নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথ ভোলা পথিক তোমার অপেক্ষায়

অচেনা অথিতি

অচেনা অথিতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

রংনম্বার Part 3

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:২৯

অনিরুদ্ধ তখন বি কম সেকেন্ড ইয়ার এর ছাত্র, কলেজের নবীন বরন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, হাতে পরিবেশনকারীদের লিস্ট নিয়ে একে একে কলাকুশলীদের নাম ডাকছে । “সুজাতা বোস বি কম ফাস্ট ইয়ার এখন আপনাদের সামনে সঙ্গীত পরিবেশন করবে ” অনিরুদ্ধ মাইকে এনাউন্স করল। স্টেজে এলো এক অপূর্ব সুন্দরী ,হাততালিতে হল ভেঙে পরল,পেছন থেকে বেশ কিছু ছেলে সিটিও মারলো,গান তখন শুরুই হয়নি। অনিরুদ্ধ হাঁ করে তাকিয়ে রইলো,রোগা রোগা ছিপছিপে ফরসা স্টেপকাট চুল কি অপূর্ব মুখশ্রী ,সুজাতা ডান হাত দিয়ে মুখের সামনে এসে যাওয়া চুলটাকে সরিয়ে দিয়ে সবাই কে নমস্কার করে গান শুরু করলো“তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে প্রাণে......” গানের শেষে হল ফেটে পড়ল হাততালি আর সিটিতে। যেমন অপূর্ব দেখতে তেমনি অপূর্ব গলা। অনুষ্ঠানের শেষে অনিরুদ্ধ সুজাতার কাছে এসে বলল “আমি তোমার গান শুনে মুগ্ধ ,কোথায় থাক ?” সুজাতা লাজু হাসি হেসে বলল “গড়িয়া,....তুমিও তো বেশ ভালো সঞ্চালনা করলে”।
তারপর থেকে রোজই অনিরুদ্ধ সুজাতার সাথে কথা বলে। একদিন সুজাতা এসে বললো “অনিদা আমাকে এই অঙ্কটা একটু দেখিয়ে দেবে কিছুতেই ব্যালেন্স শিট মেলাতে পারছি না” অনিরুদ্ধ একটা ফাঁকা ক্লাসঘরে গিয়ে সুজাতাকে অঙ্কটা করে দিল। সুজাতা ভীষন খুশি হয়ে “থ্যাঙ্কস !!! ” বলতেই অনিরুদ্ধ সুজাতার হাত ধরে বললো “আমি তোমাকে ভালোবাসি সুজাতা ” সুজাতার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল, হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মুচকি হেসে “ধ্যাত ” বলে মাথা নিচু করে ক্লাসঘর থেকে চলে গেল। ঠিক তার পরদিন সুজাতা একটা বই অনিরুদ্ধকে দিয়ে বললো “৫৬ পৃষ্ঠার অঙ্কটা একটু দেখে রেখো আমি ইকোনমিক্স এর ক্লাস করে আসছি , দেখিয়ে দিও” । অনিরুদ্ধ ৫৬ পৃষ্ঠা খুলে দেখল একটা ছোট্ট কাগজে লাল কালি দিয়ে লেখা “আমিও”। অনিরুদ্ধ সুজাতার প্রেম গাড়ো থেকে আরো গাড়ো হতে লাগল।
বাপ মা মরা সুজাতা মাসী , মেসোর কাছে মানুষ। অনিরুদ্ধ কোনোদিন সুজাতার বাড়ি যায়নি কারন সুজাতাই মানা করতো। ও বলতো মেসো খুব গরিব কষ্ট করে আমায় লেখাপড়া শেখাছে, যদি বঝে যে কলেজে গিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে প্রেম করছে হয়তো মনে দুঃখ পেতে পারে। তাই সুজাতা ঠিক করেছিল নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর না হয় মেসো মাসীর সাথে অনিরুদ্ধর পরিচয় করাবে। সবই ঠিক চলছিল নিয়মমাফিক কিন্তু একদিন হঠাৎ, অনিরুদ্ধ খবর পেলো কালীপূজোয় তুবড়ী জ্বালাতে গিয়ে তুবড়ী ফেটে সুজাতার পুরো মুখ ৮০ % পুড়ে গেছে পি,জিতে ভরতি । এক বন্ধু দেখে এসে যা বললো তাতে অনিরুদ্ধর মনে হল দেখতে না যাওয়াই ভালো। সুজাতার অনেক বন্ধু অনিরুদ্ধকে এসে বলেছিল “তোমায় সুজাতা দেখতে চেয়েছে অন্তত একবারটি অনিদা ” স্বার্থপর অনিরুদ্ধ বিদ্রূপ সুরে বলেছিল “আমি যে সুজাতাকে ভালোবাসতাম সে তো ভূত হয়ে গেছে , আমার আবার ভূতে ভীষন ভয় , তাই ভূতের সাথে নো প্রেম”
তারপর থেকে আর কোনোদিন সুজাতার সাথে অনিরুদ্ধর দেখা হয় নি।



