নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

খলিফার দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

২৩ শে মে, ২০২২ দুপুর ১২:২৫

আল্লাহ ভালবেসে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির সেরা মকলুকাত হিসাবে ঘোষণা করেছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন আল্লাহর এবাদাত ও খলিফার দায়িত্ব পালনের। খলিফা শব্দটি আরবি। খলিফা শব্দের অর্থ প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত। ‘খলিফা’ শব্দের বহুবচন ‘খুলাফা’ এবং ‘খালাইফ’। খলিফার কাজ হলো, সর্বোচ্চ শাসক আল্লাহর আইনকে তাঁর প্রকৃত লক্ষ্য অনুযায়ী কার্যকর করা এবং তাঁর নির্দেশিত পথে সমাজ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা।
১. সুরা বাকারার ৩০ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘আর (স্বরণ কর সে সময়ের কথা) যখন তোমার পালনকর্তা ফিরিশতাদেরকে বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ‘ফিরিশতাগণ বলল, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা সর্বদাই আপনার গুণকীর্তন করছি এবং আপনার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন: নিঃসন্দেহে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।’ (বাকারাহ : ৩০)।
২. সূরা সোয়াদের ২৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : ‘হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল খুশির অনুস্বরণ কর না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়।’ (সূরা সোয়াদ : আয়াত-২৬)।
৩. সূরা আন আমের ১৬৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, তিনিই তোমাদেরকে যমীনের খলীফা বানিয়েছেন(১) এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কিছু সংখ্যককে কিছু সংখ্যকের উপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। নিশ্চয় আপনার রব দ্রুত শাস্তি প্রদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়াময়। (আনআম: ১৬৫)
৪. সূরা হজ্জের, ৪১ আয়াত আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদেরকে পৃথিবীতে (রাজ)ক্ষমতা দান করলে তারা নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর আয়ত্তে।
৫. সূরা আ’রাফের, ৬৯ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,‘ তোমরা কি আশ্চর্য বোধ করছ যে, তোমাদের কাছে, তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের বাচনিক উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে। তোমরা স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে কাউমে নূহের পর ‘খলীফা’ (প্রতিনিধি) করেছেন এবং তোমাদের দেহের বিস্তৃতি বেশি করেছেন। তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ কর যাতে তোমাদের মঙ্গল হয়।’ (আ’রাফ : ৬৯)।
৬. সূরা আ’রাফের, ৭৪ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্মরণ কর, যখন তোমাদেরকে আদ জাতির পরে খলীফা করেছেন, তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। তোমরা নরম মাটিতে অট্টালিকা নির্মাণ কর এবং পর্বত গাত্র খনন করে প্রকোষ্ঠ নির্মাণ কর। অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি কর না।’ (আ’রাফ : ৭৪)।
৭. সূরা নামলের, ৬২ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলতো কে অসহায়দের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই চিন্তা-ফিকির কর ‘ (নামল : ৬২)।
৮. সূরা আন নূরের, ৫৫ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,‘ তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে অবশ্যই প্রতিনিধিত্ব দান করবেন; যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য তাদের ধর্মকে -- যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন -- সুদৃঢ় করবেন এবং তাদের ভয় ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার উপাসনা করবে, আমার কোন অংশী করবে না। অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ (বা অবিশ্বাসী) হবে, তারাই সত্যত্যাগী। (আন নূর : ৫৫)।
ইসলামের এই খিলাফত ব্যবস্থা সর্বজনীন। আল্লাহর এই প্রতিনিধিত্বের অধিকার বিশেষ কোনো ব্যক্তি, পরিবার কিংবা বিশেষ কোনো শ্রেণীর জন্য নির্দিষ্ট বা সংরক্ষিত নয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী এবং তাঁদের বিধান ও আইন মান্যকারী সব মানুষই আল্লাহর দেয়া এই প্রতিনিধিত্বের সমান অধিকারী।
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘আবু সাইদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ অন্যায় হতে দেখলে হাতের সাহায্যে তা বদলে দিবে। যদি সেই সামর্থ্য না থাকে, তাহলে মুখের সাহায্যে। যদি সেই সামর্থ্যও না থাকে, তাহলে মনে মনে সেটাকে ঘৃণা করবে।’ (সহিহ মুসলিম : ৭৮)
হযরত আবু বকর (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর জাতির উদ্দেশে যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন তাতে তিনি বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি অপনাদের খলিফা নির্বাচিত হয়েছি, অথচ আমি আপনাদের কারো অপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি নই। আমি ভালো কাজ করলে আপনারা আমার সহযোগিতা করবেন এবং বিচ্যুত হলে সহজ সরল পথে দাঁড় করিয়ে দেবেন। সত্য হলো আমানত এবং মিথ্যা হলো খিয়ানত। আপনাদের মধ্যকার দুর্বল ব্যক্তি আমার কাছে সবল যতক্ষণ আমি তার অধিকার পৌঁছে দিতে না পারি। আর আপনাদের মধ্যকার সবল ব্যক্তি আমার কাছে দুর্বল যতক্ষণ আমি তার কাছ থেকে অপরের অধিকার আদায় করে দিতে পারি। আপনাদের কেউ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ ছেড়ে দেবেন না, এরূপ করলে সে জাতিকে আল্লাহ অপছন্দ করবেন। কোনো সম্প্রদায়ের ভেতরে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো যাবে না, তাহলে সবার ওপর আল্লাহ বিপদ চাপিয়ে দেবেন। আমি যতক্ষণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করি ততক্ষণ আমার আনুগত্য করবেন। আর যদি আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হই, তবে আমার আনুগত্যের প্রয়োজন নেই। আপনারা নামাজ আদায় করবেন। আল্লাহ আপনাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।’
দুনিয়াতে মানুষ আল্লাহর খলীফা। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে খলীফা হিসাবেই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু খলীফা হিসাবে মানুষের দায়িত্ব কী তা কমই চর্চা করা হয়। অথচ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও অত্যন্ত প্রয়োজন। আল্লাহর খলিফা হিসাবে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, এই পৃথিবীকে আল্লাহর মর্জি বা তাঁর বিধান মোতাবেক পরিচালনা করা। মানুষের সমাজে আল্লাহর দেয়া বিধান কায়েম করার দায়িত্ব আল্লাহপাক সরাসরি মানুষের উপরই ন্যাস্ত করেছেন। নবী রাসূলগণের আনীত হিদায়েত মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেয়াই খলিকার দায়িত্ব। আর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করাই দায়াতের কাজ। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর বিধান চালু করা খলিফার দায়িত্ব।
খেলাফত একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কুরআন-হাদীস থেকে একজন খলিফার দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুন্দর রূপ রেখা ফুটে উঠে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে একজন খলিফার দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল-
১. নামাজ কায়েম করা।
২. যাকাত প্রদান তথা যথাযথ ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ করা।
৩. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।
৪. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

