নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উতস

আবু সায়েদ

student

আবু সায়েদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ব তাবলীগ জামাতের গৌরব-দূর্গের পতনঃ (পর্ব-৩ঃ দেওবন্দের সাথে নেযামুদ্দিনের সম্পর্ক, পেছনে ফিরে দেখা)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১২

আলমী শুরা বনাম সাআদ দ্বন্দ্বের সাথে নতুন করে যুক্ত হয় ধর্মীয় বিতর্ক। মাওলানা সাদের কিছু ধর্মীয় অপব্যাক্ষ্যা ও দৃষ্টিভঙ্গীর বিরুদ্ধে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ ২০১৬ সালে ফতোয়া ইস্যু করে। এরফলে মাওলানা সাআদকে বিতর্কে নতুন উন্মাদনা চলে আসে।

দেওবন্দ মাদ্রাসার পরিচিতিঃ
ভারতের দেওবন্দে অবস্থিত দেওবন্দ মাদ্রাসা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভারতীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর দ্বীনী চেতনা ও ধর্ম, ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষার তাগিদেই এ প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভব। যথাযথভাবেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে ইসলাম ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষার বহু দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী ও যুগান্তকারী আন্দোলন এসেছে এ দেওবন্দ মাদ্রাসার সন্তানদের হাত ধরে। এ মাদ্রাসা এমন এমন ব্যক্তিদের তৈরি করেছে, যাদের একেকজনের ব্যক্তিত্ত্ব ছিল একেকটা যুগ। মাওলানা কাসেম নানুতুবী, শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, শায়খুল ইসলাম মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী, হাকিমুল উম্মত মাওলানা শরাফ আলী থানভী এনারা ছিলেন এ দেওবন্দের ফসল। এখন পর্যন্ত এ মাদ্রাসা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে সঠিক দ্বীনী শিক্ষা ও আক্বীদার প্রচার ও প্রসারের ধারক ও বাহক। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেওবন্দের সিলসিলার অসংখ্য মাদ্রসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তাবলীগ জামাতের সাথে দেওবন্দের সম্পর্কঃ
তাবলীগ জামাতের সূচনালগ্ন থেকেই দেওবন্দসহ সকল ক্বোওমী মাদ্রাসার সাথে তাবলীগ জামাতের সম্পর্ক গভীর। দেওবন্দ ও সাহারানপুরের কোলেই লালিত-পালিত হয়ে কৈশর থেকে যৌবনে পদার্পন করেছে তাবলীগ জামাত। এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রঃ দেওবন্দের সন্তান ছিলেন। দেওবন্দ ও সাহারানপুরের মাশায়েখগণ সর্বদাই এ জামাতের দেখভাল করতেন। তাবলীগ জামাতের ছয় উসুল দেওবন্দের শায়েখ মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ সাহেবের সাথে পরামর্শ করেই ঠিক করা হয়েছে। তাবলীগ জামাতের ২য় ও ৩য় আমীর ঠিক (নির্ধারন) করে দিয়েছেন দেওবন্দ ও সাহারানপুরের মাশায়েখগণ। তারাই সময়ে সময়ে তাবলীগী সাথিদের বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দিতেন ও তাম্বীহ করতেন। তারাই তাবলীগ জামাতের পক্ষে গিয়ে বেদাত ও বাতিল-পন্থীদের মোকাবেলা করতেন। অর্থাৎ, তাবলীগ জামাতের কাজ-কে তারা নিজেদের কাজ বলেই জ্ঞান করতেন।

এরকম ঘটনাও ঘটেছে, মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রঃ কোথাও রাজনৈতিক সমাবেশ করছেন; শুনেছেন যে পাশে ইলিয়াস রঃ এর তাবলীগী জলসা হচ্ছে- তখন তিনি (মাদানী রঃ) ওনার অনুসারীদের নিয়ে ইলিয়াস রঃ এর তাবলীগী জলসায় যোগ দিয়েছেন। অনুরূপভাবে, কখোন ইলিয়াস রঃ ওনার তাবলিগী অনুসারীদের নিয়ে মাদানী রঃ এর মজিলিসে যোগ দিতেন।

অবশ্য, ২য় আমীর ইউসুফ রঃ তাবলীগের সাথিদের যেকোন রাজনৈতিক জলসায় যোগ দেওয়া পছন্দ করতেন না বরং বিরত রাখতেন। অদ্যাবধি এভাবেই চলে আসছে।

দেওবন্দভিত্তিক ক্বওমী মাদ্রাসা, হক্ব আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের প্রতি তাবলীগ জামাতের দৃষ্টিভঙ্গীঃ
তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রঃ সর্বদাই তার সাথিদেরকে আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখার তাগিদ দিতেন। তিনি ওনার সাথিদের দেওবন্দ ও সাহারানপুরের মাশায়েখগণের নিকট, আব্দুল কাদের রায়পুরী রঃ ইত্যাদি মাশায়েখগণের খানকায় যাওয়ার জোর তাগিদ দিতেন। তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতাসহ, ২য় ও ৩য় আমীরসহ অনেক মুরুব্বি-ই যুগের স্বনামধন্য হযরত-শায়েখদের মুরীদ ও খলিফা ছিলেন। হোসাইন আহমদ মাদানী রঃ, আশ্রাফ আলী থানভী রঃ, শায়খুল হাদীস যাকারিয়া রঃ, আব্দুল কাদের রায়পুরী রঃ, আবুল হাসান আলী নদভী রঃ অর্থাৎ যুগের বড় ওলামায়েকেরামগণ সকলেই তাবলীগের মুরুব্বি ও কল্যানকামী বিবেচিত হতেন।

