নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

i blog/therefore i exist

অচিন্ত্য

"জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ"

অচিন্ত্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কিছু কথা

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৩৯

আমার কিছু কথা



বদনাম করব আমার এক বড় ভাই এর। কিন্তু এই বদনাম নিছক নিন্দুকের রসনা তৃপ্তির জন্য নয়। এই বদনামের উসিলায় আমার কিছু বক্তব্য তুলে ধরব।



প্রথমেই বলে নিই তার কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। আমি স্কুল-কলেজ জীবনে শত শত গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি এবং শত শত পুরস্কারও পেয়েছি। তাই এক সময় ভাবতাম বেশ ভালই তো গান গাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার সাথে পরিচয়ের পর সেই ধারণা একটু একটু করে বদলে গেল। এবং এক সময় নিজের সম্পর্কে আমার আগের ধারণা একেবারেই ভেঙে গেল। সঙ্গীতের বিপুল ঐশ্বর্যময় বিশাল জগতের অলিগলিতে তার হাত ধরে নতুন সফর শুরু হল। এত তার বৈভব ! এমন তার রূপ ! সেই থেকে আমি এই রূপনগরের নতুন কাফেলা।



আমার এই গুরুভাইটি কিছু উদ্ভট ধারণার জালে নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দী করে রেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে ব্যক্তি নিয়ম মাফিক জীবন যাপন করেন তার পক্ষে শিল্পী হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে তিনি অনিয়মের আরামটুকু প্রাণপনে আঁকড়ে ধরে আছেন। তার ধারণা, চারপাশের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকলে শিল্পী সত্ত্বা নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য তিনি পত্রিকা পড়েন না, টিভিতে খবর দেখেন না। এর ফল হয়েছে এরকম- সম্প্রতি তিনি কার মুখে যেন শুনলেন তার হোম সিটিতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে। তিনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন বিরোধী দল তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন মানল ? তিনি আরো অবাক হলেন যে সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে আবার নির্বাচন কেন ? নির্বাচন তো হয় এক মেয়াদ শেষ হওয়ার পর। আমি তাকে বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলাম তিনি ‘স্থানীয় সরকার’ টার্মটির সঙ্গে পরিচিত নন।



এই নিন্দাবাদের পেছনে আমার কিছু বক্তব্য আছে। আমার এই পাগল ভাইটি তার কল্পিত ‘শিল্পবান্ধব’ পন্থার অনুষঙ্গ হিসেবে চারপাশের খবরাখবর রাখেন না। এবং আমার চেনা এমন অনেকেই আছেন যারা কোন কারণ ছাড়াই দিন দুনিয়ার কোন হদিশই রাখেন না।



প্রথম জনকে (দলকে) বলতে চাই- যিনি শিল্পব্রতী, তিনি প্রথমে সংস্কৃতিবান হবেন, হওয়া উচিত। সংস্কৃতি মানে যদি নৃত্য-গীত-বাদ্য আর অভিনয় মনে করা হয় সেটা নির্বুদ্ধিতা। যাপিত জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। একজন শিল্পব্রতী সংস্কৃতিকে যদি বৃহৎ পরিসরে দেখতে না পারেন তবে তার শিল্পবোধ নিশ্চয়ই সংকীর্ণ হয়ে থাকবে। চারপাশে চোখে মেলে না তাকালে এই সংকীর্নতা এড়ানো সম্ভব বলে মনে হয় না। হ্যাঁ, আমাদের পূর্বসূরীগণ দুই দলে বিভক্ত। একদল মনে করেন শিল্প শুধুই শিল্পের দোহাই, আরেক দল মনে করেন শিল্প জীবনঘনিষ্ট না হলে তা ভণ্ডামি। আমি দুই দলেরই গুণমুগ্ধ। আমার কেন যেন মনে হয়, এই দুই দলের মধ্যে যদি শুধুমাত্র একটি দলকেই বেছে নিতে বলা হয়, তবে শেষোক্ত দলটিকেই বেছে নেব আমি। কিন্তু যেহেতু কেউ বেছে নিতে বলবে না, আমি দুই দলেরই খেলোয়াড় হয়ে থাকতে চাই। এবং দুই দলের মধ্যে কখনো খেলা হোক এটা চাই না। যদি কখনো হয়ই বা সেটা হোক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ এবং এটি হোক পাতানো ম্যাচ, এর ফল হোক ড্র। কিন্তু যদি কেউ দুই দলের মধ্যে এক দলকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমোক্ত দলে নাম লেখায়, সেটা অন্তত একবিংশ শতকে এসে আমার কাছে অমানবিক লাগে। যেখানে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ শোষণ আর বঞ্চনার শিকার, সেখানে শিল্পবোধ যদি জীবনের এই বাস্তবতাকে এড়িয়ে নিছক মনোরঞ্জনের প্রয়োজনকে ধারণ করে, সেটা অমানবিকই বটে।



