,কেননা সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন ৷

অর্থৎ পরিপূর্ণ মুসলিম হতে হেব। তার পক্ষেই পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়া সম্ভব যেকিনা আল্লাহর বিধান পরিপূর্ণ ভাবে মেনে নিয়েছে। নতুবা কাউকে আধা মুসলিম আবার কাউকে একচতুর্থাংশ মুসলিম হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অর্থাৎ যে যতটুকু আল্লাহর হুকুম বর্দারী করবে সে ততটুকু মুসলিম। কিন্তু আল্লাহর কাছে আধা বা এক চতুর্থাংশ মুসলিমের কোন মূল্য নেই। আল্লাহর কাছে তারাই মূল্যয়িত হবে যারা পরিপূর্ণ মুসলিম।



চুতুর্থতঃ কুরআনের ভাষায় কারা মুসলিম?



আল হাজ্জ৭৮) তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও৷ আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন “মুসলিম” এবং এর (কুরআন) মধ্যেও (তোমাদের নাম এটিই)যাতে রসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হন এবং তোমরা সাক্ষী হও লোকদের ওপর৷



আলে ইমরান১০২) হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো৷ মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়৷



মুসলিম হওয়া এবং টিকে থাকার জন্য যা প্রয়োজনঃ



একঃ জ্ঞাণঃ

আল বাকারাঃ ১২৯) হে আমাদের রব! এদের মধ্যে স্বয়ং এদের জাতি পরিসর থেকে এমন একজন রসূল পাঠাও যিনি এদেরকে তোমার আয়াত পাঠ করে শুনাবেন, এদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং এদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করবেন৷ অবশ্যি তুমি বড়ই প্রতিপত্তিশালী ও জ্ঞানবান৷



যুমারঃ ৯) যে অনুগত, রাতের বেলা দাঁড়ায় ও সিজদা করে আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের আশা করে? এদর জিজ্ঞেস করো যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে? কেবল বিবেক-বুদ্ধির অধিকারীরাই উপদেশ গ্রহণ করে৷



এখানে দুই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে তুলনা করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর মানুষ দুঃসময় আসলে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গায়রুল্লাহর বন্দেগী করে। আরেক শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর দাসত্বেকে তাদের স্থায়ী নীতি বানিয়ে নিয়েছে। রাতের অন্ধকারে আল্লাহর ইবাদাত করা তাদের একনিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ। এর মধ্যে প্রথম দলের অন্তরভুক্ত লোকদেরকে আল্লাহর তা'আলা জ্ঞানহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বড় বড় গ্রন্থাগার চষে থাকলেও কিছু এসে যায় না। আর দ্বিতীয় দলের অন্তরভুক্ত লোকদেরকে জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে একেবারে নিরক্ষর হলেও কিছু এসে যায় না। কারণ, প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান ও তদানুযায়ী কাজ। এর ওপরেই মানুষের সাফল্য নির্ভরশীল। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এই দুই শ্রেণীর মানুষ কি করে সমান হতে পারে। কি করে সম্ভব যে, তারা দুনিয়ার মিলে মিশে একই নিয়ম পন্থায় চলবে এবং আখেরাতেও একই পরিণামের সম্মুখীন হবে।



আল ফাতিরঃ ২৮) আর এভাবে মানুষ, জীব-জনোয়ার ও গৃহপালিত জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের রয়েছে৷ আসল ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একমাত্র জ্ঞান সম্পন্নরাই তাকে ভয় করে৷ নিসন্দেহে আল্লাহ পরাক্রমশালী এবং ক্ষমাশীল৷



আল্লাহর সৃষ্ট এ বিশ্ব-জাহানে কোথাও একঘেয়েমি ও বৈচিত্রহীনতা নেই। সর্বত্রই বৈচিত্র। একই মাটি ও একই পানি থেকে বিভিন্ন প্রকার গাছ উৎপন্ন হচ্ছে। একই গাছের দুটি ফলেরও বর্ণ, দৈহিক কাঠামো ও স্বাদ এক নয়। একই পাহাড়ের দিকে তাকালে তার মধ্যে দেখা যাবে নানা রংগের বাহার। তার বিভিন্ন অংশের বস্তুগত গঠনপ্রনালীতে বিরাট পার্থক্য পাওয়া যাবে। মানুষ ও পশুদের মধ্যে একই মা বাপের দুটি সন্তান ও একই রকম পাওয়া যাবে না। এ বিশ্ব জাহানে যদি কেই মেজাজ, প্রকৃতি ও মানসিকতার একাত্মতা সন্ধান করে এবং বিভিন্নতা, বৈচিত্রতা ও বৈষম্য দেখে আতংকিত হয়ে পড়ে,



