নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরআন হাদীসের আলোকে সঞ্চয়ের গুরুত্ব

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ ভোর ৬:০৯

ভুমিকা
মানুষের জীবনের গতিপথের সঠিক কোনো নিশ্চয়তা নেই। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের জীবন নানারকম নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা প্রয়োজন। আর্থিক নিরাপত্তাই সব মানুষের জীবনে অপরিহার্য। মানুষকে নানার রকম অনিশ্চয়তা বিপদ-আপদ ও ঝুকির মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। যেমন- কোন দুর্ঘটনা, মৃত্যু, অসুস্থতা, বাধ্যর্ক্য ইত্যাদি। এসব অনিশ্চয়তা, বিপদ-আপদ মোকাবেলা করার জন্য সময় থাকতে সকলের সঞ্চয় করা একান্ত প্রয়োজন। তাই অর্থ পরিকল্পনায় সঞ্চয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঞ্চিত অর্থ খাটিয়ে এর বৃদ্ধি ঘটানোর উপায়কে বিনিয়োগ বলে। সঞ্চয় থেকে এর প্রার্থক্য এই যে, বিনিয়োগ শুধু টাকার সংরক্ষণইনয় এটি হতে ব্যক্তি সবোচ্চ উপকৃত ও নিরাপত্তা আশা করে। সঞ্চয় করতে হলে মিতব্যয়ী হতে হবে। মিতব্যয়িতার সঙ্গে সঞ্চয়ের একটি বড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ কোনো মানুষ মিতব্যয়ী হলেই সেখান থেকে অর্থ বাঁচিয়ে সেটা সঞ্চয় করতে পারে। কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল, গেড়ে তোলে মহাদেশ সাগরঅতল, যা সঞ্চয়ে চেতনার সঙ্গে মিলে যায়।
সঞ্চয়
আয়ের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য কিছু অর্থ তুলে রাখার নামই সঞ্চয়। অর্থাৎ ভবিষ্যতের কিছু প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ করার জন্য বর্তমান আয় থেকে কিছু্টা তুলে রাখা। অর্থাৎ আয় - বর্তমান ভোগব্যয় = সঞ্চয়। মোট কথা সঞ্চয় বলতে বুঝায় বর্তমান ভোগের পরিমিতবোধ ও ভবিষ্যতের ভোগের জন্য সংযম। এই সঞ্চয় মানুষের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা বিধান করে। সঞ্চয় পরিবারের অর্থনেতিকসমৃদ্ধ ঘটায় ও বিনিয়োগের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ও ব্যয় কমাতে সাহায্য করে। সঞ্চয়ের মুল প্রয়োজনীয়তা হল ভবিষ্যতের নিরাপক্তা নিশ্চিয়তা। ভবিষ্যতের যে কোন অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঞ্চয়ের কোন বিকল্প নেই। সঞ্চয় পারিবারিক ও জাতীয় জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলে।

ইসলাম সঞ্চয়ের ব্যাপারে কি বলে-
ইসলাম ইহকাল ও পরকালের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানব জীবনের সকল কর্মকান্ডের দিক নির্দেশনা ইসলামে বিদ্যমান আছে। আর মানব জীবনে একটি বড় অংশ জুড়ে আছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। ইসলাম কল্যাণময় বৈজ্ঞানিক এবং ভারসম্যপূর্ণ একটি অর্থব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ তা’আলা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন- সালাত সমাপ্ত হয়ে গেলে তোমরা পৃথিবীতে জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহরাজি সন্ধান কর, (সূরা জুমআ-৬২, আয়াত : ১০)। ইসলামী অর্থব্যবস্থা জীবন-দর্শন, কৃষ্টি ও সভ্যতার সাথে একই সূত্রে গাঁথা। এর মৌলিক নীতিগুলো পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ হতে গৃহীত হয়েছে। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় মানুষের জাগতিক কাজকর্ম, জীবন ধারণ, আয়-ব্যায়, উৎপাদন, বিনিয়োগ, ভোগ, ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন, বণ্টন, সঞ্চয় সবকিছুর সমাধান দেয়া হয়েছে। পরিবারের স্বাভাবিক চাহিদা পুরণের জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চয় করে রাখা ইসলামে কোন নিশেধাজ্ঞা নেই।
