নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথ ভোলা পথিক তোমার অপেক্ষায়

অচেনা অথিতি

অচেনা অথিতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

রংনম্বার Part 2

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:২৭

অনিরুদ্ধর কোথাও যেন একটা খটকা লেগে আছে ছমাস প্রতিদিন রমার সাথে অন্তত দিনে দুবার কথা হত হঠাৎ অনন্ত সোমের আবির্ভাব আর রমার আত্মহত্যা দুটোই যেন অনিরুদ্ধর অবিশ্বাস্য । বছরখানেক হল একটি বিদেশী বীমা কোম্পানির ম্যানেজার অনিরুদ্ধ । অত্যন্ত মিশুকে প্রকৃতির অনিরুদ্ধ ভূতে ভয় পাওয়ার মতো দূবল চিত্তিরও ছিল না ।
সেদিন রাতে অনিরুদ্ধর কিছুতেই ঘুম আসছে না , রমার গলাটা তার কানে যেন এখনও বাজছে । সত্যই অনিরুদ্ধ বোধহয় রমা কে না দেখেই ভালবেসে ফেলেছিল । অনিরুদ্ধ মনে করার চেষ্টা করল রমার সাথে কথোপকথন গুলো, যতবারই অনিরুদ্ধ দেখা করার কথা বলেছিল রমা নানাভাবে এড়িয়ে গেছে, এমনকি ফেসবুক প্রোফাইল চাইতে রমা বলেছে ওর নাকি ওসবের সখ নেই ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করতে নাকি ওর ভালো লাগেনা ।
একদিন একটা মজার খেলা খেলছিল দুজনে ফোনে ফোনে কাকে কেমন দেখতে আন্দাজে বলতে হবে । প্রথমে অনিরুদ্ধ বললো “তুমি রোগা রোগা ফসা কোঁকানো চুল চওড়া কপাল মিস্টি দেখতে লম্বায় ধর ৫’৪” টার হবে” রমা শুনেই খিলখিল করে হেঁসে উঠে বললো “এই যে মশাই এটা কার বননা দিলে শুনি ? আমি মোটেই অমন দেখতে নই আমি খুব সাদামটা বরং ঠিক তোমার বননার উল্টোটা ” অনিরুদ্ধ বললো “ মিথ্যেকথা !! চিটিং!! ” রমা বললো “বেশ দেখা হলে আফসোস কোরোনা ” এবার অনিরুদ্ধ বললো “এবার তোমার পালা ” তারপর রমা যা বললো অনিরুদ্ধর চেহারার সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছিল ।
রাত প্রায় তিনটে কিছুতেই দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না অনিরুদ্ধ, হঠাৎ মোবাইলের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো, অনিরুদ্ধ অবাক এত রাতে কে ম্যাসেজ করলো ? অনিরুদ্ধ ফোনটা তুলে নিয়ে দেখলো একি ??? .. রমার নম্বর থেকে ম্যাসেজ ? তাড়াতাড়ি ম্যাসেজটা খুলে দেখলো তাতে লেখা “ আমি আছি, তোমার কাছেই আছি, ভয় নেই ,ঘুমোও”........



