নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উতস

আবু সায়েদ

student

আবু সায়েদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে বেশে জেরুজালেমে প্রবেশ করেছিলেন ২য় খলিফা আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর রাঃ

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০৫

১ম খলিফা হযরত আবু বক্বর রাঃ এর আমল থেকেই ফিলীস্তিনের দায়িত্ত্বে ছিলে মহান সাহাবী হযরত আমর ইবনে আস রাঃ। নবীর সাহচর্যপ্রাপ্ত সাহাবী রাঃ গণ বিভিন্ন দিকে দ্বীন প্রচারে নিমগ্ন ছিলেন। এই মহান সাহাবী একদা 'বায়তুল মকাদ্দাস' অবরোধ করে বসলেন। কিছু দিন পরে সিরিয়া অঞ্চলের দায়িত্ত্বপ্রাপ্ত সাহাবী 'আমীনুল উম্মাহ' হযরত আবু উবায়দাহ রাঃ এসে যোগ দিলেন আ্মর রাঃ এর সাথে। অবস্থা বেগতিক দেখে খ্রিস্টানরা সন্ধির প্রস্তাব দিল।

তখন জেরুসালেমের প্রশাসক ছিলেন বাইজেন্টাইন সরকারের প্রতিনিধি সোফ্রোনিয়াস। তিনি ছিলেন স্থানীয় গির্জার প্রধান যাজক। মুসলিম বাহিনী কর্তৃক জেরুসালেম অবরোধ করার পর সোফ্রোনিয়াস এই অদ্ভুত শর্তারোপ করেন, মুসলিমদের খলিফা নিজে নিজে এসে আত্মসমর্পণ গ্রহণ না করলে আমরা আত্মসমর্পণ করবো না। [ অনুসন্ধিতসু লেখকগণ লিখেন, মহানবী সাঃ এর প্রতিনিধি বা খলিফারা কেমন হবেন, তাদের চাল-চলন কে্মন হবে, তা আগের সব আসমানী কিতাবে লিখা ছিল। এজন্যই মুসলিম জাহানের খলিফাকে দেখার জন্য খ্রিস্টান যাজকের এই শর্ত ]

মদীনায় পরামর্শ করে খলিফা ওমর রাঃ কয়েকজন মুহাজের ও আনসার সাহাবী সঙ্গে নিয়ে আরবী ঘোড়ায় চড়ে ফিলিস্তীন অভিমূখে রাওনা হলেন। অগণিত লস্কর, নাকাড়া, হাতি -ঘোড়া, দাস-দাসী কিছুই ছিল না অর্ধ-দুনিয়ার শাসনকর্তার সাথে।

মুসলিম সেনাপতি ইয়াজিদ ইবনে সুফিয়ান রাঃ, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাঃ প্রমুখ সাহাবীগণ খলিফার সংবর্ধ্না করলেন। দীর্ঘদিন সিরিয়ায় অবস্থানের ফলে তাদের পোশাকে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল। তাদের গায়ে ধিলা চোগা ও মূল্যবান পোশাক ছিল। খলিফা রাগান্বিত হয়ে তাদের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করতঃ বলতে লাগলেন- "ধিক তোমাদের, এত শীঘ্র তোমরা অনা্রবদের চালচলনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছ?" তারা সমস্বরে বললেন-" এই চোগার নিচে অস্ত্র-শস্ত্র রেখেছি"। খলিফা বললেন-"তবে আচ্ছা"।

অতঃপর খলিফা একটা উচু টিলার উপরে দাড়িয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দামেস্কের সবুজ খেত, উদ্যান ও অট্টালিকা দেখে বলতে লাগলেন-"তারা কত মনোরম উদ্যান ও ঝরনা ত্যাগ করে চলে গেল" (আল-কোরান)। জাবিয়া নামক স্থানে খলিফা অবস্থান করে সন্ধিপত্র লেখাইলেন। খ্রিস্টান্দের একদল প্রতিনি্ধি এসে সাক্ষাত করলেন। সন্ধিপত্র সম্পাদিত হয়ে গেলে আমীরুল মুমিনীন বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে রাওয়ানা হলেন। তার ঘোড়া ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। একটা তুর্কী ঘোড়া আনাইলেন। ঘোড়ার উপরে আরোহন করা মাত্রই তা রাজকীয় ভঙ্গিতে চলতে শুরু করল। ওমর রাঃ বললেন- " রে ঘোড়া, তুই অহংকারী চাল চলন কোথায় শিখলি?" খলিফা এটাও বললেন, "এই ঘোড়ায় চড়ে আমি আ্মার মনের অবস্থা আগের মত পাই নি, ( এ কারনে এটা ত্যাগ করলাম)"। এই বলিয়া খলিফা নেমে হেটে চলতে লাগলেন।

