![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবা জিনিসটার একটা ধর্মই হলো খালি উপদেশ দেয়া। আমার বাবাও যথারীতি আর সকল বাবাদের মতই। আর আমিও যোগ্যতার সাথে সকল উপদেশের ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। অনেকটা ওয়ানডে ক্রিকেটের মত- নরম-সরম দেখলে হুক করে বাউন্ডারির বাইরে, আর বাউন্সার দেখলে মাথা নুইযে এড়িয়ে যাওয়া।
নিজের আর্থিক সংকটের কারনেই হয়তো সন্তানদের নিয়ে ভয় ছিল তার। তাই সব সময় বলতো-"কোন দিন অন্যায় ভাবে একটা পয়সা পকেটে নিবি না। আল্লাহ মারবে না।"
ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক কিভাবে যেন বাবার অসংখ্য উপদেশের মধ্যে একটা উপদেশ আমার মাঝে কাজ করতে থাকে। এখনও যখন মাস শেষে দেখি বাসার ডিস বিলটা দেয়ার জন্য টাকা ধার করতে হচ্ছে তখন নিজেকে শান্তনা দেই 'আল্লাহ মারবে না' বলে।
#
ছোট বেলার দুষ্টুমির কারনে বাবার হাতে অনেক মার খেয়েছি। শিক্ষক ছিল, তাই হযতো মাইরেরও ওস্তাদ। কিন্তু ফলাফল যা হবার তাই। অধিকাংশ ছেলেদের মত আমিও শোধরালাম না। বড় হয়ে একবার মারাত্নক একটা অন্যায় করলাম। বাবা হার্টের রোগী তাই মা তার কাছে গোপন করলো বিষয়টি। আশপাশের অনেকেও বললো তোর বাপ শুনলে হার্ট এ্যাটাক করবে।
কিন্তু যখন শুনলো তার গুনধর পুত্রের কান্ড সঙ্গে সঙ্গে বললো-ব্যাপার না।
সেই দিন আরও একবার পরাজিত হইলাম পিতৃস্নেহের কাছে।
#
বাবার সাথে আমাদের সম্পর্কটা ফরমাল। একেবারেই আবেগ-আহ্লাদ মুক্ত।
এখন ফোন করলে কেমন আছেন জিজ্হাসা করতে বিব্রত হই। বড় হওয়ার পর কোন দিন জড়িয়ে ধরেছি বলে মনে পড়ে না।
গত ঈদে অফিসের ঝামেলার কারনে বাড়ি যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। ঈদের দিন সকালেও আমি রাজধানীতে। বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি সেসময় বাবার ফোন।
তুই আসলিনা...' পরের কথাগুলো কান্না মিশ্রিত তাই বুঝতে পারলাম না।
জীবনে প্রথম পিতা-পুত্রের সম্পর্কে আবেগ দেখলাম। আমার ধারনা ছিল আমার বাবার মধ্যে এই সব ফিলিংস নেই।
#
যে যায়গায় বাবাকে সবচেয়ে বেশি ফিল করি সেটা হলো তার প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে দেখা হলে। স্যারের ছেলে বলে তাদের কাছে যে খাতিরটা পাই সেটা অন্য কোন ভাবে পাওয়া সম্ভব নয়।
ছোট বেলায় যখন তাদের সাথে খেলতে নামতাম আমার গায়ে কেউ জোরে বলও মারতোনা না।
কিংবা যখন দেখি যে এলাকায় বাবার স্কুল সেখানকার একজন ভ্যান ওয়ালাও আমাকে অন্যদের থেকে আলাদা চোখে দেখে। তখন বাবাকেই ফিল করি।#
©somewhere in net ltd.