অনিরুদ্ধর টেলিকম এর বন্ধু সতীনাথের দেওয়া অনন্ত সোমের ঠিকানা হলো ১২/৩ এ, রজনী রায় সরনী , ভবানীপুর কলিকাতা ৭০০০২৬ । অনিরুদ্ধ দেরি না করে মানষকে ফোন করলো, মানষ অনিরুদ্ধের অফিসের জুনিয়ার অনিরুদ্ধকে দাদার মত ভালোবাসে আর তা ছাড়া ও রমার ব্যপারটা পুরোটাই জানে । “ মানষ দশ মিনিটের মধ্যে টালিগন্জ্ঞ মেট্রো স্টেশনে চলে আয় আমি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো ” “কি ব্যাপার কি অনিদা ?” মানষ বললো । “পরে সব বলবো সময় নেই ” বলে অনিরুদ্ধ ফোন রেখে দিলো।
মানষের বাড়ি মুর এভিনিউ মেট্রো স্টেশন পৌছতে দশ মিনিটই লাগলো । গাড়িতে উঠে অনিরুদ্ধর দিকে তাকিয়ে মানষ বললো “কি ব্যাপার কি ?” অনিরুদ্ধ সংক্ষেপে সব বললো মানষকে।
ঘড়িতে সকাল ৭টা বাজে অনন্ত সোমের ঠিকানা খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ পেতে হল না অধ্যাপক মানুষ হয়তো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েন , কলিংবেল দু তিনবার বাজার পর দরজা খুললেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক। অনিরুদ্ধ বললো “অনন্ত বাবুর সাথে একটু দরকার ছিল” ভদ্রলোক বললেন “আমিই অনন্ত সোম কি ব্যাপার বলুন তো ” অনিরুদ্ধ হাতজোড় করে নমস্কার করে বললো “আমি অনিরুদ্ধ রায় গতকাল রমার খোঁজে আমিই আপনাকে ফোন করেছিলাম অপরাধ নেবেন না খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে সকালে এসেছি ” অনিরুদ্ধ বলে চলে “গতকাল রাত তিনটে নাগাদ আমার মোবাইলে আপনার নম্বর থেকে একটা ম্যাসেজ এসেছে” অনন্ত সোম অনিরুদ্ধকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললো “দাঁড়ান দাঁড়ান কি বলছেন আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না ? আপনি কাল আমায় ফোন করেছেন ? রমা ? আমার ফোন থেকে ম্যাসেজ ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না?” অনিরুদ্ধ বললো “আপনার মোবাইল নম্বর ৯৬৮১২৩৫৭৫৭ তো ? আপনি প্রফেসর সোম তো ?” অনন্ত বাবু বললেন “প্রফেসর ? কি আবোল তাবোল বকছেন ? আমার পাড়ায় একটা মুদিখানা দোকান আছে আর নম্বর এর কথা যদি বলেন মাস আষ্টেক আগে আমার মোবাইলটা হারিয়ে যায় , আমি থানায় একটা ডাইরী ও করেছিলাম কিন্ত বাবা টেলিফোন কোম্পানিকে সেটা জানানো হয়নি আমার ফোন তেমন কাজে লাগেনা বলে একটা চলতি নম্বর নিয়ে কাজ চালাচ্ছি” অনিরুদ্ধ বেশ অবাক দৃষ্টিতে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে তারপর বললো “আশ্চর্য !!! আপনি প্রফেসর সোম নন ? তাহলে আপনার ফোনটা নিশ্চই অন্য কেউ গত ছমাস ধরে ব্যবহার করছে” অনিরুদ্ধ বলে চলে “অনন্ত বাবু দয়া করে আপনি টেলিফোন কোম্পানিতে জানান যাতে ওরা আপনার সিমটা লক করে দেয় আর আমাকে যদি আপনার পুলিস ডাইরির একটা কপি দেন তাহলে হয়তো আমার একটু উপকার হয়” অনন্ত বাবু বললেন “নিশ্চই এ তো খুব খারাপ ব্যাপার আপনারা একটু দাঁড়ান আমি এখনি এনে দিচ্ছি ” মিনিট পাঁচেক পর অনন্ত সোম কাগজ নিয়ে ফিরে এলেন । মানষ কাগজটা নিয়ে দৌেড় জেরক্স করে নিয়ে এলো । তারপর ওরা দুজনেই অনন্ত সোমকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠলো। সিটে বসেই অনিরুদ্ধ বিদ্যুৎগতিতে মোবাইলটা তুলে রমার নাম্বার ডায়াল করলো , ওপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো রেকডেড ভয়েস “দ্যা টেলিফোন নাম্বার ইউ হ্যাভ ডায়ালড ইজ কারেন্টলি সুইচড্ অফ” .....