বায়তুল মোকাদ্দাসের নিকটবর্তী হলে হযরত আবু ওবায়দাহ রাঃ ও অন্যারা এগিয়ে আসলেন। খলিফার সা্ধারন পোশাক ও আসবাব দেখে স্থানীয় সাহাবিরা লজ্জিত হলেন। তারা নতুন পোশাক হাজির করলেন। খলিফা, আমিরুল মুমিনীন ওমর রাঃ এখানে সেই বিখ্যাত উক্তি করেন-
"দেখো আবু ওবায়দা, (আমরা অতি তুচ্ছ ছিলাম) আল্লাহ আমাদের ইজ্জত ও সম্মান দিয়েছেন ইসলামের কারনে। আ্মার জন্য এই পুরাতন পোশাকই যথেষ্ট।"

সন্ধি করে খলিফা বায়তুল মোকাদ্দাসে প্রবেশ করলেন। তথাকার পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করতঃ খোদার শুকরিয়া আদায় করলেন। এরপর খ্রিস্টান নেতার সাথে সেখানকার গীর্জা ও অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখতে লাগলেন। নামাজের সময় হলে সোফ্রোনিয়াস তাঁকে গির্জার ভেতরে নামাজ আদায় করার আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু উমর রা. তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, যদি তিনি সেখানে নামাজ আদায় করেন তাহলে পরবর্তীতে মুসলিমরা এই অজুহাত দেখিয়ে গির্জাকে মসজিদে রূপান্তরিত করবে যা খ্রিস্টান সমাজকে তাদের একটি পবিত্র স্থান থেকে বঞ্চিত করবে। পরে তিনি গির্জার বাইরে নামাজ আদায় করেন। [ এতদ্বসত্ত্বেও, অমুসলিমরা মুসলমান্দের সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী বলে থাকে- যা অতিশয় অন্যায়]।
তবে, বাস্তবিকই ওমর রাঃ গীর্যার বাইরে যে স্থানে নামাজ পড়েছিলেন, মুসলমানেরা পরে সে স্থানে এ্কটা মসজিদ নির্মান করে, আজো যা "মসজিদে ওমর" নামে খ্যাত হয়ে রয়েছে।

একদিন খলিফা হযরত বেলাল রাঃ কে তথায় আযান দিতে বললেন। বেলালের আযান শুনে আবু উবায়দা ও মুয়ায ইবনে জাবাল রাঃ কাদিতে কাদিতে বেহুশ হয়ে পড়লেন।

কিছুদিন অবস্থান শেষে, কিছু দরকারী সরকারী নির্দেশ প্রদান করতঃ খলিফা সেখান হতে বিদায় নিলেন।

( আল্লামা শিবলী নোমানী রচিত ওমর ফারুক রাঃ ও অন্যান্য শুদ্ধ তথ্য-নির্ভর কিতাবের অবলম্বনে)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


এতদিন ছিল উনি একজন ভৃত্যসহ একটি উট নিয়ে জেরুসালেম পৌঁছেন; আজকে আপনি বলছেন, কিছু আনসার মোহাজের ও ঘোড়া নিয়ে পৌঁছেন। যাক, আপনি যা যা দেখেছেন, তাই বলছেন।

আমি দেখনি, তবে তিনি বিজয়ী সৈন্য-বাহিননীর মুল কমান্ডারদের নিয়ে নগরে প্রবেশ করেছিলেন, সাথে অনেক সৈনিক ও বডিগার্ড ছিল; আমি যেটা বললাম, এটাকে বলে, "টেকনিক্যাল এভিডেন্স"।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৯