এমন কি, তাবলীগে জড়িত ছিলেন অনেক বড় আলেম স্বয়ং; তারপরেও তাবলীগের মার্কায থেকে এই নির্দেশনা ছিল যে সাথিরা মাছালা ও অন্যান্য দ্বীনী এলেম হাসিলের জন্য মাদ্রাসা ও ওলামাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখবে। তেমনি যমানার হক্বানী পীরদের সাথেও তাবলীগী সাথিরা ইসলাহী সম্পর্ক রাখতে পারবে। ওলামাদের খেদমতে সর্বদাই তাবলীগী সাথিরা অগ্রনী ভূমিকা রাখতেন।

মাওলানা সাআদকেন্দ্রিক সমস্যা ও দেওবন্দের ভূমিকাঃ (দেওবন্দের ফতোয়ার প্রেক্ষাপট)
মাওলানা সাআদ তাবলীগ জামাতের চিরন্তন নীতি ভেঙ্গে কিছু নতুন/নব্য কথা আমদানী করেন ও সম্পুর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রণয়ন করেন (এ সমস্যা নিয়ে পরে বিস্তারিত লেখা হবে)। মূলত, তাবলীগ জামাত কোন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রণয়নের জায়গা নয়, এটা হক্বানী ওলামাদের অনুসারী নেহায়েত এক দ্বীনী দাওয়াতের জামাত। তাই মাছয়ালা কেন্দ্রিক বিতর্ক থেকে তাবলীগের মুরুব্বিরা সর্বদাই থাকতেন দূরে।

মাওলানা সাআদের নব্য-দৃষ্টভঙ্গীর ব্যাপারে শুরুতে দেওবন্দ নীরব ছিল। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আন্তর্জাতিক তাবলীগী জলসায় মাওলানা সাআদ ব্যাপক আকারে তার নতুন দৃষ্টভঙ্গী প্রচার করেন ও তাবলীগী সরলমনা স্বল্পজ্ঞানের মানুষগুলি আগ-পিছ না ভেবে সেই কথা/দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহন করতে থাকে ও প্রচার করতে থাকে। মাওলানা সাদের কথা প্রচারের একটা বড় মুখপাত্র ছিল টঙ্গী এজতেমা।

শুধু নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নয়, মাওলানা সাআদ তার বিভিন্ন বয়ানে ক্বওমী মাদ্রাসা ও দেওবন্দ-কে আক্রমন করতে থাকেন ও তাদের সমালোচনা করতে থাকেন। যা তাবলীগী জলসায় একেবারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সত্ত্বর এ ব্যাপারটী জগতের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের নযরে আসে। তারা এটাকে এক অশনি সঙ্কেত ও ফেতনা হিসেবে গ্রাহ্য করেন; কেননা তাবলীগের কাজে জড়িত বেশিরভাগ মানুষ হল আম-জনতা (এলেমহীন সাধারন মানুষ)। তাই ওলামারা (ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের) সাআদ সাহেব-কে পত্রের মাধ্যমে এসব কথা না বলতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সাআদ সাহেব তার অবস্থানে অনড় থাকেন ও এসব পত্র অগ্রাহ্য করেন।

উপায়ন্তর না দেখে, বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ ওলামারা “দেওবন্দ” মাদ্রাসায় পত্র লিখেন, যোগাযোগ করেন ও এ ব্যাপারে একটা পদক্ষেপ নিতে বলেন। দেওবন্দ ও সাহারানপুর থেকে বিভিন্ন সময়ে নেযামুদিনে মাওলানা সাআদ সাহেবের নিকট বহু পত্র লিখা হয় এসব ব্যাপারে (কারন, দেওবন্দ ও সাহারানপুরের মাশায়েখগণ উক্ত সমস্যা ভেতরে ভেতরেই সমাধান করতে চেয়েছিলেন); কিন্তু সাআদ সাহেব কর্নপাত করেন নি ও ফলাফল পাওয়া যায় নি। পরিশেষে, দ্বীনের সঠিক ও সুষ্ঠূ ধারা বজায় রাখা ও তাবলীগের কাজ-কে সুস্থ ও সঠিক পথে রাখার স্বার্থে (যেহেতু তাবলীগ জামাতের কাজ একটা নিখাদ, নির্ভেজাল দ্বীনী কাজ মাত্র) মাওলানা সাআদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন।

উক্ত ফতোয়ার প্রভাব ও দেওবন্দের সাথে সম্পর্কে চিড়ঃ
উক্ত ফতোয়ার প্রভাব পড়ে সুদূরপ্রাসারী। সচেতন দ্বীনীসমাজ ও তাবলীগী জনতা এ ফতোয়া গ্রহন করে ও সাআদ সাহেব-কে বর্জন করে। কিন্তু, অতিশয় দুঃক্ষজনক হল (যে ব্যাপারে আগে থেকেই আশঙ্কা করাই ছিল)- সাআদ সাহেবের একদল অন্ধ অনুসারী জন্ম নিয়েছে যারা এ ফতোয়া মেনে নেয় নি, বরং ওলামায়ে হক্বের বিরুদ্ধে গালি ও বিষোদগার করতে থাকে। তাবলীগ জামাতের চিরন্তন নীতি ও রীতি থেকে তাদের পদস্খলন ঘটে, যার ফলে দেওবন্দসহ সকল ক্বওমী মাদ্রাসার সাথে বর্তমানে নেযামুদ্দিন মার্কাযের মারাত্মক দুরত্ত্ব তৈরি হয়। এর ফলাফল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেবল আল্লাহই জানেন।!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: তাবলীগ সকল সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে সগৌরবে এগিয়ে চলুক। মানুষকে দ্বীন ও ঈমানের পথে ফিরিয়ে আনুক।

এটাই এখন চাওয়া।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:২৫

আবু সায়েদ বলেছেন: সংকট অনেক গভীরে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.