নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন বুনি দিবশিনি

আহমেদ বায়েজীদের ব্লগ

আহমেদ বায়েজীদ

আহমেদ বায়েজীদের ব্লগ

আহমেদ বায়েজীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চারাগল্প: প্রতিবাদ

০৯ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:১০

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মলির একটি হাত খামচে ধরে দাড়িয়ে পড়লো রাবেয়া।

‘কিরে দাড়িয়ে পড়লি কেন?’ ঘাড় ফিরিয়ে জানতে চাইলো মলি।

‘ঐ শয়তানটা! ’ কাঁপা গলায় বললো রাবেয়া।

‘কোন শয়তানটা, কার কথা বলছিস?’

‘মাদবরের পোলা। দোকানের সামনে।’

সামনে পথের দিকে তাকায় মলি। কিছু দূরে টং দোকানের সামনে একটি মটর সাইকেল রাখা। মাদবরের বখাটে ছেলে পিন্টু আজও দাড়িয়ে আাছে ওদেরকে উত্যক্ত করার জন্য।

‘আমার ভয় করছে আপা। চলো বাড়ি যাই।’ আবার বললো রাবেয়া।

‘আজ কিছু বলবেনা, কাল শাসিয়ে দিয়েছি না।’

‘সে জন্যই তো আরও ভয়। যদি কিছু করে বসে। চলো আজ কলেজে যাওয়ার দরকার নাই।’

‘কি বলছিস রাবেয়া! একটা ফালতু ছেলের ভয়ে কলেজে যাব না। চল আমার সাথে, দেখি কি হয়।’

মলির হাত জাপটে ধরে দাড়িয়ে থাকে রাবেয়া। অনেকটা জোর করে ওকে টেনে নিয়ে যায় মলি।



মলি আর রাবেয়া চাচাতো বোন। মলিরা আগে ঢাকায় থাকতো। ঢাকার স্কুল থেকেই এসএসসি পাশ করেছে মলি। কিন্তু ওর বাবা হঠাৎ দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় মলি আর মলির মা গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। গ্রামের কলেজে ভর্তি হয়েছে মলি। ওদের কলেজে যাওয়ার পথে প্রতিদিন রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে পিন্টু। কলেজের ছাত্রীদের নানা ভাবে উত্যক্ত করে। টাকাওয়ালা বাবার অতি আদরের পুত্রদের যা হয়।

হাঁটতে হাঁটতে দোকানের সামনে চলে আসে মলি আর রাবেয়া। দোকান পার হয়ে যাওয়ার সময় পিছন থেকে ডাক শুনতে পায়, ‘এই যে শহরের নন্দিনী, দাড়াও।’

ডাক শুনে দাড়িয়ে পড়লো মলি। ওর হাত ধরে টেনে সামনে নিয়ে যেতে ব্যর্থ চেষ্টা করে রাবেয়া। দোকানের ভিতর থেকে এক সঙ্গীসহ বের হয়ে এলো পিন্টু।

‘দোস, কাইলকা নো তোরে ঝাড়ি দিছিল?’ মলিকে দেখিয়ে পিন্টুকে বলে সঙ্গীটা।

‘খুব দেমাগ, তাই না সুন্দরি!, বিশ্রী ভাবে হাসতে হাসতে বললো পিন্টু।

‘শুনুন, আপনাকে না কালকে বলেছি রাস্তা-ঘাটে কখনও মেয়েদের ডিস্টার্ব করবেন না। লজ্জা-শরম নেই নাকি! ভদ্রলোকের ছেলে হলে তো একবারেই শুনতেন।’ বলতে বলতে গলা চড়ে যায় মলির।

মলির কথা শুনে আবারও বিশ্রীভাবে হেসে ওঠলো পিন্টু -‘বলে কি সুন্দরি’ আমি নাকি ভদ্রতা জানি না!’

আশপাশের কয়েকজন লোক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। যেন মজার কোন কিছু দেখছে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে খপ করে মলির একটা হাত ধরে ফেললো পিন্টু।

‘হাত ছাড়–ন বলছি।’

‘যদি না ছাড়ি!’

‘ভালো হবে না বলছি। হাত ছাড়–ন।’

‘কি করবে তুমি। দেখি করো তো। হাত ছাড়বো না।”

ঝাড়া দিয় পিন্টুর হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল মলি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘুষি বসিয়ে দিলো পিন্টুর চোয়ালে। ঘুষি খেয়ে ছিটকে নিজের মটর সাইকেলের উপর পড়লো পিন্টু। উঠে দাড়াবার আগেই আবার ছুটে গিয়ে শার্টের কলার ধরে টেনে তুললো মলি। সজোরে লাথি মারলো তলপেটে। এবার ছিটকে দোকানের বেঞ্চির উপর পড়লো পিন্টু।

চোখে ভয় আর অবিশ্বাস নিয়ে কয়েক মূহুর্ত মলির দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ দৌড় দিল পিন্টুর সঙ্গীটি। একজন জাপটে ধরলো সেটাকে। এতক্ষণে যেন হুশ ফিরে এসেছে উপস্থিত লোকদের। অন্য দুই তিনজন চড়াও হলো পিন্টুর উপর। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে মলি বললো, ‘থাক বেশি মারার দরকার নেই। পুলিশে দিয়ে দিন। এতক্ষণ তো সবাই তামাশা দেখছিলেন।’

একজন বললো, ‘এই হারামজাদার লাইগা কোন মাইয়া শান্তিতে স্কুল-কলেজে যাইতে পারে না। আমরা এত দিন মুখ বুইজা সহ্য করছি। আইজকা তুমি আমাগো চোখ খুইলা দিছ, বইন।’

এক বয়স্ক লোক বলে উঠলো, ‘ওর লাইগাই আমি আমার সেভেনে পড়া মাইয়ারে তাড়াতাড়ি বিয়া দিছি।’



রাবেয়ার ঘোর এখনও কাটেনি। বোবা হয়ে দাড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। মলি গিয়ে ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বললো, ‘চল্ রাবেয়া, কলেজে চল্। অনেক দিন ধরেই মার্শাল আর্টের প্রাকটিস হচ্ছিল না। আজ সুযোগটা পেয়ে গোলাম।’■

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.