ইসলাম অর্থোপার্জন, খরচ ও সঞ্চয়ের ব্যাপারেও মধ্যম পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, সঞ্চয় করতে গিয়ে যেন কৃপণের তালিকায় নাম না উঠে যায়। ইসলামে সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণ হওয়া যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি প্রাচুর্যের সময় অপচয় অপব্যয় করে সম্পদ খরচ করাও নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে কারিমে অপচয় ত্যাগের কঠোর নির্দশ জারি করেছেন। সঞ্চয় করা দোষের কিছু নয় বরং অত্যাবশক। আমাদের হালাল-হারাম, পাপ-পুণ্য, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন বিবেচনা করে খরচ করতে হবে এবং অপব্যয় ও অপচয় থেকে বিরত থেকে সঞ্চয় করতে হবে। স্ত্রী, সন্তানসন্ততির ভরণপোষণ, বাবা-মার সব চাহিদা পূরণের মতো আল্লাহ নির্দেশিত খাতে খরচ করতে অবহেলা করাই কৃপণতা। হালাল-হারামের বিধিনিষেধ মেনে খরচকে সীমাবদ্ধ করে দিতে হবে। প্রাচুর্যের সময় খরচের উৎসবে মেতে না উঠে হারাম খরচ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করে উদ্বৃত্ত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা উচিত। সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারো মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবীজি (সাঃ) কখনো পছন্দ করেননি। এছাড়াও ব্যয়/দান করার ক্ষেত্রে কৃপণতা ও অপব্যয় পরিহার করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ সব সময় সাধ্যমত এমনভাবে ব্যয়/দান করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে যেন নিঃস্ব হয়ে পরবর্তী সময়ে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাতার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়। সুতরাং এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কৃপণতা নয় বরং নিজের পরিবার পরিজনদের জন্য কিছু সঞ্চিত রাখার বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা কোন খাতে কতটুকু ব্যয়/দান করব। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে বিবেক দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমেই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কার প্রয়োজন কতটুকু এবং তিনি কতটা সঞ্চয় করবেন এবং কতটা ব্যয়/দান করতে পারবেন। সঞ্চিত রাখার অর্থ আবার এই নয় যে আমরা অর্থকড়ি পুঞ্জিভূত করে রেখে তা বার বার গননা করব এবং আল্লাহ তা’আলা যে সব ক্ষেত্রে ব্যয়/দান করতে বলেছেন তা ভুলে গিয়ে কৃপণতার পথ বেছে নেব। যারা রাশি রাশি স্বর্ণ, রূপা ও সম্পদ জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদেরকে কঠোর শাস্তির সংবাদ দেয়া হয়েছে। যদি সমুদয় সম্পত্তি দান করে দেওয়া হয়, তাহলে কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে তা মেটাবে কোত্থেকে? কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে হাজার কোটি টাকার মালিক হতেও ইসলাম বাধা দেবে না।
ইমাম আবু হানিফা রহ. ধনী ছিলেন। ইরাক, সিরিয়া ও হেজাজজুড়ে বিস্তৃত এলাকায় রেশমি কাপড়ের বিশাল ব্যবসা ছিল তাঁর। তাই তো তিনি রাষ্ট্রীয় হাদিয়া-তোহফার পরোয়া না করে নিজ উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ, জ্ঞানের সেবা এবং গরিব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতেন। সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর সওয়াবের কাজগুলো করা যাবে। রোজাদারকে ইফতার করানো যাবে। হাদিয়া আদান-প্রদান করা যাবে। শরিক হওয়া যাবে জনকল্যাণমূলক কাজে। অর্থ ব্যয় করে সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত সাওয়াব হাসিল করা যাবে। আবার উদ্বৃত্ত অর্থ যখন নিসাব পরিমাণ হবে এবং তা বর্ষপূর্তি হবে, তখন জাকাতের মাধ্যমে সে সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ গরিবদের মধ্যে দান করার মত এবাদাতের সুযোগ এসে যাবে।