যে ব্যক্তি আল্লাহর গুনাবলীর ব্যাপারে যতবেশী অজ্ঞ হবে সে তার ব্যাপারে তত বেশী নির্ভীক হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর শক্তিমত্তা, জ্ঞান প্রজ্ঞা, ও বিজ্ঞানময়তা, ক্রোধ, পরাক্রম সার্বভৌম কর্তৃত্ব ক্ষমতা ও অন্যান্য গুনাবালী সম্পর্কে যে ব্যক্তি যতবেশী জানবে সে তত বেশী তার নাফরমানী করতে ভয় পাবে। কাজেই আসলে এ আয়াতে জ্ঞান অর্থ দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, অংক ইত্যাদি স্কুল কলেজে পঠিত বিষয়ের জ্ঞান নয়। বরং এখানে জ্ঞান বলতে আল্লাহর গুনাবলীর জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। এ জন্য শিক্ষিত ও অশিক্ষিত হবার প্রশ্ন নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না সে যুগের শ্রেষ্ঠ পন্ডিত হলেও এ জ্ঞানের দৃষ্টিতে সে নিছক একজন মূর্খ ছাড়া আর কিছু নয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর গুনাবলী জানে এবং নিজের অন্তরে তার ভীতি পোষণ করে সে অশিক্ষিত হলেও জ্ঞানী।



হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) একথাই বলেছেন-



"বিপুল সংখ্যাক হাদীস জানা জ্ঞানের পরিচায়ক নয় বরং বেশী পরিমান আল্লাহভীতিই জ্ঞানের পরিচয় বহন করে"।



হযরত হাসান বাসরীও একথাই বলেছেন-



"আল্লাহকে না দেখে যে ভয় করে সেই হচ্ছে আলেম। আল্লাহ যা কিছু পছন্দ করেন সেদিকেই আকৃষ্ট হয় এবং সে বিষয়ে আল্লাহ নারাজ সে ব্যাপারে সে কোন আগ্রহ পোষণ করে না"।



তিনি এমন পরাক্রমশালী যে, নাফরমানদের যখনই চান পাকড়াও করতে পারেন। তার পাকড়াও মুক্ত হবার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু তার ক্ষমতাগুনের ফলেই জালেমরা অবকাশ পেয়ে চলছে।

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইলম সন্ধান কারা প্রত্যক মুসলমানের উপর ফরজ। (ইবনে মাজা)



দুইঃ মুসলিম এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য।



আল বাইয়েনাহঃ ৫) তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দীন৷



আল আন'আম ১৬২-১৬৩) বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, যার কোন শরীক নেই৷ এরি নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী৷



হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সেই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ লাভ করেছে, যে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে নিজের রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ (সঃ)-কে নবী হিসেবে কবুল করে নিয়েছে। (বুখারী)



অর্থৎ সেই মুসলিম জিনি জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মেনে চলে।



আল মায়েদাঃ ৪৫) আর যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই কাফের৷



আর যারা জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মানেনা বা সে অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে না তারাই কাফের।



মুসলিম হিসেবে আমাদের কাজঃ



একঃ একামতে দীনের আন্দোলনে শরিক হওয়া।



আল বাকারাঃ ১৯৩) তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং আল্লাহর দীন পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়৷ তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে জেনে রাখো যালেমদের ছাড়া আর করোর ওপর হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়৷



এখানে 'ফিতনা' বলতে এমন অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে যখন 'দীন' আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং এ ক্ষেত্রে যুদ্ধের একমাত্র উদ্দেশ্যই হয় ফিতনাকে নির্মুল করে দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া। আবার 'দীন' শব্দটির তাৎপর্য অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, আরবী ভাষায় দীন অর্থ হচ্ছে ''আনুগত্য'' এবং এর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে জীবন ব্যবস্থা। এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যেখানে কোন সত্তাকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে মেনে নিয়ে তার প্রদত্ত বিধান ও আইনের আনুগত্য করা হয়। দীনের এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে একথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সমাজে যখন মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন সমাজের এই অবস্থাকে ফিতনা বলা হয়। এই ফিতনার জায়গায় এমন একটি ব্যবস্থার সৃষ্টি করা ইসলামী জিহাদের লক্ষ্য যেখানে মানুষ একমাত্র আল্লাহর বিধানের অনুগত থাকবে।