দ্বিতীয় দলের প্রতিঃ যোগাযোগের অসাধারণ উন্নতির ফলে বর্তমান পৃথিবীকে গ্লোবাল ভিলেজ বলা হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এই সময়ে আমি শুধুমাত্র একজন অমুক দেশের নাগরিক নই; আমি একজন বিশ্বনাগরিক। একজন নাগরিক কখন বিশ্বনাগরিক ? নিশ্চয়ই যখন তার বৈশ্বিক সচেতনতা থাকে তখন ? আমি যদি গ্লোবাল ভিলেজারই হব, এই ভিলেজে আমার পাশের বাড়ির লোকটি আজ খেয়েছে কিনা, তার বাড়ি বন্যায় ভেসে গেল কিনা (তার প্রতি আমার কোন কর্তব্য আছে কিনা এটা অনেক পরের প্রশ্ন) এই খোঁজটাও আমি নেব না ? তাহলে আমাকে মানুষ বলার কোন কারণ আছে কি ? বনের পশুরাও দলবদ্ধভাবে বাস করে। একের দুঃখে অন্যে দুঃখিত হয়। একজন আক্রান্ত হলে সবাই মিলে রুখে দাঁড়ায়। আপনি দুঃখিত হবেন কীভাবে ? আপনি তো জানেনই না সপ্তাহের কোনদিন আপনার দুঃখ পাওয়ার কথা আর কোনদিন হাসার কথা।



ইউরোসেন্ট্রিক ইডিওলজিক্যাল সন্ত্রাসের প্রভাবে ইন্ডিভিজুয়ালিজম এর দূষিত বাতাস আমাদের প্রশ্বাসকে কলুষিত করে রেখেছে। এই ভুয়া দর্শনের জালে পড়ে আমরা নিজেদেরকে সমষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন ভেবে/করে নিয়ে স্বকীয়তা বা আনন্দের ভ্রমে মজে আছি। নিজেকে আমরা যতই আলাদা ভাবি, আমরা আসলে এক অবিচ্ছিন্ন মানবতা-প্রবাহের অংশ। এই সত্যকে অস্বীকার না করে চলুন মানুষের দুঃখে দুঃখিত হতে শিখি, মানুষের আনন্দে হেসে উঠি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:০৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: কিছু মানুষ থাকে ঘোরগ্রস্থ। তাদের কাছে শিল্পের জন্যেই জীবন। বেঁচে থাকার একমাত্র অর্থ খুঁজে পায় সৃজনে। তো দুনিয়াদারীর খবরাখবর নিতে গিয়ে যদি সেই চর্চা বিঘ্নিত হয় তাহলে থাক না, তারা তাদের মত! তবে একজন শিল্পী যদি সমাজ সচেতন হন (বব ডিলান বা কবীর সুমনের কথা ধর) তাহলে তার কর্ম আরো ঋদ্ধ হবে সন্দেহ নেই। তোমার বড় ভাইয়ের মত কেউ থাকুক! তাদেরকে থাকতে দিই ওরকম। আমি মনে করি এই ছন্নছাড়া ইনডিভিজুয়ালিজম সবসময় এমন সীমার ভেতরে থাকে যা সমাজে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।

২০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:০২

অচিন্ত্য বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ডিয়ার হাসান মাহবুব ভাই। ভাল থাকুন যথেষ্ট পরিমাণে। নতুন লেখার অপেক্ষায় আছি

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯

আরজু পনি বলেছেন:

ভালো একটা বিষয়ের অবতারণা করেছেন। কিছু মানুষ থাকেই অমন বড্ড বেশি আত্নকেন্দ্রীক !


পোস্টটা গতকালই পড়েছিলাম অফলাইনে ।
ভেবেছিলাম অনলাইনে এসে মন্তব্য করে যাব ...

জানি না কেমন যেন অস্থির সময় পার করছি ... মন দিতে পাচ্ছি না কোন কাজেই ঠিকমতো !



২১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:১৩

অচিন্ত্য বলেছেন: হ্যাঁ, সময়টা বেশ অস্থির যাচ্ছে। অফলাইনে পড়েছেন ! কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভাল থাকুন। সব সময়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.