দুপুরে অফিসের ক্যন্টিনে লান্চ করতে করতে মানষ অনিরুদ্ধকে বললো “আচ্ছা অনিদা তোমার কি মনে হয় এটা নিছক কেউ তোমার সাথে মজা করছে? ” অনিরুদ্ধ স্যন্ডরুইচে একটা কামড় দিয়ে মাথা নেড়ে বললো “মোটেও না যদি কেউ মজাই করবে তাহলে দীঘ ছমাস ধরে প্রেমের অভিনয় করবে না ” মানষ বললো “তাহলে প্রফেসর বলে যে তোমায় পরিচয় দিল সে কে ?আর রমাই বা কে?” অনিরুদ্ধ বললো “দেখ মানষ যে যাই বলুক রমা মারা যায়নি আর এটা কোনো প্রেতাত্মা কাজ নয় সেটা কিন্তু পরিস্কার ” হঠাৎ মানষ বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো “আচ্ছা অনিদা গড়িয়ার যে মেসের কথা তোমায় রমা বলেছিল তুমিতো ওখানে খোঁজ নিয়েছিলে ওরা তোমায় আত্মহত্যার কথা বলেছিল ঠিকই তুমি কি ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়েছিলে ? সত্যই কেউ ওই বাড়িতে আত্মহত্যা করেছিল কিনা ? মানে থানায় খোঁজ করা ? বা আশপাশের দোকান বা বাড়িতে খোঁজ নেওয়া ?” অনিরুদ্ধ বললো “ঠিক বলেছিস আমি তখন এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম তাই ওসব আমার মাথায় একদম আসেনি” মানষ বললো “ জানো অনিদা আমার মনে হয় রহস্যের সমাধান ওই মেসবাড়িতেই লুকিয়ে আছে” বেসিনে হাত ধুয়ে রুমালে হাত মুছতে মুছতে টেবিলে ফেরার সময় অনিরুদ্ধ আর মানষ একটা অদ্ভূত জিনিস লক্ষ্য করলো ক্যন্টিনের মনুদা বেশ পুরোনো লোক যে টেবিলে ওরা লান্চ করছিল সেই টেবিলটা পরিস্কার করতে করতে অনিরুদ্ধর মোবাইল হাতে নিয়ে কি যেন করছে । হঠাৎ ওদের ফেরত আসতে দেখে মোবাইলটা জেয়গায় রেখে দিয়ে তার পরই প্লেট গ্লাস তুলে নিয়ে চলে গেল। মানষ আর অনিরুদ্ধ চোখ চাওয়াচায়ী করলো । পয়সা দেবার সময় মানষ মনুদাকে বললো “অনিদার মোবাইলে কি দেখছিলে ?” মনুদা খুব সরল সাদামটা লোক এক গাল হেসে বললো “কি সুন্দর টিভির মত মোবাইল তাই একটু দেখছিলাম” অনিরুদ্ধ বিশেষ পাত্তা না দিয়ে বললো “চল মানষ একটু বেরোতে হবে । ”
গাড়িতে উঠে মানষ বললো “গড়িয়া থানা চলো অনিদা আগে পুরো ব্যপারটা একবার ওদের জানাই তারপর ওদের সাহায্যে নিয়ে যদি কিছু করা যায়”
গড়িয়া থানার মেজবাবু সুনীল পাল মোটা গোঁফ বেশ জাদরেল চেহারা পুলিস বলে মানায় কিন্ত । বাজখাই গলায় বললেন “কি ব্যাপার ? ” অনিরুদ্ধ গোড়ার থেকে সব ঘটনা বললো পালবাবুকে। পাল বাবু শুনে বললেন “ইন্টারেস্টিং !! ভূত ?? কলকাতা শহরে মানুষের থাকার জায়গা নেই আবার ভূতের আমদানি ..” তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিয়ে বললেন “ কবে হয়েছে আত্মহত্যা” অনিরুদ্ধ বললো “স্যার ভদ্রমহিলা বলেছিল মাসছয়েক আগে গলায় দড়ি কেশ” পালবাবু কেস ডাইরির ফাইলটা ঘাঁটতে লাগল অনেক্ষন ঘাঁটার পর বললো “না তেমন কোন ঘটনা দেখছি না যে কটা কেস গলায় দড়ির আছে বেশিরভাগটাই ছেলে দু একটা কেস যাও আছে তাও স্কুল ছাত্রীর । যাক আপনারা ডাইরি সেক্সানে গিয়ে একটা জেনেরাল ডাইরি করুন পুরো ঘটনার উল্লেখ করে আর অনন্ত সোমের মোবাইল হারানোর ডাইরি নম্বরটাও উল্লেখ করবেন তারপর দেখছি এই ভূত পেতনীর রহস্যটা সমাধান করা যায় কিনা, আর হ্যাঁ আপনার নাম, বাবার নাম ,পুরো ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সব লিখবেন প্রয়োজন হলে আমি ফোন করবো ” অনিরুদ্ধ রিপিট লিখিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে বললো “ মনে হয় পালবাবু কেসটাতে বেশ রস পেয়েছে বেশ উদ্যোগী বলে মনে হল দেখা যাক কি করেন”
মানষ সেদিন অনিরুদ্ধর ফ্ল্যাটে থেকে গেল , ফ্ল্যাটে অনিরুদ্ধ একাই থাকে । সন্ধ্যার দিকে অনন্ত সোম একবার ফোন করে অনিরুদ্ধকে জানিয়েছিল যে সে টেলিফোন কোম্পানিকে জানিয়ে সিম লক করে দিয়েছে ।
হুইসকির গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে রমার সাথে নানান মজার কথাবার্তা গুলো মানষকে বলছিল । অনিরুদ্ধ কিছুতেই বুঝতে পারছেনা রমা এমন প্রতারণা করলো কেন । রাত দশটা বাজে তিন পেগ করে হুইসকি খাওয়া শেষ, হালকা আমেজে মাথাটা ঝিমঝিম করছে অনিরুদ্ধর, রমার সাথে হওয়া কথোপকথন মনে পড়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় । অনিরুদ্ধর মোবাইল বেজে উঠলো, একটা অচেনা নম্বর থেকে কল । এক ঝটিকায় যেন নেশাটা তলিয়ে গেল, অনিরুদ্ধর বুকের ভেতর এক অদ্ভূত উত্তেজনা আবার কে ফোন তুলে বললো “হ্যালো ” ওপার থেকে ভেষে এলো “আমি ইনেস্পেকটার সুনীল পাল বলছি আপনাদের একটু গড়িয়া থানায় আসতে হবে এখনই ” ....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.