![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অজু করার নিয়ম ও অজুর মাসায়েল
আভিধানিক অর্থে অজু: সৌন্দর্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
শরীয়তের পরিভাষায় অজু: পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে নির্দিষ্ট অঙ্গসমূহে পানি ব্যবহার করা।
অজুর ফজিলতসমূহ:
১. অজু আল্লাহর ভালোবাসার কারণ:
আল্লাহ তা’আলা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের। (আল বাকারা : ২২২)
২. অজু উম্মতে মুহাম্মাদীর আলামত:
যেহেতু তারা কেয়ামতের দিবসে উজ্জ্বল অঙ্গ নিয়ে উপস্থিত হবে: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার উম্মত অজুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল ঝলমলে অবস্থা নিয়ে উপস্থিত হবে। কাজেই তোমাদের যে এগুলো দীর্ঘ করতে চায় সে যেন তা করে নেয়।’ (বুখারী ও মুসলিম)
৩. অজু গুনাহ ও পাপ মিটিয়ে দেয়:
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে অজু করে এবং সুন্দরভাবে অজু করে তার শরীর থেকে পাপসমূহ বের হয়ে যায়। এমনকি নখের নীচ থেকেও বের হয়ে যায়।’ (মুসলিম)
৪. মর্যাদা বেড়ে যাওয়া :
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয় সম্পর্কে খবর দেব না যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা গুনাহ মিটিয়ে দেন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? তারা বললেন, অবশ্যই বলবেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, ‘কষ্ট সত্ত্বেও অজু পূর্ণভাবে করা, মসজিদের দিকে বার বার পদচালনা করা, সালাতের পর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। এটা হলো রিবাত।’ (মুসলিম।)
অজুর পদ্ধতি:
১. অন্তরে অজুর নিয়ত করা।
২. বিসমিল্লাহ বলা।
৩. হাতের দু’কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা (তিনবার)।
৪. মেসওয়াক করা: এর সময় হলো কুলি করার মুহূর্তে।
৫. কুলি করা, নাকে পানি দেয়া, নাক ঝাড়া (তিনবার)।
কুলি করা অর্থ : মুখের মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করা
৬. নাকে পানি দেয়া অর্থ: নিশ্বাসের সাথে নাকের মধ্যে পানি টেনে নেয়া।
৭. নাক ঝাড়া অর্থ: নাকের ভিতর থেকে পানি বের করা।
৮. মুখমন্ডল ধৌত করা (তিনবার) দাড়ি খেলাল করাসহ।
৯. আঙ্গুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত ডান হাত তিনবার ধৌত করা। অতঃপর একইরূপে বাম হাত ধৌত করা।
১০. মাথা মাসেহ করা: আর তার পদ্ধতি হলো প্রথমে হাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া। এরপর মাথার সামনের দিক থেকে পিছনের দিকে চুলের শেষ সীমানা পর্যন্ত হাত বুলানো। এরপর পেছনের দিক থেকে সামনের দিকে হাত ফিরিয়ে আনা (একবার)।
১১. তর্জনী অঙ্গুলি দিয়ে কানের ভিতরে মাসেহ করা আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের বাহিরের অংশ মাসেহ করা (একবার)।
১২. ডান পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা (তিনবার) অতঃপর একইরূপে বাম পা ধৌত করা ।
১৩. অজু শেষ করার পর এই দুআ পাঠ করা :
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহাদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত তাউওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাত্বহিহরিন।’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী বানিয়ে দিন। (তিরমিজি, হাদীস
অজুর শর্তাবলী:
১. পানি পবিত্র হতে হবে।
২. পানি বৈধ হতে হবে। উদাহরণ কেউ যদি চুরি করা পানি দিয়ে অজু করে তবে তার অজু হবে না।
৩. যা কিছু ত্বকে পানি পেছাতে বাধা দেয় তা অজুর পূর্বে অপসারণ করে নিতে হবে, যেমন চর্বি ইত্যাদি।
অজু তিন প্রকার—ফরজ, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব।
কখন অজু করা ফরজ :
অজু না থাকা ব্যক্তির জন্য চারটি অবস্থার যেকোনো একটির জন্য অজু ফরজ হয়।
১. নামাজের জন্য অজু করা :