কাফের, মুশরিক, নাস্তিক প্রত্যেকের নিজেদের ইচ্ছামত আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করার অধিকার আছে। তারা যার ইচ্ছে তার ইবাদাত-উপাসনা করতে পারে। অথবা চাইলে কারোর ইবাদাত নাও করতে পারে। তাদেরকে এই গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা থেকে বের করে আনার জন্য উপদেশ দিতে হবে, অনুরোধ করতে হবে। কিন্তু এ জন্য তাদের সাথে যুদ্ধ করা যাবে না। তবে আল্লাহর যমীনে আল্লহর আইন ছাড়া তাদের বাতিল আইন কানুন জারীর করার এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহ ছাড়া আর কারোর বান্দায় পরিণত করার অধিকার তাদের নেই। এই ফিতনা নির্মূল করার জন্য প্রয়োজন ও সুযোগ মতো মৌখিক প্রচারণা ও শক্তি প্রয়োগ উভয়টিই করা হবে। আর কাফের ও মুশরিকরা এই ফিতনা থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত মু'মিন তার সংগ্রাম থেকে নিশ্চেষ্ট ও নিবৃত্ত হবে না।



দুইঃ খলিফার দায়িত্ব পালন করা।



আল বাকারাহ৩০) আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই



যে ব্যক্তি কারো অধিকারের আওতাধীনে তারই অর্পিত ক্ষমতা-ইখতিয়ার ব্যবহার করে তাকে খলীফা নিজে মালিক নয় বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি। সে নিজে ক্ষমতার অধিকারী নয় বরং মালিক তাকে ক্ষমতার অধিকার দান করেছেন, তাই সে ক্ষমতা ব্যবহার করে। সে নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করার অধিকার রাখে না। বরং মালিকের ইচ্ছে পূরণ করাই হয় তার কাজ। যদি সে নিজেকে মালিক মনে করে বসে এবং তার ওপর অর্পিত ক্ষমতাকে নিজের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করতে থাকে অথবা আসল মালিককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে নিয়ে তারই ইচ্ছে পূরণ করতে এবং তার নির্দেশ পালন করতে থাকে, তাহলে এগুলো সবই বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য হবে।



আন নূরঃ ৫৫) আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন,



আল আন'আমঃ ১৬৫) তিনিই তোমাদের করেছেন দুনিয়ার প্রতিনিধি এবং যা কিছু তোমাদের দিয়েছেন তাতে তোমাদের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাউকে অন্যের ওপর অধিক মর্যাদা দান করেছেন৷ নিসন্দেহে তোমার রব শাস্তি দেবার ব্যাপারে অতি তৎপর এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷



এ বাক্যটির মধ্যে তিনটি সত্য বিবৃত হয়েছে:



একঃ সমস্ত মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। এ অর্থে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিলোকের বহু জিনিস মানুষের কাছে আমানত রেখেছেন এবং তা ব্যবহার করার স্বাধীন ক্ষমতা তাকে দান করেছেন।



দুইঃ আল্লাহ নিজেই এ প্রতিনিধিদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন। কারোর আমানতের গণ্ডী ব্যাপক আবার কারোর সীমাবদ্ধ। কাউকে বেশী জিনিস ব্যবহারের ক্ষমতা দিয়েছেন, কাউকে দিয়েছেন কম।কাউকে বেশী কর্মক্ষমতা দিয়েছেন, কাউকে কম। আবার কোন কোন মানুষকে কোন কোন মানুষের কাছে আমানত রেখেছেন।



তিনঃ এ সবকিছুই আসলে পরীক্ষার বিষয়বস্তু। সারা জীবনটাই একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র। আল্লাহ যাকে যা কিছুই দিয়েছেন তার মধ্যেই তার পরীক্ষা। সে কিভাবে আল্লাহর আমানত ব্যবহার করলো৷ আমানতের দায়িত্ব কতটুকু অনুধাবন করলো এবং তার হক আদায় করলো৷ কতটুকু নিজের যোগ্যতা বা অযোগ্যতার স্বাক্ষর রাখলো৷ এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে জীবনের অন্যান্য পর্যায়ে মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ ।



তিনঃ পথ হারা মানুষকে পথের সন্ধান দেয়া।



আন নাহল১২৫) হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে৷ তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং সে আছে সঠিক পথে৷



