নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন বুনি দিবশিনি

আহমেদ বায়েজীদের ব্লগ

আহমেদ বায়েজীদ

আহমেদ বায়েজীদের ব্লগ

আহমেদ বায়েজীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প বোধোদয়

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

কয়েক দিন ধরেই জায়েদ এর স্ত্রী ভাবছে কিভাবে কথাটা জায়েদের কানে তোলা যায়। বিষয়টা নিয়ে জায়েদও যে বেশ সমস্যায় আছে সেটাও বুঝতে পারছে। তারপরও বলতে পারছে না সাহস করে। সমস্যাটা জায়েদ এর বুড়ো বাপকে নিয়ে। নব্বই বছরের এই বুড়ো একদম জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। নিজে থেকে খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা কিছুই করতে পারে না। কথাও বলতে পারে না। বুড়ো শশুড়ের খেদমত করতে করতে একদম বিরক্ত জায়েদের স্ত্রী।



সংসারের অবস্থাও ভালো না। জায়েদের অল্প আয়ে এক ছেলে নিয়ে তাদেরই চলতে কষ্ট হয়। তার উপর আবার তার বাবার খরচ। বুুড়োর জন্য আলাদা খাবার কিনতে হয়। তরল ও নরম খাবার। ঔষধপত্র তো আছেই। সব মিলে বুড়ো শশুরকে একটা আপদ হিসেবে দেখছে জায়েদের স্ত্রী। তাই সেদিন সে সাহস করে কথাটা বলেই ফেললো জায়েদের কাছে।

‘এমনিতেই আমাদের সংসারে অভাবের শেষ নেই, তার উপর আবার তোমার বাবাকে নিয়ে বাড়তি ঝামেলা। তার জন্য আমিও ঘরের কাজ ঠিক মতো করতে পারি না। এভাবে চললে তো কিছুদিন পর আমরা ভীষণ অভাবে পরবো।

জায়েদ বললো- বুঝি তো আমিও; কিন্তু করার তো কিছু নেই। নিজের বাবাকে তো আর না খাইয়ে রাখতে পারি না। বুড়ো মানুষ যাবে বা কোথায়?

কিন্তু এভাবে তো আমরা আমাদের ভবিষৎত নষ্ট করতে পারি না। কয়েকদিন পর আমাদের ছেলে বড় হবে। তখন তো তার জন্যও খরচ বাড়বে। তোমার বাবার খেদমত করে সময় নষ্ট না করলে আমিও বাড়িতে বসে ছোট খাটো কাজ করে পয়সা রোজগার করতে পারতাম। বললো জায়েদের স্ত্রী।

কি করবো বলো। থাক বুড়ো মানুষ ক’দিন বা বাঁচবে। নিরুপায় হয়ে বললো জায়েদ।

তারচেয়ে এক কাজ করলে কেমন হয়? উৎসাহ নিয়ে বললো জায়েদের স্ত্রী।

কি কাজ?

তোমার বাবাকে কোথাও রেখে আসো। তাহলে আমাদের ঝামেলাও কমবে, খরচও বাঁচবে।

কোথায় বেখে আসবো বাবাকে? আমাদের তো আর কোন আত্মীয় স্বজন নেই।

সেটা বলিনি আমি। বলছি একটা ঝুড়িতে করে কোথাও পথের পাশে রেখে আসো।

কি বলছে তুমি! বুড়ো মানুষ না খেয়ে মরে যাবে না।

কেন মরে যাবে। এমন একটা মানুষ পথের পাশে পড়ে আছে দেখলে সরকারি লোকজন তুলে নিয়ে যাবে। তারপর সরকারের গরিবখানায় সে ভালোই থাকবে। খাওয়া-দাওয়ায়ও সমস্যা হবে না। আর আমাদের কষ্টও কমবে।

স্ত্রীর কথায় রাজি হলো না জায়েদ। বললো এ সম্ভব নয়।

কিন্তু হাল ছাড়লো না জায়েদের স্ত্রী। সারাদিন ধরে শশুড়কে নিয়ে নানা অসুবিধার কথা বলে যেতে লাগলো জায়েদের কানে। মোট কথা বিষিয়ে তুললো জায়েদের কান। স্ত্রীর হাজারো কথায় ধীরে ধীরে প্রভাবিত হলো জায়েদ। এক পর্যায়ে রাজি হয়ে গেল বৃদ্ধ বাবাকে দূরে কোথাও ফেলে আসতে।

সেদিনই বাজার থেকে একটি নতুন ঝুড়ি কিনে আনলো জায়েদ। বেশ বড় আকারের ঝুড়ি। ঝুড়ির মধ্যে তার বাবাকে বসিয়ে পরদিন ভোর রাতে রাস্তা ঘাটে মানুষ চলতে শুরু করার আগেই রওনা দিল। জায়েদের ছেলে জিজ্ঞেস করেলো, ‘দাদুকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

জায়েদের স্ত্রী বললো- তোমার দাদু বুড়ো হয়ে গেছে তো, তাই তাকে ফেলে দিয়ে আসবে।

বৃদ্ধ বাবাকে সহ ঝুড়িটা পিঠে ঝুলিয়ে জায়েদ বাড়ি থেকে হেঁটে রাস্তায় উঠলো। এ সময় জায়েদের ছেলে দৌড়াতে দৌড়াতে গেল তার কাছে। গিয়ে বললো, ‘বাবা দাদুকে ফেলে দিয়ে ঝুড়িটা আবার নিয়ে এসো।

‘কেন?’ জানতে চাইলো জায়েদ।

জায়েদের ছেলে বললো, ‘তুমি যখন বুড়ো হবে তোমাকেও তো রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতে হবে।’

ছেলের কথা শুনে জায়েদ যেন আকাশ থেকে পড়লো। একি বলছে তার ছেলে। বুড়ো হলে তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসবে!

ছেলের কথায় বোধোদয় হলো জায়েদের। বাবাকে ফিরিয়ে আনলো ঘরে। বিছানায় শুইয়ে দিলে লুটিয়ে পড়লো তার পায়ের উপর। আর ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বললো বাবা, ‘তুই আমাকে শুধরে দিয়েছিস। আমি যে বিরাট ভুল করতে যাচ্ছিলাম। আজ বুঝতে পারছি আমাদের সবাইকেই একদিন বৃদ্ধ হতে হবে।’



:বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.