খলিফা হবার শর্তঃ
আল্লাহর খলিফা হবার জন্য তিনটি মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে। এ তিনটি শর্ত পূরণ করা ছাড়া আল্লাহর খলিফা হওয়া যায় না। শর্ত তিনটি হলো :
১. আল্লাহর তা’য়ালকে রব হিসেবে মেনে নিয়য় এবং তাঁর দাসত্ব স্বীকার করা।
২. আল্লাহর তা’য়ালাল নির্দেশ মেনে তাঁর পারপূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করা।
৩. ঈমান ও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কাউকেও শরিক না করা।
ক. যারা ঈমান আনে গায়েব-এর প্রতি। (বাকারা : ০৩)
খ. তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কাউকেও শরিক করো না। (আন নিসা : ৩৬)

খলিফার কাজঃ
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে এবং তাঁর বাধ্যতা ও দাসত্ব মেনে নিয়ে তাঁর খলিফা হয়, তাদের মূল কাজ হলো :
১. সালাত আদায়কারীগণের সাথে সালাত আদায় করা:
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর ও যাকাত দাও এবং রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ কর। সূরা (বাকারা : ৪৩)
২. জাকাত আদায় করা:
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘এবং সালাত কায়েম করবে আর যাকাত প্রদান করবে, এই হচেছ দীনের মজবুত বিধান।’ (বাইয়্যেনাহ : ৫)
৩. ভালো কাজের আদেশ দেয়া এবং মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা:
তোমরা শ্রেষ্ঠ মানবদল, মানবজাতির কল্যাণে তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ করো, মন্দ কাজে বাধা দাও।(আলে ইমরান : ১১০)
৪. ন্যায়পরায়ণ হওয়া ও মানব কল্যাণ করা :
আল্লাহ ন্যায়বিচার ও মানব কল্যাণের আদেশ দিচ্ছেন। (নাহল : ৯০)
মানুষের প্রতি ইহসান করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি ইহসান করেছেন। (কাসাস : ৭৭)
৫. মানুষকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আহ্বান জানানো:
তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি এবং আমার অবতীর্ণ নূর (আল কুরআন)-এর প্রতি। (আত তাগাবুন : ৮)
৬. মানব সমাজকে অন্যদের ইবাদত বর্জন করে শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করা :
তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। ( নহল : ৩৬)
৭. আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক না করার আহ্বান জানানো :
তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর ইবাদতে কাউকেও শরিক করো না। (আন নিসা : ৩৬)
৮. আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার দাওয়াত দেয়া :
মানুষকে তোমার প্রভুর পথে (চলার) দাওয়াত দাও হিকমত ও মর্মস্পর্শী উপদেশের মাধ্যমে। (আন নহল : ১২৫)
৯. আল্লাহর দীন কায়েমের কাজ করা :
তোমরা দীনকে (ইসলামকে) কায়েম করো, আর এ ব্যাপারে একে অপর থেকে আলাদা হয়ো না। (আশ শুরা : ১৩)
১০. সত্য গ্রহণের উপদেশ দান এবং সত্যের উপর অটল থাকার নসিহত করা:
(তারা) একে অপরকে সত্য গ্রহণের উপদেশ দেয় এবং (সত্যের উপর) অটল থাকার উপদেশ দেয়। - (আল আসর : ০৩)
১১. আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে শাসন কার্য ও বিচার ফায়সালা পরিচালনা করা :
হে দাউদ! আমি তোমাকে ভু-খণ্ডে খলিফা বানিয়েছি। কাজেই তুমি জনগণের মধ্যে সত্য দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করো এবং হাওয়া (নফস)-এর অনুসরণ করো না। ( ছোয়াদ : ২৬)
১২. দীনি আদর্শের বাস্তব নমুনা উপস্থাপন করা:
এমনি করে আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাহ বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা সকল মানুষের উপর সাক্ষী (নমুনা) হও। (বাকারা : ১৪৩)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.