আবু সায়েদ বলেছেন: এই প্রশ্ন যে উঠবে, তা আমি জানি। কারন ঘটনাটি বহুল প্রচলিত। হযরত ওমর রাঃ ৩/৪ বার সিরিয়া ও ফিলিস্তিন এলাকা সফর করেছেন। ত্ন্মধ্যে একবার তিনি ঐ উট ও ভৃত্যসহ করেছিলেন। তবে তা জেরুজালেম জয়ের সময় নয়, অন্য এক সফরে। এটাই ঐতিহাসিকভাবে অধিকতর শক্ত তথ্য।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখক বলেছেন, " এই প্রশ্ন যে উঠবে, তা আমি জানি। কারন ঘটনাটি বহুল প্রচলিত। "

-এগুলো সবই অনুমানভিত্তিক; উনাদের জন্য ইতিহাস লেখক ছিলেন না; কেহ বলেছে, তারপর বলেছে; আনুমানিকভাবে লেখা হয়েছে সাম্প্রতিক।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৫

আবু সায়েদ বলেছেন: "-এগুলো সবই অনুমানভিত্তিক; উনাদের জন্য ইতিহাস লেখক ছিলেন না; কেহ বলেছে, তারপর বলেছে; আনুমানিকভাবে লেখা হয়েছে সাম্প্রতিক। "

আপনার এহেন অনুমানভিত্তিক ও দায়িত্তজ্ঞানহীন মন্তব্যে কষ্ট পেলাম।

ইতিহাস বলে যদি কিছু থাকে, সে ইতিহাস রচনা ও সংরক্ষনের মূল কারিগর মুসল্মানেরাই। তথ্য কিভাবে সঠিকভাবে সংরক্ষন করতে হয়, তার আবিষ্কারক মুসল্মানেরাই। এখানে অনুমানের কিছু নাই। নতুন-পুরনো সব ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে তবেই বলুন। তবে ইতিহাসের ঘটনা বর্ননার কারনে একটু এদিক-সেদিক হতে পারে, এই যা।

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৮

আবু সায়েদ বলেছেন: কোরান-হাদিসের কথা বাদই দিলাম, মুসল্মানদের অতীত ঘটনা ও ইতিহাস মুসলিম ঐতিহাসিকগণ যেভাবে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষন করেছেন, এর নযির দুনিয়ার আর কোন জাতির মধ্যে পাওয়া যায় না। এটাই বাস্তবতা।

৪| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৪

কানিজ রিনা বলেছেন: আবু সুফিয়ানের ছেলে মুয়াবিয়া মুয়াবিয়ার
ছেলে ইয়াজিদ। এরা কি বাপ দাদা নাতি
একই সাথে গিয়েছিল।?

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০৮

আবু সায়েদ বলেছেন: এই ইয়াজিদ, মুয়াবিয়া রাঃ এর ছেলে ইয়াজিদ নয়। ইনি সুফিয়ানের পুত্র, ইয়াজিদ ইবনে সুফিয়ান রাঃ। ইনি ওমর রাঃ এর আমলে দীর্ঘদিন শামের (সিরিয়ার) গভর্নর ছিলেন। এনার ইন্তিকালের পরে এনার ভাই মুয়াবিয়া ইবনে সুফিয়ান রাঃ শামের গভর্নর হন। পরে এই মুয়াবিয়া রাঃ পুরা মুস্লিম বিশ্বের আমীর হন। এর পরে এনার কুখ্যাত পুত্র ইয়াজিদ ৪/৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকে।

সুতরাং, নাম একই হলেও এই দুই ইয়াজিদ ভিন্ন ব্যক্তি।

ইয়াজিদ ইবনে সুফিয়ান রাঃ সাহাবী ছিলেন। কিন্তু পরের ইয়াজিদ (ইবনে মুয়াবিয়া) সাহাবী ছিলেন না। উমাইয়া বংশে পরবর্তীতে ইয়াজিদ নামে আরো ২/১ জন আমীর/খলিফা মস্নদে এসেছিলেন। সুতরাং, সব ইয়াজিদ এক ব্যক্তি নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.