রাত তখন ১২টা বাজে মেজবাবুর ঘরে উপস্থিত সবাই, সুজাতা চোখ মুছে বলতে লাগল “আমার মেসোকে ছেড়ে দিন স্যার ওনার কোনো দোষ নেই সব কিছুর জন্য এই পোড়ামুখিই দায়ী। ” সুজাতা বলে চললো “পি জিতে প্রায় ছমাস পড়েছিলাম, একে একে সব বন্ধুবান্ধবই প্রায় যে যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেল শুধু তনিমা ছাড়া ও সকাল বিকল আমার খোঁজ রাখতো আর অনিরুদ্ধর সব খুঁটিনাটি খবর আমায় দিতো, কি করে কোথায় যায় কারোর সাথে প্রেম করে কিনা সবকিছু । দামি দামি ঔষধ আর মলম দিয়ে চামড়ার ওপরের ঘা সুখোচ্ছিলো ঠিকই কিন্তু ভেতরের ঘা দিন দিন আরো দগদগে হয়ে উঠছিল। ঔষধ আর মলম কিনে কিনে আর পেরে উঠছিলো না মেসো তাই হয়তো আমার জন্য মোবাইল কেনা বেচা করতো, আমার মেসো অমন লোক নয় স্যার” ঘর বেশ থমথমে হয়ে গেছে, সবাই সুজাতার দিকে তাকিয়ে । সুজাতা বলে চলে “অনিরুদ্ধকে খুব দেখতে ইচ্ছা করতো, খুব কথা বলতে ইচ্ছা করতো মাঝে মাঝে একা একাই কাঁদতাম। মাসী মেসোকে বললাম একদিন অনিরুদ্ধর কথা, মেসো বলেছিল তনিমা যদি একবার চিনিয়ে দেয় অনিরুদ্ধকে দূর থেকে ,তাহলে অনিরুদ্ধকে বুঝিয়ে বাঝিয়ে নিয়ে আসবে আমার কাছে । মাস ছয় আগে তনিমা দূর থেকে দেখিয়েছিল অনিরুদ্ধকে ওর বাড়ির সামনে ফিরে এসে মেসো বলেছিল সম্ভব নয় কারন মেসো যে অফিসে ক্যান্টিন চালায় সেই অফিসেরই ম্যানেজার অনিরুদ্ধ, কিছু বললে ওর ইমেজ খারাপ হতে পারে। তাই ঠিক করলাম ওর সাথে একটু কথাই বলে নিই , ফোন নম্বর তনিমাই এনে দিয়েছিল। পরে ভাবলাম সুজাতা বলে ওর সাথে কথা বললে যদি ও আবার হারিয়ে যায় তাই ঠিক করলাম অন্য নম্বর থেকে অন্য নাম নিয়ে ওর সাথে না হয় একটু কথাই বললাম। তখন মেসো আমাকে অনন্ত সোমের সিমটা আমায় দিয়ে বলে এটা এখনো এক্টিভ আছে এটা দিয়ে কথি বল। তারপর স্যার আমি কোন আবেগে ভেসে গেলাম জানিনা। ” বলে কেঁদে ফেললো সুজাতা “আমি বুঝতে পারছালাম যে আমি আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়ছি অনিরুদ্ধর সঙ্গে, ও বার বার দেখা করার কথা বললেই আমার মন চন্চল হয়ে উঠত , কিন্তু আপনি বলুন স্যার এই মুখ নিয়ে যদি আমি ওর সামনে আসতাম তাহলে ওকে আমি চিরোতরে হারাতাম, তাই ভাবলাম রমাকে সরিয়ে দিই, কিন্তু ও নাছোড়বান্দা অনেকটা আমার মতন, তাই রমাকে অদৃশ্য করতে একটু ভৌতিক নাটক করতে হযেছিল , স্যার আমার মাসী মেসো আমাকে খুশি দেখতে চেয়েছিল , কারন আমি প্রায় দু বছর পর একটু মন খুলে হেসেছিলাম, এর পর আপনার যা মনে হয় করুন স্যার” পালবাবু পকেট থেকে রুমাল বার করে চোখের কোনটা মুছে নিয়ে ডাইরীর পাতাটা ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে বললেন “চলুন চলুন যে যার বাড়ি যান , কাল আমার মরনিং ডিউটি আছে ” অনিরুদ্ধ সুজাতার পায়ের কাছে বসে হাত দুটো ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে “ পারোনা আমায় ক্ষমা করতে ” সুজাতা দু হাত দিয়ে অনিরুদ্ধর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললো “ ভালো থেকো । ”
পরদিন সকালে পালবাবুর ফোনে ঘুম
ভাঙলো অনিরুদ্ধর। ভোর ৪টে নাগাত সুজাতা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৯

ঋতো আহমেদ বলেছেন: গলায় দড়ি দেয়া সেকেলে পদ্ধতি। আর একটু আধুনিক হলে ভালো হোতো। গল্প ভালো লেগেছে। ++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.