চারঃ পরিবার পরিজনকে সতর্ক করা।



আত তাহরীম ৬) হে লোকজন যারা ঈমান এনেছো, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার ও সন্তান-সন্তুতিকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো মানুষ এবং পাথর হবে যার জ্বালানী৷ সেখানে রুঢ় স্বভাব ও কঠোর হৃদয় ফেরেশতারা নিয়োজিত থাকবে যারা কখনো আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে না এবং তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তাই পালন করে৷



আল্লাহর আযাব থেকে নিজেকে রক্ষা কারা জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোন মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমবদ্ধ নয়। বরং প্রকৃতির বিধান যে পারিবারটির নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে স্থাপন করেছে তার সদস্যরা যাতে আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে সাধ্যমত সে শিক্ষা দীক্ষা দেয়াও তার কাজ। তারা যদি জাহান্নামের পথে চলতে থাকে তাহলে যতটা সম্ভব তাদেরকে সে পথ থেকে ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। তার সন্তান-সন্তুতি পৃথিবীতে সুখী হোক তার শুধু এই চিন্তা হওয়া উচিত নয়। বরং এর চেয়েও তার বড় চিন্তা হওয়া উচিত এই যে, তারা যেন আখেরাতে জাহান্নামের ইন্ধন না হয়।



হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমরা প্রত্যেকই তত্ত্বাবধায়ক এবং তাকে তার অধিনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও তত্ত্বাবধায়ক, তাকে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান-সন্তুতির তত্ত্বাবধায়িকা তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। (বুখারী)



পাঁচ সামাজিক দায়িত্ব পালন করা।



আলে ইমরান১১০) এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷ এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো৷ যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান৷



ছয়ঃ সত্যের স্বাক্ষ হিসেবে নিজেকে পেশ করা।



আল বাকারাহ১৪৩) আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী।



‘মধ্যপন্থী’ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাতের নেতৃত্বের ঘোষণাবানী। 'এভাবেই'শব্দটি সাহায্যে দু'দিকে ইংগিত করা হয়েছে।



ক)আল্লাহর পথপ্রদর্শনের দিকে ইংগিত করা হয়েছে। যার ফলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুগত্যকারীরা সত্য-সরল পথের সন্ধান পেয়েছে এবং তারা উন্নতি করতে করতে এমন একটি মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে যেখানে তাদেরকে 'মধ্যপন্থী উম্মাত' গণ্য করা হয়েছে।



খ) এ সাথে কিব্‌লাহ পরিবর্তনের দিকেও ইংগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বোধরা একদিক থেকে আর একদিকে মুখ ফিরানো মনে করছে। অথচ বাইতুল মাকদিস থেকে কা'বার দিকে মুখ ফিরানোর অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে বিশ্ববাসীর নেতৃত্ব পদ থেকে যথানিয়মে হটিয়ে উম্মাতে মুহাম্মাদীয়াকে সে পদে বসিয়ে দিলেন।



'মধ্যপন্থী উম্মাত' শব্দটি অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক তাৎপর্যের অধিকারী। এর অর্থ হচ্ছে, এমন একটি উৎকৃষ্ট ও উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন দল, যারা নিজেরা ইনসাফ, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ভারসাম্যের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, দুনিয়ার জাতিদের মধ্যে যারা কেন্দ্রীয় আসন লাভের যোগ্যতা রাখে, সত্য ও সততার ভিত্তিতে সবার সাথে যাদের সম্পর্ক সমান এবং কারোর সাথে যাদের কোন অবৈধ ও অন্যায় সম্পর্ক নেই ।



"তোমরা লোকদের ওপর সাক্ষী হবে এবং রসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হবেন।" এ বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, আখেরাতে যখন সমগ্র মানবজাতিকে একত্র করে তাদের হিসেব নেয়া হবে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল প্রতিনিধি হিসেবে রসূল তোমাদের ব্যাপারে এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, সুস্থ ও সঠিক চিন্তা এবং সৎকাজ ও সুবিচারের যে শিক্ষা দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল তা তিনি তোমাদের কাছে হুবহু এবং পুরোপুরি পৌছিয়ে দিয়েছিন আর বাস্তবে সেই অনুযায়ী নিজে কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন।