ইসলাম সঞ্চয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন তা আমরা কুরআন হাদীস থেকে জেনেনি।
সঞ্চয়ের ব্যাপারে কুরআনের ভাষ্যঃ
১. পবিত্র কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না। আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল-১৭, আয়াত : ২৯)।
২. পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার এবং পান করো, আর অপচয় করো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আরাফ-০৭, আয়াত : ৩২)
৩. কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। (সূরা ফুরকান-২৫,আয়াত : ৬৭)
৪. আল্লাহ তা’আলা বলেন, আর তাদের (ধনীদের) সম্পদের প্রার্থনাকারী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে, (সূরা জারিয়াহ-৫১, আয়াত : ১৯)।
৫. আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর, (সূরা বাকারাহ-২, আয়াত, ৮৩)।

৬. আল্লাহ তা’আলা বলেন- আর আল্লাহ তা’আলা ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন, (সূরা বাকারাহ-২, আয়াত : ২৭৫)।
৭. আল্লাহ তা’আলা বলেন- যারা সোনা ও রূপা জমাকরে কিন্তু তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণায়ক শাস্তির সংবাদ দিন, (সূরা তাওবা-০৯, আয়াত : ৩৪)।
৮. অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, আর শুনো, আনুগত্য করো এবং ব্যয় করো। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।(সূরা আত-তাগাবুন-৬৪,আয়াত : ১৬)
৯. মানুষ তো সৃজিত হয়েছে অস্থির চিত্ত রূপে। যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন হা-হুতাশ করে। আর যখন সচ্ছলতা প্রাপ্ত হয়, তখন কৃপণ হয়ে যায়। (সূরা আল মা’আরিজ-৭০,আয়ত : ১৯-২১)
১০. দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে; যে অর্থ পুঞ্জিভূত করে রাখে এবং তা বার বার গননা করে, সে ধারনা করে যে তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে; কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়। (সূরা হুমাযাহ্-১০৪, আয়াত : ০১-০৪)
সঞ্চয়ের ব্যাপারে হাদীসের ভাষ্যঃ
১. হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে সচ্ছল রেখে যাবে- এটাই উত্তম।’ (সহীহ বোখারী ও মুসলিম)
২. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘উত্তম দান তাই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয়।’ (সহীহ বোখারী)
৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ফরজ ইবাদাতের পরে হালাল রুজির সন্ধান করাও ফরজ। (বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান
৫. হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মুমিনদের জন্য আমার ভালোবাসা তার নিজসত্তার চাইতেও বেশি। যে ব্যক্তি (মৃত্যুবরণের সময়) সম্পদ রেখে গেল, তা তার পরিবার পরিজনের জন্য। আর যে ব্যক্তি ঋণ বা অসহায় সন্তান রেখে গেল তার দায় দায়িত্ব আমার উপর। কেননা মুমিনদের প্রতি আমার ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি। (সহীহ ইবনু হিব্বান: ফাসলুন ফিস সালতি আলাল জানাযতি)
যে ব্যক্তি অর্থব্যয়ে পরিমিতবোধের চর্চা করবে, অনটন তার নাগাল পাবে না। ইসলামের এ মহান শিক্ষাটি যথাযথ অনুসরণ না করার কারণে মানুষ উপার্জনের যাচিত সুফল থেকে বঞ্চিত। মানুষ যদি সমুদয় সম্পত্তি খরচ/দান করে দেওয়া হয়, তাহলে কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে তা মেটাবে কোথায় থেকে। কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে হাজার কোটি টাকার মালিক হতেও ইসলাম নিষেধ করে না। সঞ্চয় হচ্ছে ভাবিষ্যতের মাপ কাঠি। স্বপ্নের সিড়ি ও চরম বিপদের বন্ধু। নিজের আয় যতই হোক না কেন তা থেকে প্রতিমাসে কিছু সঞ্চয় করা চেষ্ট্রা করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.