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। (আল-মায়েদা : ৬)
নামাজ আদায়ের জন্য, যদি নফল নামাজও হয়। (বুখারী, হাদীস : ১৩২)
২. জানাজার জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদীস : ৪৩৫)
৩. সিজদায়ে তিলাওয়াতের জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদীস : ৪৩৫)
৪. পবিত্র কোরআন স্পর্শ করার জন্য:
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করে না। (আল ওয়াকিয়া: ৭৯,মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১১৩)
কখন অজু করা ওয়াজিব:
১. শুধু একটি বিষয়ের জন্য অজু করা ওয়াজিব। তা হলো, কাবা ঘরের তাওয়াফ করা। (তিরমিজি, হাদীস : ৮৮৩)
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঋতুবতী মহিলাকে বলেছেন,
'তুমি পবিত্র হওয়ার আগে তাওয়াফ করবে না।’ (বুখারী)
কখন অজু করা মুস্তাহাব :
ক) উল্লিখিত সময় ছাড়া অন্যসময়ে অজু করা মুস্তাহাব এর দলিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস,‘ঈমানদার ব্যক্তিই কেবল অজুর হেফাজত করে।’ (আহমাদ) সে হিসেবে নিম্নবর্ণিত জায়গাসমূহে অজু করা তাগিদসহ মুস্তাহাব:
১. প্রত্যেক নামাজের সময় অজু নবায়ন করা।
২. আল্লাহ তা'আলার যিকির ও দু' আর সময় অজু করা।
৩. কুরআন তেলাওয়াতের সময় অজু করা।
৪. নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে অজু করা।
৫. গোসল করার পূর্বে অজু করা।
৬. পবিত্রতার সঙ্গে ঘুমানোর জন্য। (বুখারী, হাদীস : ২৩৯)
৭. ঘুম থেকে জাগ্রত হলে। তখন শুধু মুস্তাহাবই নয়, বরং সুন্নাত (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদীস : ৫৮৫)
৮. সব সময় অজু অবস্থায় থাকার জন্য। (ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৭৩)
৯. সাওয়াবের নিয়তে অজু থাকা অবস্থায় অজু করা।
১০. গিবত ও মিথ্যা কথার আশ্রয় নেওয়ার পর। (মুসলি, হাদীস : ৩৬০)
১১. মন্দ ও অশ্লীল কবিতা পাঠের পর। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৩৫)
১২. নামাজ ছাড়া অন্য অবস্থায় অট্টহাসি দেওয়ার পর। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৩০১)
তবে নামাজে অট্টহাসি দিলে অজু ভেঙে যায়। (দারাকুতনি, হাদীস : ৬১৫)
১৩. মৃতকে গোসল দেওয়ার পর। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদীস : ১৫১৬)
১৪. মৃতের লাশ ওঠানোর জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদীস : ১৫০৩)
১৫. প্রতি নামাজের জন্য নতুন অজু করা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৭৫০৪, বুখারী, হাদীস : ২০৭)
১৫. ফরজ গোসল করার আগে। (বুখারী, হাদীস : ২৪০)
১৬. গোসল ফরজ হয়েছে, এমন ব্যক্তির খাওয়া, পান করা ও ঘুমানোর আগে। (মুসলিম, হাদীস : ৪৬১)
১৭. রাগের সময়। (আবু দাউদ, হাদীস : ৪১৫২)
১৮. কোরআন তিলাওয়াতের সময়। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদীস : ৪৩৫)
১৯. হাদীস পড়া ও বর্ণনা করার সময়। (আদাবুল উলামা ওয়াল মুতাআল্লিমিনি : ১/৬)
২০. ইসলামী জ্ঞান অর্জনের সময়। (তিরমিজি, হাদীস : ২৭২৩)
২১. আজান দেওয়ার সময়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/২১১)
২২. ইকামত দেওয়ার সময়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/২১১)
২৩. খুতবা দেওয়ার সময়। (তিরমিজি, হাদীস : ২৭২৩)
২৪. মহানবী (সা.)-এর কবর জিয়ারতের সময়। (নিসা, আয়াত : ৬৪)
২৫. ওকুফে আরাফা তথা আরাফায় থাকা অবস্থায়। (বুখারী, হাদীস : ১৪২৪)
২৬. সাফা ও মারওয়ায় সায়ি করার সময়। (বুখারী, হাদীস : ১৫১০)
২৬. মৃত ব্যক্তিকে বহন করার পর অজু করা।
২৭. প্রতিবার অজু ভঙ্গের পর অজু করা মুস্তাহাব, যদিও তখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা না থাকে।
অজুর আরো কিছু আদব ও মুস্তাহাব:
অজুতে এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো আদায় করলে সওয়াব হবে, কিন্তু আদায় না করলে কোনো গুনাহ হবে না।
