![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আল্লাহপাকের পছন্দনীয় ও মনোনীত জীবন বিধানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার পথ নির্দেশনা ও শিক্ষাদানের জন্য যুগে যুগে বহু নবী এবং রাসূল পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। এ ব্যাপারে কুরআনের ভাষ্য -
এক. ২: আল-বাক্বারাহ : আয়াত : ১২৯,
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِكَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَ یُزَكِّیْهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ۠
হে আমাদের রব! এদের মধ্যে স্বয়ং এদের জাতি পরিসর থেকে এমন একজন রসূল পাঠাও যিনি এদেরকে তোমার আয়াত পাঠ করে শুনাবেন, এদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং এদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করবেন। অবশ্যি তুমি বড়ই প্রতিপত্তিশালী ও জ্ঞানবান।
দুই. ২: আল-বাক্বারাহ : আয়াত : ১৫১,
كَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِیْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ یَتْلُوْا عَلَیْكُمْ اٰیٰتِنَا وَ یُزَكِّیْكُمْ وَ یُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَ یُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَؕۛ
যেমনিভাবে (তোমরা এই জিনিসটি থেকেও সাফল্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছো যে,) আমি তোমাদের মধ্যে স্বয়ং তোমাদের থেকেই একজন রসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শুনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং এমন সব কথা তোমাদের শেখায়, যা তোমরা জানতে না।
তিন. ৩: আলে-ইমরান : আয়াত : ১৬৪,
لَقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَى الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَۚ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ
আসলে ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।
চার. ৬২: আল-জুমুয়াহ : আয়াত : ২,
هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیّٖنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَۗ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍۙ
তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াত শুনায়, তাদের জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। অথচ ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল।
পাঁচ. ৯ : তাওবা : আয়াত : ৩৩,
هُوَالَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
আল্লাহই তার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন ৷
সূরা বাকরার ১২৯ ও ১৫১, সূরা আলে ইমরানের ১৬৪, সূরা জুম’আর ২ এবং সূরা তাওবার ৯ নম্বর আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে একই বিষয়বস্তু অভিন্ন ভাষায় বর্ণিত হয়েছ। এসব আয়াতে রাসূল (সাঃ) এর পৃথিবীতে পদার্পণ ও তার রেসালাতের তিনটি লক্ষ্য বর্ণিত হয়েছে।
প্রথমত : কুরআন তেলাওয়াত,
দ্বিতীয়ত : আসমানি গ্রন্থ ও হিকমতের শিক্ষাদান,
তৃতীয়ত : মানুষের জীবন পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করা ।
এই তিনটি বিষয়ই উম্মতের জন্য যেমন। আল্লাহ তা’আলার নেয়ামত, তেমনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রেরণ করার উদ্দেশ্যেরও অন্তর্ভুক্ত।
■ রাসূল প্রেরণের প্রথম উদ্দেশ্য:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রেরণ করার প্রথম উদ্দেশ্য এই যে, তিনি মানুষকে কুরআনের আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন। অর্থাৎ কুরআন পাঠ করেন। এখানে এর আসল অর্থ অনুসরণ করা। কারণ, যে লোক এসব কালাম পাঠ করে, এর অনুসরণ করাও তার অবশ্য কর্তব্য। আসমানি গ্রন্থ ঠিক যেভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়, হুবহু তেমনিভাবে পাঠ করা জরুরী।
■ রাসূল প্রেরণের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য:
রাসূল প্রেরণের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো তিনি তেলাওয়াতের ও আয়াতের শিক্ষার মাধ্যমে মানুষদের অন্তরাত্মা বা কৃলব পরিশুদ্ধ করবেন। প্রত্যেক মানুষের বাম স্তনের নিচে গোসশের একটি টুকরা রয়েছ যাকে হাদীসের পরিভাষায় কৃলব বলা হয়। মানবজীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম হাদীসে এসেছে- জেনে রাখ শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ সে গোশতের টুকরাটি হলো কৃলব (অন্তর)। (সহীহ বুখারী : ৫২)।
■ রাসূল প্রেরণের তৃতীয় উদ্দেশ্য:
কুরআন ও হিকমত শিক্ষা দেন। এখানে কিতাব বলে আল্লাহর কিতাব বুঝানো হয়েছ। হিকমত শব্দটি আরবি অভিধানে একাধিক অর্থে হওয়া, ন্যায় ও সুবিচার, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ইত্যাদি। নিঃসন্দেহে এ উক্তির সারমর্ম হলো রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহ।
সাহাবায়ে কেরাম উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূল (সাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা কী কুরআন পাঠ করো না? জেনে রাখো! পুরো কুরআনই হলো রাসূল (সাঃ)-এর চরিত্র।’ অর্থাৎ তিনি ছিলেন আল-কুরআনের বাস্তব নমুনা। (মুসনাদ আহমদ, ইমাম বুখারী, আল আদাব আল মুফরাদ)
মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন জীবন্ত কুরআন। কুরআনুল কারীমকে ভালোভাবে বুঝতে হলে অবশ্যই রাসূলের হাদীস এবং সিরাত অধ্যায়ন করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর ওপর যথার্থ জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই সিরাতুল মুস্তাকিম খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আমাদের উচিৎ কুরআনুল কারীম ও হাদীস বেশি বেশি করে পড়া পাশাপাশি আল্লাহর রাসূলের সিরাত বা জীবনী অধ্যয়ন করা। সুতরাং এই মহামানব রাসূলের (সাঃ) আদর্শ অনুযায়ী আমাদের গোটা জীবনই পরিচালিত করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সিরাত ও আদর্শের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের জীবন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
©somewhere in net ltd.