এর সোজা অর্থ হচ্ছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে এ উম্মাতের জন্য আল্লাহভীতি, সত্য-সঠিক পথ অবলম্বন, সুবিচার, ন্যায়-নিষ্ঠা ও সত্যপ্রীতির জীবন্ত সাক্ষী হয়েছেন তেমনিভাবে এ উম্মাতকেও সারা দুনিয়াবাসীদের জন্য জীবন্ত সাক্ষীতে পরিণত হতে হবে। এমন কি তাদের কথা, কর্ম, আচরণ ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয় দেখে দুনিয়াবাসী আল্লাহভীতি, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও সত্যপ্রীতির শিক্ষা গ্রহণ করবে। এর আর একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর হিদায়াত আমাদের কাছে পৌছাবার ব্যাপারে যেমন রসূলের দায়িত্ব ছিল বড়ই সুকঠিন, এমনকি এ ব্যাপারে সামান্য ত্রুটি বা গাফলতি হলে আল্লাহর দরবারে তিনি পাকড়াও হতেন, অনুরূপভাবে এ হিদায়াতকে দুনিয়ার সাধারণ মানুষের কাছে পৌছাবার ব্যাপারেও আমাদের ওপর কঠিন দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে। যদি আমরা আল্লাহর আদালতে যথার্থই এ মর্মে সাক্ষ্য দিতে ব্যর্থ হই যে, "তোমার রসূলের মাধ্যমে তোমার যে হিদায়াত আমরা পেয়েছিলাম তা তোমার বান্দাদের কাছে পৌছাবার ব্যাপারে আমরা কোন প্রকার ত্রুটি করিনি", তাহলে আমরা সেদিন মারাত্মকভাবে পাকড়াও হয়ে যাবো। সেদিন এ নেতৃত্বের অহংকার সেখানে আমাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের নেতৃত্বের যুগে আমাদের যথার্থ ত্রুটির কারণে মানুষের চিন্তায় ও কর্মে যে সমস্ত গলদ দেখা দেবে, তার ফলে দুনিয়ায় যেসব গোমরাহী ছড়িয়ে পড়বে এবং যত বিপর্যয় ও বিশৃংখলার রাজত্ব বিস্তৃত হবে সে সবের জন্য অসৎ নেতৃবর্গ এবং মানুষ ও জিন শয়তানদের সাথে সাথে আমরাও পাকড়াও হবো। আমাদের জিজ্ঞেস করা হবে, পৃথিবীতে যখন জুলুম, নির্যাতন, অন্যায়, অত্যাচার, পাপ ও ভ্রষ্টতার রাজত্ব বিস্তৃত হয়েছিল তখন তোমরা কোথায় ছিলে৷



মুসলিম হিসেবে দায়িত্ব পালনের পথে অন্তরায়ঃ



মুসলিম হিসেবে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করতে গেলে চার শ্রেণীর শক্তি সামনে বাঁধার পাহাড় দাড় করিয়ে দেয়ঃ

ক) জালেম সরকার।

খ) সমাজে কায়েমি স্বার্থবাদী শক্তি বা সমাজ পতি।

গ) মুনাফা খোড় ব্যবসায়ী/কর্পরেট শাক্তি।

ঘ) সুবিধা ভোগী হারাম খোড় আলেম শ্রেণী।

উপসংহারঃ মুসলমানের যে দায়িত্ব তা আল্লাহ প্রদত্ত। তাই কাজটা যে আল্লাহর কাজ তা আমরা বলতে পারি। আল্লাহ তাঁর কাজকে মুমিন বান্দাদের মাধ্যমে আঞ্জাম দিতে চান। এজন্য যারা আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালনের সঙ্কল্প করে, আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন।



তবে শর্ত হচ্ছে এই যেঃ

আল বাকারঃ ১৫৫) আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে



যদি আমরা ছবর ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে পারি। কোন অবস্থায়ই বুদ্ধি ও বিচক্ষনতা পরিহার করলে না চলি। তাহলে আমাদের সংখ্যা যত স্বল্পই হোক না কেন এবং আমাদের সাজ-সরঞ্জাম, উপায়-উপাকরণাদি যত সামান্যই হোক না কেন অবশেষে আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থন, আমাদের সকল অভাব পূরণ করে দিবে।সকল অভাব পূরণ করে দিবে।





আবেদনঃ তাফহীমুল কুরআন ও বিভিন্ন সাহিত্যের আলোকে নিজের চেষ্টায় যা কিছু লিখেছি তা কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে জানিনা। নোটটা সমৃদ্ধ করার জন্য সকলের মূল্যবান মতামত কামনা করছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.