১. অজু করার সময় উঁচু স্থানে বসা, যাতে পানির ছিটা গায়ে না আসে। (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৩৫২)
২. কিবলার দিকে বসে অজু করা। (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৩৫২)
৩. অজু করার সময় অন্যের সাহায্য না নেওয়া। (মুসনাদে আবি ইয়ালা : ১/২০০)
৪. প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৩৫২)
৫. অজু করার সময় রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত দোয়া পড়া। (সুনানে কুবরা লিননাসায়ি, হাদীস : ৯৯০৮)
৬. নিয়ত মুখে ও অন্তরে একসঙ্গে করা। (ফতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৮৭)
৭. উভয় কান মাসেহর সময় কানের ছিদ্রে ভেজা আঙুল প্রবেশ করানো। (আবু দাউদ, হাদীস : ১১২)
৮. প্রশস্ত আংটি নাড়াচাড়া করা। (ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৪৩)
৯. যদি আংটি প্রশস্ত না হয়, তাহলে অজু বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য তা নাড়াচাড়া করা আবশ্যক। (ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৪৩, আবু দাউদ, হাদীস : ১৪৯)
১০. নাকের ময়লা দূর করার জন্য বাঁ হাত ব্যবহার করা। (আবু দাউদ, হাদীস : ৩১)
১১. যদি মুসল্লি এমন অপারগ না হয়, যার ফলে প্রতি ওয়াক্তে অজু করা আবশ্যক, তাহলে ওয়াক্ত আসার আগে অজু করা। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/১০২)
১২. অজু শেষ হওয়ার পর কিবলামুখী হয়ে এই দোয়া পাঠ করা—‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহাদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত তাউওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাত্বহিহরিন।’ সুবহা’নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহা’মদিকা আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলাইকা। অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী বানিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তওবা করছি। (তিরমিজি, হাদীস)
অজুর মধ্যে যেসব কাজ করা মাকরুহ
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অজুতে মাকরুহ—
১. অজুতে পানির অপব্যয় করা। (ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪১৯, আবু দাউদ, হাদীস : ৮৮)
২. পানি ব্যবহারে অত্যধিক কার্পণ্য করা। (আবু দাউদ, হাদীস : ১১৬, মুসলিম, হাদীস : ৩৫৪)
৩. মুখের ওপর জোরে পানি মারা। (কানজুল উম্মাল : ৯/৪৭৩)
৪. দুনিয়াবি কথা বলা। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/৯৮)
৫. অন্যের সাহায্য নেওয়া। (মুসনাদে আবি ইয়ালা : ১/২০০) তবে অপারগ অবস্থায় অন্যের সাহায্য নেওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। (আল মুজামুল কাবির, হাদীস : ৩৮৫৭)
৬. তিনবার মাথা মাসেহ করা এবং প্রতিবার পানিতে হাত ভেজানো। (আবু দাউদ, হাদীস : ১১৬, কানজুল উম্মাল, হাদীস : ২৭০২৪)
অজুর ফরজ:
১. মুখমন্ডল ধৌত করা।
২. দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
৩. দু’পা টাখনুসহ ধৌত করা।
৪. মাথা মাসেহ করা।
হানাফী মাযহাবে স্বীকৃত এ সকল ফরজের সাথে ইমামদের কেউ কেউ আরো কয়েকটি ফরজ যোগ করেছেন। আর তা হলো:
১. নিয়ত করা: নিয়তের স্থান হলো অন্তর। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিষয় নয়। অজুর নিয়ত ব্যতীত কেউ যদি শীতলতা অর্জন অথবা পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য অজুর অঙ্গগুলো ধৌত করে তাহলে তা অজু বলে গণ্য হবে না।
২. অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গগুলো ধৌত করার সময় ক্রম বজায় রাখা।
৩. অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গগুলো ধৌত করতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, ধৌত করতে এতটা দেরি না করা যে আগের ধোয়া অঙ্গটি শুকিয়ে যায়।
অজুর সুন্নতসমূহ:
১. অজুর শুরুতে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা
২. মেসওয়াক করা।
৩. মাথা ও কান বাদে প্রত্যেকটি অঙ্গ তিনবার ধৌত করা। মাথা কেবল একবার মাসেহ করা।
৪. ডান দিক অনুসরণ: অর্থাৎ অঙ্গগুলো ধৌত করার সময় ডানের অঙ্গ দিয়ে শুরু করা।
৫. উজ্জ্বলতা দীর্ঘ করা: অর্থাৎ হাত ধৌত করার সময় কনুই ছাড়িয়ে আরো একটু ধৌত করা।
৬. হাত ও পায়ের আঙ্গুলসমূহের মধ্যবর্তী স্থানগুলো মাসেহ করা।
৭. যেসকল অঙ্গ ধৌত করতে হয় তা হাত বুলিয়ে ধৌত করা। পানি ছিটিয়ে দেয়া যথেষ্ট নয়।
৮. পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া; নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এ উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে যারা পবিত্রতা অর্জনে সীমালঙ্গন করবে। (আবু দাউদ।)
(অর্থাৎ অজুর সময় পানি অপচয় করবে।)
অজুর পর দু’আ পাঠ করা :
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে কেউ সুন্দর করে পরিপূর্ণভাবে অজু করবে অতঃপর বলবে, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহাদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত তাউওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাত্বহিহরিন।’ সুবহা’নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহা’মদিকা আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলাইকা। অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী বানিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তওবা করছি। (তিরমিজি, হাদীস)
৯. অজুর পর দু’রাকাআত নামাজ আদায় করা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এ অজুর মত করে অজু করবে এরপর এমনভাবে দু’রাকাআত নামাজ আদায় করবে যাতে অন্যকোনো চিন্ত-কল্পনা ছিল না, তাহলে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’
(বুখারী ও মুসলিম।)
অজু ভঙ্গের কারণসমূহ:
(১) পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া
পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। [হেদায়া-১/৭]
পবিত্র কোআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও) (মায়িদা-৬)
হযরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।` (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস নং-৫৬৮)
(২) রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। [হেদায়া-১/১০]
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। [মুয়াত্তা মালিক-১১০]
(৩) মুখ ভরে বমি করা।
হযরত আয়শা (রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নিবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১২২১])
‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বমি করলেন অতঃপর রোজা ভঙ্গ করলেন, এবং অজু করলেন।’
(বর্ণনায় তিরমিযী)
(৪) থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না। [মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-১৩৩০]
(৫) চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৩১৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০২)
(৬) পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে।
হযরত হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৪৯৩]
(৭) নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে।
হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হযরত হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। (সুনানে দারা কুতনি, হাদীস নং-৬১২)
(৮) মুবাশারাতে ফাহেশা :
মুবাশারাতে ফাহেশা অর্থাৎ জড়াজড়ি অবস্থায় নারী -পুরুষের যৌনাঙ্গ পরস্পর মিলিত হলে তাতেও ওজু ভেঙ্গে যাবে।
আবরণ বিহীন নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে এবং পুরুষ আবরণ বিহীন নারীর গায়ে হাত দিলে ইমাম আবু হানীফার মতে ওজূ ভঙ্গ হবে না।
অন্যান্য ইমামদের মতে ওজূ ভেঙ্গে যাবে। ইমাম আহমদ (রহ.) এর মতে উটের গোশত খাওয়াও অজূ ভঙ্গের কারণ। সতর্কতার খাতিরে এর প্রতিটি থেকেই বেচে থাকা উচিত।
মাসায়েল:
১. যখন কোনো মুসলিম নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে অজু করতে চায় তখন যেন সে তার হাত পানির পাত্রে ঢুকিয়ে না দেয়। বরং তিনবার হাত ধুয়ে নেয়ার পর হাত ঢুকাবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলে সে যেন তিনবার হাত ধৌত করার আগে তার হাত পাত্রের মধ্যে না ঢুকায়। কেননা সে জানে না তার হাত কোথায় রাত কাটিয়েছে।’
২. অজুতে যেসকল অঙ্গ ধৌত করা জরুরি তার প্রত্যেকটিতে ভালোমতো পানি পেছাতে হবে। বিশেষ করে হাত ও পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে, দাড়ির ও কানের মধ্যবর্তী জায়গায়। এমনিভাবে দুই কনুই ও পায়ের গোড়ালিতে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পায়ের গোড়ালির জন্য জাহান্নামের আগুনের হুমকি রয়েছে।’
৩. ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তি হলো প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে মৌলিক গুরুত্বের ব্যাপার। সে হিসেবে যদি তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জনের কথা দৃঢ়ভাবে মনে থাকার পর অজু ভেঙ্গে গেছে বলে সন্দেহ হয়, তাহলে দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর স্থিত বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আর সেটা হলো তাহারাত। আর যদি তাহারাত অর্জন করেনি মর্মে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে আর অজু করেছে বলে সন্দেহ হয় তাহলে তাহারাত অর্জন না করার বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে।
৪. যদি কোনো মুসলিম এমনভাবে অজু করে যে, কোনো অঙ্গ একবার আবার কোনোটি দু’বার আবার কোনোটি তিনবার ধৌত করে তাহলেও অজু শুদ্ধ হবে।
৫. যে ব্যক্তি ভুলে অজু ব্যতীত নামাজ আদায় করেছে, সে তা স্মরণ করামাত্র নামাজ আবার পড়ে নেবে।
৬. অজু করার পর যদি কোনো নাপাকি লেগে যায়, তাহলে নাপাকি দূর করে নেবে। অজু করতে হবে না। কারণ নাপাকি লেগে যাওয়াটা অজু ভঙ্গের কারণ নয়।
অজু করার সময় যা করা উচিত নয়:
১. অজুর সময় মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা।
২. পানি অপচয় করা।
৩. অজুতে তিনবারের বেশি ধৌত করা। কারণ হাদীসে এসেছে, ‘এক বেদুইন ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অজু সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি তাকে তিনবার তিনবার করে ধৌত করে অজু দেখালেন। এরপর বললেন, অজু এরকমই। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বাড়াবে সে খারাপ করল, সীমা লংঘন করল ও জুলুম করল।’ (আবু দাউদ।)
কিন্তু যদি অঙ্গটি তিনবার ধৌত করার পর পরিষ্কার না হয় তাহলে তিনবারের বেশি ধৌত করা জায়েয হবে। যেমন হাতে চর্বি ইত্যাদি লেগে থাকার ক্ষেত্রে
৪. অজু পূর্ণ না করার মধ্যে যা গণ্য:
ক. পায়ের গোড়ালি ধৌত না করা।
খ. কনুই ধৌত না করা; জামার হাতা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে।
গ. কান ও দাড়ির মধ্যবর্তী অংশ ধৌত না করা।
ঘ. বাম হাত ধৌত করার সময় বাম হাতের কব্জি না ধোয়া।
ঙ. শরীরে চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকাবস্থায় অজু করা।
২| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: নামাজই তো পড়া হয় না।
৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:২৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অনেক ভালো ও দরকারি পোস্ট। ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:২২
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সকলকে যথাযথ ভাবে ,সঠিক নিয়মে অজু করার তওফিক দিন এবং অজুর মাধ্যমে আমাদের পবিত্রতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।